শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাঠক মত

নতুনধারা
  ২২ জুন ২০১৯, ০০:০০

সম্ভাবনার নাম স্বর্ণদ্বীপ

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার স্বর্ণদ্বীপ যেন এক সম্ভাবনার নাম। বলা হচ্ছে দ্বীপ দেশ সিঙ্গাপুরের সমান আয়তনের এ দ্বীপটি বাংলাদেশের জন্য খুলে দিতে পারে অর্থনীতির নতুন দ্বার। পর্যটন ক্ষেত্রেও স্বর্ণদ্বীপের অপরূপ সৌন্দর্য পর্যটকদের কাছে হাতছানি হয়ে দেখা দিতে পারে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সম্প্রতি এ দ্বীপটি সফর করার পর তা এখন বিভিন্ন মহলে আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৯৭৮ সাল থেকে মেঘনা নদী এবং বঙ্গোপসাগরের মোহনায় পর্যায়ক্রমে জেগে ওঠা দ্বীপটি আয়তনে প্রায় সিঙ্গাপুরের সমান। ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১৪ কিলোমিটার প্রশস্ত স্বর্ণদ্বীপটি সরকার ২০১২ সালে সেনাবাহিনীকে বরাদ্দ দেয়। ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী স্বর্ণদ্বীপে সেনা সদস্যদের নিবিড় প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করছে।

বঙ্গোপসাগর এবং মেঘনা নদীর মোহনায় ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১৪ কিলোমিটার প্রশস্তে এ বিস্তীর্ণ স্বর্ণদ্বীপটি ২০১২ সালে সেনাবাহিনীকে স্থায়ীভাবে বরাদ্দ দেয় সরকার। এক সময় এ দ্বীপটি জলদসু্য, ডাকাতসহ অপরাধীদের অভয়াশ্রম হিসেবে পরিচিতি পেলেও পরবর্তী সময় সেনাবাহিনীর ক্রমাগত অপারেশনের কারণে এখন আর সেখানে কোনো অপশক্তির অস্তিত্ব নেই। বর্তমানে সবুজ বনায়ন এবং সেনাবাহিনীর নানা অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে স্বর্ণদ্বীপ নয়নাভিরাম এলাকায় পরিণত হয়েছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নকল্পে নদীর ঘাট থেকে স্বর্ণদ্বীপে স্থাপিত সেনাবাহিনীর 'ময়নামতি ক্যাম্প' পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার রাস্তা ও চারটি স্থায়ী হেলিপ্যাড নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনী ও জলবায়ু ট্রাস্টের আর্থিক সহায়তায় পরিকল্পিত পাঁচটি সাইক্লোন সেল্টারের মধ্যে এরই মধ্যে দুটির নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। অপর তিনটির কাজও এগিয়ে চলেছে। রেডিও লিংকের মাধ্যমে এ বিরাণভূমিতে টেলিফোন, ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক সুবিধা চালু করা হয়েছে। সৌরবিদু্যৎ ও জেনারেটর ব্যবহার করে বিদু্যৎ সরবরাহ করা হচ্ছে এখানে।

২০১২ সালে সরকার স্বর্ণদ্বীপের প্রায় ১০ হাজার একর জমি সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে বনাঞ্চল সংরক্ষণের পাশাপাশি সেনাবাহিনী আরও প্রায় ৩০০ একর জমিতে নিজস্ব অর্থায়নে বনায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এ ছাড়া দ্বীপটির দুর্গম এলাকায় 'সিড বোম্বিংয়ের (হেলিকপ্টারের মাধ্যমে বীজ ছড়ানো) মাধ্যমে কেওড়া বীজ ছড়ানো হয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ১৫ হাজার উন্নতজাতের নারিকেল গাছের বাগান করা হয়েছে। সমন্বিত উদ্যোগে রোপণ করা হয়েছে ৬০ হাজার ঝাউ গাছের চারা। এখানে বিশেষভাবে গড়ে তোলা হয়েছে মহিষ, গরু ও ভেড়া পালনের জন্য মিলিটারি ফার্ম। যে ফার্মের আওতায় রয়েছে অসামরিক ২০টি বাথানে প্রায় ১৩ হাজার মহিষ, ১৬ হাজার ভেড়া ও ৮ হাজার গরু।

এসব বাথান থেকে উৎপাদিত দুধ সংগ্রহ করে দুগ্ধজাত দ্রব্য তৈরির জন্য একটি কারখানাও স্থাপন করা হয়েছে। এমনকি এখানে মিলিটারি ফার্মের আওতায় একটি হাঁসের খামার ও কবুতরের খামার তৈরি করা হয়েছে। প্রান্তিক চাষিদের সম্পৃক্ত করে স্বর্ণদীপের ৬০ একর জমিতে ধান ও রবিশস্য উৎপাদন করা হচ্ছে। এরকম আরও নানা উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে সেনাবাহিনী।

এক সেনা কর্মকর্তা জানান, স্বর্ণদ্বীপ নিয়ে সেনাবাহিনীর উন্নয়নমুখী ভাবনা অনেক। তবে বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ এলাকা হিসেবেই ব্যবহার হচ্ছে স্বর্ণদ্বীপটি। এখন পর্যন্ত এ দ্বীপে প্রায় ২৫ হাজার সেনা সদস্য প্রশিক্ষণ সুবিধা গ্রহণ করেছেন। এখানে সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্ক ও এপিসিসহ নতুন প্রযুক্তির বিভিন্ন সরঞ্জামাদি বিশেষায়িত অনুশীলন পরিচালিত হয়ে থাকে, যা একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী সেনাবাহিনী গড়ে তোলার জন্য অপরিহার্য। এ ছাড়াও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যাওয়ার আগে প্রাক-মোতায়েন প্রশিক্ষণেও স্বর্ণদ্বীপ ব্যবহৃত হচ্ছে।

সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ স্বর্ণদ্বীপে গিয়ে মুগ্ধতার কথা প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রপতির মতে, স্বর্ণদ্বীপ হতে পারে আরেক সিঙ্গাপুর। এটা বাংলাদেশের মূল ভূমি থেকে আলাদা। সমুদ্রও কাছে আছে। সবকিছু মিলে পরিকল্পিতভাবে কাজ করা গেলে স্বর্ণদ্বীপ হবে বিরাট এক সম্ভাবনা। স্মর্তব্য, বর্ষায় স্বর্ণদ্বীপের এক বড় অংশ পানিতে তলিয়ে যায়। পরিকল্পিতভাবে সমুদ্র থেকে ভূমি উদ্ধার করা গেলে বিরাট সম্ভাবনা নিয়ে আসবে এ স্বর্ণদ্বীপ। নোয়াখালীর মূল ভূখন্ড থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে, সন্দ্বীপ থেকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং হাতিয়া থেকে ১৩ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত স্বর্ণদ্বীপকে ঘিরে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে গত পাঁচ বছরে স্বর্ণদ্বীপে পরিকল্পিত বনায়ন, সাইক্লোন শেল্টার, সৌরবিদু্যৎ প্রকল্প, নারকেল বাগান, ঝাউ বাগান, গরু, মহিষ, ভেড়া, হাঁস, মুরগি ও কবুতরের খামার গড়ে তোলা হয়েছে। স্বর্ণদ্বীপের ২০টি খামারে প্রায় ১৩ হাজার মহিষ, ১৬ হাজার ভেড়া ও ৮ হাজার গরু পালন করা হচ্ছে। এসব খামারের দুধ থেকে দুগ্ধজাত পণ্য তৈরি করতে একটি কারখানাও স্থাপিত হয়েছে। তবে স্বর্ণদ্বীপ এবং সংলগ্ন এলাকাকে টেকসই দ্বীপে পরিণত করা বিশেষত সমুদ্র থেকে ভূমি উদ্ধারে ব্যাপক বিনিয়োগের প্রয়োজন। স্বর্ণদ্বীপকে দেশের অর্থনীতির বিশেষায়িত অঞ্চলে পরিণত করার সুযোগও রয়েছে এবং এ জন্যও দরকার ব্যাপক প্রস্তুতি। আমাদের বিশ্বাস স্বর্ণদ্বীপকে দেশবাসীর স্বপ্নপূরণের সোনালি ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সব কিছুই করা হবে।

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

ঢাকা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<54662 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1