যাযাদি ডেস্ক
নিজের বাড়ি বলতে অনেকের কাছে যেমন এক কামরার ফ্ল্যাট বোঝায়, আবার অনেকেই চায় তার বাড়ি যেন হয় প্রাসাদোপম। কারও আবার পছন্দ নির্জন কোনো জায়গায় ছোট্ট বাড়ি। যদি সবার থেকে দূরে নির্জনে কেবল আপনজনের সঙ্গে থাকার চিন্তা করে থাকেন, তাহলে আপনার জন্য রয়েছে এক আদর্শ বাড়ি। স্কটল্যান্ডের ফির্থ অব ক্লাইডে অবস্থিত সাউন্ড অব বুটের উত্তরে রয়েছে এক দ্বীপ, 'ইঞ্চমারনক'। এই দ্বীপেই রয়েছে সেই বাড়ি, যা হতে পারে আরাধ্য বাসস্থান। এর দাম পড়বে ১২ কোটি পাঁচ লাখ ৩০ হাজার টাকা। দাম শুনে আঁতকে উঠবেন না! এই টাকায় শুধু বাড়িই নয়, কিনে নিতে পারবেন সম্পূর্ণ দ্বীপটিই। আরও মজার বিষয় হলো, এই দ্বীপে বাস করবেন কেবল আপনি! প্রতিবেশীদের জ্বালাতনের হাত থেকে মুক্তি পেতে এর চেয়ে ভালো উপায় আর কী হতে পারে?
৬৬০ একরের এই জমিতে বিশালাকার একটি চার বেডরুমের বাড়ি ছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু ছোট বাড়ি, একটি খামার, নিজস্ব ফেরি ও ফেরিঘাট। জলপথে মূল ভূখন্ড থেকে ১০ মিনিটের দূরত্বে রয়েছে এই দ্বীপ। ১৯৮৬ সালে এই দ্বীপের শেষ বসবাসকারীও বাড়ি বিক্রি করে চলে যান। ১৯৯৯ সালে এক পরিবার এই দ্বীপটি কিনলেও তারা এই বাড়িটিকে ছুটি কাটানোর জন্যই ব্যবহার করতেন। স্থায়ীভাবে বসবাস করেননি কখনো। এখন তারাও বাড়িটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়ায় আরেকবার আলোচনায় উঠে এসেছে এই দ্বীপ।
সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ এই দ্বীপে রয়েছে প্রায় আট কিলেমিটারের দীর্ঘ তটরেখা। তবে শুধু বিশালাকায় বাড়ি বা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যই নয়, এই দ্বীপের পরতে পরতে রয়েছে নানা ইতিহাসও। ব্রোঞ্জ যুগের সমাধি থেকে শুরু করে নানা যুদ্ধের চিহ্ন এখনো রয়েছে এই দ্বীপে।
১৯৬০ সালে এক ব্যক্তি এই দ্বীপেই খুঁজে পান ব্রোঞ্জ যুগের এক পাথরের কবর। সেই কবরে শায়িত এক মহিলার দেহ, যা 'কুইন অব ইঞ্চ' নামে পরিচিত। ওই মহিলার গলায় ছিল একটি লিগনাইটের নেকলেস এবং হাতে ধরা ছিল চকমকি পাথরের ছুরি। সেই দেহ এখনো রয়েছে ওই দ্বীপে। অষ্টাদশ শতকে বহুবার ভাইকিং, অর্থাৎ জলদসু্যদের হাতে আক্রান্ত হয়েছে এই দ্বীপ। পরবর্তী সময়ে স্কটিশ কমান্ডো এবং ফ্রেঞ্চ কানাডিয়ানরা এই দ্বীপটিকে যুদ্ধের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করতো।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ট্যাংক বহন করার ক্ষমতাযুক্ত জাহাজের আবিষ্কার হয়। ইঞ্চমারনক দ্বীপে এই জাহাজগুলোতে করে ট্যাংক আসত। সেখানেই চলত যুদ্ধের মহড়া। কথিত আছে, স্কটিশ সন্ন্যাসী সেইন্ট মারনক এই দ্বীপেই বসবাস করতেন এবং দ্বীপটিতে অবস্থিত গির্জাটি তিনিই তৈরি করেন। সেলটিক ক্রসের বিভিন্ন ভাঙা পাথরের টুকরাও পাওয়া গেছে এই দ্বীপে। এই ক্রসগুলোও প্রাচীন যুগের তৈরি বলে মনে করা হয়।
১৩ শতকে নরওয়ে এবং স্কটল্যান্ডের মধ্যে হওয়া লার্গ যুদ্ধে মৃত ব্যক্তিদের কবর দেয়ার জন্য এই দ্বীপকেই বেছে নেয়া হয়েছিল। এককালে এই দ্বীপে বসবাস ছিল ৪১ জনের। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে তারা সবাই প্রায় একই সঙ্গে এই দ্বীপ ছেড়ে চলে যান। এরপর ১৯ শতকে নেশামুক্তির জন্য অসুস্থদের এই দ্বীপে পাঠিয়ে দেয়া হতো। এক সময় অপরাধ জগতের আস্তানাও হয়ে উঠেছিল এই দ্বীপ।
বাড়িটি বিক্রির দায়িত্ব নিয়েছেন স্ট্র্যাট ও পার্কার নামক দুই রিয়েল এস্টেট এজেন্ট। তারা বলেন, এই দ্বীপ শুধু ঐতিহ্যে মোড়ানো নয়, এত বড় দ্বীপে খামার থাকায় একদিকে যেমন দুগ্ধজাতীয় দ্রব্যের ব্যবসা শুরু করা সম্ভব, তেমনি ১.৫ মাইলের নদীর পাড় থাকায় বিভিন্ন ওয়াটার স্পোর্টস ও মাছ ধরার সুযোগও আছে। রয়েছে হেরিং সিগালদের বাসাও। সংবাদসূত্র : ইনডিপেনডেন্ট ইউকে