শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

মানবিকতা ও নৈতিকতার চরম অবক্ষয়

নতুনধারা
  ১০ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

আমরা মানুষ। আমরা সামাজিক জীব। তাই একে অপরে মিলে সমাজে বসবাস করি। মহান প্রভু সব প্রাণীর ভিতরেই প্রেম-ভালোবাসা ও বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গীর প্রতি বিশেষ দুবর্লতা দিয়েছেন। সেই বিশেষ দুবর্লতা চরিতাথর্ করার জন্য যদি আমরা ধমীর্য় ও সামাজিক রীতির বাইরে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করি তবে সেটি যেমন অধমর্ হয় তেমনি সামাজিক সভ্যতা ভেঙেচুরে অসভ্যতায় রূপ দেয়। প্রত্যেকটি মানুষের মনেই একটি দানবীয় সত্তা বাস করে। যে সেই দানবীয় সত্তাকে দমিয়ে সুচারুরূপে জীবনযাপন করে সেই হয় অনন্য মানব। আমাদের দেশে প্রায়ই নারী-শিশু ধষর্ণ, অপহরণ ও হত্যার ঘটনা ঘটে, যা সমাজের জন্য উদ্বেগজনক। অবলীলায় নিযার্তন ধষর্ণ সহিংসতা ও হত্যার শিকার হচ্ছে নারী ও শিশুরা। কোনোভাবেই যেন নাগাল টেনে ধরা যাচ্ছে না এ পাগলা ঘোড়ার। কোমলমতি শিশু থেকে মায়ের বয়সি নারীরাও হচ্ছে ধষের্ণর শিকার। ধষর্ক শুধু ধষর্ণ করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না। ধষির্তাকে ধষের্ণর আগে পরে অমানবিক শারীরিক নিযার্তন করে হত্যা করছে ধষর্ক। চলন্তবাস, একাকী বাসায়, কোচিং সেন্টারে এমনকি ক্যান্টনমেন্টের ভেতরেও চলছে এই ধষর্ণ নামক ভয়ানক ভাইরাসের মহরা। ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী তনু; গারো তরুণী; একাকী বাসের যাত্রী গামের্ন্টস কমীর্ নারী; ভারতের ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বরের সেই চাঞ্চল্যকর চলন্ত বাসের মেডিকেল শিক্ষাথীের্ক তার প্রেমিকের সামনে ছয়জন মিলে গণধষর্ণ; বনানীর হোটেলে সাফাতের দেশকে ঝাকুনি দেয়া সেই ধষর্ণ; নায়িকা ভাবনার ধষর্ণ আমাদেরকে ভাবিয়ে তোলে বারংবার।

শিশু ধষর্ণ ও হত্যার কিছু নমুনা হচ্ছেÑ খাবারের প্রলোভন দেখিয়ে ঘরে ডেকে নিয়ে রাজধানীর বাড্ডায় তিন বছরের শিশু তানহাকে ধষের্ণর পর হত্যা করে শিপন নামের এক নরপশু। এরপর শিপন লাশটি তানহাদের ভাড়া বাড়ির শৌচাগারে ফেলে যায়। গত বছরের ১৮ অক্টোবর দিনাজপুরের পাবর্তীপুরে পঁাচ বছর বয়সী এক শিশু নিখেঁাজ হয়। পর দিন অচেতন অবস্থায় তাকে পাওয়া যায় বাড়ির পাশের হলুদ ক্ষেতে। অবুঝ শিশুটি যাকে কাকু বলে জানতো সেই নরপশু সাইফুল শিশুটির ওপর হায়েনার মতো ঝাপিয়ে পড়ে। সঙ্গে তার সহযোগী। শিশুটিকে বঁাচিয়ে রাখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গঠিত বোডের্র সদস্যরা বলেছেন, তাদের চিকিৎসা জীবনে এমন নিষ্ঠুরতা দেখেননি। পাষÐের পাশবিকতায় ভেঙে গেছে শিশুটির প্রজনন হাড়। বেøড দিয়ে কাটা হয়েছে বিশেষ অঙ্গ। কী পাষÐতা! কী নিমর্মতা! কী পশুত্ব! কী অবক্ষয়ে তলিয়ে যাচ্ছে জাতি ও সমাজ!

এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, গত চার বছরে ১২ হাজার ৮৫টি শিশু হত্যার শিকার হয়েছে। ২০১৬ সালে নারী ও শিশু নিযার্তনের ঘটনা ঘটেছিল ২১ হাজার ২২০টি। যা আগের বছরের তুলনায়ও বেশি। এটা নিঃসন্দেহে আতঙ্কজনক ঘটনা। এরকম হাজারো ঘটনা দেখে আমরা অভ্যস্ত। টিভি খুললেই ধষর্ণ ও হত্যার সংবাদ। পত্রিকার পাতায় পাতায় নারী ও শিশু ধষের্ণর পর হত্যার খবর ছেয়ে গেছে। কিন্তু কেন এই ধষর্ণ? অনেকেই বলে পোশাকে শালীনতা নেই তাই ধষের্ণর হার বেড়ে গেছে। আমার প্রশ্ন তাহলে কি একটি তিন বছরের শিশুর কি পোশাকে শালীনতা লাগবে? কেন তবে এই তিন বছরের শিশুটি হচ্ছে ধষর্ণ ও হত্যার শিকার?

মূল ঘটনা হলো আমরা তথ্য-প্রযুক্তির ছেঁায়ায় হচ্ছি অত্যাধুনিক। আমাদের হাতের মুঠোয় আজ সারা পৃথিবী। আমরা সারাটাদিন প্রায় পড়ে থাকি ঘরে আবদ্ধ হয়ে। চোখগুলো সবার নিবিষ্ট মোবাইল, ট্যাব ও পিসির পদার্য়। সবার স্টোরেজ মেমরিগুলোতে ভরপুর পনোর্গ্রাফিতে। ওয়েবসাইটগুলোতে আছে অবাধ বিচরণ। খেলতে বেড়োইনা কোথাও। এভাবে এক উন্মত্ত ও উন্মাসিক মানসিক বিকৃতি নিয়ে বাস করছি সবাই। ডিভাইসগুলোতে যা দেখি তা বাস্তবে করার জন্য মনটাও আকুপাকু করে। আর সেই সাইটগুলোতে বিকৃত মস্তিষ্কের পাশবিকতাও দেখানো হয়। যার ফলে আমরা ভুলে যাই কোনটা নৈতিকতা আর কোনটা অনৈতিকতা। কোনটা মানবিক আর কোনটা অমানবিক। ফলে বেড়েই চলছে সমাজ বিধ্বংসী এ সকল কাযর্কলাপ।

বড়দের প্রতি নেই সম্মান। ছোটদের প্রতিও নেই আর আগের মতো স্নেহ-মমতা। স্বামীর প্রতি নেই স্ত্রীর আস্থা। স্ত্রীর প্রতিও নেই স্বামীর বিশ্বাস। পরকীয়ায় সবাই মত্ত। বিশ্বাসহীনতার এ সময়ে আরও যোগ হয়েছে বিচার বিভাগের দীঘর্সূত্রতা। পেশিশক্তির প্রভাবও এই সংস্কৃতির জন্য অনেকাংশেই দায়ী।

আমরা ডুবেছি অবক্ষয়ে। আমরা মত্ত আজ মানবিকতামুক্ত, নৈতিকতাহীনতা ও ধমর্হীনতায়। আমরা আজ তলিয়ে যাচ্ছি ধ্বংসের অতল গহŸরে। জাতির এ ক্রান্তি লগ্নে আমাদের মানবিকতা ও নৈতিকতার চচার্ বড্ড প্রয়োজন।

মীম মিজান

ঢাকা

বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে হবে

বাল্যবিয়ে আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে একটি মারাত্মক ভাইরাসের নাম। বিশ্ব সমাজ ব্যবস্থায় বিবাহ একটি গুরুত্বপূণর্ অধ্যায় ও পবিত্র বন্ধন বা বৈধ চুক্তি। আবার অন্যভাবে বলা যায়, যার মাধ্যমে দু’জন প্রাপ্ত বয়স্ক নারী ও পুরুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পকর্ স্থাপিত হয়। বিবাহ এমন একটি প্রতিষ্ঠান যার মাধ্যমে দু’জন নারী ও পুরুষের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও যৌন সম্পকর্ সামাজিক স্বীকৃতি লাভ করে। তবে বাল্যবিবাহ দেশ ও জাতির জন্য অভিশাপ। আমাদের যাপিত জীবনে আধুনিকতা ও উন্নয়নের ছেঁায়া লাগলেও বাল্যবিয়ের প্রবণতা পুরোপুরি আজও কমেনী। বরং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বাল্যবিবাহ, যা গ্রাম গÐি পেরিয়ে সারাদেশে ব্যাধির মতো ছড়াচ্ছে এই সমস্যা। বাল্যবিবাহ শুধু দরিদ্র্য, অল্প শিক্ষিত, পরিবারেই ঘটছে তা নয়, অনেক শিক্ষিত পরিবারেও ঘটছে হরদম। বাবা-মার অসচেতনতা মূলক দায়দায়িত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার বাসনা এই বাল্যবিবাহে ধ্বংস হয় একটি মন, একটি পরিবার, একটি সমাজ, সবোর্পরি একটি রাষ্ট্র। আর বর্তমান পৃথিবী হারাচ্ছে আগমীর পৃথিবীকে এবং দেশ হারাচ্ছে উন্নয়নশীল দেশ গড়ার হাতিয়ারগুলো। এক কথায় বলা যায় বাল্যবিবাহে পুড়ছে দেশের ভবিষ্যৎ। আমাদের দেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গড়তে হলে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতেই হবে। এজন্য রাষ্ট্র ও জনতার ঐক্যবন্ধতার দরকার। আমরা জানি, বাল্যকাল বা পূণর্ বয়স্ক হওয়ার পূবের্ যে বিবাহ সম্পূণর্ হয় তাকে বাল্যবিবাহ বলে। বাল্যবিবাহ মানেই অন্ধকারে আবদ্ধ হলো যেন তাদের জীবন। বাল্যবিবাহের শিকার ছেলে মেয়ের শিক্ষা স্বাস্থ্য বিনোদনের মতো মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় যা তাকে সারাজীবনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত করে। বিইডিএসের ২০১৭ সালের জরিপে বলা হয়েছে, দেশে বতর্মানে বাল্যবিয়ের সংখ্যা ৪৭ শতাংশ (১৮ বছরের নিচে) অন্যদিকে (১৫ বছরের নিচে) বিবাহের সংখ্যা ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ। তবে আশার খবর বাল্যবিয়ে অনেকাংশেই রদ করা গিয়েছে। বাল্যবিয়ের কুফল সম্পকের্ সমাজ আগের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন। এমন কী এখন বাল্যবিবাহের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, এমন অল্প বয়সী মেয়ে নিজের বিবাহ নিজেই ঠেকিয়ে দিচ্ছে, সমাজে এর দৃষ্টান্ত ও তৈরি হয়েছে তারপরও এই ব্যাধি পুরোপুরি নিমূর্ল করা সম্ভব হচ্ছে না। জরিপ অনুযায়ী বাল্যবিয়ের প্রবণ ১০ জেলা হচ্ছে, বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগঁা, গাইবান্ধা, নাটোর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, জামালপুর, কুষ্টিয়া ও খুলনা। বাল্যবিবাহের বিভিন্ন কারণ লক্ষ্য করা যায়, তার প্রধান কারণ দরিদ্রতা, নিরক্ষতা, সামাজিক চাপ, নিরাপত্তার অভাব, যৌন নিযার্তন, যৌতুক প্রথা, ইভ টিজিং অশিক্ষা, অসচেতনতা, বোঝাস্বরূপভাব, অথার্ভাব, কুসংস্কার, অপরিণত বয়সে প্রেমে জড়িয়ে পড়া, অবহেলা, পুরনো ধ্যান-ধারণা, বেকারত্ব, প্রাকৃতিক দুযোর্গপ্রবণ এলাকা, পারিবারিক ভাঙ্গন, ও অবক্ষয়, প্রশাসনের ব্যথর্তা ইত্যাদি। আজকের শিশু ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। বাল্য বিবাহ পরিমাণ না কমালে, নারীর প্রতি সহিংসতা, মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি, অপরিণত গভর্ধারণ, প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম দেওয়া, অপুষ্টিজনিত সমস্যা, প্রসবকালীন শিশু মৃত্যুর ঝঁুকি, প্রসবকালীন খিঁচুনি, প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যা, মানসিক অশান্তি, বিবাহ বিচ্ছেদ, পরকীয়া, আত্মহত্যা, জরায়ুর ক্যান্সার, ও নবজাতকের বিভিন্ন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা, অপরিকল্পিত পরিবার, দাম্পত্য কলহ, পতিতা বৃদ্ধি, নারীর শিক্ষার হার হ্রাস, স্কুল থেকে ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধি, নারীদের অথৈর্নতিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার ক্ষমতা ও সুযোগ কমে যাওয়াসহ নানানবিধ নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকবে। বাল্যবিবাহ নিমূর্ল করা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। বাল্যবিবহের অন্যতম কারণগুলো চিহ্নিত করে এবং বাবা মার সদিচ্ছাই পারে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে। শুধু তাই নয়, স্কুল-কলেজে শিক্ষাথীের্দর মাঝে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পকের্ শিক্ষা দেওয়া, গণমাধ্যম পত্র-পত্রিকায় আন্দোলন গড়ে তোলা, বাল্যবিবাহ বন্ধে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বররা গুরুত্বপূণর্ ভূমিকা পালন করতে পারে। বাল্যবিবাহ রোধে যুবকদের নেতৃত্ব সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, প্রশাসন মাইকের মাধ্যমে প্রতিটি ইউনিয়ন এবং গ্রামে বাল্যবিবাহের শাস্তি কী হতে পারে তা যদি প্রচার করতো, তাহলে অনেক বাল্যবিয়ে রোধ করা সম্ভাব হতো। বাবা-মার পাশাপাশি বাল্যবিয়ে রোধে কাজিরা যদি টাকার কাছে হার না মেনে নিত, তাহলে বাল্যবিয়ে নিমূর্ল করা সম্ভাব হতো। অবশেষে আমি অনুরোধ করি সব বাবা-মাকে আসুন, আমরা সবাই বাল্যবিয়েকে লাল কাডর্ দেই, আমাদের দেশের সরকার দেশ বিদেশের বিভিন্ন সংগঠন, আপসহীনভাবে বাল্যবিবাহর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে যাচ্ছে আমরা তাদের সঙ্গে শামিল হই এবং বলি আমার মেয়ের বিয়ে ১৮ বছরের আগে নয়, ১৮ বছর পরে হলে ভালো হয়। আমরা বাল্যবিবাহ বন্ধ করব, সোনার বাংলাদেশ গড়তে সন্তানকে সহযোগিতা করব, কন্যা সন্তান মানেই বোঝা নয়, করবে তারা বিশ্ব জয় ইনশাআল্লাহ।

ইতি খাতুন

সোনাতলা, বগুড়া

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<21699 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1