শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রেল খাতের দুর্নীতি

বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে
নতুনধারা
  ০৪ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি এমন কোনো খাত নেই যেখানে দুর্নীতি-অনিয়ম বাসা বাঁধেনি। সীমাহীন দুর্নীতির কারণে দেশের সামগ্রিক অগ্রগতি পিছিয়ে পড়ছে, এমন আলোচনা বারবার সামনে এসেছে। রাষ্ট্রের অন্যতম সেবা খাত রেল খাতের দুর্নীতি নিয়ে ইতোপূর্বে বহু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে এ খাতের ভয়াবহ দুর্নীতির তথ্য। দুর্নীতিবিরোধী এ সংস্থাটি রেলওয়ের ১৩টি খাতের দুর্নীতি চিহ্নিত করার পাশাপাশি এসব দুর্নীতি বন্ধে ১৫টি সুপারিশ সংবলিত প্রতিবেদনও দাখিল করেছে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের কাছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে রেলকে। গত ৯ বছরে (২০০৯-১০ থেকে ২০১৭-১৮) রেলওয়ে খাতে ৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। এ সময়ে পরিচালনায় ব্যয় হয়েছে ১৭ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা। আয় হয়েছে ৮ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। বিপরীতে লোকসান গুণতে হয়েছে ৯ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেলের উন্নয়নে ব্যয় হয়েছে ১৪ হাজার ৬৩৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। তবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব এখনো পাওয়া না গেলেও এ বছর লোকসানের মাত্রা ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা রয়েছে বিশ্লেষকদের। একটি দেশের সরকারি সেবা খাতের এই চিত্র কিছুতেই প্রত্যাশিত হতে পারে না।

দুদকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন মতে, রেলের প্রধান দুর্নীতির খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে, ভূমি অধিগ্রহণ, রেলের যন্ত্রপাতি ক্রয়, যন্ত্রপাতি স্থাপন, লাইন নির্মাণে দুর্নীতি, যন্ত্রাংশের যথাযথ ব্যবহার না হওয়া ও আমদানিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি, রেলের স্স্নিপার কারখানা অকার্যকর রেখে আর্থিক ক্ষতি ইত্যাদি। এ ছাড়া রেলের জায়গায় প্রভাবশালীদের স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ দিয়ে সংশ্লিষ্টরা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার কথাও প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়েছে। দেশের সরকারি একটি সেবা খাতের অবস্থা এতটা বেহাল কেন হবে, সঙ্গত কারণেই এমন প্রশ্ন করা অযৌক্তিক হতে পারে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত প্রতি বছর রেল খাত থেকেই রাজস্বের সিংহভাগ আয় করে থাকে। বিপরীতে বাংলাদেশের রেল খাতকে প্রতি বছরই লোকসান গুণতে হয়। বিশ্লেষকরা মনে করেন, দুর্নীতিতে আকণ্ঠ ডুবে থাকার কারণেই সরকারি এ সেবা খাত রাষ্ট্রের কোনো কাজেই আসছে না। উপরন্তু জনগণের টাকায় পকেট ভারী করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ পরিস্থিতির অবসানই কাম্য।

তথ্য অনুযায়ী, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামেরর্ যাঙ্কিংয়ে ২০১১-১২ সালে বাংলাদেশের রেল অবকাঠামোর অবস্থান ছিল ১৪২টি দেশের মধ্যে ৭৩তম। আর সর্বশেষ ২০১৭-১৮ সালে ১৪০টি দেশের মধ্যে ৬০তম অবস্থানে। রেলের সার্বিক স্কোরও ২ দশমিক ৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ২ দশমিক ৯৪ (৭-এর মধ্যে)। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবকাঠামো উন্নয়নের্ যাঙ্কিংয়ে উন্নতির পাশাপাশি আয়ও বাড়ছে রেলওয়ে খাতে। এরপরও অর্থবছরওয়ারী তথ্য বিশ্লেষণে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ লোকসানের বিষয়টিই সামনে আসে। রেল খাতের ভর্তুকি কমাতে বর্তমান সরকারের আমলে দুই দফায় রেলওয়ের ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। এরপরও কেন এ খাতে লোকসান হবে? মূলত রেলের ধারাবাহিক লোকসানের মূল কারণ হচ্ছে পরিচালনা খাতে চরম অব্যবস্থাপনা ও পদে পদে দুর্নীতি; যা দুদকের অনুসন্ধানেও প্রতিফলিত। বিশ্লেষকরা মনে করেন, দুর্নীতিবাজদের শাস্তি নিশ্চিত ও এ খাতে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হলে দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব এবং লাভের মুখ দেখবে রাষ্ট্রীয় এ খাতটি।

উলেস্নখ করা যেতে পারে, রেল খাতের দুর্নীতি বন্ধে দুদক যে ১৫টি সুপারিশ করেছে তার মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতায় পরামর্শক নিয়োগ প্রতিষ্ঠান সম্পৃক্ত করা ও একচেটিয়া ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করাসহ কারখানাতে কোচ নির্মাণের সক্ষমতা সৃষ্টির ওপর জোর দেয়া হয়। এ ছাড়া সম্পদের ডাটাবেজ তৈরি করে পুরাতন ও অব্যবহারযোগ্য মালামাল বিক্রি করা ও যে কোনো আমদানিতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কথাও অন্যতম। আমরা মনে করি, অনিয়ম, দুর্নীতি রোধ করে শক্ত হাতে পরিচালনা করলে বাংলাদেশ রেলওয়েকে লাভজনক খাতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ। ফলে, প্রয়োজনে দুদকের পরামর্শগুলো আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিশ্চিত করতে পারে সরকার। দুর্নীতি নির্মূল হয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি মাথা উঁচু করে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘুরে দাঁড়াক, এটাই সবার প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<56566 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1