শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
যৌতুক না পেয়ে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন

এই বর্বরতার শেষ কোথায়?

নতুনধারা
  ০৯ জুন ২০১৯, ০০:০০

আমাদের নারীরা আজ স্বাধীন দেশেই বিপন্ন ও নিরাপত্তাহীন। নারী নির্যাতন এত ভয়াবহ রূপ নিয়েছে যে শত চেষ্টা করেও নারীদের রক্ষা করা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও নারী নির্যাতন কিংবা অবমাননার শিকার হচ্ছে। নারী কেবল নির্যাতন আর অবমাননার শিকারই হচ্ছে না, তাকে ধর্ষণ, গণধর্ষণ করা হচ্ছে এবং অত্যন্ত নিষ্ঠুর কায়দায় নৃশংসভাবে হত্যা করাও হচ্ছে। এ নিষ্ঠুরতা, অমানবিকতা ও বর্বরোচিত কর্মকান্ড কোনো গণতান্ত্রিক এবং সভ্য সমাজের চিত্র হতে পারে না। উপরন্তু বর্বর সমাজের চিত্রই আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। সমাজে যৌতুক নিয়ে সবচেয়ে বেশি নির্যাতন হত্যার শিকার হয় নারীরা।

এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, চাহিদামতো ৭০ হাজার টাকা যৌতুক দিতে না পারায় স্বামী, শাশুড়ি দেবর মিলে ঘরের দরোজা বন্ধ করে শরীরে কেরোসিন ঢেলে গৃহবধূর শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। একপর্যায়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় নানি, শাশুড়ি যখন তাকে উদ্ধার করে তখন তার শরীরের অধিকাংশ ঝলসে গেছে। এই অবস্থায় পাঁচ দিন রেখে দেয়া হয় শিরিনা আক্তার নামের এই গৃহবধূকে। তাকে জরুরি চিকিৎসা না দিয়ে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা দেয়া হয়। অবশেষে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় দিনমজুর বাবা মেয়েকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, তার শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। এই ঘটনায় পাঁচজনকে আসামি করে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় মামলা করা হয়েছে।

দেশের সচেতন ও বিবেকবান মানুষ এমন নিষ্ঠুর ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না। এমন ঘটনা কেবল বর্বর সমাজেই ঘটতে পারে। আমরা মনে করি, যৌতুক আইনি প্রক্রিয়ায় বন্ধের চেয়ে বেশি প্রয়োজন সামাজিক সংস্কার ও আন্দোলন। এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে সমাজের প্রতিটি সচেতন ও বিবেকবান মানুষকে। যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে সর্বত্র ঐক্যবদ্ধ হয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। লোভ-লালসার জগৎ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে আনতে হবে। যারা যৌতুকের দাবিতে নির্মম ও জঘন্য অপরাধে মেতে উঠছে তাদের মানসিকতা পরিবর্তন আনতে রাষ্ট্রকেই কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।

এ কথা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই যে, যৌতুকের কারণে ভেঙে যাচ্ছে প্রতিবছর লাখো সংসার। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে দ্বন্দ্ব ও বিরোধ। যৌতুকের কারণে স্বামী তার স্ত্রীকে নানাভাবে দৈহিক ও মানসিক নির্যাতন করছে। যৌতুকের কারণে হত্যা ও আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে প্রায় প্রতিদিন। দেশের অনেক নারীই যৌতুকের বলি হয়ে হারাচ্ছে জীবন। অনেক সময় বিয়েতে যৌতুকের বিষয়টি উত্থাপিত হয় না। কিছুদিন যেতে না যেতেই শুরু হয় যৌতুকের জন্য প্রথমে চাপ সৃষ্টি এবং পরে অমানবিক নির্যাতন, সব শেষে ঘটে হত্যার ঘটনা। আবার অনেকেই মিথ্যা মামলাও করে থাকে অর্থপ্রাপ্তি ও হয়রানির উদ্দেশ্যে।

মনে রাখতে হবে যৌতুকমুক্ত এক সুন্দর ও সুস্থির সমাজ গড়ে তুলতে না পারলে নারীদের রক্ষা করা যাবে না। যৌতুকের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার সময় এসেছে। এ ধরনের সামাজিক অবিচার ও বর্বরতা দূর করতে কঠোর আইন যেমন প্রয়োজন, তেমনি জনসচেতনতা গড়ে তোলাও জরুরি। একই সঙ্গে গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<52653 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1