শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের গণপরিবহন খাতে অনিয়ম-নৈরাজ্য

গণপরিবহন ও সড়কের নৈরাজ্য-অরাজকতায় দেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে আছে বহুদিন ধরে। এর থেকে রেহাইয়ের আবেদন-নিবেদন, আকুতি-মিনতি দায়িত্বশীলদের কণর্কুহরে প্রবেশ করাতে বার বার ব্যথর্ হয়ে গণপরিবহন ও সড়কের নৈরাজ্য-অরাজকতা কপালের লিখন ধরে নিয়ে সইতে বাধ্য হয়েছে সবাই। গণপরিবহন খাতে ও সড়কে শৃঙ্খলার দাবি, সাধারণ মানুষের দাবি; ফলে শিক্ষাথীের্দর আন্দোলন জনস্বাথের্ আন্দোলন বলাই যথাথর্।
জহির চৌধুরী
  ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দুই বাসের পাল্লাপাল্লিতে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষাথীর্ নিহত এবং অন্তত ১৫ জন শিক্ষাথীর্ আহত হয়েছেন। এ ঘটনার বিচার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে সারা দেশের শিক্ষাথীর্রা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ ¯েøাগানে রাজপথ প্রকম্পিত করে সপ্তাহব্যাপী ব্যাপক আন্দোলন করেছে। এ সময় শিক্ষাথীর্রা নানা ধরনের প্ল্যাকাডর্, ব্যানার, ফেস্টুন হাতে রাজপথে মিছিল-বিক্ষোভ, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষাসহ রাস্তায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দায়িত্বে নিয়োজিত হতে দেখা গেছে। আন্দোলনের সময়ে শিক্ষাথীর্রা রাস্তার শৃঙ্খলা ও আইনের ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়নি। ট্রাফিক আইন অমান্যকারী মন্ত্রী-এমপি, ঊধ্বর্তন সরকারি কমর্কতার্, পুলিশের ঊধ্বর্তন কমর্কতার্, হোমরা-চোমরাদেরসহ সরকারি-বেসরকারি যানবাহনকে আইন মোতাবেক চলতে বাধ্য করেছে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ এবং শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর গাড়ি উল্টো পথে চলার, পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সরকারি গাড়ির চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকার দোষে শিক্ষাথীর্রা আটকিয়েছে, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার পরামশর্ বাতলিয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছে। শিক্ষাথীের্দর প্ল্যাকাডর্, ফেস্টুন, ব্যানারে ‘দেশ সংস্কার কাজ চলছে’, ‘রাষ্ট্রের ৪৭ বছরের জঞ্জাল পরিষ্কারের কাজ চলছে, সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত’, ‘যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দঁাড়াও তবে তুমি বাংলাদেশ’, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছাত্রদের আপাতত রাস্তা সামলাতে দিন, মন্ত্রী পুলিশকে স্কুলে পাঠান শিক্ষিত করতে’, ‘বিবেক তবে কবে ফিরবে’ লেখাগুলোসহ নানা ধরনের উক্তি স্থান পেয়েছে। শিক্ষাথীের্দর আন্দোলনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, সংবাদ মাধ্যম স্বতঃস্ফ‚তর্ সহযোগিতা-সমথর্ন দিয়েছে। ‘সড়কে নৈরাজ্য রুখছে শিক্ষাথীর্রা’, ‘রাজধানীতে ক্ষোভের আগুন।’ ‘শিক্ষাথীর্রাই পরীক্ষা করল লাইসেন্স’ শিরোনামে শিক্ষাথীের্দর আন্দোলন সম্পকির্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে। বিশিষ্টজনদের মতামতে, কলামিস্টদের লেখায়, টকশোর আলোচনায় শিক্ষাথীের্দর আন্দোলন ইতিবাচক মূল্যায়িত হয়েছে। শিক্ষাথীের্দর সপ্তাহব্যাপী আন্দোলন আন্তজাির্তক সংবাদমাধ্যমগুলোতেও ব্যাপক প্রচারণা পেয়েছে। এ দেশের ছাত্রসমাজ ঐতিহ্যগতভাবেই অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সরব কণ্ঠ। দেশের অধিকারহারা মানুষের অধিকার রক্ষা-প্রতিষ্ঠায় ছাত্র সমাজের নিভীর্ক-বলিষ্ঠ কণ্ঠ, আন্দোলন-অবদান গবের্র সঙ্গে স্মরণ করে জাতি। সদ্য স্বাধীন পাকিস্তানে মাতৃভাষা বাংলার রাষ্ট্র ভাষার মযার্দা আদায়, ১৯৬২ সালে গণবিরোধী শিক্ষা কমিশন বাতিল, ১৯৬৬ সালে ৬ ও ১১ দফা দাবি আদায়, ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার, পরাধীন আমলে স্বাধিকার-স্বাধীনতার, পরাধীন-স্বাধীন আমলের সামরিক-স্বৈরশাসনবিরোধীসহ বিভিন্ন সময়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলনগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়Ñ এসব আন্দোলনের উদ্যোক্তা, স্থপতি- রূপকার ছিল ছাত্র সমাজ। বলা যায়, বাংলাদেশে অধিকার আদায়সংক্রান্ত সব আন্দোলনের জননী ছাত্র আন্দোলন। নৈরাজ্য, অন্যায়-অবিচার, শোষণ-বঞ্চনা, দুরাচার-অনাচার, জলুম-নিযার্তন থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষায় এ দেশের ছাত্র সমাজগুলো, জেল-জুলুম, নিপীড়ন-নিযার্তনের ভয় উপেক্ষা করে, জীবন বাজি রেখে আন্দোলনে ঝঁাপিয়ে পড়তে কখনই দ্বিধা করেনি। এ দেশে অধিকারসংক্রান্ত সব অজর্নই হয়েছে ছাত্র সমাজের রক্ত ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে। এবারের ছাত্র সমাজের আন্দোলনের সূত্রপাত দুজন সতীথের্র্র রাজপথে বাসের চাপায় মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে হলেও প্রকৃতপক্ষে এ আন্দোলন ছিল জনস্বাথের্।

গণপরিবহন ও সড়কের নৈরাজ্য-অরাজকতায় দেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে আছে বহুদিন ধরে। এর থেকে রেহাইয়ের আবেদন-নিবেদন, আকুতি-মিনতি দায়িত্বশীলদের কণর্কুহরে প্রবেশ করাতে বার বার ব্যথর্ হয়ে গণপরিবহন ও সড়কের নৈরাজ্য-অরাজকতা কপালের লিখন ধরে নিয়ে সইতে বাধ্য হয়েছে সবাই। গণপরিবহন খাতে ও সড়কে শৃঙ্খলার দাবি, সাধারণ মানুষের দাবি; ফলে শিক্ষাথীের্দর আন্দোলন জনস্বাথের্ আন্দোলন বলাই যথাথর্।

দেশের গণপরিবহন খাতে অনিয়ম, নৈরাজ্য-অরাজকতা সীমা ছাড়া। সরকার ধাযর্ ভাড়ার তোয়াক্কা না করে ইচ্ছামতো ভাড়া আদায়, দুনিয়ার কোথাও ‘ডাইরেক্ট-সিটিং-গেটলক-কম স্টপেজ’ নামে টাউন সাভির্স পরিচালনার নজির না থাকলেও এ দেশে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের লোভে ‘ডাইরেক্ট-সিটিং-গেটলক-কমস্টপেজ’-এর নামে টাউন সাভির্স পরিচালনা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামানো, অদক্ষ-অপ্রাপ্ত বয়স্ক, মাদকাসক্ত চালক দিয়ে গাড়ি চালানো, গাড়িতে যাত্রী-যৌন হয়রানি, যাত্রীর সঙ্গে দুবর্্যবহার, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, গাড়িতে অতিরিক্ত যাত্রী-মাল বহন,বডি নিমাের্ণর গাইড লাইন অগ্রাহ্য করে নিমির্ত সম্প্রসারিত বডির গাড়ি রাস্তায় নামানো, যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী-মালামাল ওঠানো-নামানো এ দেশের গণপরিবহন খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করে ‘নো প্রবলেম’। দেশের যানবাহন ও সড়কের অনিয়ম-অনাচার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে নিয়োজিত কতৃর্পক্ষ বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোটর্ অথরিটি (বিআরটিএ) এবং পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের নাকের ডগাতেই গণপরিবহন খাতের নৈরাজ্য-অরাজকতা চলে। বেসরকারি পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের চাপে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পরিবহন সংস্থার গণপরিবহনও কোনো কোনো রুটে চালানো যায় না। গণপরিবহন খাতের নৈরাজ্য-অরাজকতার কাছে যাত্রী সাধারণ ও প্রশাসনকে নেকড়ের সামনে পড়া মেষশাবক যেরূপ অসহায় থাকে অনেকটা সেরূপ অসহায় থাকতে দেখা যায়। যাত্রীবাহী বাস-মিনিবাসে যৌন হয়রানি শিকার হলে বা যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে সাহায্যের ফোন নম্বর ৯৯৯, বিআরটিএ অনুমোদিত ভাড়ার চাটর্ চোখে পড়েÑ এমন স্থানে থাকার সরকারি নিদের্শ প্রায় শতভাগ গণপরিবহনেই উপেক্ষিত। টাউন সাভিের্সর ৫২-৫৩ আসনের বাসগুলোতে যাত্রী ওঠা-নামার জন্য কিছু দিন আগেও সামনে-পেছনে দুই দরজা ছিল। সম্প্রতি এ বাসগুলোর পেছনের দরজা বন্ধ করে এক দরজার বাস করা হয়েছে। টাউন সাভিের্সর ৫২-৫৩ আসনের বাসে যাত্রী ওঠা-নামার জন্য দুই দরজা রাখা বাধ্যতামূলক। বিআরটিএ এ ধরনের বাসে দুই দরজাসহ আপদকালীন বের হওয়ার দরজা আছে নিশ্চিত হয়ে রুট পারমিট ইস্যু করে। রুট পারমিটের শতর্ লঙ্ঘন করে দুই দরজার বাসকে এক দরজার বাসে পরিণত করে ৬ নম্বরসহ বিভিন্ন রুটের বাসগুলো রাস্তায় দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। দেখার কেউ নেই।

পৃথিবীর সবদেশেই গণপরিবহনব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশের গণপরিবহন খাতের মতো নৈরাজ্য-অরাজকতা পৃথিবীর কোনো দেশে নেই। কোনো দেশে পরিবহন শ্রমিক-মালিক সংগঠন বাংলাদেশের মতো যা খুশি তা করার হিম্মত রাখে না, সরকারের নিদের্শ-রাষ্ট্রের আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পার পায় না। গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের এ দেশকে অনেকেই বলেন নৈরাজ্য-অরাজকতার লীলাভ‚মি। সপ্তম ও অষ্টম শতকের বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে ‘মাৎস্যন্যায়ম’ অথার্ৎ মাছের জগতের সঙ্গে তুলনা করেছেন ইতিহাসবিদরা। সপ্তম-অষ্টম শতক পেরিয়েছে বহুআগে। উৎকষর্ সভ্যতার যুগও শুরু হয়েছে কয়েক শতাব্দী আগে। উৎকষর্ সভ্যতার আলোয় আলোকিত হয়ে অসভ্য জনগোষ্ঠীর জনপদও সুশৃঙ্খল জনপদ হয়েছে। বদনসিব এটাই যে, সুপ্রাচীন জনগোষ্ঠী বাঙালির জনপদ বাংলাদেশ সুশৃঙ্খল হয়নি আজও। ফলে মৎস্যজগতের অরাজকতার আবহ এখনো বাংলাদেশ ভ‚খÐে রয়ে গেছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমিরিটাস সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ‘বাংলাদেশ দঁাড়িয়ে আছে অন্যায়ের ওপর’ (নয়াদিগন্ত ৮. ৯.২০১৮)। বাংলাদেশে বিরাজমান অবস্থায় প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মন্তব্য অমূলক বা অতিরঞ্জিত বলার সুযোগ নেই। মন্ত্রী-এমপি, বিচারপতি, পুলিশের ঊধ্বর্তন কমর্কতার্-ভিভিআইপিদের গাড়ি উল্টো পথে চলা, ফিটনেসবিহীন সরকারি গাড়ি রাস্তায় দাবড়ানো, ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন ব্যক্তি সরকারি গাড়ির চালক হতে পারা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নজরদারিধীন জায়গায় দীঘির্দন নিরাপদে অবস্থান করে সাভার্র হ্যাকের মাধ্যমে রিজাভর্ চুরি; সুরক্ষিত ভল্ট থেকে স্বণর্ উধাও, সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিñিদ্র নিরাপত্তাধীন গুদাম থেকে হাজার-হাজার টন কয়লা-পাথর গায়েব, অবিরাম বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফঁাস, নম্বর বাড়িয়ে, উদার হস্তে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে পাসের হার বাড়ানো, রাষ্ট্রীয় প্রশাসন দলীয়করণ, রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রজাতন্ত্রের প্রশাসনিক পদে নিয়োগ-পদায়ন-বদলি-পদোন্নতি, শূন্য পদ না থাকা সত্তে¡ও পদোন্নতি, ‘দলভাই’ খাতিরে রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় দাগী অপরাধীর দÐ মওকুফ, রাজনীতিবিদ- জনপ্রতিনিধিদের চঁাদা-টেন্ডারবাজি-উন্নয়ন প্রকল্পে লুটপাট, নীতি-নৈতিকতা বিবজির্ত রাজনীতির দাপট, রাজনৈতিক পরিচয়-অথির্বত্ত-ক্ষমতার জোরে আইনের ঊধ্বের্ থাকা, সরকারের পরোক্ষ-প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা-মদদে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাকরণ, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ লাভ, অহংকার-গৌরবের মুক্তিযুদ্ধ কোটারি স্বাথের্ ব্যবহার, সবোর্চ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষকদের লোভনীয় পদ-পদবির ধান্ধায় রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি; স্বাথের্র দ্ব›েদ্ব মারামারি-দলাদলি-ঘুষাঘুষি-লাথালাথি, পেশাজীবীদের অথির্বত্ত-পদ-পদবি-সুযোগ-সুবিধার লোভে নীতি-আদশর্ বিসজর্ন দিয়ে রাজনৈতিক দাসত্ব, সরকারি চাকরিতে সংখ্যালঘিষ্ঠ পদ মেধায়; সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ কোটায় নিয়োগ, ভোটাধিকার নিয়ে ছিনিমিনি, অবাধে জীবন সংহারী ভেজাল খাদ্য-জীবনরক্ষাকারী ওষুধ বেচাকেনা, রোগী জিম্মি করে চিকিৎসা বাণিজ্য, প্রকাশ্যে অপচিকিৎসার বেপরোয়া কারবার, আমদানি মূল্যের কয়েকগুণ বেশিতে পণ্য বাজারজাত, যৌক্তিক কারণ ছাড়াই ভোক্তা জিম্মি করে ইচ্ছামতো পণ্যমূল্য বাড়ানো, আন্তজাির্তক বাজারে দরপতন কালে কেনা পণ্য দেশীয় বাজারে মূল্যবৃদ্ধি করে বাজারজাত, জাল-জালিয়াতি- অনিয়ম দুনীির্তর আশ্রয় নিয়ে ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ পাস; ঋণের টাকা নিবিের্ঘœ বিদেশ পাচার, বেপরোয়া গুম-অপহরণ, কালো টাকা আয়ের অবারিত সুযোগ, সরকারি দপ্তরে পেশাজীবী সংগঠন ও ট্রেড ইউনিয়নিস্টদের রামরাজত্ব-এ দেশে লক্ষণীয়। এমন দেশকে ন্যায়ের ওপর দঁাড়িয়ে থাকা দেশ বলার সুযোগ থাকে না। অন্যায়ের ওপর দেশ দঁাড়িয়ে থাকাতেই নৈরাজ্য-অরাজকতা অনিঃশেষ।

ক্ষমতার অপব্যবহার, জবাবদিহিহীনতা, অনিয়ম-দুনীির্ত, জুলুম-নিপীড়ন, আইনের শাসন পদদলন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, অন্যায়-অবিচার-অনাচার-দুরাচার প্রকারান্তরে স্বীকৃতই করে ফেলা হয়েছে বাংলাদেশে। এর ফল হয়েছে, নৈরাজ্য সবর্ত্র সংক্রমণ ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়া। এক কবিতায় আছে, ‘তুমি লাগিয়েছ ফণীমনসা এখন বললে তো হবে না গাছে এত কঁাটা এলো কি করে’। নিজের রোপিত ফণীমনসা গাছের কঁাটা দেখে রোপণকারী অবাক হওয়ার কিছু থাকে না। ফণীমনসা গাছজুড়ে কঁাটা স্বাভাবিকভাবেই থাকবে। এ দেশের দুভাের্গ্য যে, স্বাধীনতার পরপরই ‘নৈরাজ্য বৃক্ষ’ রোপিত হয়েছে। সে বৃক্ষ ৪৭ বছরের পরিচযার্য় নৈরাজ্যের মহীরুহ হয়েছে। অপ্রিয় হলেও সত্য, শুরুতেই সুশৃঙ্খল দেশ গড়ায় মনোযোগী না হয়ে অথর্-ক্ষমতার মোহে অনিয়ম-অরাজকতা-বিশৃঙ্খলা-অনাচার-দুরাচার আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ায় দেশ নৈরাজ্যের লীলাভ‚মি হয়েছে। এর মাশুল এখন দেশ-জাতি দিচ্ছে। ৪৭ বছরের অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা-অরাজকতা-অনাচার দুরাচারের শক্তিতে বলবান হয়ে পরিবহন খাতের নৈরাজ্য আজকের পযাের্য় এসেছে। দুনিয়ায় নজিরবিহীন ত্যাগের বিনিময়ে অজির্ত বাংলাদেশ নৈরাজ্য-অরাজকতার জঞ্জাল বইছে ৪৭ বছর ধরে। এভাবে একটা দেশ চলতে-টিকে থাকতে পারে না। শিক্ষাথীর্রা দেশের ভবিষ্যৎ কাÐারি। দেশের ভবিষ্যৎ কাÐারিদের স্বাধীনতার ৪৭ বছরের জঞ্জাল পরিষ্কারের প্রত্যয় নিরাশার বাংলাদেশে আশার আলো। শিক্ষাথীর্রা দেশ সংস্কারের, স্বাধীনতার ৪৭ বছরের জঞ্জাল পরিষ্কারের প্রত্যয় নিয়ে রাজপথে নেমে এসে অরাজকতা নৈরাজ্যে ডুবমান বাংলাদেশ উদ্ধারের আবশ্যকীয়তা দেশের সিনিয়র সিটিজেনদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে। শিক্ষাথীের্দর নিরাপদ সড়কের আন্দোলন থেকে নৈরাজ্যে ডুবমান বাংলাদেশ উদ্ধারের ডাক এসেছে যে তা পরিষ্কার।

জহির চৌধুরী: কলাম লেখক

পযড়ফিযঁৎুুধযরৎ@ুধযড়ড়.পড়স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<14194 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1