শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফের রক্তাক্ত পাহাড়

কাযর্কর উদ্যোগ নিন
নতুনধারা
  ২০ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

আবারও রক্তাক্ত হলো পাহাড়। হিংসার স্রোতধারায় জঙ্গলের সীমানা ছাড়িয়ে প্রকাশ্যে হামলার ঘটনায় রাজনৈতিক নেতাকমীের্দর পাশাপাশি নিরীহ সাধারণ মানুষও প্রাণ হারাচ্ছে। আঞ্চলিক দলের বিরোধের কারণে জনমনে বাড়ছে আতঙ্ক ও উদ্বেগ। হামলার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে একের পর এক পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা বাড়ছে। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, শনিবার সকালে খাগড়াছড়ি শহরের স্বনিভর্র এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে সাতজনকে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও তিনজন। পুলিশ দাবি করেছে, দুইপক্ষের গোলাগুলিতে এই নিহতের ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে তিনজনকে নিজেদের কমীর্ দাবি করেছে ইউপিডিএফ। পাশাপাশি এ ঘটনার জন্য সরকারি প্রশাসনের ছত্রছায়ায় জেএসএস (এমএন লারমা) এবং স্থানীয় একটি মুখোশধারী বাহিনীকে দায়ী করেছে সংগঠনটি। জানা গেছে, খাগড়াছড়িতে আঞ্চলিক দলের বিরোধ বতর্মানে তিন অংশে বিভক্ত। এর মধ্যে রয়েছে ইউপিডিএফ (প্রসীত), জেএসএস (এমএন লারমা) ও নব্য সৃষ্ট ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)। চলতি বছরসহ আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে একাধিকবার পাল্টা প্রতিশোধের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় প্রায় ৩৯ জন নিহত হয়েছেন। সবের্শষ শনিবার প্রকাশ্যে সাতজনকে হত্যা করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে চারজন সাধারণ মানুষও রয়েছেন।

তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের ৪ মে রাঙামাটি যাওয়ার সময় নানিয়াছড়া এলাকার কেঙ্গালছড়িতে ইউপিডিএফের (গণতান্ত্রিক) প্রধান তপন জ্যোতি চাকমাসহ (বমার্) পঁাচজন নিহত হয়। এই ঘটনায় প্রসীত খীসার ইউপিডিএফকে দায়ী করেছে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)। আর শনিবার খাগড়াছড়ির স্বনিভের্রর সামনে প্রতিপক্ষের হামলায় সাতজন নিহত হওয়ার ঘটনাকে পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। মূলত আঞ্চলিক এসব সংগঠনের প্রতিশোধপরায়ণতা, আধিপত্য বিস্তারের লড়াই, অস্ত্র ভাÐারের ভাগবাটোয়ারা ও চঁাদাবাজির একক নিয়ন্ত্রণ বিস্তারের চেষ্টার কারণেই পাহাড় আবার অশান্ত হয়ে উঠেছে। পাহাড়ে বিদ্যমান এ পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগের।

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পাহাড়ে হত্যাকাÐের মাধ্যমে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের আগস্ট পযর্ন্ত প্রসীত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফের ১৯ নেতাকমীর্ সমথর্ক, জেএসএস (এমএন লারমা) ও ইউপিডিএফের (গণতান্ত্রিক) ১৬ নেতাকমীর্ এবং শনিবার চারজনসহ মোট ৩৯ জন নিহত হয়েছেন। ইউপিডিএফ একাধিক বিবৃতিতে দাবি করেছে, সংস্কারবাদী জেএসএস নেতা (পেলে সুদশর্ন অংশুমান চক্র) খুন, গুম, অপহরণ, চঁাদাবাজিসহ নানা অপকমর্ চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ইউপিডিএফ নেতা মিঠুন চাকমাসহ এ পযর্ন্ত ১৬ জন ইউপিডিএফের নেতাকমীর্ ও সমথর্ককে খুন করে। খাগড়াছড়ি জেলা সদরের নিজ বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে খুন করা মিঠুন চাকমাকে। ১৭ ফেব্রæয়ারি খাগড়াছড়ি জেলা সদরের রাঙাপানি ছড়ায় দীলিপ চাকমা খুন হন। এভাবে একের পর এক পাহাড়ে হত্যাকাÐের তালিকা দীঘর্ হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিশোধ নিতে গিয়েই একদল হত্যা করছে প্রতিপক্ষ দলের সদস্যদের। সাধারণ মানুষও নিহত হচ্ছেন; শনিবারের ঘটনাটিই এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ।

ইউপিডিএফের অভিযোগ প্রসঙ্গে খাগড়াছড়ি পুলিশ প্রশাসন বলেছে, ‘এ অভিযোগ অমূলক। আমাদের বক্সের ওপরও হামলা হয়েছে। সেখানে পঁাচটি গুলি চালানো হয়েছে। ঘটনার সময় পুলিশ মাত্র বক্সে এসে পেঁৗছেছে। তখনই এ ঘটনা ঘটে।’ অন্যদিকে এ হত্যাকাÐে জেএসএস (এমএন লারমা) জড়িত বলে ইউপিডিএফের অভিযোগ অস্বীকার করে জেএসএস দাবি করেছে, ইউপিডিএফের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা মনে করি, যে কারণেই হত্যাকাÐের ঘটনা ঘটুক না কেন তা অত্যন্ত পরিতাপের। এ ঘটনায় এলাকার পাহাড়ি-বাঙালি সবাই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। অভিযোগ আছে, পাহাড়ে সন্ত্রাসীগোষ্ঠী এখনো সক্রিয় এবং তারা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘোরাঘুরি করে। আমরা মনে করি এর অবসান হওয়া দরকার। পাহাড় থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ ব্যাপক অভিযান পরিচালনার মধ্যদিয়ে পাহাড়ের সন্ত্রাসী ঘটনার অবসান ঘটাতে সরকার তথা প্রশাসনকেই কাযর্কর উদ্যোগ নিতে হবে। পাহাড়ে দীঘর্স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকার সব ধরনের উদ্যোগ নেবে- এটাই প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<8613 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1