শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আধুনিক শিক্ষাদান পদ্ধতি ও শিক্ষকের ভ‚মিকা

একজন শিক্ষক বদলে দিতে পারেন শিক্ষাথীর্র জীবন। শিক্ষকতার চেয়ে মহৎ সম্মানজনক শ্রেষ্ঠ পেশা আর হতে পারে না। এ পেশাকে অনেকেই পেশা না বলে ব্রত বলে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। শিক্ষকদের ন্যায়, নীতি, আদশর্, মূল্যবোধ, চিন্তা-চেতনা শিক্ষাথীের্দরও গভীরভাবে প্রভাবিত করে। শিক্ষকরা হয়ে ওঠেন আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর। তা ছাড়া শিক্ষাথীের্দর নানাভাবে উদ্দীপ্ত, উদ্বুদ্ধ করা ছাড়াও ভালো মানুষ তৈরি করার তিনি উপযুক্ত কারিগর। শিক্ষকদের নিজের কাছে জবাবদিহিতা থাকা উচিত। শিক্ষাথীর্রা শিক্ষকদের কাছেই আদশর্, নৈতিক ও মূল্যবোধের শিক্ষা পেয়ে থাকে। তাই তাদের উচিত শিক্ষাথীের্দর কাছে নিজেদের ভাবমূতির্ রক্ষা করা।
ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
  ২২ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

একবিংশ শতাব্দীর গেøাবাল ভিলেজের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলর জন্য শিক্ষার মানোন্নয়ন একান্ত প্রয়োজন। শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক। এখন যে কেউ ইচ্ছা করলেই বা বিশ^বিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিলেই শিক্ষক হতে পারে না। শিক্ষক হতে হলে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কতৃর্পক্ষ কতৃর্ক পরীক্ষায় উত্তীণর্ হয়ে নাম অন্তভুর্ক্ত করতে হয়। আগে শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে বক্তৃতা দিয়েই মনে করতেন শিক্ষাদান সমাপ্ত হয়েছে। কিন্তু বতর্মানে যোগ্য শিক্ষক হতে হলে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের জানতে হয় আধুনিক শিক্ষাদান পদ্ধতির কলাকৌশল ও শ্রেণিব্যবস্থাপনা।

বতর্মান গেøাবাল ভিলেজের যুগে শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য প্রয়োজন শিক্ষকের শিক্ষাদান পদ্ধতির মানোন্নয়ন। এ জন্য স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার সব শিক্ষককে জানা প্রয়োজন আধুনিক শিক্ষাদান পদ্ধতির কলাকৌশল ও উন্নত শ্রেণিব্যবস্থাপনা। শিক্ষাদান প্রক্রিয়ান যথাযথ পদ্ধতি ও কৌশল অনুসরণের মাধ্যমে পড়ালেখাকে শিক্ষাথীের্দর কাছে আকষর্ণীয় ও স্বতঃস্ফ‚তর্ করা যায়। পাঠদানকে সফল, কাযর্কর ও ফলপ্রসূ করার জন্য কেবল কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিয়ে শ্রেণিকক্ষে বক্তৃতা দিলেই হবে না, শিক্ষককে অবশ্যই জানতে হবে আধুনিক শিক্ষাদান পদ্ধতির কলাকৌশল ও সঠিক শ্রেণিব্যবস্থাপনা।

শিক্ষাদান কাযর্ক্রমে শিক্ষাথীের্দর সক্রিয় অংশগ্রহণের ওপর শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সাফল্য নিভর্র করে। একজন শিক্ষক শিক্ষাদান পদ্ধতির বিভিন্ন কলাকৌশল অবলম্বন করে শিক্ষাথীের্দর সক্রিয় ও তৎপর রাখতে পারেন। পাঠদান প্রক্রিয়ায় উন্নত আধুনিক পদ্ধতির প্রয়োগ, শিক্ষা উপকরণের উপযুক্ত ব্যবহার, আধুনিক উপস্থাপনা কৌশল ইত্যাদি সংযোজনের মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থার সফল বাস্তবায়ন করা সম্ভব। গতানুগতিক শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে কেবল বক্তৃতা দেয়ার কারণে শিক্ষাথীর্রা শ্রেণিকক্ষে নিষ্ক্রিয় ও একঘেয়েমিতে ভোগে। অতএব আধুনিক পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের মাধ্যমে শিক্ষাথীের্দর শ্রেণিকক্ষেই বাস্তব ও জীবন ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে আত্মবিশ^াসী ও আগ্রহী করে গড়ে তোলে।

শিক্ষাদান পদ্ধতির প্রধান কাজ হচ্ছে শিক্ষাথীর্ ও তার শিক্ষণীয় বিষয়ের মধ্যে আকাক্সিক্ষত বন্ধন বজায় রাখা। শিক্ষকের প্রথম ও প্রধান কাজ হলো শিক্ষাথীর্র মন ও পাঠ্য বিষয়ের মধ্যে যথাযথ সেতুবন্ধন রচনা করে শিক্ষাথীর্র বয়স, সামথর্্য, অভিজ্ঞতা, অভিরুচি ও অনুরাগের প্রতি লক্ষ্য রেখে শিক্ষাথীর্র পাঠ্য বিষয়বস্তু শনাক্ত, চয়ন ও বিন্যাস করা আবশ্যক। তেমনি কোনো ধরনের পাঠদান পদ্ধতি অনুসরণ করলে বিষয়বস্তু শিক্ষাথীর্র কাছে সহজ ও সাবলীলভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে সেদিক বিবেচনাধীন রাখা। শ্রেণিকক্ষে বিষয়বস্তুকে শিক্ষাথীের্দর কাছে কাযর্কর, সফল ও ফলপ্রদ করার জন্য শিক্ষাদানের যথাযথ পদ্ধতি ও কলাকৌশল অনুসরণ অপরিহাযর্। শিক্ষাদানের আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের সঙ্গে পাঠ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা উপকরণ অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। উপকরণ সহযোগে শিক্ষাদান করলে শিক্ষাথীর্র আগ্রহ ত্বরান্বিত হয়, শিক্ষণে গতির সঞ্চার হয়, বিষয়বস্তু অনুধাবনে উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। ফলে শিক্ষণ কাযর্ক্রম যথাথর্ কাযর্করী ও দীঘর্স্থায়ী হয়। যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ ছাড়া কোনো কাজ করলে তা ব্যথর্তায় পরিণত হতে বাধ্য। পদ্ধতিসম্মত উপায়ে কাযর্ সম্পাদনের ওপর কাজের সাফল্য নিভর্র করে।

শিক্ষাদানের মতো একটি জটিল প্রক্রিয়াকে কাযর্কর করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ও কলাকৌশল প্রয়োগ করা আবশ্যক। শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য যে কোনো শিক্ষকের প্রয়োজন নতুন নতুন ধারণা ও কলাকৌশল আয়ত্ত করা। শিক্ষাদানের আধুনিক পদ্ধতি ও কলাকৌশল রপ্ত করা ও তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে অবশ্যই সফল হবেন। শ্রেণিকক্ষে বরাদ্দকৃত সময়ের মধ্যে প্রতিটি পাঠের খÐিত অংশের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশল প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায় এবং শিক্ষাথীর্রাও লেখাপড়ায় আনন্দ খুঁজে পায়। শিক্ষক নিধাির্রত সময়ে শ্রেণি পাঠদানের সময় পাঠদানের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলোর মধ্য থেকে ইচ্ছা করলে একাধিক পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। একজন শিক্ষক যদি শিক্ষাদান পদ্ধতির বিভিন্ন পদ্ধতি যথাযথভাবে অনুসরণ করের তা হলেই শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদান কাযর্ক্রম আকষর্ণীয় হয়ে ওঠে এবং শিক্ষাথীের্দর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়।

একজন শিক্ষক বদলে দিতে পারেন শিক্ষাথীর্র জীবন। শিক্ষকতার চেয়ে মহৎ সম্মানজনক শ্রেষ্ঠ পেশা আর হতে পারে না। এ পেশাকে অনেকেই পেশা না বলে ব্রত বলে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। শিক্ষকদের ন্যায়, নীতি, আদশর্, মূল্যবোধ, চিন্তা-চেতনা শিক্ষাথীের্দরও গভীরভাবে প্রভাবিত করে। শিক্ষকরা হয়ে ওঠেন আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর। তা ছাড়া শিক্ষাথীের্দর নানাভাবে উদ্দীপ্ত, উদ্বুদ্ধ করা ছাড়াও ভালো মানুষ তৈরি করার তিনি উপযুক্ত কারিগর। শিক্ষকদের নিজের কাছে জবাবদিহিতা থাকা উচিত। শিক্ষাথীর্রা শিক্ষকদের কাছেই আদশর্, নৈতিক ও মূল্যবোধের শিক্ষা পেয়ে থাকে। তাই তাদের উচিত শিক্ষাথীের্দর কাছে নিজেদের ভাবমূতির্ রক্ষা করা।

নিজে ভালো হয়, হচ্ছে অন্যকে ভালো করার উত্তম উপায়, যা একজন আদশর্ ও আত্মমযার্দাসম্পন্ন শিক্ষকের কাছে শতভাগ প্রযোজ্য। দেশে যে কোনো পযাের্য়র শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উচ্চতর শিক্ষা অজের্নর ক্ষেত্র অপ্রতুল থাকায় মান্দাত্তা আমলের পদ্ধতিতে এখনো শিক্ষাদান চলছে। যারা শিক্ষাব্যবস্থার পরিকল্পনা করেন তাদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার উপকরণ, পরিবেশ ও পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে শিক্ষাদানের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হলে স্বাধীনতা ও সাবের্ভৗমত্ব সংরক্ষণের পাশাপাশি আত্ম-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।

১৬ কোটি মানুষের এ দেশে শিক্ষকতাকে নোবেল পেশা বলা অযৌক্তিক নয়। আর এই নোবেল পেশাধারীদের সচেতনতা, একাগ্রতা, আন্তরিকতা, দায়িত্ববোধ ও ঐকান্তিক চেষ্টায় এ দেশ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। এজন্য মানুষ গড়ার কারিগরদের প্রয়োজন সঠিক প্রশিক্ষণ। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঠিক প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিবেশ এবং আধুনিক উপকরণসহ সঠিক শিক্ষাদান পদ্ধতি। উল্লেখ্য, স্ষ্ঠুু প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যেমন আত্মবিশ^াস বাড়ে তেমনি শেখার গতি ও সফলতা নিভর্র করে শিক্ষাদান পদ্ধতির ওপর। স্বাথর্ক ও সঠিক শিক্ষাদান নিভর্র করে শিক্ষকের প্রস্তুতি ও সঠিক পরিকল্পনার ওপর। ভালো প্রস্তুতি শিক্ষকের মনে যথেষ্ট আত্মবিশ^াস আনয়ন করে। তা শিক্ষার সব প্রয়োজনীয় বিষয় ও যুক্তিগুলো নিশ্চিত করে। কাজের চাপের জন্য শিক্ষককে সময়ের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়। সুনিদির্ষ্ট প্রস্তুতি ও পরিকল্পনার নিয়ম মেনে চললে সময়ের অসুবিধা লাঘব হয়। পরিকল্পনায় শিক্ষকের শিক্ষা দেয়ার মূল পরিকল্পনার আকার দেয়। যা সবের্শষে শিক্ষাদানের পদ্ধতি নিধার্রণ করে।

আধুনিক শিক্ষাদান পদ্ধতিগুলোর মধ্যে সমালোচনা, পযাের্লাচনা ও পুনরাবৃত্তি হচ্ছে শিক্ষার চ‚ড়ান্ত রূপ। তার মাধ্যমে শিক্ষাথীর্রা সঠিক ও সুষ্ঠু জ্ঞান লাভে সক্ষম হয়। কোন অনুশীলনের পর দলগত আলোচনা শিক্ষাদান ও গ্রহণের ক্ষেত্রে বিশেষ ভ‚মিকা পালন করে থাকে। যেহেতু তা শিক্ষাথীের্দর কমর্দক্ষতা এবং প্রত্যেক পবের্ তাদের কমর্কাÐের প্রভাব সৃষ্টি করে। শিক্ষায় অন্যান্য পবের্র মতো পযাের্লাচনা, পরিকল্পনা এবং সুসংগঠিতভাবে পরিচালনা সম্ভব নয়। পূবর্ পরিকল্পনায় শুধু সময়, স্থান এবং সাধারণ বিষয় অন্তভুর্ক্ত করা যায়। পযাের্লাচনা সমালোচিত বিষয়ের সংক্ষিপ্ত কিন্তু ব্যাপক সারাংশের মাধ্যমে সামথর্্য হওয়া উচিত। শিক্ষক শিক্ষার বিষয়ে গুরুত্ব এবং ত্রæটিগুলোর সংশোধনের জন্য অনুশীলন করার নিদের্শ দিতে পারেন। পযাের্লাচনা অবশ্যই কাযর্কর হওয়া বাঞ্ছনীয় তবে তা শুধু উচ্চৈঃস্বরে বক্তৃতা দান হওয়া উচিত নয়। সময়ের সঙ্গে জ্ঞানের, দক্ষতার এবং কৌশলগত জ্ঞান বিলুপ্ত হয়ে যায়। এ জন্যই পুনরাবৃত্তির প্রয়োজন। দুঃখজনক হলেও দেখা যায় একই বিষয়ে বারবার পড়ানো সত্তে¡ও মনে রাখা কঠিন হয়ে দঁাড়ায়। পুনরাবৃত্তির সময় শিক্ষাথীের্দর আলোচনায় উদ্বুদ্ধ করার, আগ্রহ সংরক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা উচিত। দ্বিতীয়বার কোনো বিষয় আলোচনা করলে সহজেই বোধগম্য হয়।

ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ: গবেষক ও কলামিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<18696 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1