রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সোনারগাঁওয়ে লোকজ উৎসবে বর্ণাঢ্য আয়োজনে দর্শনার্থী ভিড়

সোনারগাঁও (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:০৬

বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে উদ্বোধন করেন নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবের ৩৩তম আসরের উদ্বোধন করার পর জমতে শুরু করেছে।

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের চত্বরে মাসব্যাপী মেলা প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে শুরু করে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বেলা বাড়ার সাথে সাথে দর্শনার্থীদের সমাগম বাড়তে থাকে। বেলা গড়িয়ে বিকেল হতেই চারদিকে উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। মেলায় বিভিন্ন রকমের পণ্য নিয়ে স্টল সাজিয়েছেন কারুশিল্পী, উদ্যোক্তা ও স্টল মালিকরা। সেসব স্টলে স্টলে দর্শনার্থীরা নানা পণ্য কিনতে ভিড় করছেন, কেউ আবার ঘুরে ঘুরে নানা পণ্য দেখছেন। তবে মেলায় নাগরদোলা, চরকি, বায়োস্কোপ ও পুতুল নাচ, নকশীকাঁথা, জামদানি শাড়ী সহ নানা পণ্য দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে।

সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া এলাকা থেকে স্বামী ও সন্তান নিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছেন গৃহীনী রুমা বেগম। তিনি বলেন, মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠান দেখতে এসেছি। মেলার সবগুলো স্টল ঘুরে ঘুরে দেখছি। এখনো তেমন কিছু কিনিনি। তবে জামদানি শাড়ী কেনার ইচ্ছা আছে। এছাড়া রান্না করার জিনিসপত্র সহ ব্যতিক্রম কিছু পেলে কিনবো।

আয়োজকরা জানান, মেলায় কর্মরত কারুশিল্পী প্রদর্শনীর ৩২টি স্টলসহ সর্বমোট স্টলের সংখ্যা ১০০টি। এতে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৬৪জন কারুশিল্পী সক্রিয়ভাবে অংশ নিবেন। এ বছর মৌলভীবাজার ও ঝালকাঠীর শীতল পাটি, মাগুরার শোলাশিল্প, রাজশাহীর শখের হাঁড়ি ও মাটির পুতুল, রংপুরের শতরঞ্জি, সোনারগাঁও, টাঙ্গাইল ও ঠাকুরগাঁয়ের বাঁশ বেতের কারুশিল্প, ঐতিহ্যবাহী জামদানি, কাঠের চিত্রিত হাতি-ঘোড়া-পুতুল, বন্দরের রিকশা পেইটিং, কুমিল্লার, তামা-কাঁসা-পিতলের কারুশিল্প, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর কারুশিল্প, কিশোরগঞ্জের টেরাকোটা পুতুল, বগুড়ার লোকজ খেলনা ও কুমিল্লার লোকজ বাদ্যযন্ত্রের শিল্পীসহ মোট ১৭ জেলার কারুশিল্পীগণ মেলায় অংশ নিবেন। প্রতিবারের ন্যয় এবারও মেলায় বিশেষ কর্মসূচি হিসেবে কারুশিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য ১৫টি স্টল প্রদান করা হয়েছে।

মাসব্যাপী লোকজ উৎসব ২০২৪ এর প্রতিদিনের সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানমালায় লোকজ মঞ্চে পালাক্রমে বাউলগান, পালাগান, ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালীগান, জারি-সারিগান, হাছন রাজারগান, শাহ আব্দুল করিমের গান, লালন সঙ্গীত, ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, লোকজ নৃত্যনাট্য, গ্রামীণ খেলা, লাঠিখেলা, ঘুড়ি ওড়ানো, চর্যাগান, লোকগল্প বলা ইত্যাদি অনুষ্ঠান পরিবেশনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

মেলার আয়োজন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক একেএম আজাদ সরকার যায়যায়দিনকে বলেন, মাসব্যাপী এই আয়োজন আমরা উৎসব মুখর পরিবেশে উদ্বোধন করতে যাচ্ছি। আমাদের লোক ও কারুশিল্প মেলা একটি বিশেষায়িত মেলা। বাংলার ঐতিহ্যকে যারা ধারণ করতে চায় তারা এই মেলায় আসলে এক বাক্যে তা পূরণ হবে। এক প্রাঙ্গণে তারা লোককারুশিল্পীদের পণ্য তারা সংগ্রহ করতে পারবে। নতুন প্রজন্ম এই কারুশিল্প দেখে উদ্বুদ্ধ হবে। মেলায় আসা পণ্য দেখে নতুন প্রজন্ম ঐতিহ্যের সাথে সম্পৃক্ত হবে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারো মেলাটি সার্থক হবে এর পাশাপাশি আমরা নতুন কিছু সংযোজন রেখেছি। লোকজ মোটিভের মাধ্যমে আমরা সাজসজ্জা করেছি। ৬৪ জন কারুশিল্পীর সম্মেলনে মাধ্যমে প্রদর্শনের আয়োজন করেছি। প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাউল শিল্পীদের দিয়ে হাসনরাজা, পালাগান সহ নানা আয়োজন করা হয়েছে। এক কথায় মেলাটি উপভোগ্য হিসেবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে। এবারের মাসব্যাপী মেলার আয়োজনে তিন লক্ষাধিক দর্শনার্থীর সমাগম হবে। মেলা চলবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে এ উৎসব।

বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক কাজী নুরুল ইসলাম বলেন, লোক ও কারুশিল্প মেলার ৩৩ তম অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হয়েছে। মাসব্যাপী এই অনুষ্ঠানের দেশব্যাপী কারুশিল্পী ও কারুশিল্প পণ্য প্রদর্শনী হবে। লোকজ ঐতিহ্য ভাটিয়ালী, বাউল গান সহ লোকজ সস্কৃতির সাথে জড়িত সকল ধরনের সস্কৃতি ও কারুপণ্যের সম্মেলন হবে। মেলায় ৩২ টি কারুপণ্যের স্টলে ৬৪ কারুশিল্পীগণ তাদের নিজ হাতে তৈরি পণ্য প্রদর্শনী করবেন ও বিক্রয় করবেন। বায়োস্কোপ, পুতুল খেলা, দাড়িয়াবান্দা সহ দেশিয়ী যেসব খেলা রয়েছে, তা সোনারগায়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করবে। প্রতিদিনি বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সারা বাংলাদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ লোক প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করবেন। এছাড়া মেলাকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। যাতে করে দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দে মেলা উপভোগ করতে পারেন।

কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব উদ্বোধন করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার বলেন, বিভিন্ন অপশক্তির নানা বাধা ‍উপেক্ষা করে আজ আমরা একটি শুভ দিনে মিলিত হতে পেরেছি। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও তার আগে জ্বালাও পোড়াও সহিংসতা উপেক্ষা করে ফের আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসেছে। এই সরকারের আমলে উন্নয়ন হয়। আর ওরা শুধু জ্বালাও পোড়াও করে অগ্নিসংযোগ করে। আজকে এই খুশির দিনে আমি বলতে চাই, এই মেলা ও জাদুঘরের জন্য যা যা করার দরকার তা আমি করবো। আমি সব সময় আপনাদের সাথে আছি।

এ সময় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমেদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে ‍উপস্থিত ছিলেন, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ইমরুল চৌধুরী, সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া, সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান মাসুম, নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-অঞ্চল) শেখ বিল্লাল হোসেন সহ প্রমুখ।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে