শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সড়ক দুর্ঘটনা জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে

এম এম খালেদ সাইফুলস্নাহ ঢাকা
  ২৪ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করছে যেসব সংগঠন তাদের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী গড়ে প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছে ১৫ থেকে ২০ জন। গাড়িচালক, যাত্রী, পথচারী সবার বেপরোয়া মনোভাবে দেশের মহাসড়কগুলো যেন মৃতু্য উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই চালকদের একাংশ বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে একের পর এক দুর্ঘটনার অবতারণা ঘটাচ্ছে। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত হচ্ছে কয়েক ডজন মানুষ। যানবাহন চালকদের মধ্যে যথেচ্ছতার যে প্রতিযোগিতা চলছে তা থামানোর যেন কেউ নেই। দুনিয়ার যে সব দেশে সড়ক দুর্ঘটনার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশ তার মধ্যে এগিয়ে। ইউরোপ, আমেরিকার দেশগুলোর চেয়ে এ দেশে সড়ক দুর্ঘটনা গড়ে ২৮ গুণ বেশি। প্রতি বছর প্রায় ৮ হাজার মানুষ এ দেশে প্রাণ হারায় সড়ক দুর্ঘটনায়। আহত হয় অন্তত ৫০ হাজার; যার একাংশকে সারা জীবন পঙ্গুত্বের অভিশাপে ভুগতে হয়। সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে গাড়িচালকদের আনাড়িপনা অনেকাংশে দায়ী। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা কত বড় একটি জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে, তা আমরা সবাই উপলব্ধি করতে পারছি। প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের হতাহত হওয়ার খবর প্রকাশিত হচ্ছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, যেন সড়ক-মহাসড়কে প্রাণ হারানো এক অনিবার্য অভিশাপ হিসেবে আমাদের বয়ে বেড়াতেই হবে, যেন এটা থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় নেই। মানবজীবন সমস্যায় পরিপূর্ণ, তবে কোনো সমস্যাই অপ্রতিকার্য হতে পারে না। আমাদের জন্য আশাব্যঞ্জক খবর হলো, সড়ক দুর্ঘটনার এই বাড়বাড়ন্ত স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকেও সরব করে তুলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করার লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন। এটা তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এ থেকে পরিষ্কার হলো সমস্যাটি কত গুরুতর। এ থেকে আরও স্পষ্ট হলো যে সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব এই সমস্যার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলোর একটি হলো এই যে যানবাহনের কোনো চালক টানা পাঁচ ঘণ্টার বেশি যান চালাবেন না। খুবই মোক্ষম জায়গায় হাত দেয়া হয়েছে। কারণ, এ দেশে সড়ক দুর্ঘটনাগুলোর অধিকাংশই ঘটে চালকদের কারণে। বেপরোয়াভাবে যান চালানো এবং একটানা দীর্ঘ সময় চালানো দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। তাই প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা বিনা ব্যতিক্রমে দেশের সবখানে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে যানবাহনের মালিকদের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন, তারা যেন একই চালককে দিয়ে দীর্ঘ সময় যানবাহন না চালান, সেটা পরিবহন মালিকদের সম্মিলিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে। ঈদের সময় দূরপালস্নার অনেক যাত্রীবাহী বাসের চালক প্রয়োজনীয় ঘুম ও বিশ্রাম বাদ দিয়ে টানা ১৮-২০ ঘণ্টা বাস চালিয়ে থাকেন। এটা সম্পূর্ণভাবে ও চিরতরে বন্ধ করতে হবে। চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্ট বাঁধার ওপর প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়েছেন। এটাও নিশ্চিত করতে হবে এবং এ জন্য বাস কর্তৃপক্ষের তৎপরতা এবং যাত্রীসাধারণের সচেতনতা বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রধানমন্ত্রী যানবাহনের চালক ও সহকারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন। এটিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, প্রশিক্ষণ ও অদক্ষ চালক-সহকারীদের কারণেও অনেক সময় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। আমাদের দেশে প্রশিক্ষিত চালক ও সহকারীর ভীষণ ঘাটতি রয়েছে; তাদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নেয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এ দেশে অনেক মানুষের মৃতু্য ঘটে রাস্তা পারাপারের সময়, চলন্ত যানবাহনের ফাঁকফোকর দিয়ে হেঁটে রাস্তা পারাপারের প্রবণতা ঢাকা শহরে অত্যন্ত বেশি। প্রধানমন্ত্রী এদিকেও যথার্থই দৃষ্টি দিয়েছেন : তিনি বলেছেন, অতিনিয়ন্ত্রিতভাবে রাস্তা পারাপার বন্ধ করতে হবে, সে জন্য সিগন্যাল মেনে চলতে হবে, জেব্রাক্রসিং ব্যবহার করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমাদের নৈরাজ্যকর ট্রাফিক ব্যবস্থায় অনেক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব; পথেঘাটে মানুষের অসতর্ক ও অনিয়ন্ত্রিত চলাফেরার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসাও সম্ভব। এসব ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা রোধের উপায় হিসেবে গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের অনেক সুপারিশ-পরামর্শ রয়েছে। সে সব সুপারিশ বিআরটিএ, সড়ক বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর কাছে রয়েছে। প্রয়োজন সেগুলো বাস্তবায়নের সক্রিয় উদ্যোগ নেয়া। পরিশেষে বলছি, এ দেশে যানবাহন চালানোর জন্য প্রশিক্ষণ নয়, কোচই নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। যেনতেন প্রকারে গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পেলে সাতখুনও মাফ হয়ে যায়। যানবাহন চালকদের শক্তিশালী ইউনিয়নের কাছে দেশের সরকার, আইন-আদালত সবকিছু জিম্মি বললেও অতু্যক্তি হবে না। কোনো সভ্য দেশে এমনটি অকল্পনীয় হলেও আমাদের দেশে তা ঘটছে। যানবাহন চালকদের ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে রাজনীতিকদের গাঁটছড়া এ অবস্থার সৃষ্টি করছে। সভ্য দেশ হিসেবে নিজেদের পরিচিতি গড়ে তোলার স্বার্থে সড়ক দুর্ঘটনার মচ্ছব থামাতে সরকারকে সংকল্পবদ্ধ মনোভাব দেখাতে হবে। দেশের মানুষ, না যানবাহনের চালকদের শ্রমিক ইউনিয়ন ও মালিকদের সমিতি- কার প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা থাকবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দেশের সবচেয়ে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ হিসেবে এ বিষয়ে সরকারসংশ্লিষ্টরা দায়বদ্ধ ভূমিকা পালন করবেন- আমরা এমনটিই দেখতে চাই। দুর্ঘটনার রাশ টেনে ধরতে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের মহাসড়কগুলোয় হাটবাজার বসানোর কান্ডজ্ঞানহীনতায় বাদ সাধতে হবে। মহাসড়কে অযান্ত্রিক ও স্বল্পগতির যানবাহন চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা দরকার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<42333 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1