শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জার্মানিতে ইসলামের আইনগত পরিস্থিতি

নতুনধারা
  ১২ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

জার্মান সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতার গ্যারান্টি দেয়া আছে। কিন্তু খ্রিষ্টীয় বা ইহুদি সম্প্রদায়গুলো যে ধরনের প্রশাসনিক স্বীকৃতি পেয়েছে, মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষে তা পাওয়া দুষ্কর। জার্মানির 'বুনিয়াদি আইন'-এর চার নম্বর সূত্র বলছে, 'ধর্মের স্বাধীনতা, বিবেকের স্বাধীনতা এবং নিজের ধর্মীয় বা দার্শনিক বিশ্বাস ব্যক্ত করার অধিকার অলঙ্ঘনীয়।'

অবাধ ধর্মাচরণের স্বাধীনতারও গ্যারান্টি দেয়া হয়েছে। সংবিধানের তিন নম্বর সূত্র অনুযায়ী ধর্মবিশ্বাস বা ধর্মীয় মতামতের কারণে কারও বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ করা চলবে না। সংবিধানে গ্যারান্টিকৃত অন্যান্য বুনিয়াদি অধিকারের মতোই ধর্মীয় স্বাধীনতার সীমা হলো, যেখানে ধর্মীয় স্বাধীনতা মানব মর্যাদা বা অপরের বুনিয়াদি অধিকার লঙ্ঘন করে; অথবা যখন মুক্ত গণতন্ত্রের হানি ঘটানোর জন্য ধর্মীয় স্বাধীনতার অপব্যবহার করা হয়।

ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়, ওই সম্প্রদায়কে 'পাবলিক ল' করপোরেশন' বা পিএলসি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হবে কিনা; জার্মানি দুটি মুখ্য খ্রিষ্টীয় সম্প্রদায়, ক্যাথলিক গির্জা ও প্রটেস্টান্ট গির্জার যে স্বীকৃতি আছে। এর ফলে রাষ্ট্রসংশ্লিষ্ট গির্জাটির হয়ে ওই গির্জার সদস্যদের কাছ থেকে 'গির্জা কর' সংগ্রহ করে থাকে। কেন্দ্রীয়ভাবে সংগঠিত একটি দেশব্যাপী কাঠামো না থাকার ফলে জার্মানিতে ইসলাম ধর্ম বা মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষে পিএলসির মর্যাদা পাওয়া সমস্যাকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

১৯৭৩ সালে এক ইহুদি একটি জার্মান আদালতে সাক্ষ্য দিতে চাননি, কেননা বিচারকক্ষে একটি ক্রুশ ঝুলছিল: তার আপত্তিকে মান্য করা হয়। এর ২২ বছর পরে ১৯৯৫ সালে জার্মান সাংবিধানিক আদালত একটি রায় দেয়, যা অনুযায়ী রোমান ক্যাথলিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া বাদবাকি মুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্রুশের মতো ধর্মীয় প্রতীক প্রদর্শন করাটা বেআইনি বলে বিবেচনা করা হয়। সে পর্যন্ত বিশেষ করে মুসলিম শিক্ষিকাদের সরকারি স্কুলে হিজাব পরিধান ও সাধারণভাবে মুসলিম মহিলাদের প্রকাশ্য স্থানে বোরকা পরিধান নিয়ে বারবার বিচার বিভাগীয় প্রক্রিয়া ও বিতর্কের অবতারণা ঘটেছে।

অন্যদিকে জার্মানিতে হাই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য যৌনশিক্ষা অথবা বিবর্তনবাদের ক্লাসে যাওয়াটা বাধ্যতামূলক, ধর্মীয় কারণে তা থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো উপায় নেই। ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানো অভিভাবকদের পক্ষে বাধ্যতামূলক; ধর্মীয় কারণে তাদের বাড়িতে রেখে পড়াশোনা করানো আইনগতভাবে অবৈধ।

ইসলাম জার্মানিতে 'এন্টিটি আন্ডার পাবলিক ল', অর্থাৎ সার্বজনিক আইন দ্বারা স্বীকৃত ধর্মীয়গোষ্ঠী নয়। এ ক্ষেত্রে মূল বাধা হলো জার্মানিতে ইসলামের বিভিন্ন ধারার অনুগামীদের উপস্থিতি: সুন্নি, শিয়া, আলাওয়াইট, আহমদি, সুফি, ইবাদি ও অপরাপর নানা সম্প্রদায়ের মুসলিম এখানে বাস করেন।

দ্বিতীয়ত, জার্মানিতে মুসলিমদের মাত্র ২০ শতাংশ কিংবা তার কিছু বেশি বিভিন্ন মুসলিম সমিতি ও তথাকথিত 'আমব্রেলা বা গোষ্ঠী সংগঠনগুলোর সদস্য। জাতি ও সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে সৃষ্ট এই সব সমিতির ভিত্তি হলো সমিতি গঠনসংক্রান্ত আইন, যদিও তারা জার্মান সংবিধানের সাত নম্বর সূত্রের তৃতীয় অনুচ্ছেদ অনুযায়ী 'ধর্মীয় সমাজ' হিসেবে স্বীকৃতি পেতে, এমনকি পিএলসি হিসেবে স্বীকৃতি পেতে সচেষ্ট। আবার ঠিক ওই বৈচিত্র্যের কারণেই রাষ্ট্র অর্থাৎ ফেডারাল বা রাজ্য সরকারগুলো ইসলামকে পিএলসি হিসেবে স্বীকৃতি দিতে রাজি নন।

অন্যদিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা প্রশ্ন তুলেছেন, খ্রিষ্টীয় গির্জাগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রের বোঝাপড়া হিসেবে সৃষ্ট 'রাষ্ট্র-গির্জা-আইন' আজকের জার্মানিতে সমসাময়িক কিনা। যে ধরনের কেন্দ্রীয় সংগঠন ও নিয়মিত, নথিবদ্ধ সদস্যতা থেকে একটি বা একাধিক কেন্দ্রীয় ইসলাম সংগঠন সৃষ্টি হতে পারে, যাদের সঙ্গে সরকার আলাপ-আলোচনা চালাতে পারবেন, যেমন শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে চালিয়ে থাকেন। মুসলিমদের সে ধরনের সংঘবদ্ধতা বা সংগঠন জার্মানির ক্ষেত্রে অলীক। কিন্তু তা বলে জার্মানিতে যে ৪৪ থেকে ৪৭ লাখ মুসলিমের বাস সর্বাধুনিক জনসংখ্যাগত জরিপ যা বলছে দীর্ঘমেয়াদি সূত্রে তাদের সমষ্টিগত দাবি-দাওয়াকে বিবেচনা করার কোনো না কোনো পন্থা উদ্ভাবন করা অত্যাবশ্যক হয়ে উঠতে পারে।

\হডয়েচে ভেলে অবলম্বনে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<40504 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1