শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাকালে বাল্যবিবাহ বেড়েছে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে

নতুনধারা
  ০১ জুলাই ২০২০, ০০:০০

করোনাকালে নানা ধরনের সংকটে পড়েছে দেশের সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে প্রধান হয়ে উঠেছে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকট। এই সংকটের মধ্যে দেশে বাল্যবিবাহ বেড়েছে। এক জরিপে প্রকাশ, এ সময়ে বাল্যবিবাহ বেড়ে গেছে উদ্বেগজনকহারে। নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোও বলছে, বাল্যবিবাহের তথ্য নিয়মিতই তাদের কাছে আসছে। আর তা আগের চেয়ে অনেক বেশি। এর বিপরীতে বাল্যবিবাহ বন্ধে প্রশাসনের তৎপরতা কমে আসার তথ্য দিয়ে নারী অধিকার কর্মীরা বলেছেন, এ পরিস্থিতি চললে তা উদ্বেগজনক হয়ে উঠবে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি বিভাগের এক জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ১৩ শতাংশ করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে তাদের এলাকায় বাল্যবিবাহ হয়েছে বলে জানিয়েছেন। সংস্থাটির ১১টি জেলার ৫৫৭ জন সাক্ষাৎকারদাতার ৭২ জন এ সময়ে ৭৩টি বাল্যবিবাহের ঘটনা দেখেছেন। এসব বাল্যবিবাহের ৮৫ শতাংশই হয়েছে সংকটকালে মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণে। ৭১ শতাংশ বিয়ে হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায়। করোনাভাইরাস সংকটে বিদেশ থেকে ফেরত আসা পাত্র পাওয়ায় ৬২ শতাংশ শিশুর পরিবার বিয়ে দিতে আগ্রহী হয়েছে। ৬১ শতাংশে বিয়ে হয়েছে অভিভাবকের সীমিত উপার্জনের কারণে, পরিবার চালানোয় হিমশিম খাওয়ায়। এটা হতাশাজনক চিত্র।

\হবাল্যবিবাহ রোধে ও কন্যাশিশু-কিশোরীদের সামাজিক নিরাপত্তা বাড়াতে বাজেটে সুনির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দের দাবি উঠেছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে নারী ও কন্যাশিশুদের জীবনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ যোগ হয়েছে। দেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মহামারির কারণে মার্চ থেকে মানুষ, বিশেষ করে নারীরা স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকির মুখোমুখি। সেই সঙ্গে বাড়ছে নারী ও কন্যাশিশুদের প্রতি সহিংসতা, যৌন হয়রানি। কমছে নারীর সামাজিক নিরাপত্তা। করোনার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক-সামাজিক সংকটে কন্যাশিশু ও কিশোরীদের বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার কারণে বাল্যবিবাহের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। এর সঙ্গে বেড়ে গেছে নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যঝুঁকি। বাল্য ও জোরপূর্বক বিয়ে বন্ধসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে কয়েক দশক ধরে যে সামাজিক অগ্রগতি হয়েছে, কোভিড-১৯ সংকটের কারণে তা পিছিয়ে যাওয়ার হুমকি তৈরি হয়েছে। যা আমাদের জন্য এক অশুভ বার্তা।

দুঃখজনকভাবে লক্ষ্য করা যায়, বাজেটে কন্যাশিশুদের সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ এবং কিশোরী, তথা কন্যাশিশুদের বিদ্যালয়ে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করার জন্য কোনো পৃথক বা সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখা হয়নি। যা রাখা জরুরি ছিল। মনে রাখতে হবে বাল্যবিবাহ একটি সামাজিক সমস্যা। এর ফলে দেশের কন্যাশিশুদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে তলিয়ে যায়। তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে গিয়ে মৃতু্য ডেকে আনে। অনেকেই অত্যাচার নির্যাতনে মারায় কিংবা আত্মহননের পথ বেছে নেয়। দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, স্থানীয় প্রশাসন ও কাজীরাও আগে বাল্যবিবাহ বন্ধে জোরালো ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু এখন সেটা কমে এসেছে।

আমরা মনে করি, করোনাভাইরাস মহামারির এ সময়ে সরকারি তৎপরতা না বাড়ালে বাল্যবিবাহ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে। বাল্যবিবাহ রোধে সরকারকে ব্যাপকভাবে প্রচার চালাতে হবে। ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে হবে। না হলে বাল্যবিবাহ বেড়ে গেলে জাতীয় উন্নয়নে এর বড় প্রভাব পড়বে। সময় থাকতে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়াই সমীচীন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<104299 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1