শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

নাইক্ষ্যংছড়িতে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে শোভাযাত্রা 

নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) প্রতিনিধি
  ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:৪৬
নাইক্ষ্যংছড়িতে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে শোভাযাত্রা 

মারমা সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব সাংগ্রাই। এই উৎসবের মাধ্যমে পুরনো বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে স্বাগত জানায় মারমারা।

এ উপলক্ষে বান্দরবা‌নে নাইক্ষ্যংছড়িতে বইছে উৎসবের আমেজ। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে নতুন পোশাকসহ নানা কেনাকাটা, ঘরবাড়ি সাজসজ্জার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা।

জানা যায়, পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর লোকেরা বছরের শেষ দিন এবং নতুন বছরের প্রথম ৩ দিন নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিদায় বছরের সকল পাপাচার, গ্লানি ধুয়ে-মুছে দিতে এবং নতুন বছরকে বরণ করে নিতে যুগ যুগ ধরে ‘বৈসাবি’ উৎসব পালন করে আসছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান তিনটি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব ‘বৈসাবি’।

প্রতিবছর চৈত্র সংক্রান্তি ও বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষে ত্রিপুরা সম্প্রদায় ‘বৈসুক’, মারমারা ‘সাংগ্রাই’ এবং চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যারা ‘বিজু’ উৎসব পালন করে। তিন উৎসবের আদ্যক্ষর নিয়ে এই উৎসবকে বলা হয় ‘বৈসাবি’।

সাংগ্রাই অনুষ্ঠান আয়োজক কমিটির সদস্যরা জানায় ১৪ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ৩ দিনব্যাপী আয়োজন করা হয়েছে মারমাদের সাংগ্রাই অনুষ্ঠান।

এদিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রোববার (১৪ এপ্রিল) বাংলা নতুন বছর ১৪৩১ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা ও উপজাতি সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।

পৃথকভাবে আয়োজিত এ শোভাযাত্রায় জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নির্বিশেষে সব মানুষ, সব বাঙালি সকল সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠে সমগ্র জাতি একই হৃদয়াবেগে একটি মোহনায় মিলিত হয়ে পালন করে এই উৎসব।

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে দিন ব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালন করা হলেও উপজাতি সম্প্রদায় তথা পাহাড়িদের পক্ষে তিনদিন ব্যাপী এই উৎসবের আয়োজন করা হয় বর্ণিল আয়োজনে।

মারমা, ত্রিপুরা,চাকমা,বড়ুয়সসহ আরো অনেক পাহাড়িদের প্রাণের উৎসব এই বাংলা নববর্ষ। দিবসটি উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৯ টায় উপজেলা পরিষদ চত্বর হতে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বিভিন্ন রঙের ঐতিহ্য পোশাকে শতশত মানুষের অংশগ্রহণে শোভাযাত্রাটি উপজেলা সদরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা পরিষদের গেইটে এসে শেষ হয়।

এ আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশ নেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জাকারিয়া বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ক্যানেওয়ান চাক, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মংলা ওয়াই মার্মা,দোছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো: ইমরান, কৃষি অফিসার এনামুল হক, সহকারি শিক্ষা অফিসার আক্তার উদ্দিন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্মকর্তা শাহা আজিজ, থানা'র অফিসার ইনচার্জ ওসি আবদুল মান্নান।

নাইক্ষ্যংছড়ি প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাইনুদ্দীন খালেদ, আহবায়ক আবদুল হামিদ, সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম কাজল, উপজেলা প্রাণী সম্পদ (ভা:) কর্মকর্তা,ছৈয়দ নুরসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের উর্ধতন কর্মকর্তা বৃন্দ,সাংবাদিক,সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি গণ, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষেও শিক্ষার্থীরাও এদিন আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে।

অপরদিকে উপজাতি মার্মা সম্প্রদায়ের পক্ষে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা ধুংরী হেডম্যান পাড়া হতে বের করে তারাও বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে এসে শেষ হয়। এতে উপজাতি সকল স্থরের নারী পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।

জেলা পরিষদের সদস্য ক্যানেওয়ান চাক জানান, তাদের তিনদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের আজ প্রথম দিন। আগামী কাল সাংগ্রাই উপলক্ষে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানএর পরে পিঠাপুলি ঐতিহ্যবাহী জলকেলির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটবে।

সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মংলাওয়াই মারমা বলেন, তিন দিনব্যাপী সাংগ্রাই উৎসবে বাঁকখালী নদীতে বুদ্ধ স্নান, সমবেত প্রার্থনা, জলকেলি, পিঠা তৈরি, হাজারো প্রদীপ প্রজ্বলন, বয়স্ক পূজা এবং সম্প্রদায়গুলোর নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী নৃত্য, গানসহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন হয়ে থাকে। তবে আমরা অন্যান্য ধর্মের প্রতি সম্মান রেখে আমরা কর্মসূচি গ্রহণ করেছি।

নাইক্ষ্যংছড়ি থানা অফিসার ইনচার্জ ওসি আবদুল মান্নান বলেন, উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিটি স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে যেন অনুষ্ঠান পালন করতে পারে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে