শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন

আমলে নেয়া অপরিহাযর্
নতুনধারা
  ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ঘুষ-দুনীির্তর বিষয়টি আমাদের দেশে বহুল আলোচিত। ঘুষ-দুনীির্ত যেন সমাজব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে কোনো ধরনের সেবা পেতে গেলে নাগরিকদের ঘুষবাবদ কিছু খরচ করতেই হয়। এটা অনেক ক্ষেত্রে সিস্টেম হয়ে গেছে। সরকারি সেবা খাতে দুনীির্তর কোনো নিধাির্রত মাত্রা নেই। বিদ্যুৎ সংযোগ, গ্যাস সংযোগ, পানির সংযোগ, ফোন সংযোগ কোথায় নেই ঘুষের ছড়াছড়ি? নিলের্জ্জর মতো ঘুষের আলাপ-আলোচনাও হয় প্রকাশ্যে। ঘুষপ্রাপ্তি যেন তাদের অধিকার। দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, নানান উদ্যোগ নেয়ার পরও রাষ্ট্র থেকে এর নিমূর্ল সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন এবং গণমাধ্যমের খবরে প্রায়ই ঘুষ-দুনীির্তর সংবাদ প্রকাশিত হয়। সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেশের দুটি বন্দরের ‘নিয়ম বহিভ‚র্তভাবে’ আয়ের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। টিআইবি প্রকাশিত দুনীির্তর এই চিত্র অত্যন্ত শঙ্কাজনক এক বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে।

টিআইবির ‘মোংলা বন্দর ও কাস্টম হাউস এবং বুড়িমারী স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন : আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীষর্ক প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, পণ্য আমদানি-রপ্তানি কাজে মোংলা বন্দরের কাস্টম হাউস ও বন্দর কতৃর্পক্ষ বছরে অন্তত ২০ কোটি টাকা ‘নিয়ম বহিভ‚র্তভাবে’ আদায় করছে। আর বুড়িমারী স্থলবন্দরের শুল্ক স্টেশন আমদানি ও রপ্তানির জন্য বিল অব এন্ট্রিতে ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা নিয়ম বহিভ‚র্তভাবে আদায় করেছে। এ ছাড়া স্থলবন্দর কতৃর্পক্ষ ৪৮ লাখ টাকা। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে জরিপের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে তৈরি করা হয়েছে। এতে ২০১৬-১৭ সালে মোংলা কাস্টম হাউস ১৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা এবং বন্দর কতৃর্পক্ষ চার কোটি ৬১ লাখ টাকা নিয়ম বহিভূর্তভাবে আদায় করে। আমদানি করা গাড়ির শুল্কায়নের ক্ষেত্রে কাস্টম হাউসে প্রতি গাড়ি চার হাজার টাকা এবং গাড়ি ছাড়ের ক্ষেত্রে মোংলা বন্দরে এক হাজার ৭১৫ টাকা ‘নিয়ম বহিভ‚র্তভাবে’ আদায় করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মোংলা কাস্টম হাউসে জাহাজ আগমন-বহিগর্মনের সময় ৮ হাজার ৩৫০ টাকা করে নেয়া হয়। আর বন্দর কতৃর্পক্ষ নেয় ২১ হাজার টাকা। এ ছাড়া পণ্য ছাড়ের ক্ষেত্রে বন্দরে বিকাল ৫টার আগে ৬ হাজার এবং পরে ৭ হাজার ২০০ টাকা করে আদায় করা হয়। গবেষকরা মনে করেন, দুটি বন্দরেই যোগসাজশ ও বলপূবর্ক দুনীির্ত প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। দুনীির্তর বিষয়ে কতৃর্পক্ষও অবগত।

বলাই বাহুল্য, ঘুষ-দুনীির্ত সমাজে ক্যান্সারস্বরূপ। দুনীির্ত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে, উন্নয়নের মান কমিয়ে দেয়। শুধু দুনীির্ত বন্ধ হলে জিডিপি ২ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব বলে একটি আন্তজাির্তক সংস্থা অভিমত দিয়েছিল। আমরা মনে করি, কোনো অনিয়মই যুগ যুগ ধরে চলতে পারে না। এখন আমরা ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছি। ফলে, এখন সিস্টেমের উন্নয়ন ঘটিয়ে পদ্ধতিগতভাবে দুনীির্ত বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। প্রতিবেদনে যেহেতু উঠে এসেছে, উপরিমহলও এর সুবিধাভোগী; ফলে দুনীির্ত বন্ধ করতে চাইলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। গবেষকরা বলছেন, আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে জটিল প্রক্রিয়া নিয়ম বহিভ‚র্ত অথর্ আদায়ের পথকে সুগম করেছে। অন্যদিকে ‘অটোমেশন ও ওয়ানস্টপ সাভিের্সর’ প্রচলন হলেও তা এই দুটি বন্দরে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অকাযর্কর রাখা হয়েছে। ফলে পেপারলেস অফিস প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়নি বলেই দুনীির্ত কমছে না।

সেবা খাতে কেন ওয়ানস্টপ সাভির্স চালু করা হচ্ছে না, এটা বড় একটি প্রশ্ন। এক সময় শিক্ষা বিভাগ সবচেয়ে দুনীির্তপ্রবণ ছিল। সরকারি সদিচ্ছার কারণে শিক্ষা বিভাগের দুনীির্ত এখন অনেক কম। সড়ক যোগাযোগ মন্ত্রীর কিছু ইতিবাচক উদ্যোগের ফলে বিআরটিএর দুনীির্তও কমেছে। পদ্ধতি এবং সরকারের কঠোর মনোভাব থাকলে দুনীির্ত যে রোধ করা সম্ভব, তা বলাই বাহুল্য। টিআইবি বলছে এ দুই প্রতিষ্ঠানে দুনীির্ত বন্ধ করতে হলে পণ্যের শুল্কায়ন, কায়িক পরীক্ষা, পণ্য-ছাড় এবং জাহাজের আগমন-বহিগর্মন প্রক্রিয়া অনুমোদনে কাযর্কর ওয়ানস্টপ সাভির্স নিশ্চিত করতে হবে। আমরা মনে করি প্রতিদবেদনটি আমলে নিয়ে সরকারের কতর্ব্য হওয়া দরকার দ্রæত কাযর্কর উদ্যোগ নিশ্চিত করা। আর কোনো যুক্তি নয়, যে কোনো মূল্যে দুনীির্ত রোধ হোক, এটাই প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<14184 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1