শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাশ্মীর :জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ তরুণরা

নতুনধারা
  ১০ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০
ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ ছাত্রীরাও -ফাইল ছবি

যাযাদি ডেস্ক

ভারতশাসিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত প্রকাশ করার আগেই সেখানে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয় এবং ওই অঞ্চলকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। গত কয়েকদিনে কাশ্মীর থেকে কিছু বিক্ষোভের খবর পাওয়া যাচ্ছে। কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর ঢিল ছুড়ে এবং মিছিল করে মানুষজন বিক্ষোভ করেছে।

অনুচ্ছেদ ৩৭০-এর বৈধতা এবং এর বিলোপের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে গত কয়েকদিনে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুমুল তর্ক-বিতর্ক হলেও এ বিষয়ে যাদের মতামত সবচেয়ে গুরুত্ব বহন করার কথা ছিল- সেই কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের বক্তব্যই উঠে আসেনি।

কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে যেখানে ভারত সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভের কথাই জানা গেছে। অতিরিক্ত নিরাপত্তা উঠিয়ে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ করতে রাস্তায় নেমে আসবে বলে মনে করেন সেখানকার বাসিন্দারা। ক্ষমতাসীন বিজেপির একজন সিনিয়র মুসলমান নেতাও নাম প্রকাশ না করার শর্তে একই মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তার মতে, কাশ্মীরিরা ঘটনার আকস্মিকতায় এখনো খানিকটা ঘোরের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু খুব শিগগিরই উপত্যকা ক্ষোভে ফেটে পড়বে বলে মনে হচ্ছে।

শ্রীনগরের বাইরে কাশ্মীরের অন্যান্য অংশেও মানুষের মধ্যে একই ধরনের ক্ষোভ কাজ করছে। উত্তর কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলায় স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে তেমন মনোভাবই বোঝা গেছে। কিন্তু ভারতশাসিত কাশ্মীরের মানুষের মধ্যে এত তীব্র ভারত বিদ্বেষ কেন?

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের সময় মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর ছিল হিন্দু রাজা হরি সিংয়ের অধীনে। দুই দেশ স্বাধীনতা লাভের পর পাকিস্তানের সশস্ত্র গোষ্ঠীরা কাশ্মীরে প্রবেশের চেষ্টা করলে তিনি ভারতের সাহায্য চান। সে সময় ভারত-পাকিস্তান প্রথম দফা যুদ্ধ হয়। কাশ্মীরের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ভারত দখল করে নেয়। এরপর কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ১৯৬৫ সালে বড় ধরনের যুদ্ধে জড়ায় ভারত ও পাকিস্তান।

১৯৭২ সালে সিমলা চুক্তির মাধ্যমে ভারতশাসিত কাশ্মীর এবং পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের মধ্যে যুদ্ধবিরতি রেখাকে 'লাইন অব কন্ট্রোল' হিসেবে স্বীকৃতি দেয় দুই দেশ। ১৯৮৯ সাল থেকে কাশ্মীর উপত্যকায় ভারত শাসনের বিরুদ্ধে শুরু হয় সশস্ত্র লড়াই। এরপর নব্বইয়ের দশকে নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর সঙ্গে জঙ্গি এবং কাশ্মীরের বেসামরিক নাগরিকদের সশস্ত্র সংঘাতে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়। কাশ্মীরীদের মধ্যে তীব্র রূপ নিতে থাকে ভারতের শাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ। কাশ্মীরের অনেক মানুষের মধ্যেই তখন ভারতের শাসনের চেয়ে স্বাধীনতা বা পাকিস্তানের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিকে প্রাধান্য দেয়। কাশ্মীরের তরুণদের মধ্যে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বাড়তে থাকে। ভারত সবসময় অভিযোগ করে এসেছে, কাশ্মীরের জঙ্গিবাদের উত্থানের পেছনে সহায়তা করেছে পাকিস্তান, যেই অভিযোগ পাকিস্তান সবসময়ই অস্বীকার করে এসেছে।

একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দশকে কাশ্মীরে চলতে থাকা সহিংসতা এবং উত্তেজনা ১৯৮০ বা ১৯৯০-এর দশকের তুলনায় কিছুটা কম থাকলেও একেবারে স্তিমিত হয়ে যায়নি। ২০১৩ সালে ভারতের পার্লামেন্ট ভবনে বোমা হামলার দায়ে কাশ্মীরের এক জঙ্গি নেতা আফজাল গুরুর ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর থেকে কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী জঙ্গি সংগঠনগুলো সক্রিয় হতে শুরু করে। নব্বইয়ের দশকে বা একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে যেসব জঙ্গি কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত হতো মূলত পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর ই-তৈয়্যবা বা জইশ-ই-মোহাম্মদের দ্বারা।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে যেখানে ২৮ জন কাশ্মীরী বেসামরিক নাগরিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল, ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬০ জনে এবং ২০১৫ সালে সেই সংখ্যা হয় ৬৬। জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো ও ভারতীয় নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সংঘাত চরম আকার ধারণ করে ২০১৬ সালে বুরহান ওয়ানি নামের এক জঙ্গি নেতার মৃতু্যর পর। ২২ বছর বয়সি বুরহান ওয়ানির ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা ছিল কাশ্মীরের মানুষের মধ্যে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর গুলিতে তার মৃতু্যর পর থেকে সেখানকার জঙ্গিগোষ্ঠী এবং নিরাপত্তা রক্ষীদের মধ্যে সংঘাত তুঙ্গে ওঠে। শুধু ২০১৮ সালেই সেনা সদস্য, বেসামরিক নাগরিক ও সন্দেহভাজন জঙ্গিসহ পাঁচ শতাধিক মানুষ মারা যায় কাশ্মীরের বিভিন্ন অঞ্চলে। এই জঙ্গিদের জানাজা অনুষ্ঠান তরুণদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করতে বড় ভূমিকা রাখে বলে মনে করা হয়।

২০১৬ সালে লস্কর ই-তৈয়্যবার কমান্ডার আবু কাসিমের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ জমায়েত হয়েছিল। হিজবুল মুজাহিদিনের নেতা বুরহান ওয়ানির জানাজায় মানুষের উপস্থিতি ছিল তার চেয়েও বেশি। প্রতিটি জানাজায় নিহতকে 'নায়কোচিত' সম্মানের সঙ্গে বিদায় জানানো হয়। মৃতের কপালে চুমু খেয়ে কাশ্মীর স্বাধীন করার প্রতিজ্ঞা করে কাশ্মীরি কিশোর-তরুণরা। সমাধিস্থ করার সময় বন্দুকের গুলি চালিয়ে যোদ্ধার সম্মান জানানো হয় নিহত ব্যক্তিকে।

কিশোর-তরুণদের মধ্যে অনেকেই নিয়মিত ভিত্তিতে এসব জানাজায় যোগ দেয়। কাশ্মীরি কিশোরদের অনেকেই এ রকম জানাজার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয় জঙ্গিবাদে জড়ানোর। আর নব্বইয়ের দশকের জঙ্গিদের তুলনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে কাশ্মীরের বর্তমান জঙ্গিদের গ্রহণযোগ্যতাও অনেক বেশি, রীতিমতো নায়কের মর্যাদা পায় তারা। কারণ বর্তমানের জঙ্গিরা সে সময়কার জঙ্গিদের মতো সাধারণ মানুষের ক্ষতি করে না। তারা স্থানীয় ঝামেলায় জড়ায় না, স্থানীয় সরকারের কার্যক্রমেও বাধা দেয় না বা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য অপহরণের মতো কাজও করে না। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<62024 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1