রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মেহেরপুরে নির্মাণাধীন সেতুর কাজ ফেলে লাপাত্তা ঠিকাদার

গোলাম মোস্তফা, মেহেরপুর প্রতিনিধি
  ২৪ মার্চ ২০২৪, ১৪:১২
ছবি-যায়যায়দিন

মেহেরপুর সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের ভৈরব নদীতে নির্মানাধীন সেতুর কাজ ফেলে লাপাত্তা ঠিকাদার। কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনিশ্চয়তায় চরম দূর্ভোগে পড়েছে এই এলাকার মানুষ । প্রয়োজনের তাড়নায় নির্মাণাধীন সেতুর নিচ দিয়ে স্থানীয়রা কাঠ ও বাঁশের পাটাতন তৈরী করে কোন রকমে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে এলাকার মানুষ। পাটাতনটিরও অবস্থাও নড়বড়ে। কিছু অংশ ভেঙ্গে যাওয়ায় অনেক সময় নদীতে পড়ে যেয়ে আহত হন অনেকে । শিশু ও বয়স্ক মানুষের জন্য চলাচলের চরম ঝুঁকি এই সাঁকোটি। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানায় এলাকাবাসি। তবে কর্তপক্ষ আশ^াস দিচ্ছেন সাব ঠিকাদার কাজ ফেলে পালিয়ে গেলেও মুল ঠিকাদারকে দিয়ে কাজ করে নেবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

জানা গেছে , স্থানীয় লোকজনের দীর্ঘদিনের দাবি ও জাতীয় ক্রীকেট দলের সাবেক খেলোয়াড় ইমরুল কায়েসের অনুরোধে বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলা গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালে মেহেরপুর সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের ভৈরব নদীর উপর প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯৬.১০ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পরবর্তিতে ২০২১ সালের জুন মাসে শুরু হয় সেতুর নির্মাণকাজ । এই সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের জুন মাসে।

টেন্ডারের মাধ্যমে সেতুটির নির্মাণ কাজ পায় ফরিদপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কামারজানি ট্রেডার্স। কামারজানি ট্রেডার্স কাজটি না করে কুষ্টিয়ার ঠিকাদার সুমন মিয়াকে সাব ঠিকাদার হিসাবে নির্মাণ কাজের দায়ীত্ব দেয়। সুমন মিয়া ঠিকাদার দায়ীত্ব নিয়ে কয়েক মাসের মধ্যে সেতুটির দুটি পিলার ও দুই পাশের সংযোগ সড়কের গাইড ওয়াল তৈরি করেন। বাকি কাজ না করে কাজের জন্য ৫৫ শতাংশ বিল তুলে নিয়ে সুমন মিয়া লাপাত্তা হয়ে যায়। ব্রীজের কাজ শেষ না হওয়ায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ব্রীজ নির্মাণের সরঞ্জামাদী। মরিচা ধরে যাচ্ছে রডগুলোতে। নির্মান বিশেষজ্ঞরা বলছে মরিচাপড়া রডের সাথে নতুন রড দিয়ে সেতু নির্মাণ করা হলে এর স্থায়ীত্ব কমে যেতে পারে।

সরোজমিনে নির্মাণাধিন সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভৈরব নদীর ওপর গার্ডার সেতু নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। নদীর মাঝে দাঁড়িয়ে আছে মরচে ধরা রডে অর্ধনির্মিত সেতুটি। দুই পাড়ে সেতুর সঙ্গে নেই সংযোগ সড়ক। বাধ্য হয়ে সেতুর নীচ দিয়ে পচা কাঠ ও বাঁশের সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন নারী, পুরুষ, শিশু বয়োবৃদ্ধ সহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ জন।

উজুলপুর গ্রামের বাসিন্দা সহকারী অধ্যাপক মাজহারুল ইসলাম যায়যায়দিনকে জানান, সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করে কাজ শেষ না করেই চলে যাওয়াটা দুঃখজনক। যে সেতুর কাজ ২০২৩ সালের জুন মসে শেষ হবার কথা কিন্তু গত ৯ মাস মুখ থুবড়ে পড়ে আছে সেতুটি। এই সেতুর কারণে এখন চরম দুর্ভোগে পড়েছে গ্রামবাসি। তিনি সেতুটির নির্মান কাজ দ্রƒত শেষ করার দাবী জানান।

গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, উজুলপুর গ্রামের চাষীদের অধিকাংশ জমি ভৈরব নদীর ওপারে। জমি চাষাবাদ, ফসল ঘরে তোলা সহ চাষের নানা কাজের জন্য সেতুটি আমাদের নিকট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাম থেকে ৩-৪ কিলোমিটার দুর ঘুরে অন্য সেতু দিয়ে চাষাবাদ করতে গিয়ে আমাদের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যায়। সময় অপচয় হয়।

মুক্তিযোদ্ধা রায়হান হোসেন বলেন, সেতুটি নির্মাণকালে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতু নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার শুরু করে। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যাবহারে বাধা হয়ে দাঁড়ায় গ্রামবাসী। ফলে ঠিকাদার কাজ গুটিয়ে নিয়ে চলে যায়। এরপর থেকে ওইভাবেই পড়ে আছে সেতুটির নির্মাণ কাজ।

সেতু নির্মাণ কাজের মালামাল পাহারাদার উজলপুর গ্রামের মোঃ গরিবল্লাহ জানান, মাসিক ১৫ হাজার টাকা বেতনে তিনি সাইড দেখভালের দায়িত্ব পালন করছেন। গত সাত মাস কোনো বেতন পাননি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ করে রাখায় তিনি বেতন পাচ্ছেন না। সেতু নির্মাণের সামগ্রী পড়ে থাকায় কাজও ছেড়ে দিতে পারছেন না। ঠিকমত বেতন না পাওয়ায় তারও সংসারে দেখা দিয়েছে অভাব।

কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম রেজা যায়যায়দিনকে বলেন, বেশ কয়েক মাস যাবৎ সেতুটির নির্মাণ কাজ চলার পর হঠাৎ বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। এতে এলাকার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। এ বিষয়ে আমি মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সাথে কথা বলেছি। তিনি এলজিইডিকে দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এলজিইডি কর্তৃপক্ষ মুল ঠিকাদারকে দিয়ে কাজটি দ্রুত করে দেবার আশ^াস দিয়েছে।

এ বিষয়ে মেসার্স কামার জানি ট্রেডার্স এর স্বত্বাধিকারীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি যায়যায়দিনকে জানান, এ বিষয়ে এলজিইডির সাথে কথা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে। একটু সমস্যার কারণে কাজে বিলম্ব হয়েছে। আশা করছি দ্রুত ব্রীজের কাজ শুরু করা হবে।

মেহেরপুর সদর উপজেলার এলজিইডি প্রকৌশলী মোঃ সাব্বির উল ইসলাম বলেন, একটু সমস্য হয়েছিলো। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদার কাজ সম্পাদন করবেন। কাজ ফেলে পালিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে