শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগের সংগ্রাম ও অর্জন

বাংলাদেশে যে টেকসই উন্নয়নের ধারা, এই ধারায় উজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছে আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থেকে। এই সত্য দলটির সমালোচক ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ যারা তারা মানতে চান না।
সালাম সালেহ উদদীন
  ০১ জুলাই ২০২০, ০০:০০

নানা সংগ্রাম ত্যাগ ও চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আওয়ামী লীগ ৭১ বছর পূর্ণ করেছে। তৃতীয় বিশ্বের প্রেক্ষাপটে একটি রাজনৈতিক দলের জন্য ৭১ বছর কম কথা নয়। নানা ঘাত-প্রতিঘাত নানা ধাপ অতিক্রম করে আসতে হয়েছে দলটিকে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভু্যত্থান এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সফল নেতৃত্ব দিয়েছে দলটি। যার কান্ডারি বা মধ্যমণি ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একটি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দেওয়া কম কথা নয়। এটা সম্ভব হয়েছে শেখ মুজিবের প্রজ্ঞা রাজনৈতিক, দূরদর্শিতা ত্যাগ ও নিরলস সংগ্রামের কারণে। অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হলো- স্বাধীন দেশে তাকে বাঁচতে দেওয়া হলো না। স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে সপরিবারে হত্যা করা হলো। আমরা বাঙালি জাতি এতটাই অকৃতজ্ঞ যে, যিনি আমাদের স্বাধীনতা ও জাতিরাষ্ট্রের স্বীকৃতি এনে দিলেন ও প্রতিষ্ঠা করলেন আর আমরা তাকেই সপরিবারে অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে খুন করলাম। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতির রক্তে রঞ্জিত লাশ সিঁড়ির ওপর পড়ে রইল। আর খুনিরা উলস্নাসে মেতে উঠল। রাষ্ট্রীয় উচ্চপর্যায়ের কিছু লোকের অন্যায়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার কারণেই খুনিদের এ উলস্নাস ছিল বহু বছর।

অবাক ব্যাপার যে, পাকিস্তানিরা যেখানে তাকে হত্যা করতে সাহস পায়নি, বন্দি করে নিয়ে যাওয়ার পরও- সেখানে স্বাধীন দেশের মাটিতে তাকে নিষ্ঠুরভাবে খুন হতে হলো। জাতি হিসেবে এর চেয়ে লজ্জা আর ঘৃণার কী থাকতে পারে? এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। জেল-জুলুম, নির্যাতন, হুলিয়া বহন করেছেন তিনি। পূর্ববাংলার শোষিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত জনগণকে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন তিনিই এবং প্রতিষ্ঠাও করেছেন তিনি। তিনি না হলে তো এ দেশ স্বাধীনই হতো না। যুগে যুগে কিছু মহাপুরুষ পৃথিবীতে আসেন কোনো কোনো জাতির ত্রাণকর্তা হিসেবে। বঙ্গবন্ধুও তেমনি একজন। মহাপুরুষদের মধ্যে মানবিকতা ও সরলতা এ দুটি গুণ অতিমাত্রায় থাকে। যার কারণে দেশ এবং দেশের মানুষের প্রতি থাকে তাদের সীমাহীন আস্থা ও ভালোবাসা। বঙ্গবন্ধুরও তেমনটা ছিল। এই আস্থা ও ভালোবাসাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি আমরণ সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি স্বপ্ন দেখতেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের।

এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেতাম না। কারণ বাঙালির স্বাধিকার ও স্বায়ত্তশাসন প্রশ্নে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যোগ্য লোক পূর্ববাংলায় দ্বিতীয়জন ছিলেন না। আমাদের আজও পশ্চিম পাকিস্তানিদের গোলামি করতে হতো। আজ যে বাঙালিরা স্বাধীন দেশে রাষ্ট্রীয় উচ্চপদে আসীন আছেন, স্বাধীনভাবে কাজ করছেন, মুক্ত বাতাসে ইচ্ছামতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন (করোনাকালের কথা ভিন্ন)- এর কোনো সুযোগ ছিল না। এ কঠিন সত্যকে ভুলে গিয়ে একশ্রেণির মানুষ বঙ্গবন্ধুকে ছোট করতে গিয়ে নিজেই ছোট হয়ে যাচ্ছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত দিয়ে যেমন বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছে তেমনি তার কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে এসেছে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা। যদিও করোনা মহামারির কারণে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। দেশের লাখ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এই দুঃসময়ে সরকারি সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সৃষ্ট দুর্যোগে সারাদেশের ৭ কোটি ১১ লাখ ১৮ হাজার ৯৫২ জন মানুষ সরকারি ত্রাণ সহায়তা পেয়েছে। সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবে মানবিক সহায়তা হিসেবে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে সরকার। এ পর্যন্ত সারাদেশে দেড় কোটির বেশি পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ৬৪ জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৬ জুন পর্যন্ত সারাদেশে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ১৭ মেট্রিক টন। বিতরণ করা হয়েছে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৭৮৯ মেট্রিক টন। এতে উপকারভোগী পরিবারের সংখ্যা ১ কোটি ৬২ লাখ ৮ হাজার ৪৪৩। উপকারভোগী লোকসংখ্যা ৭ কোটি ১১ লাখ ১৮ হাজার ৯৫২ জন। সরকারের এই উদ্যোগ খুবই ইতিবাচক। যদিও কোথাও কোথাও ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ১০০ জনপ্রতিনিধিকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। দুদক তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে।

মনে রাখতে হবে, আওয়ামী লীগের ইতিহাস, বাঙালি জাতির অর্জনের ইতিহাস। আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অর্জন ১৯৭১ সালে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ। ৫২-এর ভাষা আন্দোলনসহ গণতন্ত্র অর্জনের সব আন্দোলন-সংগ্রামে আওয়ামী লীগের ভূমিকা অনস্বীকার্য। অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-কূটনৈতিকসহ অসংখ্য সাফল্যই এসেছে এই দলের মাধ্যমে।

বাংলাদেশে যে টেকসই উন্নয়নের ধারা, এই ধারায় উজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছে আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থেকে। এই সত্য দলটির সমালোচক ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ যারা তারা মানতে চান না।

বাংলাদেশকে বলা হচ্ছে উন্নয়নের রোল মডেল, এশিয়ার বাঘ। আওয়ামী লীগের শাসনামলে উন্নয়ন না হলে এসব কথা উঠে আসছে কী করে? শূন্য থেকে যে বাংলাদেশ পূর্ণতা অর্জনের পথে দ্রম্নত এগিয়ে যাচ্ছে, তার কৃতিত্ব যেমন জনগণের তেমন আওয়ামী লীগের।

উলেস্নখ্য, ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে আত্মপ্রকাশ ঘটে আওয়ামী লীগের। প্রায় দুই যুগ পর যে দলটির নেতৃত্বে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। মুসলিম লীগের প্রগতিশীল একটি অংশের উদ্যোগে বাঙালি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে গঠিত হয়েছিল 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ'। প্রতিষ্ঠাকালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী দলটির সভাপতি, শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু তার 'অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, 'কোথাও হল বা জায়গা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত হুমায়ূন সাহেবের রোজ গার্ডেনের বাড়িতে সম্মেলনের কাজ শুরু হয়েছিল।' শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকসহ তৎকালীন রাজনৈতিক নেতারা সেদিন রোজ গার্ডেনে উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, সবাই একমত হয়ে নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করলেন; তার নাম দেওয়া হলো- 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ'। ১৯৫২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরের বছর ঢাকার 'মুকুল' প্রেক্ষাগৃহে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ১৩ বছর সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন শেখ মুজিব। দলের প্রথম সভাপতি ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। তিনি ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত চারটি কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর ওই বছর একটি বিশেষ কাউন্সিলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ। ১৯৬৪ সালে দলের পঞ্চম কাউন্সিলে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। সভাপতি পদে ছিলেন ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত। ওই বছর ষষ্ঠ কাউন্সিলে দলের সভাপতি হন শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত সভাপতি পদে ছিলেন। ১৯৭৪ সালে দশম কাউন্সিলে সভাপতি হন এ এইচএম কামরুজ্জামান। ১৯৭৫ সালে ঘাতকের গুলিতে কেন্দ্রীয় কারাগারে নিহত হন তিনি। এরপর ১৯৭৮ সালে কাউন্সিলে সভাপতি হন আবদুল মালেক। তিনি ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ছিলেন। ১৯৮১ সালের ফেব্রম্নয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ৩৮ বছরের বেশি সময় ধরে দলের সভাপতি পদে আছেন শেখ হাসিনা। দলের ১৩তম কাউন্সিলে তিনি প্রথম সভাপতি হন। শেখ হাসিনা সবচেয়ে বেশি সময় আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং দেড় দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, বিশ্বের দীর্ঘস্থায়ী নারী শাসক।

আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে যাত্রা শুরু করলেও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে 'মুসলিম' শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। নতুন নাম হয়- 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ'। স্বাধীনতার পর 'বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ' নাম নেয় দলটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাজনৈতিক সংগ্রাম, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়সহ বিভিন্ন ঘটনার মধ্যদিয়ে ৫০-এর দশকেই আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় দল, পূর্ব বাংলার জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক।

তবে প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি আব্দুল হামিদ খান ভাসানী রাজনৈতিক মতভিন্নতার জন্য ১৯৫৭ সালে দল ছেড়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের ওপর বিশেষ গুরুত্বসহ ৪২ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ। শুরুর দিকে দলটির প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে ছিল রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতি, এক ব্যক্তির এক ভোট, গণতন্ত্র, সংবিধান প্রণয়ন, সংসদীয় পদ্ধতির সরকার, আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন এবং তৎকালীন পাকিস্তানের দুই অঞ্চলের মধ্য বৈষম্য দূরীকরণ। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘসময় এই দলটি সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন করে জনগণের মধ্যে আস্থার স্থান তৈরি করে। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা দেন বঙ্গবন্ধু, যাকে বাঙালির মুক্তির সনদ নামে অভিহিত করা হয়। ছয় দফার ভিত্তিতেই ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। এরপর পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ শুরু করলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। কারাবন্দি বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর বিশ্ব মানচিত্রে অভু্যদয় ঘটে বাংলাদেশের। স্বাধীন বাংলাদেশ, আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু একাকার হয়ে যায়।

বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রতিজ্ঞা নিয়ে আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।। বাংলাদেশ অতীতে আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে ছিল, বর্তমানে তাকিয়ে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। কেননা আওয়ামী লীগই আমাদের ঐতিহ্য ও ভবিষ্যৎ প্রেরণা। আওয়ামী লীগ আর বাংলাদেশের ভাগ্য একসূত্রে গাঁথা। আওয়ামী লীগই একমাত্র দল- যে দল একটি দেশের জন্ম দিয়েছে, দেশের উন্নয়ন ঘটিয়েছে। মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। স্বাধীনতার পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ পুনর্গঠনে অনেক বেগ পেতে হয়। স্বাধীনতার পরপরই দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে দেশ। ভঙ্গুর অর্থনীতি নিয়ে যাত্রা শুরু হয় একটি স্বাধীন দেশের। এ সময় বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে তিরস্কার করেছিল বিশ্বের অনেক দেশই। যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল তলাবিহীন ঝুড়ি। আর এখন স্বাধীনতার ৪৯ বছরে বাংলাদেশ আর তলাবিহীন ঝুড়ি নেই। খোদ বিদেশি অতিথি, বিশ্বব্যাংক প্রধান ও রাষ্ট্রনায়করাই বাংলাদেশের গুণকীর্তন করছেন। কেউ কেউ বলছেন বাংলাদেশ হচ্ছে এশিয়ার বাঘ। অবশ্য করোনার ছোবলে এই গতি থেমে গিয়েছে।

তবে এটা সত্য, বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচনে সাফল্য অর্জন করেছে। খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও খাদ্য উদ্বৃত্ত রাখার কৃতিত্ব অর্জন করেছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে শেখ হাসিনা সরকার। যদিও করোনাকালে দারিদ্র্য ২০ ভাগ বেড়েছে। তবে এটা সাময়িক। তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে।

আশার কথা, প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণে এগিয়ে রয়েছে দেশ। সব ধরনের সামাজিক সূচকে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। অনেক সূচকে ভারতের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ অচিরেই উন্নয়নশীল দেশের কাতার থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে এই আশাবাদ দেশের সচেতন মানুষের। আমাদের ২০৪১ সালের মধ্যে দাঁড়াতে হবে উন্নত দেশের কাতারে। একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, বেড়েছে শিক্ষা ও সচেতনতার হার। অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও শিশুমৃতু্যর হার কমিয়ে জাতিসংঘের স্বীকৃতি অর্জন করেছে। বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বের কাছে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। আমাদের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে।

করোনাকে মোকাবিলা করে আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত সাড়ে ১১ বছরে (২০০৯-২০২০) দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী রাজাকার ও বদরবাহিনী প্রধানদের ফাঁসি কার্যকরের মধ্যদিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও বিচারব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে। যারা একসময় ভাবতে শুরু করেছিল এই দলটি ব্যর্থ, কোনোকিছু গোছাতে পারছে না তারা মহামারির মধ্যেও বলতে শুরু করেছে সাহসী দল হিসেবে এবং নির্ভীক নেতারূপে শেখ হাসিনাই এদেশের সংকট মোকাবিলা করতে সক্ষম। ২০২০ সালের পর ভবিষ্যতে সফল বাংলাদেশ দেখতে হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প নেই। তবে বাংলাদেশের এখন বড় বাধা দুর্নীতি। করোনাকালেও দুর্নীতি থেমে নেই। দুর্নীতি নির্মূলে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে। আগামী দিনের উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে রাষ্ট্রের প্রতিটি জায়গায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

সালাম সালেহ উদদীন : কবি, কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<104296 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1