শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অপরাধপ্রবণ , অসহিষ্ণু ও অবক্ষয়গ্রস্ত সমাজ

মনে রাখতে হবে বিশৃঙ্খল সমাজে বসবাস করে উন্নত রুচি ও সংস্কৃতির অধিকারী হওয়া যায় না। আমরা চাই পরিকল্পিত ও বিন্যস্ত সমাজ। নীতিবোধ ও চারিত্রিক মূল্যবোধ সমাজ গঠনের প্রধান শক্তি, যা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। সামাজিক জীবন ব্যক্তির কাছে এক আশীবার্দ, এর পূণর্তা লাভ করে সামাজিক বন্ধনের মাধ্যমে। সমাজব্যবস্থা এমনই হওয়া উচিত, যাতে ব্যক্তির স্বপ্ন ভঙ্গ না হয়। অথচ আমরা কী দেখতে পাচ্ছি। সামাজিক অবক্ষয় দিনে দিনে চরম আকার ধারণ করছে। হেন কোনো অপরাধ নেই, যা সমাজে সংঘটিত হচ্ছে না।
সালাম সালেহ উদদীন
  ২৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

সমাজের স্বাভাবিক ও সুস্থ গতিপ্রবাহ রক্ষা করার দায়িত্ব কার, সরকার, স্থানীয় সরকার, সমাজপতি নাকি সমাজের সচেতন মানুষের। সমাজ পুননির্মাের্ণর দায়িত্বই বা কার? আপতঃদৃষ্টিতে এই সব প্রশ্ন সহজ মনে হলেও এর সমাধান বেশ জটিল। সমাজে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ বসবাস করে, বিচিত্র এদের মানসিকতা ও রুচি। এদের কোনো সমান্তরাল ছাউনির মধ্যে আনা কঠিন। তবে সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা, সামাজিক অপরাধ কমিয়ে আনাসহ নানা পদক্ষেপ নিতে হবে সম্মিলিতভাবে। সমাজ রক্ষা করা না গেলে পরিবার রক্ষা করা যাবে না, ব্যক্তিকে রক্ষা করাও কঠিন হয়ে পড়বে। বাংলাদেশে সমাজ পরিবতের্নর উপাদানগুলো ব্যাখ্যা করা জরুরি। সমাজ পরিবতর্ন মানে সামাজিক কাঠামো ও সমাজের মানুষের কাযার্বলি এবং আচরণের পরিবতর্ন। তাদের মানসিকতার পরিবতর্ন। মনে রাখতে হবে বিশৃঙ্খল সমাজে বসবাস করে উন্নত রুচি ও সংস্কৃতির অধিকারী হওয়া যায় না। আমরা চাই পরিকল্পিত ও বিন্যস্ত সমাজ। নীতিবোধ ও চারিত্রিক মূল্যবোধ সমাজ গঠনের প্রধান শক্তি, যা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। সামাজিক জীবন ব্যক্তির কাছে এক আশীবার্দ, এর পূণর্তা লাভ করে সামাজিক বন্ধনের মাধ্যমে। সমাজব্যবস্থা এমনই হওয়া উচিত, যাতে ব্যক্তির স্বপ্ন ভঙ্গ না হয়। অথচ আমরা কী দেখতে পাচ্ছি। সামাজিক অবক্ষয় দিনে দিনে চরম আকার ধারণ করছে। হেন কোনো অপরাধ নেই, যা সমাজে সংঘটিত হচ্ছে না। স্ত্রী স্বামীকে, স্বামী স্ত্রীকে, মা-বাবা নিজ সন্তানকে, ভাই ভাইকে অবলীলায় হত্যা করছে। প্রেমের কারণে অথর্ সম্পত্তির লোভে সমাজে এসব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অন্যদিকে হতাশা নিঃসঙ্গতা বঞ্চনা অবিশ্বাস আর অপ্রাপ্তিতে সমাজে আত্মহননের ঘটনাও বেড়ে গেছে। বেড়ে গেছে মাদকাসক্তের সংখ্যা। মাদকের অথর্ জোগাড় করতে না পেরে ছেলে খুন করছে বাবা-মাকে, স্বামী খুন করছে স্ত্রীকে কিংবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যকে। অন্যের সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য কিংবা কাউকে ফঁাসিয়ে দেয়ার নিমিত্তে নিজের সন্তানকে হত্যা পযর্ন্ত করছে। পারিবারিক বন্ধন স্নেহ, ভালোবাসা মায়া-মমতা, আত্মার টান সবই যেন আজ স্বাথর্ আর লোভের কাছে তুচ্ছ। আসলে আমরা আজ যে সমাজে বাস করছি সে সমাজ আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না, এমনকি যে রাষ্ট্রে বাস করছি সে রাষ্ট্রও নিরাপত্তাদানে অপারগ। আমরা নানারকম সামাজিক এবং রাষ্ট্রিক সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেও বারবার ব্যথর্ হচ্ছি। পা পিছলে ক্রমান্বয়ে নিচের দিকে গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছি। সমাজের একজন সুস্থ এবং বিবেকবান মানুষ হিসেবে এমন পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় কী তা নিধার্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কি সামাজিক ক্ষেত্রে, কি রাজনৈতিক ক্ষেত্রেÑ সবের্ক্ষত্রেই অবক্ষয় দেখতে পাচ্ছি, যা একজন শান্তিকামী মানুষ হিসেবে আমরা স্বাধীন ও একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কল্পনা করতে পারছি না। এ অবক্ষয় ইদানীং আরও প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। সামাজিক মূল্যবোধ তথা ধৈযর্, উদারতা, কতর্ব্যনিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা, শৃঙ্খলা, শিষ্টাচার সৌজন্যবোধ, নিয়মানুবতির্তা, অধ্যবসায়, নান্দনিক সৃষ্টিশীলতা, দেশপ্রেম, কল্যাণবোধ, পারস্পপারিক মমতাবোধ ইত্যাদি নৈতিক গুণাবলি লোপ পাওয়ার কারণেই সামাজিক অবক্ষয় দেখা দেয়। যা বতর্মান সমাজে প্রকট। সামাজিক নিরাপত্তা আজ ভ‚লুণ্ঠিত, এমনকি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাও প্রশ্নের সম্মুখীন। দেশের সামগ্রিক যে অবক্ষয়ের চিত্র এর থেকে পরিত্রাণের কোনো পথই কি আমাদের খোলা নেই? আমাদের অতীত বিস্মৃতির অতল গহŸরে নিমজ্জিত, বতর্মান অনিশ্চিত এবং নিরাপত্তাহীনতার দোলাচলে দুলছে এবং ভবিষ্যৎ মনে হচ্ছে যেন পুরোপুরি অন্ধকার। যারা সমাজকে, রাষ্ট্রকে পদে পদে কলুষিত করছে, সমাজকে ভারসাম্যহীন ও দূষিত করে তুলছে, সমাজের মানুষের নিরাপত্তা ও অধিকার ক্ষুণœ করছে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দঁাড়াতে হবে। চারদিকে যে সামাজিক অবক্ষয় চলছে, চলছে তারুণ্যের অবক্ষয়Ñ এর কি কোনো প্রতিষেধক নেই? আমাদের তরুণরা আজ হতাশ ও দিশাহারা। লেখাপড়া শিখেও তারা চাকরি পাচ্ছে না। ফলে অনেকেই ছিনতাই, চঁাদাবাজিসহ বড় ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। কেউ কেউ খুন-ধষের্ণর মতো, ডাকাতির মতো অমানবিক এবং সমাজবিরোধী কাজেও জড়িয়ে পড়ছে। কেউবা হয়ে পড়ছে নানা ধরনের মাদকে আসক্ত। অনেকেই আবার সন্ত্রাসীদের গডফাদারদের লোভনীয় হাতছানিতে সাড়া দিয়ে সন্ত্রাসে লিপ্ত হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে তাদের এই অধঃপতনের জন্য দায়ী কে? দায়ী আমরাই। আমরাই তাদের সুপথে পরিচালিত করতে পারছি না। এর পাশাপাশি ঘুষ, দুনীির্ত, স্বজনপ্রীতি, দখল ও দলীয়করণের ব্যাপারটি তো দেশের সবর্ত্রই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে কে আমাদের পরিত্রাণ দেবে এবং কে-ইবা আমাদের পথ দেখাবে? নৈতিক শিক্ষার প্রথম ও প্রধান কেন্দ্র হচ্ছে পরিবার। পরিবারের সদস্যরা যদি নৈতিক হয় তা হলে সন্তানরাও নৈতিক হয়ে উঠবে।

কিছুদিন আগে চঁাদপুর সদর উপজেলায় দুই সন্তান ও স্ত্রীকে হত্যার পর এক যুবক আত্মহত্যা করেছে। পারিবারিক কলহের জের ধরে সোমবার ভোর রাতে সদর উপজেলার দেবপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ওই পরিবারের চারজন হলেনÑ মাইনুদ্দিন (২৬), তার স্ত্রী ফাতেমা (২৪) এবং তাদের দুই সন্তান মিথিলা (৫) ও পিয়াম (১)। ভোর রাতে মাইনুদ্দিন ও ফাতেমার মধ্যে ঝগড়া হয়। এক পযাের্য় মাইনুদ্দিন তার স্ত্রীকে বাড়ির পুকুরে চুবিয়ে হত্যা করে। এরপর সে ঘরে ঘুমিয়ে থাকা দুই সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে মাইনুদ্দিন ঘরের ভেতর গলায় ফঁাস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। স্ত্রী ফাতেমা স্বণার্লঙ্কার হারিয়ে ফেলার জের ধরে এই ঝগড়ার সূত্রপাত। এই নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে সালিশও হয়েছে। ভাবতে অবাক লাগে স্বণার্লঙ্কারকে কেন্দ্র করে পারিবারিক কলহের জের ধরে এভাবে চারটি প্রাণ চলে যাওয়া কেবল বিস্ময়করই নয় হৃদয়বিদারকও। বিশেষ করে দুটি শিশুকে হত্যা করেছে তাদেরই বাবা। এমন নিষ্ঠুর বাবাকে কী বলে আমরা আখ্যায়িত করব। যদিও তিনি স্ত্রী-সন্তানদের হত্যা করে আত্মাহুতি দিয়ে জীবনের সমাধান খঁুজেছেন। নিমিষে একই পরিবারের চারজনের জীবন চলে যাওয়া সামাজিক অবক্ষয় ও অসহিষ্ণুতার চরম বহিঃপ্রকাশ। গত বছর ভালোবাসার হিংসায় ছোট ভাইকে খুন করেছে বড় ভাই। এই ঘটনা ঘটেছে বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে। খবরে প্রকাশ, সৌরভ ও সোহাগ দুই ভাই। দুজনেই শিশু। সৌরভের বয়স ৯ আর সোহাগের ৬। সৌরভের ধারণা সোহাগ তিন বছর পরে এসে তার ভালোবাসার ভাগ বসিয়েছে, যা মন থেকে মেনে নিতে পারেনি সে। তার ধারণা বাবা সোহাগকে বেশি ভালোবাসে। ফলে তার মনে জন্ম নেয় গভীর হিংসা। যা শেষ পযর্ন্ত তাকে এতটাই মানসিকভাবে বিপযর্স্ত করে যে, বাবার ভালোবাসা একাই পেতে খুন করে ফেলে ছোট ভাইকে। এর চেয়ে মমাির্ন্তক ঘটনা আর কী হতে পারে। এটা সামাজিক অবক্ষয়ের নিমর্ম চিত্র। সামাজিক মূল্যবোধ আজ কোন পযাের্য় গিয়ে ঠেকেছে তা এই ঘটনার দ্বারাই প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়। আমরা দীঘির্দন থেকেই লক্ষ্য করে আসছি এই ধরনের বিপজ্জনক প্রবণতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা প্রতিরোধের প্রয়োজন সামাজিক ও পারিবারিক সচেতনতা। এই দায়িত্ব নিতে হবে পরিবার ও সমাজকেই। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রেরও যথেষ্ট করণীয় রয়েছে। সমাজের এক শ্রেণির ববর্র পাষÐ মানুষের হাতে অনেকের জীবনই বিপন্ন হয়ে পড়ছে, অবলীলায় জীবন চলে যাচ্ছে। এমনকি শিশুর জীবনও চলে যাচ্ছে আপনজনের হাতে। এ সব রোধ করতে না পারলে একদিকে যেমন সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে অন্যদিকে পরিবারের সদস্যরাও থাকবে নিরাপত্তাহীন। পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে আনবে। সুতরাং সময় থাকতেই সাবধান হওয়া সমীচীন। এই অবক্ষয়ের আরেক চিত্র ইদানীং সমাজে শিশু হত্যার ঘটনা উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধি পাওয়া। আমাদের কোমলমতি শিশুরা কোনো দিক থেকেই এখন আর নিরাপদ নয়। নানা কারণে তাদের জীবনঝুঁকি বেড়ে গিয়েছে। কখনো তারা দুঘর্টনায় মারা যাচ্ছে অথবা অপহরণ ও হত্যার নিষ্ঠুর শিকার হচ্ছে, আবার কখনো তারা পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে। এই ধরনের দুঃখজনক ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। অপার সম্ভাবনা ও স্বপ্ন নিয়ে যে শিশুর নিরাপদে বেড়ে ওঠার কথা সেখানে কেন তাদের অকালে মৃত্যু হবে? স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের কি কোনো ভ‚মিকা নেই? অথচ শিশু অধিকার সংরক্ষণ করা এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কেবল শিশু অপহরণ ও হত্যাই নয়, নারীর অবমাননা লাঞ্ছনা ধষর্ণ ও হত্যাও সমাজে বেড়ে গিয়েছে। বিয়ের পর একজন নারীর সবচেয়ে ভরসাস্থল ও নিরাপদ জায়গা হচ্ছে তার স্বামী। সব ধরনের পারিবারিক ও সামাজিক বৈরী পরিবেশ থেকে বঁাচিয়ে রাখার কথা যে স্বামীর, যে স্ত্রীর স্বপ্ন, আকাক্সক্ষা, ভালোবাসা একজন স্বামীকে ঘিরে, সেই স্বামীই হয়ে ওঠে লোভী, ভয়ঙ্কর, নিযার্তক, শোষক ও হন্তারক। নারীর সবচেয়ে নিরাপদ নিভর্রতার জায়গা যখন সংকোচিত হয়ে পড়ে কিংবা থাকে না তখনই নারী দিশাহারা হয়ে পড়ে। ‘এ জীবন বঁাচিয়ে রাখা কিংবা নিজে বেঁচে থাকা নিরথকর্’Ñ এ বোধ যখন নারীর মধ্যে জন্ম নেয় তখনই সে আত্মহত্যার মতো ভয়ঙ্কর পথে যাত্রা করে। আমি এর আগেও বলেছি সংসার হচ্ছে চ‚ড়ান্ত ত্যাগ ও সংযম প্রদশের্নর জায়গা। দাম্পত্য জীবন টিকিয়ে রাখতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই। একে অপরের সঙ্গে স্বেচ্ছায় ও সন্তুষ্টচিত্তে খাপ খাইয়ে নেয়ার মধ্যেই দাম্পত্য জীবনের সফলতা নিভর্রশীল। সে ক্ষেত্রে স্বামীই যদি হয়ে ওঠে যৌতুকলোভী নিযার্তক ও অমানুষ তাহলে স্ত্রীদের সংসারে আর দঁাড়ানোর জায়গা থাকে না। অথচ স্বামীর উচিত যে কোনো ধরনের বিপদে, নানান প্রতিক‚ল পরিবেশে স্ত্রীর পাশে দঁাড়ান। তাকে ভরসা দেয়া, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সম্ভাবনার জাল বুনিয়ে মোহাবিষ্ট করে রাখা, তাকে শোষণ নিযার্তনের মাধ্যমে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়া নয়। একজন স্বামী যখন তার নতুন বউকে ঘরে তোলে যৌথ পরিবার হলে তার কাজকমর্, আচার-আচরণ, চলাফেরা পরিবারের অন্য সদস্যদের পছন্দ নাও হতে পারে। তারা ওই নববধূর বিরুদ্ধে যে কোনো মুহ‚তের্ রুখে দঁাড়াতেও পারে। কিন্তু সব কিছু থেকে আগলে রাখার দায়িত্ব একমাত্র স্বামীর। স্বামী যদি তার বাবা-মা ভাইবোনসহ অন্য আত্মীয়কে প্রশ্রয় দেয় তার স্ত্রী নিযার্তনে, শোষণে কিংবা বঞ্চনায় তাহলে পরিবারের সদস্যদের নিষ্ঠুরতা, শোষণ, নিযার্তন, দুবর্্যবহার ওই স্ত্রীর ওপর বেড়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। যে কারণে আমরা দেখতে পাই স্বামীর চোখের সামনে তার স্ত্রীকে পরিবারের সবাই মিলে নিযার্তন করছে, কিন্তু স্বামীধন দঁাড়িয়ে দঁাড়িয়ে মজা দেখছে। কিছুই বলছে না। ক্ষেত্রবিশেষে স্বামী নিজেও পরিবারের অন্যান্যের সঙ্গে নিযার্তনে শরিক হচ্ছে। তখনই নারী বুঝে ওঠে তার শেষ ভরসার জায়গাটিও অধিকতর নড়বড়ে। আর এক্ষেত্রেই নারীর জিদ ও হতাশা বহুগুণে বেড়ে যায়, বেঁচে থাকাকে অথর্হীন মনে করে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। কোনোভাবেই আমাদের সমাজ যেন আলোর দিকে অগ্রসর হতে পারছে না।

ক‚পমЂকতা যেমন আমাদের সমাজকে দিন দিন গ্রাস করছে, তেমনি নারীর ক্ষেত্রেও যেন সমাজ দিন দিন আরও নিষ্ঠুর হয়ে উঠছে। নিষ্ঠুরতার বলি হচ্ছে নারী। কোনোভাবেই তা রোধ করা যাচ্ছে না। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও নারীরা নিযার্তন ও ধষের্ণর শিকার হতে থাকবে এটাই যেখানে সমথর্নযোগ্য নয়, সেখানে দেখা যাচ্ছে শুধু মফস্বল বা গ্রামে নয়, রাজধানী ঢাকাতেই নারী নিযার্তন ও ধষের্ণর হার ৭০ শতাংশ বেড়েছে। এ বিষয়টি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক এবং সাবির্ক অথের্ই আশঙ্কারও বটে। মনে রাখতে হবে, জীবন হচ্ছে সংগ্রামের। যারা আত্মহত্যার মাধ্যমে জীবনের কাছে হেরে যায় কিংবা জীবনের পরিসমাপ্তি খেঁাজে তারা ভীরু। ধমর্ও এটাকে সমথর্ন করে না। নিজের যোগ্যতা, কমর্সুষমা, দৃঢ় মনোবল নিয়ে পুরুষশাসিত সমাজে ঘুরে দঁাড়াতে হবে নারীকেই। ভবিষ্যতে বেঁচে থাকার পথও তৈরি করতে হবে নিজেকে। আগেও বলেছি যখন সবকিছু শেষ হয়ে যায় তখনো ভবিষ্যৎ পড়ে থাকে। দেশে পারিবারিক হত্যাকাÐ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবার হলো মানুষের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। কিন্তু এখন পরিবারের মধ্যেও নিরাপত্তা খঁুজে পাওয়া দায় হয়ে পড়েছে। সামাজিক অবক্ষয়ের প্রভাবে পরিবারের সদস্যদের একের প্রতি অন্যের মমত্ববোধ হ্রাস পাওয়ায় ব্যক্তিগত স্বাথের্র দ্ব›েদ্ব আপনজনের প্রাণ কেড়ে নেয়ার ঘটনাও ঘটছে। এমন পরিস্থিতির অবসান জরুরি। আমরা ক্রমক্ষয়িষ্ণু ভঙ্গুর অবক্ষয়গ্রস্ত ও অসুস্থ সমাজে বসবাস করছি। অসভ্যতা নিষ্ঠুরতা ও অমানবিকতার ঘেরাটোপে এই সমাজ আজ বন্দিÑ যার প্রধান শিকার মানুষ। মানুষ শ্রেষ্ঠ জীব অথচ বাংলাদেশে মানুষের জীবনই সবচেয়ে তুচ্ছ, মূল্যহীন। মানুষ আজ ঘাটে, পথে, রাজপথে আগুনে পুড়ে, ভবনের নিচে চাপা পড়ে অবলীলায় মারা যাচ্ছে। প্রতিদিন নানা দুঘর্টনায় মারা যাচ্ছে এ দেশের সাধারণ মানুষ। যারা বেঁচে আছেন তারাও ধৈযর্হারা হয়ে পড়ছেন। দিনে দিনে হয়ে পড়ছেন অসহিষ্ণু। মানুষের সৌজন্যতাবোধ মানবিকতা আজ ভ‚লুণ্ঠিত। আমরা এ কোন সমাজে বসবাস করছি? এমন সমাজ কি আমরা চেয়েছিলাম? চারদিকের অবস্থা দেখে আমাদের রক্ত হিম হয়ে যাচ্ছে। ঘুমহীন রাত কাটাতে হচ্ছে। সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার কারণেই মূলত এমনটি হচ্ছে। রাষ্ট্রের মধ্যে শৃঙ্খলা না থাকলে সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে এটাই স্বাভাবিক, যার কারণে সামাজিক অবক্ষয় এত চরমে পেঁৗছেছে। নানা ছলে, প্রতারণায় এমনকি প্রকাশ্যে পরিবারের ভেতর ঢুকে পড়ছে দুবৃর্ত্তরা। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অপহরণ, ধষর্ণ, হত্যা করছে। একটি গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের ভয়াবহ চিত্র ভয়ঙ্করভাবে উদ্বেগজনক। দেশে সঠিক আইনের শাসন থাকলে, সুস্থ রাজনৈতিক ধারা বজায় থাকলে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দেশপ্রেম ও গণতন্ত্রচচার্ থাকলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। মানুষ অতিমাত্রায় প্রযুক্তির ওপর নিভর্রশীল হওয়ায় যান্ত্রিক হয়ে গেছে। ফলে মানবিক মূল্যবোধ লোপ পেয়েছে। অন্যায়টাকেই তারা স্বাভাবিক মনে করছে। সামাজিক সুস্থতা আনয়নের পাশাপাশি নতুন সমাজ নিমাের্ণর জন্য এ ধরনের অবক্ষয়কে প্রতিরোধ করতে হবে এবং যে কোনো মূল্যে। এ জন্য ব্যাপকভাবে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন এবং এর কোনো বিকল্প নেই।

সালাম সালেহ উদদীন: কবি, কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<33368 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1