শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আমেথিতে রাহুলের হারের নেপথ্যে

যাযাদি ডেস্ক
  ২৫ মে ২০১৯, ০০:০০
কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী

ভারতের উত্তরপ্রদেশের আমেথি আসন মূলত কংগ্রেসের দুর্গ। অনেকের কাছে আসনটি গান্ধী পরিবারের রাজনৈতিক ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধীর বাবা ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী ওই আসন থেকে জিতেই ক্ষমতায় বসেছিলেন। ২০০৪ সাল থেকে এ আসনে টানা নির্বাচিত হয়ে লোকসভায় প্রতিনিধিত্ব করছেন রাহুল। কিন্তু এবার শোচনীয় পরাজয় ঘটল তার।

৩৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজেপির কেন্দ্রীয় টেক্সটাইল বিষয়ক মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির কাছে হেরে গেলেন রাহুল গান্ধী। তিনি মোট ভোট পেয়েছেন তিন লাখ ৩১ হাজার ৩০৫টি। স্মৃতি ইরানি পেয়েছেন তিন লাখ ৭৮ হাজার ৮৬৩ ভোট। আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার আগেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে পরাজয় স্বীকার করে নিয়ে স্মৃতিকে অভিনন্দন জানান রাহুল গান্ধী।

এক কোটি চার লাখের বেশি ভোটার রয়েছে আমেথি আসনে। এ বছর নির্বাচনে ভোট পড়ে ৫৩ শতাংশ, যেখানে ২০১৪ সালে পড়েছিল ৫২.৩৮ শতাংশ ভোট। গত ১৫ বছরে এখান থেকে তিনবার লোকসভার প্রতিনিধি হয়েছেন রাহুল গান্ধী। স্থানীয়দের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় তিনি। এর কারণ, নেহরু-গান্ধী পরিবারের প্রতি মানুষের আবেগ।

কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এ আসনের ক্ষমতায় থাকার পরও এত বড় পরাজয় কেন হলো রাহুলের? ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, স্মৃতি ইরানি এবার আমেথিতে জোর প্রচার চালিয়েছিলেন। এই আসনে ২০১৪ সালে তিনি পরাজিত হলেও, রাহুলের জয়ের ব্যবধান কমে দাঁড়িয়েছিল প্রায় এক লাখ ভোটে। তারপরও এ বছর স্মৃতির ওপর বিজেপির আস্থা ছিল।

২০১৪ সালের পরাজয়ের পর থেকে অনবরত আমেথিতে এসেছেন স্মৃতি। ভোটদানের দিন এক টুইটে তিনি বলেন, 'রাহুল গান্ধী হাজির হয়েছেন বুথ ক্যাপচার করতে। রাহুল গান্ধীকে জবাব দিতে হবে, চুরি তো আগেই করেছেন, এবার ভোট চুরি করতে এসেছেন।'

বিজেপির ভোট অস্থিতিশীল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় কংগ্রেস ও বিজেপি দুই পক্ষকে মাঠ ছেড়ে দিয়ে সমাজবাদী পার্টি- এসপি ও বহুজন সমাজ পার্টি- বিএসপির জোট এই আসনে কোনো প্রার্থী দেয়নি। ভোট গ্রহণের কয়েক দিন আগে বিএসপি-প্রধান মায়াবতী বলেন, 'আমরা আমেথি ও রায়বেরেলি কেন্দ্রে প্রার্থী না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই, যাতে বিজেপি-আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত শক্তির ক্ষমতা কমে। আর দুই বর্তমান এমপি (সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধী) আরেকবার ভোটে লড়তে পারেন।' মায়াবতীর এ বক্তব্যের উত্তরে কংগ্রেস ঘোষণা দেয়, বিএসপি-এসপি-আরএলডি মহাজোটের বিরুদ্ধে সাতটি কেন্দ্রে প্রার্থী দেবে না তারা।

এবারের লোকসভা নির্বাচনে যেসব আসনের ফল নিয়ে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল, আমেথি সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই আসনটির প্রতি আগ্রহ এতটাই বেশি যে, অনেক আগে থেকেই এখানে নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়ে যায়। জয়ের জন্য বিজেপি যে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে, তা গত ৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের সময় বোঝা গিয়েছিল। প্রথমবারের মতো আমেথি সফরে এসে মোদি বলেছিলেন, কংগ্রেস রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার সঙ্গে আপস করেছে। সেই সঙ্গে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের নানা চাহিদা অমীমাংসিত রয়েছে। স্মৃতিকে পাশে নিয়ে মোদি ঘোষণা দেন, এখানে একটি একে-২০৩ রাইফেল বানানোর কারখানা খোলা হবে। সব প্রতিরক্ষা বাহিনী ব্যবহার করবে 'মেড ইন আমেথি' রাইফেল। এছাড়া যোগী আদিত্যনাথ এবং অমিত শাহ কেন্দ্রে রোড শো এবং জনসভা করেন।

তবে কংগ্রেসও যে লড়াইয়ের মাঠ থেকে সরে এসেছে তাও নয়। রাহুল বেশ কয়েকবার আমেথিতে গেছেন। কৃষকদের সঙ্গে দেখা করেছেন। এছাড়া একাধিক প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন তিনি। প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও রাহুলকে জেতানোর জন্য নানা ধরনের কৌশল নির্মাণে সাহায্য করেছেন।

কেরালার ওয়ানাড়ে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর রাহুল আমেথিতে অনুপস্থিত- এমন অভিযোগ তুলে তাকে নিশানা করে বিজেপি। ওয়ানাড় থেকে লড়ার সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করে স্মৃতি ইরানি বলেন, 'অনুপস্থিত এমপি মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।' রাহুলের ওয়ানাড়ে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে অন্য রকম ব্যাখ্যাও দেয় কংগ্রেস। তারা বলে, দক্ষিণের ভোটারদের আশ্বস্ত করা ছাড়া রাহুলের ওয়ানাড়ে প্রার্থী হওয়ার আর কোনো কারণ ছিল না। তবে ভোট গ্রহণের দিনও আমেথিতে অনুপস্থিত ছিলেন রাহুল। আর সরবে উপস্থিত ছিলেন স্মৃতি। সংবাদসূত্র: এবিপি নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<51017 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1