বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

সৈয়দপুরে আজ ১২ এপ্রিল স্থানীয় শহীদ দিবস 

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি
  ১২ এপ্রিল ২০২৪, ১৬:২৯
ছবি : যায়যায়দিন

আজ ১২এপ্রিল নীলফামারীর সৈয়দপুরে স্থানীয় শহীদ দিবস। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি কলংকিত প্রেক্ষাপট রচিত হয় এই দিবসটিতে। এইদিনে স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য (এম.পি.এ) শহীদ ডাঃ জিকরুল হকসহ স্থানীয় দেড়শতাধিক বুদ্ধিজীবি, রাজনীতিক, পেশাজীবি ও ছাত্র-যুব নেতৃবর্গকে পাকিস্তানী বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে।

দিবসটি উদযাপনে রক্তঝরা ৭১’, প্রজন্ম’৭১’ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সৈয়দপুরে পৃথকভাবে বিস্তারিত কর্মসূচী পালন করেছে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল-বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালতে কালো পতাকা উত্তোলণ, শোক শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল, ছবি প্রদর্শনী, শহীদবেদিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ।

সকালে শহীদ ডা. জিকরুল হক রোডস্থ স্মৃতি অম্ল¬াণ চত্বর থেকে একটি শোক শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি শহর প্রদক্ষিণ শেষে স্মৃতি অম্লান চত্বরে শেষ হয়।

শহীদ স্মৃতি অম্লাণ চত্বরে রক্তঝরা ৭১’ সৈয়দপুর শাখার উদ্যোগে মঞ্জুর হোসেন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন-নীলফামারী-০৪ আসনের এমপি আলহাজ্ব সিদ্দিকুল আলম, সংরক্ষিত আসন ২৩ এর সাবেক এমপি রাবেয়া আলিম, শহীদের সস্তান আ’লীগ সৈয়দপুর উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি প্রকৌশলী একেএম রাশেদুজ্জামান, অধ্যাপক সাখাওয়াৎ হোসেন খোকন, রফিকুল ইসলাম বাবু, রনজিৎ ঘোষ, বীর-মুক্তিযোদ্ধা সালাউদ্দিন বেগ প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন শহীদের সন্তান আ’লীগ সৈয়দপুর উপজেলা শাখার সাধারন সম্পাদক মোহসিনুল হক। এছাড়াও উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আজমল হোসেন, সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শাহা আলম, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃবৃন্দও শহীদ বেদীতে পুস্পমাল্য অর্পণ করেন।

উল্লেখ্য, অবাঙালি (উর্দূভাষী) অধ্যুষিত সৈয়দপুর শহরে সারাদেশে যুদ্ধ শুরুর দু’দিন আগে ২৩মার্চ সর্বাত্নক লড়াই শুরু হয়। এরআগে স্থানীয় একটি সিনেমাহলে বাংলা ছায়াছবি ‘আপন পর’ মুক্তি পায়। এর বিরোধীতা করতে থাকে স্থানীয় অবাঙালিরা। তাদের দাবি এখানকার হলগুলোতে কেবলই উর্দূ ছবি চলবে। বাংলা সংস্কৃতি রক্ষায় সর্বস্তরের বাঙালি প্রতিরোধ গড়ে তুললে শহরে শুরু হয় সাংস্কৃতিক আন্দোলন। এতে আরো ক্ষুদ্ধ হয় উর্দূভাষী ওইসব অবাঙালিরা। তারা উস্কে দিতে থাকে সৈয়দপুর সেনানিবাসে পাঞ্জাব রেজিমেন্টের আর্মিদের।

পাকবাহিনী ২৩মার্চ সারা শহর অবরোধ করে। অবরুদ্ধ শহরের বাঙালিরা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে। পাকবাহিনী ঘরে-ঘরে গিয়ে নেতৃবৃন্দ ও যুবকদের ধরপাকড় শুরু করে। এই পাকড়াও কাজে সহায়তা দেয় চিহিৃত অবাঙালিরা। এদিন প্রথম প্রতিরোধ হয়। পার্শ্ববর্তী আলোকডিহি ইউনিয়নের (দিনাজপুর জেলার বর্তমান চিরিরবন্দর উপজেলার অর্ন্তগত) চেয়ারম্যান মাহাতাব বেগ অবরুদ্ধ বাঙালিদের উদ্ধারে ছুটে আসেন। সন্মুখ লড়াই বাঁধে সৈয়দপুর শহরের মিস্ত্রীপাড়া বাঁশবাড়ি এলাকায়। পাকবাহিনীর ভারি অস্ত্রের কাছে পরাভূত হয় বীর বাঙালি সন্তান মাহাতাব বেগ। তখন দুপুর গড়িয়েছে। শহীদ মাহাতাব বেগের ছিন্ন মস্তক হাতে উল্লাস প্রকাশ করতে করতে অবাঙালিরা মিছিল বের করলে সৈয়দপুর শহরে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। চলতে থাকে মহল্লায়-মহল্লায় বাঙালি নিধন।

২৩মার্চ থেকে যেসকল বাঙালি নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করা হয়, তাঁদের একত্রিত করা হয় সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টের সামরিক হাজত কোয়ার্টার গার্ডে। সেখানে অমানষিক নির্যাতন চালানো হয়। সূত্র মতে, কোয়ার্টার গার্ডে বন্দি নারায়ন প্রসাদ ইতিপূর্বে একজন বিদেশী সাংবাদিককে জানান, তাঁকে পাকবাহিনীর একজন মেজর বলেছিল-তুমি যদি তোমার মেয়ের সঙ্গে সহবাস করো, তা’হলে তোমাকে মুক্ত করে ভারতে পাঠানো হবে। পরে, অবশ্য ওই বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন নারায়ন। ওই কোয়ার্টার গার্ডে বন্দি ছিলেন এম.পি.এ ডাঃ জিকরুল হক, আওয়ামীলীগ নেতা ডাঃ শামসুল হক, ডাঃ বদিউজ্জামান, ন্যাপ নেতা ডাঃ এস.এম ইয়াকুব, দানবীর তুলশীরাম আগরওয়ালা, যমুনা প্রসাদ কেডিয়া, রামেশ্বর লাল আগরওয়ালা প্রমূখ।

১২এপ্রিল একটি বিশাল সামরিক কনভয় এগুতে থাকে রংপুর শহর অভিমুখে। সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে যাওয়া ওই কনভয়ে অনেকগুলো লোককে দেখা যায়।

সকলের চোখ কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা। তাঁদের নেয়া হয় রংপুর ক্যান্টনমেন্ট সংলগ্ন নিসবেতগঞ্জ গ্রামে। বিশাল এক বধ্যভূমি। ওই বধ্যভূমিতে হত্যাযজ্ঞে অলৌলিকভাবে বেঁচে যান ছাত্রনেতা কমলা প্রসাদ। ১২এপ্রিলের হত্যাকান্ডসহ নয়’মাসের যুদ্ধে সৈয়দপুরের প্রায় আড়াইহাজার শহীদের স্মরণে উদযাপিত হয় এই শহীদ দিবস।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে