জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ম্যাকানিজম বলে আখ্যা দিয়েছেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টারের। ইতোমধ্যে ভিডিও নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
সাড়ে চার মিনিটের ওই ভিডিওতে আওয়ামী লীগ নেতা রোশন আলী মাস্টারকে বলতে শোনা যাচ্ছে, "ভোটে আমরা হারিনি। ম্যাকানিজম করে হারানো হইছে। যেকোন কারণে আমরা রেজাল্ট নিতে পারেনি। ৮২ হাজার ভোট কি কম? এগুলোর অনেক ইতিহাস, এগুলো আপনারা বুঝবেন না। আপনাদের ভাইঙ্গা বুঝাইতে অইব। যাদেরকে আমি নেতা বানাইছি তারা আমারে এখন চেট (আঞ্চলিক গালি) দিয়াও গুণে না।
এসময় তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দ্যেশ্য করে বলেন, 'আমাদের দলে অনেক মীর জাফর আছে। এগুলো যুগ যুগ ছিল থাকবে। তারা যদি ভালো হয়ে যায় আমরাও ভালো হয়ে যাবো। আর হজ্ব করার পর যদি দেখি ভালো না হইছে তাহলে মাঠে নাইম্যা পড়বো।
প্রতিক্রিয়ায় তারা বলেছেন, যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট করে সারা বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সেখানে তার ওই বক্তব্য সুষ্ঠু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তার ওই বক্তব্যে বর্তমান সংসদ সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ ভোট কারচুপির মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন এটা তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছেন। আমরা অবিলম্বে এমন বক্তব্য প্রতাহ্যারের দাবি জানাচ্ছি, পাশাপাশি তাকে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকেও অব্যাহতির দাবি জানাচ্ছি।
দেবিদ্বার উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবীর বলেন, এর আগেও তার মোবাইল ফোনের অডিও ভাই হয়েছে। তার লাগামহীন এসব কর্মকাণ্ডে দল বিব্রত হচ্ছে। দেশের সাধারণ মানুষ বিব্রত হচ্ছে। মানুষজে ভুল মেসেজ দিচ্ছেন তিনি। সাধারণ মানুষের কাছে আওয়ামী লীগ হাস্যরসে পরিণত হচ্ছে।
এই আওয়ামী লীগ নেতা আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের বিভিন্ন সভায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তার নেতাকর্মীদের গালিগালাজ করেও বক্তব্য রেখে বিতর্কিত হোন, যা সবাই দেখেছেন ও শুনেছেন।
এর আগে বিএনপির এক নেতা সাথে তার ফোনালাপ ফাঁস হয় ওই ফোনালাপে তাকে বলতে শোনা গেছে, ‘আওয়ামী লীগ ও নৌকা যারা করে তারা সব রাজাকারের বাচ্চা’’। তার কর্মকাণ্ডে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতারাও বিব্রত। আসলে তিনি মাইক হাতে পেলে কি বক্তব্যে দিবেন হিতাহিত জ্ঞান হারাই ফেলেন !
এ বিষয়ে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টার ওই ভিডিও তার বলে স্বীকার করেন। এসময় তিনি বলেন, এই বক্তব্য আমি পজিটিভলি দিয়েছি। নেতাকর্মীদের বুঝানোর জন্য কথার কথায় বলেছি। তারা নিজেদের কাজকর্ম করেনি। নির্বাচনে নানান ধরণের ম্যাকানিজম হয়। ম্যাকানিজম ছাড়াতো নির্বাচন হয়না।
আওয়ামী লীগ সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন করেছে বলে দাবী করছে সেখানে আপনি একজন আওয়ামী লীগ নেতা হয়ে কিভাবে এই বক্তব্য দিলেন? এমন প্রশ্নে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, এখানে আওয়ামী লীগ নিয়ে বা নির্বাচন নিয়ে কোন কথা হয়নি। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়নি। আমি বলেছি নেতাকর্মীদের নিয়ে ম্যাকানিজম। অনেক ব্যাপার সেপার যে থাকে সেটা। তাছাড়া আমি রেজাল্ট নিয়ে কোন কথা বলিনি। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর তার সাথে বিএনপি নেতা দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. রহুল আমিনের একটি অডিও ফোনালাপ ফাঁস হলে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ওই অডিও কলে তাকে বলতে শোনা গেছে, ‘যারা নৌকা করে তারা সব রাজাকারের বাচ্চা’। তার শেল্টার নিয়ে বিএনপি যেন আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে নামে সে কথাও বলতে শোনা গেছে। এর প্রতিবাদে সাবেক সংসদ সদস্য রাজী ফখরুলের নেতা কর্মীরা রোশন আলীর মাস্টারের পদত্যাগের দাবিতে ঝাঁড়ু ও জুতা মিছিল এবং তার কুশপুত্তলিকা দাহ করে।
যাযাদি/ এম