শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাইকোটের্র ঐতিহাসিক রায়

নদ-নদীর সুরক্ষা নিশ্চিত হোক
নতুনধারা
  ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

বাংলাদেশের নদ-নদীর পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন সময়েই নেতিবাচক খবর পত্রপত্রিকায় উঠে এসেছে। যেখানে দখল, দূষণসহ নানা কারণেই নদীর অস্তিত্ব সংকটের মুখে এমনটি স্পষ্ট হয়েছে। সঙ্গত কারণেই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নদীর সুরক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহাযর্ বিষয়। মনে রাখতে হবে পৃথিবীর অনেক সভ্যতা গড়ে উঠেছে নদীকে কেন্দ্র করে। যদি নদী দখল-দূষণে জজির্রত হয়, নদীর অস্থিত্ব হুমকির মুখে পড়ে, তবে তা নিশ্চিতভাবেই আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে, যা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল যে, অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে রক্ষা করতে তুরাগ নদীকে ‘লিগ্যাল পারসন’ ঘোষণা করেছে হাইকোটর্। উল্লেখ্য, এই ঘোষণা দেশের সব নদ-নদীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। বলা দরকারÑ জীবন্ত সত্তা হিসেবে মানুষ যেমন সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করে, আদালতের এই আদেশের মধ্য দিয়ে নদীর ক্ষেত্রেও তেমন কিছু মৌলিক অধিকার স্বীকৃত হলো। যা অত্যন্ত ইতিবাচক বলেই প্রতীয়মান হয়। জানা যায়, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তুরাগ নদীর অবৈধ দখলদারদের নাম ও স্থাপনার তালিকা হাইকোটের্ দাখিল করেছিল বিচার বিভাগীয় একটি তদন্ত কমিটি। ওই তালিকায় আসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা পরে এ মামলায় পক্ষভুক্ত হন। উভয় পক্ষের দীঘর্ শুনানি নিয়ে হাইকোটর্ মঙ্গলবার নদী রক্ষায় রায় ঘোষণা শুরু করে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ করা দরকার, আইনের চোখে ব্যক্তি দুই ধরনেরÑ নেচারাল পারসন ও লিগ্যাল পারসন। একজন মানুষ ‘নেচারাল পারসন’ হিসেবে যেসব আইনি সুবিধা ভোগ করেন, ‘লিগ্যাল পারসন’ এর ক্ষেত্রে বেশ কিছু আইনি অধিকার প্রযোজ্য হয়। রায়ে হাইকোটর্ বলেছে, ‘অবৈধ দখলদারদের দ্বারা প্রতিনিয়তই কম-বেশি নদী দখল হচ্ছে। অবৈধ স্থাপনা তৈরি করায় সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে নদী। এসব বিষয় বিবেচনা করে তুরাগ নদীকে লিগ্যাল/জুরিসটিক পারসন হিসেবে ঘোষণা করা হলো।’ আমরা মনে করি, এই বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের গুরুত্বসহকারে আমলে নেয়া দরকারÑ আদালত বলেছে, নাব্যতা ও বেদখলের হাত থেকে নদী রক্ষা করা না গেলে বাংলাদেশ তথা মানবজাতি সংকটে পড়তে বাধ্য।

সঙ্গত কারণেই আমরা এটা বলতে চাই, নদীর রক্ষার প্রয়োজনীয়তা কতটা বেশি তা সংশ্লিষ্টদের ভেবে দেখা সমীচীন। এর পরিপ্রেক্ষিতে কাযর্কর পদক্ষেপ নিশ্চিত করার কোনো বিকল্পও থাকতে পারে না। যেখানে মানবজাতি টিকে থাকার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নদী। বিভিন্ন দেশের সরকার আইন প্রণয়ন করে নদীকে বেদখলের হাত থেকে রক্ষার চেষ্টা করছে। নদী রক্ষায় বিশ্বব্যাপী আদালত বিভিন্ন নিদেশর্না দিচ্ছে। এমন বিষয়ও আদালতের পযের্বক্ষণে উঠে এসেছেÑ সেখানে নদী রক্ষার ক্ষেত্রে কোনো কোনো গড়িমসি কাম্য হতে পারে না। আমলে নিতে হবে যে, হাইকোটর্ বলেছে, ঢাকার আশপাশে বহমান চার নদী রক্ষায় ইতঃপূবের্ আদালত নানা গুরুত্বপূণর্ নিদেশর্না দিয়েছে। কিন্তু সে রায়ের নিদেশর্নাগুলোর সঠিক বাস্তবায়নে বিবাদীরা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তা নেয়া হলে তুরাগ নদী রক্ষায় হাইকোটের্ আরেকটি মামলা করার প্রয়োজন হতো না।

সবোর্পরি আমরা বলতে চাই, নদী দখল ও দূষণের মতো পরিস্থিতি রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের এক আইনজীবী বলেছেন, নদী রক্ষার জন্য আন্তজাির্তকভাবে জাগরণ শুরু হয়েছে। পরিবেশের জন্য নদী রক্ষার গুরুত্ব নিয়ে এখন সবাই কথা বলছে। ফলে সামগ্রিকভাবে এই বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টরা নদী রক্ষায় সবার্ত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<34716 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1