শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্টারনেট ব্যবহার করে নারীদের সবজি বিপস্নব

ইব্রাহিম খলিল
  ১১ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

জেলার সুন্দরবনসংলগ্ন শ্যামনগর উপজেলার নারীরা স্মার্টফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে গুগলের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে সবজি চাষে সফলতা পাচ্ছেন। নোনা এলাকায় বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম্পূর্ণ বিষমুক্ত সবজি চাষ করে পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আয় করছেন বাড়তি অর্থ।

কম খরচে বাড়ির পাশের পতিত জমিতে চাষ করে লাভবান হওয়ায় দিনে দিনে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এ পদ্ধতি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে অর্থনীতিতে আরও অবদান রাখতে পারবেন এ অঞ্চলের নারীরা।

জানা যায়, ২০০৯ সালের প্রলয়ঙ্করী আইলার প্রবল জলোচ্ছ্বাস উপকূলীয় জেলা শ্যামনগরে নোনা পানির জন্য চাষাবাদ হুমকির মুখে পড়ে। হতাশার কালো মেঘ ভর করে এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে।

পরে অস্ট্রেলিয়ার মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে, অক্সফ্যামের সহযোগিতায় সুশীলন রি-কল প্রকল্প নারীদের নিয়ে কাজ শুরু করে।

এ প্রকল্পের মাধ্যমে শ্যামনগর উপজেলার বড়কুপট গ্রামে ১০০ জন নারী কৃষানিকে স্মার্টফোন বিতরণ, ফোন ব্যবহারের ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান, ফেসবুক আইডি খুলে দেয়া, মোবাইলে মেগাবাইট সরবরাহ করা, ফোনের মাধ্যমে উপজেলা কৃষি অফিস, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার ও প্রতীক কল সেন্টার, প্রতীক এসএমএস ও প্রতীক ভয়েস এসএমএসের মাধ্যমে কৃষি তথ্য সংগ্রহ করে সবজি চাষ করা বিষয়ে ব্যবহার করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এ অঞ্চলের নারীরা।

জেলার শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের বড়কুপট গ্রামের লবণাক্ততার কারণে এক সময় শাক-সবজি চাষ করতে পারতেন না চাষিরা। চাষ করতে না পারায় পতিত থাকত বেশির ভাগ জমি।

বর্তমানে এসব এলাকায় স্মার্টফোনে তথ্যপ্রাপ্তির জন্য কমিউনিটিভিত্তিক নারীদের কৃষি সার্ভিস সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। তারা টাওয়ার বা থ্রি-ডি পদ্ধতি, বস্তাপদ্ধতি (বস্তার মধ্যে মাটি ও জৈব সার মিশিয়ে বস্তার ভেতরে সবজি চাষ), ১.৫ ফুট মাটির নিচে পলিথিন বিছিয়ে জৈব সার প্রয়োগের মাধ্যমে সবজি চাষ, লবণ পানির এলাকায় মাটিতে গর্ত করে পলিথিন ও ত্রিপল বিছিয়ে মিষ্টি পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সবজি চাষ, বাগদা রেণু বহনকারী কর্কসিটে জৈব সার ও মাটি ভরাট করে সবজি চাষ শুরু করে সফলতা পাচ্ছে।

এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে নারীরা বাড়ির পাশে পতিত জমিতে ওলকপি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, বীটকপি, টমেটো, বেগুন, মিষ্টিকুমড়া, লালশাক, পালংশাক, মুলা, গাজর, পুঁইশাক, কচুরমুখী, লাউ, চালকুমড়া, গোলআলু, ঝিঙা, ডাটাশাক, শিম, বরবটি, ঢেঁড়স, পেঁয়াজ, রসুন, ওল, কচু, চিচিঙ্গা ও মরিচসহ বিভিন্ন সবজি উৎপাদন করছে।

এসব সবজিতে আলুর ধসা রোগ, বেগুনের ডগা ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ, টমেটোর নাভি ধসা রোগ, শিম, মরিচ, বরবটি গাছের জাব পোকার আক্রমণ, লালশাক, পালংশাক, মরিচগাছ, টমেটো গাছের ছত্রাকে আক্রমণ বা মাজা পচা রোগের আক্রমণসহ সবজির বিভিন্ন প্রকার রোগ দেখা দিলে প্রতিকারের জন্য স্মার্টফোনের মাধ্যমে গুগোল অ্যাপস বা প্রতীক কল সেন্টার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তা প্রয়োগ করে লবণাক্ত এলাকায় আগের তুলনায় ৪-৫ গুণ পর্যন্ত ফলন বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।

বর্তমানে এ অঞ্চলের নারীরা সংসারের অন্যান্য কাজের পাশাপাশি বাড়ির কাছের পতিত জমিতে সবজি চাষ করে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রয় করে বাড়তি অর্থ আয় করছে।

শ্যামনগরের কৃষানি মমতাজ বেগম বলেন, মোবাইলে প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা সফলতা পেয়েছি। যে কোনো সমস্যা আমরা অ্যাপসের মাধ্যমে সমাধান পেয়ে থাকি। আমরা বিষমুক্ত শাক-সবজি চাষাবাদ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছি। সরকারিভাবে যদি আরও সহযোগিতা পাওয়া যায় তাহলে আমরা লবণাক্ত এলাকায় কৃষি বিপস্নব ঘটাতে পারব।

আইলার পরে নোনা জলে যখন ফসল ফলাতে না পেরে কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েন তখন থেকে তারা কৃষি উন্নয়নে কাজ শুরু করেছেন। বর্তমানে এ অঞ্চলের প্রযুক্তি ব্যবহারে ফলে কৃষির ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তারা নিজেদের পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করেও বাড়তি টাকা আয় করতে সক্ষম হচ্ছেন। এ অঞ্চলের কৃষক-কৃষানিরা স্মার্টফোন ব্যবহার করে শাক-সবজি চাষ করছেন। এর মাধ্যমে সহজেই তারা প্রযুক্তিগুলো পাচ্ছে। সেগুলো মাঠপর্যায়ে প্রয়োগ করছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কয়েকটি জনপ্রিয় অ্যাপস রয়েছে সেগুলো কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছি। মাঠপর্যায়েও এই অ্যাপসগুলোর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। দ্রম্নত সময়ের মধ্যেই সাতক্ষীরা কৃষকরা এই অ্যাপস ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন করবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<40363 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1