শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পুরনো প্রসঙ্গ: নারী ও রাজপথ

ঢাকাসহ বাংলাদেশের সবর্ত্র একটা প্রধান সমস্যা হলো জনসংখ্যা স্ফিতি, অত্যধিক যানবাহন, রাস্তার অভাব ও চালকদের অনিয়মের প্রতি প্রচÐ আকষর্ণ শাস্তি না পাওয়ার কারণে। পৃথিবীর উন্নত দেশের কথা বাদ দিলেও উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশের দিকে তাকালেও রাস্তায় গাড়ি চালানোর একটা প্রতিষ্ঠিত নিয়মনীতি ও আদশর্ লক্ষ্য করা যায়। মিয়ানমার, কম্বোডিয়া বা ভিয়েতনামের মতো দেশে গাড়িচালকদের মধ্যে গাড়ি চালানোর সময় যে দায়িত্বজ্ঞান ও নিয়মনীতির প্রতি শ্রদ্ধা, তা বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে দেখা যায় না কেনÑ এ প্রশ্ন সমগ্র দেশবাসীর।
আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ
  ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

বাংলাদেশে কোনো কোনো পরিবেশ এমন অবস্থা ধারণ করেছে যে বারবার বললেও তার পরিবতর্ন লক্ষ্য করা যায় না। এই কারণে পুরনো প্রসঙ্গ আবার নতুন করে অনুবৃত্তি করার প্রয়োজন হয় আগের অবস্থার কোনো পরিবতর্ন হয় না বলে। এই শ্রেণির অনেক বাস্তব দিক আছে তার মধ্যে ক্রমাগত নারীর সম্ভ্রমের ওপর আঘাত আর রাস্তার বেহাল অবস্থা অন্যতম।

প্রত্যেক দেশেই নারীর অধিকার সম্ভ্রম রক্ষা একটা গুরুত্বপূণর্ দিক হিসেবে বিবেচিত। তার কারণ দেশগঠন সমাজগঠন, সংসার গঠন সব ক্ষেত্রেই পুরুষের পাশাপাশি নারীর গুরুত্ব ও অধিকার স্বীকৃত। নারী ছাড়া পুরুষের শুধু কৌম জীবনই নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের কোনো উন্নতিই হতো না। অথচ এই নারীই সামাজিক জীবনে অনেক ক্ষেত্রে অবহেলিত এবং নানাভাবে অত্যাচারিত হয়ে সম্ভ্রমহীন হিসেবে অসহায়ভাবে বিচারবিমুখ হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দুঃসহ অপমান অঙ্গে ধারণ করে অধর্-মৃতের মতো জীবনযাপনে বাধ্য হয় বিমুখ সমাজ-ব্যবস্থার কারণে। ধমর্গ্রন্থে নারীর পায়ের তলায় বেহেশত এই উচ্চারণ করলেও আজ সেই পুরুষরাই মায়ের জঠর থেকে জন্মগ্রহণ করে মাতৃনাম ও শ্রদ্ধার সমাধি রচনা করেছে। এই অবস্থার কী অবসান হবে? আত্মবিশ্বাসী মানুষের উত্তর সৃষ্ট : এই অবস্থার অবসান সম্ভব যদি দাড়িপাল্লার দুদিকই সমান থাকে নারী ও পুরুষের জন্য।

বাংলাদেশের সংবাদপত্র খুললেই প্রায় প্রতিদিনই নারী নিযার্তন ও অবমাননার ঘটনা চোখে পড়ে। নারীর সম্ভ্রমহানির ক্ষেত্রে অল্পবয়স্কা শিশু, কিশোরী, তরুণী, বিবাহিতা, বিধবাÑ প্রায় সব ক্ষেত্রেই কমবেশি নজরে পড়ে। একজন অপরিণত বয়স্কা শিশুর ওপর পাশবিক অত্যাচার শিক্ষিত ও সচেতন সমাজে আশা না করলেও এদেশে খানিকটা সাধারণ ব্যাপারের মতো। এর জন্য পুরুষের কোনো দ্বিধা, সংশয় ও পরিণতির জন্য ভয়ভীতি মনে জন্মায় না। এই শ্রেণির ঘটনার পর একসময়ে এ দেশে আসা বিদেশি নারীরা শংকিত হয়ে নিজেদের অল্প বয়স্ক সন্তান আনতে দ্বিধা ও বিরূপতা প্রকাশ করেছিলেন।

শিশুর পাশাপাশি প্রায় সব বয়সের নারীরাই নিযার্তন ও সম্ভ্রমহানির শিকার হয়ে থাকেন। স্কুলে বা দোকানে যাওয়ার সময় গ্রাম ও ছোট শহরে কিশোরীরা প্রায়ই টিসিংয়ের শিকার হয়ে থাকে। অশ্লীল কথাবাতার্, এমনকি হাত ধরে দৈহিক অসম্ভ্রমের ঘটনাও নতুন নয়। সবচেয়ে দুঃখজনক দিক হলো নারীর সম্ভমহানির পর তাদের হত্যার ঘটনাও চোখে পড়ার মতো। বাড়িতে ঢুকে জিনিসপত্র ভাঙার পর বাবা ও ছেলেকে বেঁধে রেখে তাদের সামনে নারীর অত্যাচার সব ধরনের মনুষ্যত্বকে ধূলিসাৎ করে দেয়। এই দৃশ্য মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তান সেনা ও তাদের দোসরদের অত্যাচারের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। পুরুষদের নিষ্ঠুর অত্যাচার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিচার-বিবেচনার বাইরে থেকে যায়। তার কারণ একাধিক। অন্যায়, অত্যাচার আর অবমাননার যে প্রতিকার নেই, তা নয়। এর জন্য প্রয়োজন সব ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা ও পক্ষপাতহীন বিচার। এর বাস্তব রূপরেখা হবে নিম্নরূপ। যে কোনো নারী নিযার্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনকে দায়িত্ব গ্রহণ করে রিপোটর্ তৈরি করতে হবে। নারীর ওপর অত্যাচার ও পরীক্ষার সময় মেডিকেল বোডের্ক হতে হবে ১০০ ভাগ নিরপেক্ষ। নারী নিযার্তনের বিচার দ্রæত অনুষ্ঠান এবং বিচার বিভাগে মহিলা বিচারপতির এজলাসে এর অয়োজন করা প্রয়োজন। পুলিশের রিপোটর্ তৈরি, মেডিকেল বোডের্র পরীক্ষার রিপোটর্ কোনোভাবেই সরকারি ও বেসরকারি এবং বেসরকারি প্রভাবশালীদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া চলবে না। নারী নিযার্তনের সংবাদ প্রকাশে সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে প্রকৃত রিপোটর্ দেয়ার অধিকার দিতে হবে। এই দিকটি অজানা নয় যে, নারী অবমাননার প্রকৃত বিচার পাওয়া যায় না। সরকারি প্রশাসন ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের গোপন প্রভাবের জন্য। সাম্প্রতিককালের একাধিক নারী নিযার্তনের ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, নিরপেক্ষ মেডিকেল বোডের্র রিপোটের্র কারণে ঘটনা অন্যদিকে

নিয়ে যাওয়া হয় বলে একজন অত্যাচারিতা নারী সুবিচারের মুখ দেখতে পায় না। কুমিল্লায় অত্যাচারিতা ও সম্ভ্রম হারানো সেই কলেজছাত্রী শিল্পী কী তার মৃত্যু ও অত্যাচারের বিচার পেয়েছে? এজন্য দরিদ্র নারীরা অত্যাচার বয়েই চলেন, বিচারের মুখ দেখতে পান না। দেশের সাবির্ক মানুষ, ধনী-গরিব নিবিের্শষে সব অত্যাচারিত নারী নিযার্তনের বিচার হওয়া প্রয়োজন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে। অত্যাচারী প্রকৃত দÐ পেলে এবং প্রশাসন নিরপেক্ষ হলে দেশ থেকে নারী অবমাননার ঘটনা অনেক হ্রাস পেত। নারীরা বাড়িতে, পথে বা বাসের মধ্যে নিজেদের সম্ভ্রম হারাত না। স্বাধীন রাষ্ট্রে পথঘাট-বাড়ি সবর্ত্র নারী-পুরুষের সমান অধিকার, স্বাধীন নিরপেক্ষ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে দেশে নারীরা অসহায় না হয়ে পুরুষের মতই নিজেরাও তাদের বিরুদ্ধে লাঠি ধরার ক্ষমতা অজর্ন করত। এর মধ্যে আবার চট্টগ্রামের এক ধমীর্য় প্রতিষ্ঠানের প্রধান নারীদের স্কুল, কলেজে শিক্ষাদান না করানোর জন্য উপদেশ দিয়েছেন। অথার্ৎ নারীদের স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষিত করলে যে সমঅধিকার ও ক্ষমতার অধিকারী হবে, পুরুষদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার ক্ষমতা অজর্ন সক্ষম হবে তা তার দৃষ্টিতে সমথর্নযোগ্য নয়। নারীরা মাদ্রাসায় পড়লে বোরখার আড়ালে নিজেদের লুকিয়ে রাখবে, এটাই তাদের কামনা। এই শ্রেণির মানুষের মনে রাখা প্রয়োজন যে, এটা বিংশ শতক, পঁাচ হাজার বছরের যুগ নয়। এই শ্রেণির মনোভাবই নারীদের পেছনে টেনে সবকিছু থেকে অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে নিশ্চল করে রাখে। সভ্যতার অগ্রসরণে শুধু পুরুষই নয়Ñ

নারীদের অবদানও অনস্বীকাযর্। যারা বিবেচক তারা এই দিকটা মেনে নেন, আর অবিবেচকরা তা অন্তরে পুষে রাখেন। নারীরা বিজ্ঞানী হন, প্রতিষ্ঠানের কমর্কতার্ হন, দেশের প্রধানমন্ত্রী হন, বিচারক, অধ্যাপক হনÑ এই উন্নয়ন আর মেধার দিক যারা মানতে চান না তারা জড়পদাথের্র মতো।

সমাজের অভ্যন্তরে যখন নিয়ম না মানার একটা প্রবণতা প্রবেশ করে তখন নিয়ম মান্যকারীদের জীবনে একটা বিরুপতা অস্থিরতা আনতে সহায়তা করে। ঢাকার প্রত্যেকটা রাজপথের দিকে দৃষ্টিপাত করলেই একটা অনিয়ম দৃষ্টিশক্তি ঘিরে রাখে একটা কালো পদার্র আবরণ। ঢাকার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঠিক সময়ে যাওয়া একটা অসম্ভব হয়ে দঁাড়িয়েছে প্রচÐ যানজট গাড়ি চলাচলে অনিয়ম ও সব শ্রেণির মানুষের নিজের ইচ্ছামতো রাস্তা পারাপারের জন্য।

ঢাকার রাস্তায় যানজটের জন্য প্রধান কারণÑ একাধিক লম্বা রাস্তা (উত্তর থেকে দক্ষিণ) ও মাঝখানে অন্য রাস্তা (পূবর্ থেকে পশ্চিম) না থাকার কারণে জনসংখ্যা ও গাড়ির সংখ্যা অতি বৃদ্ধি, গাড়িচালকদের নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে নিজেই রাজার মতো সদপের্ গাড়ি চালানো ও পথচারীদের রাস্তা পারাপারে আঙুল দেখিয়ে চলমান গাড়ি থামিয়ে রাস্তার যত্রতত্র গমন। এর পাশাপাশি আরও একটা দিক উল্লেখ করা যায়, একই রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চলাচল।

ঢাকার রাস্তায় গাড়ি চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হয় মূলত বাসচালকদের নিয়ম লঙ্ঘন করার প্রবণতা থেকে। রাস্তার বঁাদিক থেকে বাস চালানোর কথা থাকলেও অধিকাংশ বাস আগে যাওয়ার জন্য পরপর তিনটে বাস দঁাড়িয়েও অন্যান্য গাড়ির লেন বন্ধ করে চলতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করে না। অনেক বাস ড্রাইভারকেই চলন্ত বাসে ধূমপান করতে দেখা যায়। তাছাড়া সব বাসের ফিটনেস যে আছে এমন মনে করার কোনো কারণ নেই। কোনো কোনো বাস এখনো কালো ধেঁায়া ছেড়ে পরিবেশ বিষাক্ত করে, অনেক বাসের পেছনে লাইট নেই বা খানিকটা অংশ ভাঙাÑ তবুও নিবিের্ঘœ এরা রাস্তায় নামে। তা ছাড়া বাসের দরজা সব সময় খোলা থাকে বলে যেখানে-সেখানে দঁাড়িয়ে যাত্রী তোলে ও নামায়। রাস্তার সবর্ত্র বাসস্টপও দেখা যায় না।

ঢাকার রাস্তার আর একটা বিপত্তি একই রাস্তায় কার, বাস, ট্রাক, সিএনজি, মিনিবাস, মোটরসাইকেল এবং কোথাও কোথাও রিকশা চলাচল করতে দেখা যায়। বিভিন্ন শ্রেণির গাড়ির স্পিড সমশ্রেণির নয় বলে দ্রæত চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হয়। ঢাকার রাস্তায় গাড়ি চালনায় আর একটা বিঘœ হলো অনেক সময় উল্টোদিক থেকে গাড়ি আসা। গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে এটা যে মারাত্মক অনিয়ম এ সম্পকের্ সরকারি ও বেসরকারি গাড়িচালকরা তা অবজ্ঞার চোখে দেখে থাকেন। ফ্লাইওভারেও মাঝেমধ্যে এই ধরনের বিপরীত নিয়মে গাড়ি চলাচল লক্ষ্য করা যায়।

ঢাকার রাস্তায় যে সংখ্যক গাড়ি ও মানুষ চলাচল করে সেই সংখ্যক রাস্তার একান্ত অভাব। শুধু তাই নয়Ñ জনসংখ্যা ও গাড়ির সংখ্যার কারণে রাস্তায় যানজট একটা অন্যতম কারণ বলে ভাবা যায়। তা ছাড়া বতর্মানে অন্যান্য গাড়ির সঙ্গে মোটরবাইকের সংখ্যা যে পরিমাণে বৃদ্ধি পেতে চলেছে তাতে দু’এক বছরের মধ্যে ঢাকার রাস্তায় গাড়ি চালানো আরও দুঃসাধ্য হয়ে উঠবে। ভিয়েতনামের রাস্তায় ঢাকার চেয়েও অনেক বেশি মোটরবাইক চলে, কিন্তু তারা রাস্তার নিয়ম মানায় অন্য গাড়ি চলাচলে কোনো বিঘœ সৃষ্টি হয় না। এখানকার রাস্তায় পৃথিবীর অসংখ্য দেশের মতো ট্রাফিক পুলিশও নেই। কম্বোডিয়ার মতো দেশেও এয়ারপোটর্ থেকে বেশ কিছুদূর রাস্তায় গাড়ি যাওয়া ও আসার জন্য দুদিকে দুই ধরনের রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। দু’দিকের বড় রাস্তায় কার চলে আর পাশের ছোট রাস্তা দিয়ে মোটরসাইকেল বা অন্য ধরনের গাড়ি চলে। ঢাকার রাস্তা যদি নিচের নকশা অনুযায়ী করা হতো তাহলে এত যানজট হতো না। ঢাকা অপরিকল্পিতভাবে তৈরি বলে রাস্তায় গাড়ি চলাচলে এত অন্তরায় সৃষ্টি হয়। তা ছাড়া ফুটপাত থাকলে ঢাকার রাস্তায় পথিক চলাচলে অনেক সুবিধে হতো, ব্রিটিশরা এইদিক লক্ষ্য রেখে কলকাতার প্রতিটি রাস্তার দু’পাশে ফুটপাত তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেই ফুটপাত এখনো অবিকৃত।

অনেক দেশেই ট্রাফিক পুলিশকে রাস্তায় দেখা যায় না গাড়ি নিয়ন্ত্রণকরণে। তার কারণ, গাড়িচালকরা রাস্তায় চলাচলের নিয়ম মেনে চলে। অন্যক্ষেত্রে যেসব দেশে ট্রাফিক লাইটের সাহায্যে গাড়ি ও পথিক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়, সেখানেও গাড়িচালক ও পথযাত্রীরা নিয়ম পালন করে বলে চলাচলে কোনো বিঘœ সৃষ্টি হয় না। তা ছাড়া অনেক দেশে ট্রাফিক পুলিশ রাস্তায় লুকিয়ে থাকে এবং গাড়ি চালানো ও রাস্তা পারাপারের সময় পথচারী কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করলে তাদের ধরে সতকর্ করে দেয় বা পঁাচ আইনে কোটের্ মামলা করে থাকে।

ঢাকার রাস্তায় অনিয়মিতভাবে গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে গাড়িচালকরা দায়ী বলা যায়। রাস্তায় ট্রাফিক সিগনাল থাকা সত্তে¡ও গাড়ি চালকরা তা অমান্য করার কারণে ট্রাফিক লাইট রাস্তায় থাকলেও ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থা করতে হয়। রাস্তায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণে চার থেকে তার বেশি ট্রাফিক পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। শুধু তাই নয়Ñ অনেক সময় ট্রাফিক পুলিশ হাত তুলে গাড়ি থামার নিদের্শ দিলেও অনেক গাড়িচালকই তা অমান্য করে সামনে চলে যায়। অথার্ৎ এ দেশের গাড়িচালকদের মধ্যে নিদের্শ উপেক্ষার মনোভাব এমনভাবে জন্ম নিয়েছে তা দূর করা সহজ নয়। এর একমাত্র প্রতিবিধান হলো ট্রাফিক পুলিশের নিরপেক্ষতা, যোগ্যতা ও অপরাধীদের ফাইন করা বা শাস্তি দেয়া ও প্রথম সাধারণ অপরাধে কাগজ দিয়ে সতকর্ করা।

ঢাকার রাজপথ ছাড়াও বাংলাদেশের হাইওয়েতে যেভাবে গাড়িচালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর জন্য যে দুঘর্টনা ঘটে ও নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু হয়Ñ সেক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও দ্রæত অপরাধের বিচার ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

গাড়িচালকদের পাশাপাশি পথচারীদেরও একটা দায়িত্ব আছে, শুধু নিবিের্ঘœ রাস্তা পারাপার নয়, নিয়ম মেনে রাস্তা পার হওয়া। এ ক্ষেত্রে পথচারীদের মধ্যে মানসিক সচেতনতা প্রয়োজন। রাস্তায় নেমে হাত উঁচু করে গাড়ি থামানো নয়, রাস্তায় গাড়ি থামলে রাস্তা অতিক্রম করা এবং যেখানে ওভারব্রিজ আছে সেখানে অবশ্যই ওভারব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার হওয়া। কিন্তু দুঃখের বিষয় দু’রাস্তার মাঝখানে লোহার রড দিয়ে রাস্তা পারাপার হওয়া বন্ধ করলেও অনেক ক্ষেত্রেই রড ভেঙে অথবা কঁাটাতার তুলে রাস্তা পার হওয়ার প্রবণতায় বাধা সৃষ্টি করতে হবে মানুষের মধ্যে সুস্থ মানসিকতা তৈরি করে। এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামশর্ একান্ত প্রয়োজন। শ্রীলংকার রাস্তায় পথচারী রাস্তা অতিক্রমের জন্য রাস্তায় নেমে পড়লেই চলমান গাড়ি থেমে যায়। এখানে পথচারীদের অধিকারে মযার্দা দেয়া হলেও সেখানে গাড়ি ও মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশের জনসংখ্যার চেয়ে কম বলে তা সম্ভব হয়েছে।

ঢাকায় দু’জন শিক্ষাথীর্র বাস চাপায় মৃত্যুর পর বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষাথীর্রা রাস্তায় নেমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ভার তুলে নিয়েছিল নিজেদের হাতে। তাদের নিরপেক্ষ নীতি, যোগ্যতা ও ভালোবাসা কীভাবে অবৈধভাবে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছিল, সেই নিয়মনীতি গ্রহণ করলে বোধহয় ঢাকার রাস্তার অবৈধ চলাচল বন্ধ করা অসম্ভব হতো না।

ঢাকাসহ বাংলাদেশের সবর্ত্র একটা প্রধান সমস্যা হলো জনসংখ্যা স্ফিতি, অত্যধিক যানবাহন, রাস্তার অভাব ও চালকদের অনিয়মের প্রতি প্রচÐ আকষর্ণ শাস্তি না পাওয়ার কারণে।পৃথিবীর উন্নত দেশের কথা বাদ দিলেও উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশের দিকে তাকালেও রাস্তায় গাড়ি চালানোর একটা প্রতিষ্ঠিত নিয়মনীতি ও আদশর্ লক্ষ্য করা যায়। মিয়ানমার, কম্বোডিয়া বা ভিয়েতনামের মতো দেশে গাড়িচালকদের মধ্যে গাড়ি চালানোর সময় যে দায়িত্বজ্ঞান ও নিয়মনীতির প্রতি শ্রদ্ধা, তা বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে দেখা যায় না কেনÑ এ প্রশ্ন সমগ্র দেশবাসীর।

ড. আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ: কথাসাহিত্যিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<34915 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1