বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

পরশুরামে শিশু লামিয়া হত্যা ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামী করে মামলা 

পরশুরাম (ফেনী) প্রতিনিধি
  ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:২১
পরশুরামে শিশু লামিয়া হত্যা ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামী করে মামলা 

পরশুরামে উম্মে সালমা লামিয়া (৭) নামে এক শিশুকে পৈশাচিকভাবে হত্যার ঘটনায় এখনো কোন রহস্য উদঘাটিত হয়নি। এদিকে ঘটনার দিন রাতে নিহত শিশু লামিয়ার বাবা মো. নুরুন্নবী বাদি হয়ে পরশুরাম থানায় অজ্ঞাতদের আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

নিহত লামিয়ার বাবা মো. নুরুন্নবী বলেন, আমার পুর্বের স্ত্রী আয়েশার সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। আয়েশার পরিকল্পনাতেই আমাকে ফাঁসাতে লামিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করে এই ঘটনা।

পুলিশ জানিয়েছে, শিশু হত্যার রহস্য উদঘাটনে অধিকতর তদন্ত চলছে। লামিয়ার মা আয়েশা আক্তার ও সৎ মা রেহানা বেগমকে থানায় আটক রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন পুলিশ। এদিকে গতকাল বুধবার দুপুরে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে লামিয়ার মরদেহের ময়নাতদন্ত কাজ শেষে নিজ গ্রামের বাড়িতে মরদেহ দাফন করা হয়েছে। এর আগে বুধবার সকালে হত্যার মোটিভ জানতে ফেনীর পুলিশ সুপার জাকির হাসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এছাড়াও তিনি পুলিশি হেফাজতে থাকা আয়েশা আক্তার, রেহানা বেগম ও ঘটনার প্রত্যাক্ষদর্শী পালিয়ে বাঁচা লামিয়ার বড় বোন নিহার সাথে কথা বলেন।

নিহা পুলিশ ও তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন হত্যাকারীদের সে দেখলে চিনবে। পল্লী বিদ্যুতের কর্মী পরিচয় দেয়া দুই যুবকের মাথায় হেলমেট পড়া থাকালেও বাসার ভেতরে প্রবেশ করেই হেলমেট খুলে ফেলেন। তাদের মধ্যে একজনের গায়ের রং কালো ও হালকা মোটা। সে জানায় এর আগেও তাদের দুইজনকে পরশুরাম স্টেশান রোডে দেখেছে। তবে তাদের পরবর্তীতে দেখলে চিনবেন বলে পুলিশকে জানান।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ফেনীর পরশুরামের বাঁশপদুয়া গ্রামে গত মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে হেলমেট পরা দুই যুবক মো. নুরুন্নবীর ভাড়া বাসায় গিয়ে নিজেদের পরশুরাম পল্লী বিদ্যুতের কর্মী পরিচয়ে দরজা খুলতে বলেন। এ সময় তাঁর দুই শিশু সন্তান দরজা খুলে দিলে দুই যুবক ঘরে ঢুকে নিহত শিশু লামিয়াকে কসটেপ দিয়ে হাত-মুখ-পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। একই সময় লামিয়ার বড় বোন ফাতেমা আক্তার নিহা (১২) একজনের হাত কামড়ে দিয়ে পাশের কক্ষে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে নিজেকে রক্ষা করে। লামিয়াকে হত্যার পর দুই যুবক চলে গেলে নিহা দৌড়ে পাশের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়।

পরবর্তীতে নিহা অজ্ঞান হয়ে গেলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।

এজাহারে আরো উল্ল্যেখ করা হয়েছে, ঘটনার সময় মো. নুরুন্নবীর বর্তমান স্ত্রী রেহানা বেগম তাঁর ছেলে সিয়ামের চোখের চিকিৎসা নিতে ফেনী শহরের মা ও শিশু হাসপাতালে ছিলেন।

স্থানীয়রা জানায়, পরশুরাম বাজারের বালিকা বিদ্যালয় সড়কের আমেরিকান ভবনের বাসায় ভাড়া থাকতেন। তখনও মো.নুরুন্নবী ও আয়েশা আক্তারের সংসারে বনিবনা না থাকায় সবসময় ঝগড়া লেগেই থাকতো দুইজনকে বাড়ির মালিক একাধিকবার সতর্ক করতেন। গত চার বছর পুর্বে দুইজনের মধ্যে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। বিচ্ছেদের পর আয়েশা চট্রগ্রামে বিয়ে করে সেখানেই বর্তমান স্বামীর দ্বিতীয় সংসার করছেন। অপরদিকে মো. নুরুন্নবীও বরিশালের রেহানা নামের এক নারীকে বিয়ে করেন। বেশ কিছুদিন ধরে বাঁশপদুয়ার পশ্চিমপাড়া এলাকায় এয়ার আহাম্মদের ভাড়া বাসায় দ্বিতীয় স্ত্রী রেহানা বেগম ও রেহানার আগের সংসারের ছেলে সিয়াম (৭) ও নুরুন্নবীর আগের সংসারের দুই মেয়ে লামিয়া ও নিহাকে নিয়ে থাকতেন।

নিহত লামিয়ার বাবা নুরুন্নবী পরশুরাম কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা। তিনি একটি বেসরকারি এনজিও সংস্থার গাড়িচালক।

পরশুরাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাদাত হোসেন খান বলেন, ‘দাম্পত্য কলহের জেরে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। আশা করি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে দোষীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।’

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে