শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হেপাটাইটিস ই এখনই সময়

য় যাযাদি হেলথ ডেস্ক
  ২০ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

হেপাটাইটিস ভাইরাসগুলোর অন্যতম হচ্ছে ই ভাইরাস। সিরোসিস আর লিভার ক্যান্সারের ভয়াবহতা আর এসবের জন্য দায়ী হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস নিয়ে মাতামাতিতে আমরা প্রায়ই ই ভাইরাসকে ভুলে যাই। অথচ তৃতীয় বিশ্বের আরও অনেক দেশের মতোই বাংলাদেশেও জন্ডিসের প্রধান কারণ হেপাটাইটিস ই ভাইরাস। হেপাটাইটিস বি অথবা সি ভাইরাসের মতো হেপাটাইটিস ই অবশ্য লিভার সিরোসিস বা ক্যান্সার রোগ তৈরি করে না। আর ই ভাইরাসে আক্রান্ত অনেকেই যে আপনাআপনি সেরেও যান, এ কথাটাও ঠিক। তাই বলেই ভাইরাসকে হেলাফেলা করার কোনো উপায় নেই। এ কথা আজ প্রতিষ্ঠিত যে আমাদের মতো দেশগুলোয় লিভার ফেইলিওরের প্রধান কারণ হেপাটাইটিস ই ভাইরাস। বিশেষ করে গভর্বতী মাও আগে থেকে লিভার রোগে আক্রান্ত কারও যদি হেপাটাইটিস ই হয় তবে তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকিটা সবচেয়ে বেশি। আমাদের গবেষণায় আমরা দেখেছি, গভর্বতী মায়েদের বেলায় হেপাটাইটিস ই জনিত লিভার ফেইলিওরে মৃত্যুর হার প্রায় একশ ভাগ। এমনকি আগে থেকে কোনো লিভার রোগ নেই এমন ব্যক্তিদের বেলায়ও এ দেশে লিভার ফেইলিওরের প্রধান কারণ হেপাটাইটিস ই ভাইরাস। আমাদের দেশে পরিচালিত গবেষণায় আমরা এ কথার প্রমাণ পেয়েছি।

হেপাটাইটিস ই পানিবাহিত একটি ভাইরাস। বলার কারণ এই যে, পাশ্চাত্য ও জাপানে পরিচালিত গবেষণায় এখন জানা গেছে যে রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমেও হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসের মতো হেপাটাইটিস ই ভাইরাসও ছড়াতে পারে। পাশাপাশি পৃথিবীর অনেক দেশেই পশুপাখির মাধ্যমেও হেপাটাইটিস ই সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ভারতে গবেষকরা অবশ্য এর প্রমাণ পাননি। আমাদের দেশে এখনো এ নিয়ে কোনো কাজ করা না হলেও আমরা শিগগিরই এ নিয়ে একটি গবেষণা শুরু করতে যাচ্ছি।

প্রশ্ন জাগতে পারে, বন্যা ও সিডর পরবতীর্ আজকের এ দুযোর্গময় সময়েয় সবাই যখন ত্রাণ আর পুনবার্সনে ব্যস্ত তখন হঠাৎই হেপাটাইটিস ই নিয়ে পাতা ভরানোর কী হলো? উত্তরটা খুব সহজ-হেপাটাইটিস ই-এর মৌসুমও এটাই। আধুনিক বিজ্ঞানের জানা তথ্য মতে পৃথিবীতে হেপাটাইটিস ই-এর প্রথম মহামারীটি হয়েছে ৫০-এর দশকের মাঝামাঝি দিল্লিতে। এ সময় প্রায় ২৯ হাজার লোক হেপাটাইটিস ই-তে আক্রান্ত হয়। আর হেপাটাইটিস ই-এর সবচেয়ে দীঘর্স্থায়ী মহামারীটি দেখা দিয়েছিল চীনের জিনজিয়ানে ১৯৮৬ সালে যা স্থায়ী হয়েছিল প্রায় ২০ মাস আর এতে আক্রান্ত হয়েছিল প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার লোক। প্রতিটি ক্ষেত্রেই এ মহামারীগুলো দেখা দিয়েছিল কোনো একটি বন্যার পর। ভারতীয় উপমহাদেশ, দক্ষিণ-পূবর্ এশিয়া, আফ্রিকা আর রাশিয়ারÑ এসব দেশের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়Ñ হয় বষার্কাল অথবা কোনো বন্যা বা জলোচ্ছ¡াসের পরপরই হেপাটাইটিস ই মহামারী দেখা দেয়। এর সবের্শষ উদাহরণ সুনামি উত্তর ইন্দোনেশিয়া। আমাদের দেশেও ঢাকা শহরের বুকে খোদ ঢাকা ইউনিভাসিির্টর ছাত্রাবাসগুলোয় গত বন্যার পর ব্যাপকহারে হেপাটাইটিস ই ছড়িয়ে পড়েছিল। আর এর প্রধান কারণ বন্যার সময় স্যুয়ারেজ লাইন আর কঁাচা-পাকা টয়লেটের বজর্্য, খাবার পানি সরবরাহ লাইন আর পাশাপাশি পুকুর-জলাশয় ইত্যাদি দূষিত হয়ে পড়া।

সাধারণত এ ভাইরাস শরীরে ঢোকার মোটামুটি এক মাস পর এ রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। অতএব, সিডর উত্তর পরিস্থিতিতে আমরা কি আরেকটি হেপাটাইটিস ই-এর মহামারীর মুখোমুখি হতে যাচ্ছি কিনা তা বলার সময় এখনো বাজারে নেই। নেপালে সম্প্রতি হেপাটাইটিস ই ভ্যাকসিনের যে ট্রায়ালটি হয়েছে তাও সম্ভবত দীঘর্স্থায়ী প্রতিরক্ষা দেয় না বলেই প্রাথমিক পযের্বক্ষণে দেখা যাচ্ছে। অতএব, বঁাচতে হলে জানতে হবে এ ভাইরাস প্রতিরোধের উপায় আর তা হলো ফুটিয়ে পানি খাওয়া। ইদানীংকার খুব জনপ্রিয় ফিল্টারগুলো হেপাটাইটিস ই ভাইরাস ফিল্টার করতে পারে না। ফুটিয়ে পানি খাওয়া আর বেছে, বুঝে পানি খাওয়ার তাই কোনো বিকল্প নেই। এতে শুধু হেপাটাইটিস ই-ই নয়, বরং টাইফয়েড আর ডায়রিয়ার মতো আরও অনেক পানিবাহিত রোগ থেকেই বঁাচা যাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<18339 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1