শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

টেস্ট সিরিজ: সমস্যা ও ঘাটতি চিহ্নিত করা জরুরি

অলোক আচার্য ঢাকা
  ০১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

বাংলাদেশের ভারত সফরে সদ্য সমাপ্ত হওয়া টেস্ট ক্রিকেট পারফরমেন্স দর্শকদের হতাশ করেছে। টেস্টে আমাদের এমন দৈন্যদশা কেউ প্রত্যাশা করেনি। পাঁচ দিনের ম্যাচ যখন তিন দিনেই শেষ হয়ে যায় তখন মন খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক। এটা কেউ প্রত্যাশা করে না। ভারতের মতো শক্ত প্রতিপক্ষের সঙ্গে তাদের নিজেদের মাটিতে জয় পাওয়ার আশা আমরা না করলেও একটু ভালো পারফরমেন্স ঠিকই আশা করেছিলাম। হেরে যাওয়াটা সবসময়ই মন খারাপ করে তবে অনেক সময় কিছুটা স্বস্তিদায়ক হয়। সেটা হলো লড়াই করে পরাজিত হওয়া। যা আমরা দেখেছিলাম টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে। নজরকাড়া জয় দিয়ে শুরু করে যদিও সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ দল কিন্তু হেরে যাওয়া ম্যাচগুলোতেও ভালো পারফরমেন্স সবার নজর কেড়েছে। নিজেদের মাটিতে ক্রিকেটে ভারত যে আরও অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী এবং শক্তিশালী তা অনেক আগে থেকেই জানি। তাই আশা করেছিলাম টেস্টে খেলাগুলো অন্ততপক্ষে লড়াকু হবে। কিন্তু হয়নি। ইনিংস ব্যবধানে হারের লজ্জা পেতে হয়েছে। দলীয় পারফরমেন্স বলতে যা বোঝায় তা দেখতে পাইনি। অথচ খেলাটাই দলীয়। কোনো কোনো দিন হয়তো কোনো একজনের জন্য দলের সাফল্য আসে কিন্তু সে আশা সব ক্ষেত্রে করাটা বোকামি। অন্তত সর্বাধিক খেলোয়াড়ের একত্রিত শক্তি দিয়ে ম্যাচ বের করতে হয়। টেস্ট ক্রিকেটটা ধৈর্যের। সেই ধৈর্যের পরিচয় পাইনি। গোলাপি বল দিয়ে যে নতুন দিগন্তের সূচনা হলো ক্রিকেটবিশ্বে। তাতে আমাদের পারফরমেন্সটা আরেকটু ভালো হবে বলেই আশা করেছিলাম। টেস্টে খেলাটা চারদিন পার করে পাঁচ দিন নিয়ে যাওয়ার জন্য যে কৌশল এবং আত্মবিশ্বাস ও ধৈর্য প্রয়োজন সেটি দেখতে পাইনি। আমরা দর্শক হিসেবে এটুকুই বুঝি টেস্ট ফরম্যাটে সফলতা পেতে টেস্ট ক্রিকেটে খেলার আরও দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এই ভারত সফরের আগেই দেশের ক্রিকেটে সাকিব আল হাসানের ওপর আইসিসির নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এ নিয়ে ক্রিকেটপ্রিয় মানুষ কম আবেগাপস্নুত হয়নি। কারণ সাকিব আমাদের সম্পদ। তাই সংবাদটা ছিল আমাদের জন্য একটি ধাক্কার মতো। সবকিছু ঠিক থাকলে সাকিব আল হাসান আগামী বছরের ২৯ অক্টোবর থেকে আবার ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন। এই খবরে গোটা বাংলাদেশই আজ ভারাক্রান্ত। কেননা কোনো ভালো ক্রিকেটারের খেলা কেবল সেই দেশের মানুষকে আনন্দ দেয় না বরং তা সারা বিশ্বের মানুষেরই মন কেড়ে নেয়। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো ক্রিকেট। আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের ক্রিকেটের উত্থানের প্রতিটি অধ্যায় এ দেশের মানুষের মনে দাগ কেটে আছে। প্রতিটি বিশ্ব শক্তির বিরুদ্ধে জয়ের এক একটা ইতিহাস আমাদের মনে আছে। ফুটবলের আলো এ দেশে বহু বছর ম্রিয়মাণ। তবে ক্রিকেটটা গত কয়েক বছর ধরেই অধিক উজ্জ্বল আলো ছড়াচ্ছে। বাঘা বাঘা সব প্রতিদ্বন্দ্বীকে ধরাশায়ী করেছে আমাদের টাইগাররা। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি বাংলাদেশের মানুষের আনন্দের একটি বড় উৎস হলো ক্রিকেট। আমরা ক্রিকেট নিয়ে চিন্তা করি, ক্রিকেটারদের নিয়ে ভাবি, ক্রিকেট নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখি। সেই স্বপ্নের কথা আজ না বলি। ক্রিকেট আমাদের কাছে আবেগ। আর ক্রিকেটের অগ্রভাগে থেকে যে লড়াকু সৈনিকরা ক্রিকেটকে আজকের অবস্থায় এনেছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিকুর, মোস্তাফিজ, লিটন, সৌম্য। আরও অনেকে আছেন। তাদের জন্যই আমাদের আজকের ক্রিকেট বিশ্বপ্রতিযোগিতায় স্বগর্বে অবস্থান করছে। আজ বাংলাদেশ ক্রিকেটের যে অর্জন তা যেন গোটা বিশ্ব দেখছে। সমন্বিত নৈপুণ্যে বাংলাদেশ দল আজ কোথায় পৌঁছে যাচ্ছে তা যেন কোনো সীমায় বাঁধা যায় না। বিগত দুই বিশ্বকাপেই আমাদের দেশ ভালো খেলেছে। আমরা সেই খেলা দেখে আনন্দিত হয়েছি। বিশ্বকাপ আমাদের কাছে একটি স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের বিশ্বকাপ একদিন বাংলার সোনার ছেলেরা এই দেশের মাটিতে নিয়ে আসবে এ আমাদের বিশ্বাস। এই বিশ্বাস থেকেই আমরা সবসময় আমাদের ক্রিকেটাদের পাশে থাকি, তাদের উৎসাহ দিই অনুপ্রেরণা দিই।

আজকের বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যে অবস্থায় দাঁড়িয়ে সেখানে বিভিন্ন সময়ের ক্রিকেটাররা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। দলীয় প্রচেষ্টা ছাড়া বিজয় অর্জন করা যায় না। তবে মাশরাফির নেতৃত্বে অন্য এক বাংলাদেশের উত্থান ঘটেছে। বর্তমান ক্রিকেট দল আমার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের যে কোনো সময়ের চেয়ে সেরা পারফরমেন্স করা একটি দল। এই দল একটি ভারসাম্যপূর্ণ দল। যেখানে নিখাদ ব্যাটসম্যান, বোলার এবং অলরাউন্ডারের সমন্বয় রয়েছে।

দল হারলে আমাদের চোখেও জল আসে। আমরা ব্যথিত হই। এটা আমরা করি কারণ আমরা যেমন ক্রিকেটকে ভালোবাসি তেমনি ক্রিকেটারদেরও ভালোবাসি। সামর্থ্যের বেশিও হয়তো মাঝেমধ্যে আমরা আশা করি! এটাও ভালোবাসার দাবি থেকেই। তাই সেই আশা যখন অনেক বেশি অপূরণ থাকে তাহলে খারাপ লাগাটাও স্বাভাবিক। টি-টুয়েন্টি সিরিজে যে দাপট দিয়ে বাংলাদেশ দল শুরু করেছিল তাতে আমাদের দেশের মানুষকে আশায় ভাসিয়েছে। ভারতের মাটিতে এত বড় একটি বিজয় সত্যিকার অর্থেই ছিল অভূতপূর্ব। পরের দুটি ম্যাচে জয় না এলেও খারাপ স্কোর হয়নি। কি হতে পারাতো তা নিয়ে চিন্তা না করে বরং যা হয়েছে তা নিয়েই ভাবতে হবে। আমাদের ভাবিয়েছে, আমাদের মনে বিষাদের ছায়া এনেছে টেস্ট সিরিজ। তবে আমি জয়ের কথা বলছি না। বলছি লড়াই করার কথা। জয়টা মুখ্য হলেও ক্ষেত্রবিশেষে ভালো লড়াই বা সম্মানজনক অবস্থাও অনেকটা প্রাপ্তি হতে পারে। যদি খেলাটা পঞ্চম দিনে গড়াতো, যদি হারটা ইনিংস ব্যবধানে না হতো তাহলে এই অনুভূতি একটু ভিন্ন হতে পারাতো। দল জিতলে আমরা উলস্নাস করি। আমাদের ভালোবাসা প্রকাশ করি। কারণ সেই আবেগ। ক্রিকেটটা আমাদের কাছে আবেগের নাম। মাঠে আমাদের দর্শকরা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বলে চিৎকার করে। আমরা এভাবেই আমাদের ক্রিকেট দলকে নিয়ে চিৎকার করতে চাই। আমরা বুক ফুলিয়ে বলতে চাই তাকিয়ে দেখ আমরা ক্রিকেট জগতে রাজত্ব করতে এসেছি। ওয়ানডে, টি-টুয়েন্টি বা টেস্ট যে কোনো ফরমেটেই আমাদের লড়াই করার ক্ষমতা রয়েছে। আমরা জিততে পারি। তবে টেস্ট ক্রিকেটে আমাদের আরও দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। উইকেটে টিকে থাকার মানসিক শক্তি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের দেশের ক্রিকেট অনেক উন্নতি করেছে। সারা বিশ্বই বাংলাদেশকে সমীহের চোখে দেখে। জয়-পরাজয় একটি খেলার জাতগত বিষয় হলেও আমরা এমন অবস্থানে পৌঁছেছি যখন খেলোয়াড়রা বিশ্বমানে। আমরা জানি এই পরাজয়ের পর খেলোয়াড় এবং ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা ভুল-ভ্রান্তিগুলো বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের জন্য দলকে প্রস্তুত করবেন। কোথায় সমস্যা তা খুঁজে বের করতে হবে। যাই হোক না কেন, আমাদের দেশের ক্রিকেট এবং খেলোয়াড়দের ওপর আমাদের আস্থা ছিল এবং তা ভবিষ্যতেও থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<77859 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1