শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পশ্চিমবঙ্গে সাফল্যের বীজ ২০১৫ সালেই পুঁতেছিল বিজেপি

যাযাদি ডেস্ক
  ২৫ মে ২০১৯, ০০:০০
বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ

চার বছর আগে ২০১৫ সালেই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সাফল্যের 'রাজনৈতিক বীজ' পোঁতা শুরু হয়েছিল। কলকাতার শরৎ সদনে পূর্বাঞ্চলের ছয় রাজ্যের শীর্ষ বিজেপি নেতাদের নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছিলেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি সেখানে হাজির ছিলেন আসাম, ওড়িশা, সিকিম, আন্দামান-নিকোবর, ঝাড়খন্ডের প্রতিনিধিরাও। সংবাদসূত্র : ইনডিয়ান এক্সপ্রেস

অমিত শাহের স্পষ্ট বার্তা ছিল, কেন্দ্রে ফের মোদি সরকারকে ক্ষমতায় আনতে হলে পূর্বাঞ্চলকে উলেস্নখযোগ্য ভূমিকা নিতে হবে। তারপর থেকেই পশ্চিমবঙ্গের ওপর বাড়তি নজর দেয়া শুরু করেন মোদি-শাহ। ওই বছরের মাঝামাঝি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক করে পাঠানো হয়।

তারপরই অক্টোবর মাসে রাহুল সিনহাকে সরিয়ে দিলীপ ঘোষকে রাজ্য বিজেপির সভাপতি পদে বসান অমিত শাহ। ওই বছর থেকেই রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমল চট্টোপাধ্যায়ের ডানা ছাঁটা শুরু করে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)। সংগঠনের রাশ তুলে দেয়া হয় তৎকালীন সহ-সংগঠন সম্পাদক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের হাতে। যার হাতে পরবর্তী সময়ে সংগঠনের সর্বময় ক্ষমতা তুলে দেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) রামলাল।

সেই থেকে যাত্রা শুরু। কৈলাস-দিলীপ-সুব্রতরা নিজেদের মতো করে 'টিম' তৈরি করতে শুরু করেন। দিলীপ ঘোষ কলকাতার পার্টি অফিসে চা-বাদাম খেয়ে সময় নষ্ট না করে জেলা চষা শুরু করেন। সুব্রত চট্টোপাধ্যায় আরএসএসের সহযোগিতায় সংগঠনকে মজবুত করার কাজ শুরু করেন। দায়িত্ব নেয়ার কিছুদিন পরই কৈলাস বুঝে যান, বাংলায় পদ্ম ফোটাতে গেলে জোড়াফুল শিবিরে ভাঙন ধরাতে হবে। সেই মতো ওই সময় থেকে তৃণমূলের প্রথম সারির একাধিক নেতাকে টোপ দিতে শুরু করেন মধ্যপ্রদেশের এই নেতা।

এরই মধ্যে সারদা-নারদা কান্ডে বিদ্ধ মুকুল রায় দিলিস্নতে বিজেপির একাধিক হেভিওয়েট কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন। মওকা বুঝে মুকুলকে কার্যত 'পাখির চোখ' করেন কৈলাস। এরপর চলে আসে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোট। দিলীপ ঘোষকে নামিয়ে দেয়া হয় খড়গপুর আসনে। যার প্রতিদ্বন্দ্বী রাজ্যের রেকর্ড সময়ের বিধানসভার সদস্য থাকা বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা জ্ঞানসিং সোহম পাল। সেই ভোটে দ্বিতীয়বারের জন্য বিশাল জয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বসলেও তিনটি আসন জিতে নেয় বিজেপি। বিধানসভার নিরিখে যা এ রাজ্যে গেরুয়া শিবিরের সর্বকালীন রেকর্ড সাফল্য। দিলীপ ঘোষ ছাড়াও উত্তরবঙ্গের মাদারিহাট এবং বৈষ্ণবনগর বিজেপির ঝুলিতে ঢুকে যায়।

তারপর থেকেই উত্তরবঙ্গ এবং জঙ্গলমহলে বিজেপি নিজেদের আধিপত্য বিস্তার শুরু করে। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে মুকুল রায় যোগ দেন বিজেপিতে। দিলিস্নর গেরুয়া নেতাদের নির্দেশে তৃণমূলের ঘর ভাঙার কাজে মন দেন মুকুল। তবে লোকসভা ভোটের আগ পর্যন্ত শাসক শিবিরের বড় নেতাদের ভাঙাতে না পারলেও জেলায় জেলায় তৃণমূলের নিচুতলার সংগঠকদের গেরুয়া শিবিরে নিয়ে আসেন তিনি। আক্ষরিক অর্থে তৃণমূল ভাঙতে না পারলেও দলের মধ্যে একটা অবিশ্বাস্যের বাতাবরণ তৈরি করে ফেলতে পুরোপুরি সফল হয়েছিলেন মুকুল।

অন্যদিকে, পঞ্চায়েত ভোটে অধিকাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় এবং ভোট না দিতে পারার ক্ষোভ ছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে। বিজেপির 'রথযাত্রা'র অনুমতি না দেয়া নিয়েও ক্ষোভ ছিল। রামনবমী-হনুমান জয়ন্তী নিয়ে গেরুয়া শিবিরের প্রতি জনগণের আকর্ষণ বাড়ে। সব মিলিয়ে বিজেপির জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গে।

সবশেষে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহসহ কেন্দ্রীয় নেতারা ৮০টি নির্বাচনী সভা করে প্রচারের ঝড় তোলে। তারই ধারাবাহিকতায় পুরোপুরি মেরুকরণের রাজনীতিকে অস্ত্র করে সপ্তদশ লোকসভায় আশাতীত সাফল্য

মিলেছে পশ্চিমবঙ্গে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<51012 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1