শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব রাজনীতির অতীত ও হালফিল অবস্থা

করোনা-আক্রান্ত বিশ্বব্যবস্থায় মানুষ অনেক কিছু শিক্ষা পেয়েছে। জীবনই সুন্দর- এই বোধ মানুষকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে। আজ আমাদের হিংসার পথ, যুদ্ধের পথ ভুলে মানবিক বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একমাত্র মানবিক বিশ্বই পারে মানবসভ্যতা রক্ষা করতে।
মোনায়েম সরকার
  ২৮ জুলাই ২০২০, ০০:০০

একসময় ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং শি. জিংপিং ছিল গলাগলি বন্ধুত্ব। একজন আরেকজনের হাত ধরছেন, পাশাপাশি বসেছেন। আবার এখন দুজন দুজনের দিকে অঙ্গুলি তুলে গর্জন করছেন। এই দুই দেশই পৃথিবীটাকে যেন নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতে চাইছে। পৃথিবীতে গণতন্ত্র রক্ষার তথাকথিত দাদা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের 'সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র' সংগ্রামী মানুষ জানে। কিন্তু পাঁচ তারা সংবলিত লাল-পতাকা নিয়ে 'কমিউনিস্ট' দাবিদার চীনের সর্বগ্রাসী উগ্র জাত্যাভিমানী চরিত্র দেখে বিশ্ববাসী অবাকই হয়েছেন।

১৯৪৯ সালে মাও জে তুং, লিউ সাউ চি, লিন পিআও, চৌ এন লাই, মার্শাল চুতে প্রমুখের নেতৃত্বে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি শাসন ক্ষমতা দখল করে। সারা বিশ্বের সংগ্রামী মানুষ একে স্বাগত জানায়। কমিউনিস্টরা আন্তর্জাতিকতাবাদী, কিন্তু লক্ষ্য করা গেল কোনো নিপীড়িত দেশ ও মানুষের সমর্থনে চীন কার্যত আন্তর্জাতিক দায়িত্ব পালন করেনি। এর বহির্প্রকাশ শুরু ১৯৬০ সাল থেকে। ১৯৬০ সালে ৮১টি দেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা মস্কো শহরে একত্রিত হয়ে ঘোষণা করল, আগামী দিনের লড়াই সাম্রাজ্যবাদ বনাম সমাজবাদের। তাই সমাজবাদের আন্দোলনকে বিংশ শতাব্দীতে সারা দুনিয়ায় আরও শক্তিশালী করতে হবে। এ বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব কমিউনিস্ট নিজ দায়িত্ব পালন করবে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি প্রথমে এই দলিলে স্বাক্ষর করলেও কিছুদিনের মধ্যেই তারা তাদের মত পাল্টে ফেলে। তারা তাদের জাত্যাভিমান নিয়ে অগ্রসর হয়। আন্তর্জাতিক কোনো দায়িত্ব পালন না করলেও তারা কিন্তু গরম এবং চটকদারি কথার আড়ালে বিশ্ব-কমিউনিস্ট আন্দোলনে বিভ্রান্তি ছড়ায় এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন-বিরোধী ভূমিকা নিতে থাকে। চীন উদ্যোগী হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনে ভাঙন ধরায় যা আন্তর্জাতিক থেকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং সাম্রাজ্যবাদকে কার্যত প্রকারান্তরে সাহায্য করে।

১৯৬২ সালে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিউবাকে অর্থনৈতিক অবরোধ করে এবং মার্কিন রণতরী যখন কিউবাকে ঘিরে ফেলে সেই সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের রণতরী মার্কিন রণতরীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে কিউবা থেকে রণতরী সরিয়ে নিতে বাধ্য করেছে এবং কিউবার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য করেছে। তখন নেহরুর নেতৃত্বাধীন ভারতসহ পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশও কাস্ত্রো নেতৃত্বাধীন কিউবার পক্ষে দাঁড়িয়েছিল। সে এক ঝড়ো সময়। চীন ঠিক ওই সময়ই নানা অজুহাত দেখিয়ে ভারত সীমান্ত আক্রমণ করে বসে। চীনের এই কাজে ভারতে উগ্র দক্ষিণপন্থি শক্তির বাড়-বাড়ন্ত হয়। তারা নেহরু নেতৃত্বাধীন সরকারকে তীব্র আক্রমণ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও চীনকে দেখিয়ে ভারতে ভুয়া চুক্তির প্রস্তাব দেয়। ভারতে মার্কিন ঘাঁটিরও প্রস্তাব করে। কংগ্রেস দলের অভ্যন্তরে দক্ষিণপন্থি শক্তিও তাদের চাপ বৃদ্ধি করে। কিন্তু শত বাধার মধ্যেও নেহরু নেতৃত্বাধীন ভারত কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কাছে নতি স্বীকার করেনি। চীনের চাপের কাছেও নয়।

কিউবা একটি ছোট দেশ। এর প্রধান উৎপাদন চিনি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তারা চিনি সরবরাহ করে। মার্কিন অবরোধের সামনে তারা নিজস্ব অর্থনীতি টিকিয়ে রেখেছে। চীন কিউবার চিনি ক্রয় করছিল- কিন্তু হঠাৎ তারা চিনি ক্রয় বন্ধ করল যাতে ওই দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়ে। আবার এই সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় ঘৃণ্য বর্ণ বৈষম্যবাদী শ্বেতাঙ্গ সরকার কৃষ্ণাঙ্গদের তীব্রভাবে নিপীড়ন করছিল। নেলসন ম্যান্ডেলার নেতৃত্বাধীন দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় কংগ্রেস এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কমিউনিস্টরা যৌথভাবে এর বিরুদ্ধে লড়ছে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গণতান্ত্রিক সরকার দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণ বৈষম্যবাদী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক বন্ধ রেখেছে এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। চীন কিন্তু ওই সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণ বৈষম্যবাদী সরকারের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি করে। পাকিস্তানে তখন আইয়ুব খা'র নেতৃত্বে জঙ্গিশাসন। ওই সময় চীন পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের জঙ্গিশাসনের কার্যকলাপের পক্ষে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের তীব্র বিরোধিতা করে চীন। ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেও চীনের ভূমিকা নেতিবাচক। চীনের ভিতর দিয়ে ভিয়েতনামে সোভিয়েত অস্ত্র পাঠানোতে তারা অতিরিক্ত কর চায় এবং অস্ত্র পাঠানোতে বাধা সৃষ্টি করে। পরে চীনের ভিয়েতনাম আক্রমণের ঘটনা এখন সর্বজনবিদিত।

আফগানিস্তানে যখন বারবাক কারমালের পরে, ড. নাজিবুলস্নাহর সরকার প্রতিক্রিয়ার শক্তি এবং উগ্র সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে লড়ছিলেন ও সোভিয়েত সহযোগিতা গ্রহণ করেছেন- তখন চীন, পাকিস্তান এবং আমেরিকা বারবাক কারমাল এবং ড. নাজিবুলস্নাহর বিরুদ্ধে উগ্র সাম্প্রদায়িক ও সন্ত্রাসবাদী শক্তিকে মদদ দিয়েছে।

১৯৬০ সাল থেকে চীন সরকার এবং একমাত্র শাসক দল কমিউনিস্ট পার্টি যে জাত্যাভিমানের পথ ধরে অগ্রসর হচ্ছিল এখন তার চূড়ান্ত রূপ। শাসন ক্ষমতায় লাল ঝান্ডা হাতে কমিউনিস্ট পার্টি। তাতে আছে পাঁচটি মহাদেশের প্রতীক হিসেবে পাঁচটি পাঁচমুখী তারা। এটি কল্পনা করা হয়েছিল পাঁচ মহাদেশের সংগ্রামী মানুষের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে। কিন্তু এটি এখন দাঁড়িয়েছে পাঁচ মহাদেশে চীনের আধিপত্যবাদের প্রতীক হিসেবে। চীনের বর্তমান রাষ্ট্রপতি শি জিংপিং। ২০১৮ সালের মার্চে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে শি জিংপিং যতদিন জীবিত থাকবেন ততদিন তিনি চীনের রাষ্ট্রপতি এবং কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও মিলিটারির প্রধান থাকবেন।

কার্ল মার্কস থেকে লেনিন, স্টালিন থেকে ক্রশ্চেভ অথবা গর্বাচেভ কারও সময়েই আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনে অথবা রাশিয়ার কমিউনিস্ট আন্দোলনে অনুরূপ সিদ্ধান্তের কোনো নজির নেই। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কমিউনিস্ট ভিয়েতনামের হো চি মিন কিংবা কিউবার ফিদেল কাস্ত্রোর সময়েও অনুরূপ সিদ্ধান্ত হয়নি। এমনকি খোদ চীনেও মাও সে তুং, চৌ এন লাই, লিউ সাউ চি থেকে দেং- কারও সময়েই অনুরূপ সিদ্ধান্ত ছিল না। শি জিংপিং আমলে চীন এই রকম সিদ্ধান্ত নিয়ে গণতন্ত্রকে অস্বীকার করে কঠোর স্বৈরাচারের পথ গ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে জাতীয় অর্থনীতিতে গ্রহণ করেছে আগ্রাসী ধনবাদের পথ, যে কারণে চীনের পুঁজিপতিরা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের পুঁজিপতিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। বহু ক্ষেত্রেই চীনের পুঁজিপতি এবং ধনবাদী শক্তি এখন প্রথম সারিতে। তাদের দেশের জাতীয় অর্থনীতিতেও এখন আগ্রাসী ধনবাদীদের রমরমা অবস্থা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীতে স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা হয়, স্নায়ুযুদ্ধে পৃথিবীতে একটা ভারসাম্য লক্ষ্য করা গেছে। তখন পুঁজিবাদী শক্তি আর সমাজতান্ত্রিক শক্তি একে অন্যের ওপর অতটা চড়াও হতে পারত না, ধীরে ধীরে পুঁজিবাদীরা অর্থ ও অস্ত্রের দৌড়ে এগিয়ে গেলে স্নায়ুযুদ্ধের যুগ শেষ হয়ে প্রকাশিত হয় সাম্রাজ্যবাদের নগ্ন চেহারা।

সাম্রাজ্যবাদীরা আরববসন্তের নামে বা সবুজ বিপস্নবের নামে মধ্যপ্রাচ্যে কি পরিমাণ লুটপাট করেছে তা পৃথিবীবাসী লক্ষ্য করেছে। একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ তুলে জঙ্গিবাদের ভয় দেখিয়ে ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া, মিশর, তিউনেশিয়াসহ অসংখ্য দেশের তৈলসম্পদ ও খনিজসম্পদ লুট করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার পুঁজিবাদী মিত্ররা। আধুনিক যুগে এই লুণ্ঠন ও প্রাণহানি কখনোই সভ্য মানুষের কাম্য নয়।

বর্তমান চীন নেতৃত্বের সঙ্গে মার্কিন সরকারেরও গভীর সম্পর্ক ছিল। এর কারণ চীনের ধনবাদী পথ গ্রহণ। চীনের বিভিন্ন গবেষণায় এবং করোনা নিয়ে গবেষণাতেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনকে আর্থিক খরচ ও অনুদান দিয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেন দুনিয়াটাকে ভাগ করে নিয়েছে।

বর্তমানে ভারতবর্ষে নরেন্দ্র মোদি সরকার। নরেন্দ্র মোদি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী তখন থেকেই তার সঙ্গে চীনের বন্ধুত্ব। চীনের সহযোগিতায় তিনি গুজরাটের ব্যবসায়ীদের স্বার্থে বেশ কিছু প্রকল্পও করেছেন। এরপরে তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই সখ্য বাড়ে। ইতিমধ্যে ট্রাম্প মার্কিন দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর মোদি ও ট্রাম্পের মধ্যেও সখ্য বাড়ে। মোদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ট্রাম্পকে আবার নির্বাচিত করার জন্য প্রবাসী ভারতীয়দের কাছে আবেদনও করেন। ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাসের আক্রমণ। এই আক্রমণের শুরুতে ট্রাম্প একে এত গুরুত্ব দেননি। গুরুত্ব দেননি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। কিন্তু করোনার আক্রমণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ এতে ক্ষুব্ধ হতে থাকে। আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে। হতভম্ব ও আতঙ্কগ্রস্ত ট্রাম্প করোনাভাইরাসের আক্রমণের জন্য চীনকে দায়ী করতে থাকেন। তার অভিযোগ, চীন সময় থাকতে সজাগ করেনি। কিন্তু আসল প্রশ্ন যে জায়গায় তার উত্তর, কিন্তু ট্রাম্প দেয়নি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য পরিসেবা থেকে সব কিছুই বেসরকারি। এটি ব্যবসাভিত্তিক এবং শিল্পপতিদের। এই পরিসেবা মুনাফাভিত্তিক। আর সমাজবাদী দেশ এবং অন্যান্য জনকল্যাণমুখী দেশে এই পরিসেবা সরকারের নিয়ন্ত্রণে এবং জনসেবামূলক। এ কারণে কিউবা থেকে ভিয়েতনাম করোনা সংক্রমণকে যেভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে- এমনকি চীন ও রাশিয়া বর্তমানে ধনবাদী পথে চললেও স্বাস্থ্য পরিসেবার নিয়ন্ত্রণ এখনো সম্পূর্ণরূপে মুনাফা ও ব্যবসাভিত্তিক নয় এবং তাই ওরাও করোনা নিয়ন্ত্রণে লাগাম কিছুটা দিতে পারলেও মার্কিনীরা তা পারেনি। তবে মার্কিন দেশেও ট্রাম্প যেভাবে ভোটের কথা সামনে রেখে চীনের বিরুদ্ধে বলছে- এটা কতটা মনের কথা অথবা কতটা ভোট কৌশল তা অবশ্য ভবিষ্যৎ বলবে। কারণ ট্রাম্প একই সঙ্গে চীনের বিরুদ্ধে গরম এবং নরম দুভাবেই বক্তব্য রাখছে।

করোনা-আক্রান্ত বিশ্বব্যবস্থায় মানুষ অনেক কিছু শিক্ষা পেয়েছে। জীবনই সুন্দর- এই বোধ মানুষকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে। আজ আমাদের হিংসার পথ, যুদ্ধের পথ ভুলে মানবিক বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একমাত্র মানবিক বিশ্বই পারে মানবসভ্যতা রক্ষা করতে।

মোনায়েম সরকার : রাজনীতিবিদ, কলামিস্ট ও মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<107274 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1