ভারতের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে প্রথম দফায় বৃহস্পতিবার নিজেদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর শুক্রবার দ্বিতীয় দফা প্রকাশ করেছে বিজেপি। দু'দফা মিলিয়ে ২১৮ জনের তালিকায় সবার প্রথমে নাম রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। গতবারের কেন্দ্র উত্তরপ্রদেশের বারানসি থেকেই প্রার্থী হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। এবারও দুটি আসনে প্রার্থী হবেন তিনি। সংবাদসূত্র : এবিপি, এনডিটিভি
বিজেপি সূত্রের খবর, প্রার্থীরা তো রয়েছেনই, তবে দলের প্রচারের প্রধান মুখ নরেন্দ্র মোদিই। তার নামেই দল মানুষের কাছে ভোট চাইবে। আর তার জন্য দেশের প্রতিটি রাজ্যে সভা করবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। এরই ধারাবাহিকতায় ভারতজুড়ে প্রধানমন্ত্রী কমপক্ষে ১৬২টি নির্বাচনী জনসভা করবেন। সেই জনসভার দৌড় শুরু হবে আগামী ২৮ মার্চ উত্তরাখন্ডের রুদ্রপুর থেকে। সেদিনই দেরাদুন ও হরিদ্বারে জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।
জানা গেছে, মোদির নির্বাচনী জনসভা গতি পাবে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে। তিনি দিনে পাঁচ থেকে সাতটি জনসভা করবেন, এমন ভাবনা-চিন্তা নিয়েই প্রচার কর্মসূচি তৈরি করা হচ্ছে। জনসভার সঙ্গে সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়াতেও জোরকদমে প্রচার চালাবেন তিনি। প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কংগ্রেসকে আক্রমণের জন্য জনসভার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়াকেও (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম) হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার কাজও তিনি শুরু করে দিয়েছেন। এর মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য 'ম্যায় ভি চৌকিদার' প্রচার শুরু হয়েছে।
আগামী ৩১ মার্চ টুইটার পস্ন্যাটফর্মে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে সবাই সরাসরি প্রশ্ন করতে পারবেন। বিজেপি এবারের প্রচারের যে রণনীতি তৈরি করেছে, তাতে মোদিকেই প্রধান মুখ হিসেবে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মতোই লোকসভা ভোটে হাওয়া তুলতে চাইছে দলটি।
দলের প্রচার কমিটির প্রধান দায়িত্বে রয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ জেটলি। তিনি এবার নির্বাচনে দিলিস্নর সদর দপ্তরে বসেই প্রচারের 'ওয়ার রুম' সামলানোর কাজ করবেন বলে জানা গেছে। লোকসভা নির্বাচনে জেটলিও প্রার্থী হচ্ছেন না বলেই বিজেপি সূত্রে খবর মিলেছে। তার শারীরিক অবস্থার কারণেই এই সিদ্ধান্ত। চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠলেও সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েই গেছে। তাই ভোটের ময়দানে সরাসরি না নেমে দপ্তর থেকেই প্রচারের 'কামান' সামলানোর ভার তার হাতে দেয়া হয়েছে। সেই কাজও তিনি শুরু করে দিয়েছেন। প্রতিদিনই সদর দপ্তরে দলের মন্ত্রী থেকে নেতাদের সঙ্গে প্রচারের কৌশল নিয়ে কথা বলছেন।
গুজরাটের গান্ধীনগর আসন থেকে প্রার্থী হচ্ছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। লোকসভায় এবারই প্রথম প্রার্থী হচ্ছেন শাহ। দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য লালকৃষ্ণ আদভানির পরম্পরাগত আসন গান্ধীনগর থেকে অমিত শাহের প্রার্থী হওয়া তাৎপর্যপূর্ণ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ও পরিবহনমন্ত্রী নীতিন গড়কড়ি তাদের আগের আসন যথাক্রমে লক্ষ্নৌ এবং নাগপুর থেকেই প্রার্থী হচ্ছেন।
আরেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিও এবার কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে আমেথি থেকেই প্রার্থী। গত লোকসভা নির্বাচনে এক লাখ ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন স্মৃতি। তারপরও এবার রাজ্যসভার সদস্য ও দলের তারকা প্রচারক স্মৃতির ওপরেই বাজি রেখেছে দল।
দ্বিতীয় দফায় প্রার্থী তালিকায় আছেন অন্ধ্রপ্রদেশ, আসাম, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা ও মেঘালয়ের প্রার্থীরা। এর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো ওড়িশার আসন, সেখান থেকে প্রার্থী হয়েছেন সুরেশ পূজারী। পুরী কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছেন বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র। পুরীতে মোদিকে প্রার্থী করার জন্য দাবি জানিয়েছিলেন ওড়িশার নেতারা। কিন্তু সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে পুরী থেকে সম্বিত পাত্রকেই প্রার্থী করা হয়। গতবার মোদি বারানসি ছাড়াও ভদোদরায় প্রার্থী হয়েছিলেন।
বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জে পি নাড্ডা জানান, প্রথম দুই পর্বের ভোটের প্রায় সব কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়ে গেছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই বাকি আসনের প্রার্থীর নামও ঘোষণা হয়ে যাবে বলে জানা গেছে।