শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাদক বাংলাদেশকে রক্তাক্ত করছে

কথা কিন্তু একটাই। দৃশ্যের আড়ালে এ দেশের অদৃশ্য মহাশক্তিধর চক্রের জন্যই মাদকের ক্রমবিস্তার রোধ করা যাচ্ছে না। শর্ষের ভেতরে ভূত রেখে যেমন ভূত তাড়ানো যায় না, মাদক যারা রোধ করবে তারাই মাদকের সঙ্গে যুক্ত হলে মাদক ব্যবসা রোধ কতটা সম্ভব?
মীর আব্দুল আলীম
  ১৬ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

একদিকে মাদকবিরোধী অভিযান চলছে; অন্যদিকে মাদকের বিস্তার চলে এসেছে গ্রাম পর্যায়ে। ক্রশফায়ার আর মাদকবিরোধী অভিযানের সফলতা তাহলে কতটা হলো? চোখে পড়ার মতো কিছুই দেখি না আমরা। প্রশাসনিক হম্বিতম্বিতে দেশের মদের বারগুলোতে মাদকের ছড়াছড়ি কমলেও পাড়ামহলস্নায় মাদক মিলছে ঠিকই। মাদক বিক্রি নিয়ে আধিপত্য, খুনখারাবি চলছেতো চলছেই। এ দেশে মাদকের জন্য খুন হচ্ছে মানুষ। ছেলের হাতে পিতা-মাতা, পিতার হাতে ছেলেমেয়ে, আত্মীয়স্বজন, পড়শিরা খুন হচ্ছেন। ক'দিন আগে টাঙ্গাইলের সখীপুরে মাদকের জন্য ময়নাল হক নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।

সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ, প্রশাসনিক দৌড়ঝাঁপ আর অসংখ্য মামলা-হয়রানির মধ্যেও দেশে জ্যামিতিক হারে বেড়েই চলেছে মাদকাসক্তের সংখ্যা। মাদকের কেনাবেচাও বেড়ে চলেছে পালস্না দিয়ে। দেশের প্রতিটি সীমান্ত এলাকা থেকে শুরু করে খোদ রাজধানীতেও অতি সহজেই মাদকদ্রব্য মিলছে। আগের মতো প্রকাশ্যে না হলেও বেচাকেনার ধরন পাল্টে বেচাকেনা চলছে ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ সব ধরনের মাদকদ্রব্য।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশের পৃথক পরিসংখ্যান সূত্রে জানা যায়, প্রভাবশালী ২০০ গডফাদারের তত্ত্বাবধানে এক লাখ ৬৫ হাজার পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার সমন্বয়ে দেশব্যাপী মাদকবাণিজ্যের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। তবে বেসরকারি পরিসংখ্যানে তা কয়েক গুণ বেশি। এ চক্রের সদস্যরা ঘাটে ঘাটে টাকা বিলিয়ে সবকিছু নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়। মাঝেমধ্যে কোথাও কোথাও প্রশাসনিক অভিযান পরিচালিত হলেও তা মাদক নেটওয়ার্কে কোনো রকম ব্যাঘাত ঘটাতে পারে না। বরং পুলিশের সদস্য ও বিভিন্ন পর্যায়ের সহস্রাধিক রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে উল্টো মাদকবাণিজ্যে সম্পৃক্ত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন তথ্যই সম্প্রতি প্রকাশে করেছে দেশের শক্তিশালী একটি দৈনিক।

একটি ভয়ঙ্কর তথ্য হলো- ২০২০ সালের মধ্যে দেশে এক কোটি লোক নেশায় আসক্ত হয়ে পড়বে এমন আশঙ্কা মাদকাসক্তি নিরাময়ের কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত বিশেষজ্ঞদের। তাদের মতে, প্রতি বছর শুধু নেশার পেছনেই খরচ ৬০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। সংশ্লিষ্টরা এই মুহূর্ত থেকেই পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে নেশামুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে সবাইকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। এ ক্ষেত্রে দেশজুড়ে একযোগে আরও ব্যাপক পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। আসলেই এর বিকল্প নেই। মাদকের বিরুদ্ধে এখনই সোচ্চার হতে হবে দেশের মানুষকে। এ বাপারে সজাগ থেকে কাজ করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাদকের ব্যাপারে প্রায়শই হুঙ্কার দেন। তিনি মাদক বিস্তার এবং এর কুফল উপলব্ধি করেছেন বলেই মাদকের ব্যাপারের জিরো টলারেন্স দেখাতে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। মাদকের শাস্তি মৃতু্যদন্ডের কথা বলেছেন। সরকারকে সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি ভাবনায় নিয়ে আরও কঠোর হতে হবে। ব্যর্থতার কথা বললে চলবে না। মাদক নির্মূলে আমাদের সফল হতেই হবে। তা না হলে দেশটা যে রসাতলে যাবে। আমাদের যুবসমাজ নেশাগ্রস্ত হলে তারা ধ্বংস হয়ে গেলে দেশতো মেধাবী শূন্য হয়ে পড়বে।

\হদেশ থেকে কেন মাদক নিয়ন্ত্রণ হয় না? আমি বলব, যারা মাদক নিয়ন্ত্রণ করেন, কি করছেন তারা? মাদক পাচার, ব্যবসা ও ব্যবহারকারীর ক্রমপ্রসার রোধকল্পে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পর্যায়ে নানারকম কার্যক্রম দেখা গেলেও তেমন কোনো ইতিবাচক ফল মিলছে না। মাদক শুধু একজন ব্যক্তি কিংবা একটি পরিবারের জন্যই অভিশাপ বয়ে আনে না, দেশ-জাতির জন্যও ভয়াবহ পরিণাম ডেকে আনছে। নানারকম প্রাণঘাতী রোগব্যাধি বিস্তারের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও খারাপ করে তুলছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় দেশের অভ্যন্তরে মাদকের বিকিকিনি এবং বিভিন্ন সীমান্ত পথে দেশের অভ্যন্তরে মাদকের অনুপ্রবেশ নিয়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও দীর্ঘদিনের। দেশের প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় মাদকদ্রব্য বিকিকিনির বিষয়টি এ দেশে বলতে গেলে ওপেন সিক্রেট। বিভিন্ন সময়ে পুলিশি অভিযানে মাদকদ্রব্য আটক ও এর সঙ্গে জড়িতদের আটকের কথা শোনা গেলেও মাদক ব্যবসার নেপথ্যে থাকা 'গডফাদার'দের আটক করা হয়েছে কিংবা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে এমন কথা শোনা যায় না। এ কথা সত্য যে, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার প্রকটরূপের পেছনে মাদক অন্যতম বড় একটি উপসর্গ হয়ে দেখা দিয়েছে। খোদ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মাদক বিকিকিনি হয়। আর এর অর্থের বড় একটি অংশ যায় কারারক্ষীদের পকেটে। বাকি অংশ কয়েদি এবং মাদক ব্যবসায়ীরা ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। কারাগার মাদক ব্যবসার নিরাপদ স্থান হলে এর মতো উদ্বেগজনক ঘটনা আর কী হতে পারে?

ভাবা কি যায়, বাংলাদেশে ইয়াবা আর ফেনসিডিলের বাজার তৈরি হওয়ায় মায়ানমার এবং ভারত সীমান্তে অসংখ্য ইয়াবা আর ফেনসিডিলের কারখানা গড়ে উঠছে। এসব কারখানায় বাংলাদেশের যুবসমাজের জন্য মায়ানমার মরণ নেশা ইয়াবা এবং ভারত থেকে ফেনসিডিল উৎপাদন করে তা নির্বিঘ্নে সর্বরাহ করা হচ্ছে। বলতে দ্বিধা নেই যে, এসব দেশে মাদক তৈরি হচ্ছে আমাদের জন্যই। সম্প্রতি মিয়ানমার সফরের অভিজ্ঞতা আমাকে বেশ ব্যথিত করেছে। বাংলাদেশ ঘেঁষা সীমান্তে মায়ানমারে অসংখ্য ইয়াবা কারখানা গড়ে উঠেছে। সেসব কারখানায় কোটি কোটি পিস ইয়াবা তৈরি হচ্ছে। অবাক করা কথা, মিয়ানমারের মানুষ, সেখানকার যুবসমাজ খুব একটা ইয়াবা আশক্ত নয়। কোনো কোনো এলাকায়তো ইয়াবা কি তা সেখানকার অধিবাসীরা জানেনই না। মূলত বাংলাদেশিদের জন্যই সেখানে ইয়াবা কারখানা গড়ে উঠেছে। যতদূর জানতে পারি, তাতে নাকি এ ব্যাপারে সে দেশের সরকারের মৌন সম্মতিও আছে। মিয়ানমার সীমান্তে ইয়াবা কারখানার কথা আমরা জানি, আমাদের সরকারও জানে, কিন্তু ইয়াবা চোরাচালান রোধ হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না?

মাদক তথা ইয়াবা ব্যবসা নির্বিঘ্নে হচ্ছে তা বলছি না। মাদক কারবারিরা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হচ্ছে, ধরাও পড়ছে মাঝেমধ্যে। যেদিন এ লিখাটি লিখছি সেদিনও সারাদেশে ১ লাখ পিস ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। তবে এ সময় কাউকে আটক করতে পারেনি। ১ লাখ পিস ইয়াবা সে কি সহজ কথা? ১ দেড় লাখ লোক আসক্ত হতে পারবে এ ইয়াবায়। দামওতো কম নয়। বাজারমূল্যে কম করে ৫ কোটি টাকা। এত টাকার মাদক ধরা পড়লো আর কাউকে গ্রেপ্তার করা গেল না এটার প্রশ্ন সমানে আসে বৈকি! এইতো হচ্ছে বেশিরভাগ সময়। যারা মাঝেমধ্যে ধরা পড়ে তারা কেবল চুনপুঁটি। আবার ওদের গডফাদারদের বদান্যতায় ওরা সহসাই ছাড়া পেয়ে যায়। দেশের প্রতিটি সীমান্তেই এমন হচ্ছে। ভারতের সীমান্তেও অসংখ্য ফেনসিডিলের কারখানা আছে। সেখানেও এই একই অবস্থা। পার্শ্ববর্তী দেশগুলো আমাদেরও দেশে মাদকের বাজার তৈরি করে নিয়েছে। এ জন্যই হয়তো দেশ মাদকে ছয়লাব হচ্ছে। মাদক ব্যবসার সঙ্গে দেশের অনেক রাঘববোয়াল জড়িত। তাই ওদের টিকিটিও ছোঁয়ায় না কেউ। তাই যা হওয়ার তাই হচ্ছে দেশে। আমরা দেশবাসী দুরভাগা বলেই আমাদের যুবসমাজ সহজে মাদক হাতের নাগালে পাচ্ছে। এ সংক্রান্ত আইনের তেমন শাসন সক্রিয় নয় বলেই আমাদের সন্তানরা দিনদিন অধঃপতনে নিপাতিত হচ্ছে।

আমাদের বর্তমান সমাজ জীবনে মাদকের ব্যবহার সবাইকেই উদ্বিগ্ন করেছে। এর বিষাক্ত ছোবল অকালে কেড়ে নিচ্ছে অনেক প্রাণ। অনেক সম্ভাবনাময় তরুণ-তরুণী হচ্ছে বিপথগামী। এ থেকে পরিত্রাণের আশায় ১৯৯০ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন (১৯৯০ সালের ২০নং আইন) প্রণীত হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনকল্পে ওই আইন ১৯৯০ সালের ১ ফেব্রম্নয়ারি প্রণয়ন করা হয়। ওই আইনের ২(ঠ) ধারায় মাদকের সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সে মতে মূলত অপিয়াম পপি বা তৎনিঃসৃত আঠালো পদার্থ; আফিম; আফিম থেকে উদ্ভূত মরফিন, কোডিন, হেরোইন ইত্যাদি এবং এদের ক্ষারগুলো; শতকরা ০.২% এর অধিক মরফিনযুক্ত যে কোনো পদার্থ, কৃত্রিম উপায়ে তৈরি আফিমের সমধর্মী দ্রব্য যথা- পেথিড্রিন, হাইড্রোমরফিন, ডিমেরাল, বেটাপ্রোডাইন ইত্যাদি, কোকা পাতা এবং তা থেকে উদ্ভূত সব দ্রব্য, কোকেন এবং ০.১% এর অধিক কোকেনযুক্ত যে কোনো পদার্থ অথবা কোকেনের যে কোনো ক্ষার, চরস, হাশিশ, গাঁজাগাছ, গাঁজা, ভাংগাছ, ভাং, গাঁজা বা ভাং সহযোগে প্রস্তুত যে কোনো পদার্থ, অ্যালকোহল এবং ০.৫%-এর অধিক অ্যালকোহলযুক্ত যে কোনো পদার্থ, রেক্টিফাইড স্পিরিট এবং তৎসহযোগে যে কোনো ওষুধ বা তরল পদার্থ, বিয়ার, বারবিচুয়েটস, তাড়ি, পচুই, মেথিলেটেড স্পিরিট ইত্যাদি দ্রব্য মাদক হিসেবে পরিচিত। ভারতে তৈরি ফেনসিডিল সিরাপ আমাদের দেশে মাদক হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই সিরাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আফিম থেকে উদ্ভূত কোডিন, এই কারণেই ফেনসিডিল সিরাপ সেবন করলে মাদকতা আসে। তাই ফেনসিডিল সিরাপ মাদক হিসেবে পরিচিত। অ্যালকোহল ব্যতীত অন্য কোনো মাদকদ্রব্যের চাষাবাদ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বহন, পরিবহন, আমদানি-রপ্তানি, সরবরাহ, ক্রয়, বিক্রয়, ধারণ, সংরক্ষণ, গুদামজাতকরণ, প্রদর্শন, প্রয়োগ ও ব্যবহার ওই আইনের ৯ ধারায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিংশ শতাব্দীর নবম দশকে (১৯৮১ থেকে ১৯৯০ সাল) বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে মাদকের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় বিদেশ থেকে আসা মাদক সম্পর্কিত অপরাধের বিচার করা হতো ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন অনুসারে। সেখানে শুধু শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরা পথে আমদানিনিষিদ্ধ পণ্য দেশে নিয়ে আসা বা নিজ হেফাজতে রাখার অপরাধেই আসামির বিচার হতো। জনজীবনে ব্যাপক ক্ষতি সাধনকারী এই মাদকসংক্রান্ত অপরাধ দমনের জন্য ওই আইন পর্যাপ্ত ছিল না। তাই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ এবং মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনকল্পে ১৯৯০ সালে 'মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন' প্রণয়ন করা হয়। ১৩৯৬ বঙ্গাব্দের ১৯ পৌষ মোতাবেক ১৯৯০ সালের ২ জানুয়ারি তারিখ থেকে এ আইন কার্যকর হয়। কিন্তু কুড়ি বৎসরেরও অধিককাল পথপরিক্রমায় মাদকদ্রব্য ব্যাপকভাবে নিযন্ত্রিত হয়নি। এর ব্যবহার এবং প্রসার বেড়েই চলেছে। অভিভাবকরা আজ চিন্তিত তাদের সন্তানদের মাদকাসক্তি নিয়ে। মাদকের হিংস্র ছোবল থেকে সারা জাতি চায় আত্মরক্ষা করতে। আইনের কার্যকর প্রয়োগ হয়নি বলেই আজ মাদক নিয়ে এত সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বেড়েছে উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ। মাদক নিয়ন্ত্রণ করে এ উৎকণ্ঠা দূর করতে হবে।

আশির দশকে বাংলাদেশে মাদকের বিস্তার শুরু হয় মর্মে বিভিন্ন তথ্য মেলে। এ সময় লুকিয়ে, আড়ালে, আবডালে, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদক বিক্রি করা হতো। মাদক বিক্রি এখন আর অতটা গোপনে নেই বলেই প্রতীয়মান হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানা যায়, রাজধানীতে ডিজে পার্টির নামে বিভিন্ন অভিজাত এলাকায়, বাসাবাড়িতে মাদকের রমরমা আসর বসে। এখানে সাধারণত ধনী পরিবারের তরুণ-তরুণীদের যাতায়াত। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গামী তরুণ-তরুণীরাই মূলত মাদকের নেশায় বুঁদ। মাদক এখন আর অলিতে-গলিতে নয় এর বিস্তার ঘটেছে ভদ্র সমাজে। কেবল ছেলেরা নয় আমাদের মেয়েরাও এখন নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। সরকারি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও মাদকের ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে। এমনকি রাষ্ট্রের সুরক্ষিত নিরাপত্তাবলয়ে বেষ্টিত কারাগারের অভ্যন্তরেও মাদকের বেচা-কেনা চলে। কারাবেষ্টনীতে মাদকের নিরাপদ বিস্তারের ঘটনাকে শর্ষের মধ্যে ভূত বলেই অভিহিত করা যায়। এ কথা সত্য যে মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন শুধু নগর-মহানগরেই সীমাবদ্ধ নেই, গ্রামবাংলা পর্যন্ত মাদক এখন সহজলভ্য। হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় মাদক। মাঝেমধ্যে মাদকদ্রব্য বহনের দায়ে কেউ কেউ ধরা পড়লেও মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকে। প্রশাসনের লোকজনও যে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, কারা অভ্যন্তরে মাদকের প্রসারতাই এর প্রমাণ।

কথা কিন্তু একটাই। দৃশ্যের আড়ালে এ দেশের অদৃশ্য মহাশক্তিধর চক্রের জন্যই মাদকের ক্রমবিস্তার রোধ করা যাচ্ছে না। শর্ষের ভেতরে ভূত রেখে যেমন ভূত তাড়ানো যায় না, মাদক যারা রোধ করবে তারাই মাদকের সঙ্গে যুক্ত হলে মাদক ব্যবসা রোধ কতটা সম্ভব?

সুতরাং আমরা মনে করি, মাদকসংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের ব্যাপারেই আইন প্রয়োগে সরকারকে কঠোরতা দেখাতে হবে। কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি আইনের কঠোর প্রয়োগই মাদকের ভয়াবহতা রোধে সহায়ক হতে পারে।

মীর আব্দুল আলীম: সাংবাদিক, গবেষক ও কলামিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<75599 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1