রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পূর্ব শত্রুতার জেরে গ্রাম্য নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

জাজিরা (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি
  ০২ মার্চ ২০২৪, ১০:৫৯

গ্রাম্য রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পূর্ব শত্রুতার জের ধরে স্থানীয় এক গ্রাম্য দলীয় নেতাকে দেশীয় বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র-শস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন।

শুক্রবার (১ মার্চ) সন্ধ্যায় শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার সেনেরচর ইউনিয়নের চরদুপুরিয়া কালু মাদবরের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফিরার পথে সাকিম আলী মাদবর কান্দি এলাকায় এই ঘটনাটি ঘটে। নিহত ব্যাক্তির নাম রাসেল মাহমুদ মন্টু বেপারি(৬০), তিনি একই ইউনিয়নের ভোলাই মুন্সি কান্দি গ্রামের মৃত আর্শেদ আলী বেপারির ছেলে।

স্থানীয় ও জাজিরা থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ভোলাই মুন্সী কান্দি গ্রামের মন্টু বেপারীর সাথে সাকিম আলী মাদবর কান্দি গ্রামের এমদাদ মাদবরের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘ দিনের বিরোধ রয়েছে। তিন বছর আগেও দুই পক্ষের শত্রুতার জেরে রিয়াজ নামে এক কিশোরকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। ওই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন মন্টু বেপারী। এছাড়াও গতবছর আ: করিম মাস্টারকে হত্যাচেষ্টা মামলা সহ বেশ কিছু মামলার আসামি ছিলেন নিহত রাসেল মাহমুদ মন্টু বেপারি। পুলিশের ধারণা, এরই জের ধরে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাকে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় মাদরাসায় পড়ুয়া ছোট্ট ছেলে মুসা কলিমুল্লাহ(১০)-কে সাথে নিয়ে মন্টু বেপারী তার ভাতিজা বাবু বেপারীর মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফেরার পথে সাকিম আলী মাদবর কান্দি এলাকায় প্রতিপক্ষের লোকজন তাদের গতিরোধ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দিলে আত্মরক্ষার জন্য তারা পার্শ্ববর্তী মালেক মাদবরের ঘরে প্রবেশ করে। এসময় দুর্বৃত্তরা মালেক মাবদরের ঘরে ঢুকে তাদেরকে কুপিয়ে জখম করে। পরে স্থানীয়রা মন্টু বেপারিকে উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আর কোপ লেগে বাম হাতের দুটি আঙ্গুল বিচ্ছিন্ন হওয়া সহ বেশ কিছজ আঘাতের ফলে গুরুতর আহত বাবু বেপারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে মন্টু বেপারির ছোট্ট ছেলে মুসা কলিমুল্লাহর শরীরে কোন কোপের জখম না থাকলেও সে আহত হয়েছে বলে জানায় তার পরিবার। মুসা কলিমুল্লাহ ছাড়াও মন্টু বেপারির আব্দুল্লাহ আল মিমন(২৪) নামে তেজগাঁও কলেজে অনার্স পড়ুয়া অপর একটি ছেলে এবং খাদিজা আল মারিয়া(১৮) নামে একই কলেজের একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া একটি মেয়ে রয়েছে।

এই ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে জাজিরা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন নিহত মন্টু বেপারির পরিবার ও জাজিরা থানা পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই এলাকাটিতে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করায় প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট সহ যেকোনো সংঘাত এড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চরদুপুরিয়া এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে টহল অব্যাহত রেখেছে জাজিরা থানা। পাশাপাশি কিছু বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ঢাল-কাৎরা সহ কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ।

একাধিক সূত্রে ১০-১৫ জন হামলাকারীর কথা শোনা গেলেও নিহত মন্টু বেপারির স্ত্রী লিমা মাহমুদ(৪২) ও তার মেয়ে খাদিজা আল মারিয়া তাদের স্থানীয় প্রতিপক্ষ দলের নেতৃত্বে থাকা কয়েকটি পরিবারের কিছু লোকজনের নাম উল্লেখ করে অন্তত ৫০-৬০ জনের বিরুদ্ধে সন্দেহাতীত অভিযোগ করে বলেন, অন্যায়ের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ায় নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে মন্টু বেপারিকে। নির্মম এই হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানান তারা। এছাড়াও মন্টু বেপারিদের সাথে থাকা পালসার মোটরসাইকেল ভাংচুর করে বৈদেশিক মুদ্রা ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সহ প্রায় ৩ লক্ষ টাকা এবং কয়েকটি স্বর্নালঙ্কার ও স্মার্টফোন ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেন তারা।

জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল জমাদ্দার হত্যাকারীদের যথাযথ বিচার দাবীর পাশাপাশি এই ঘটনাকে অত্যন্ত জঘন্য আখ্যা দিয়ে বলেন- মন্টু বেপারির সাথে আমার পারিবারিক সম্পর্ক ছিলো, আমি তার নির্মম এই হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। আমি ঘটনাটি শুনে সাথে-সাথেই জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে মন্টু বেপারিকে দেখতে ছুটে যাই। নিজে কোন দল-বল না করলেও এমন ঘটনা ঘটায় এখন আমিও জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় পড়ে গিয়েছি। এভাবে চলতে থাকলে কোন মানুষই নিশ্চিন্তে চলাফেরা করতে পারবে না বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

জাজিরা থানার অপারেশন অফিসার পুলিশ উপ-পরিদর্শক (এসআই) জসিম ও সুরতহাল কারী কর্মকর্তা জাজিরা থানার পুলিশ উপ-পরিদর্শক (এসআই) তাজুল ইসলাম জানান, নিহত মন্টু বেপারির লাশের সুরতহালে বিভিন্ন আঘাত ছাড়াও দেশীয় অস্ত্রের অন্তত ১৭টি কোপের আঘাত পাওয়া গিয়েছে। শনিবার সকালে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। মামলার ভিত্তিতে সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পর্যালোচনার মাধ্যমে তদন্ত কার্যক্রম চলমান থাকবে। পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত অপরাধীদের খুঁজে পেতেও আমরা আমাদের কাজ করে যাবো।

জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান (পিপিএম) জানান, ঘটনার সাথে-সাথেই এলাকাটিতে আমরা অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছি। এই ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে। মন্টু বেপারির পরিবারের পক্ষ থেকে এজাহার দিলেই মামলা নেয়া হবে। এছাড়াও আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ভুক্তভোগীদের এজাহার ও মামলার ভিত্তিতে যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনা হবে বলেও তিনি জানান।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে