শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সংক্ষপে

নতুনধারা
  ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

বায়ুদূষণে আর্থিক ক্ষতি

কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

চলতি বছর বেশ কয়েকবার বিশ্বের দূষিত বায়ুর নগরীর তালিকায় শীর্ষের দিকে অবস্থান ছিল বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার। সম্প্রতি গ্রিন পিসের 'বিষাক্ত বায়ু : জীবাশ্ম জ্বালানির খেসারত' শীর্ষক বৈশ্বিক এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, বায়ুদূষণে বাংলাদেশের আর্থিক ক্ষতি সোয়া লাখ কোটি টাকা। প্রথমবারের মতোই বায়ুদূষণে আর্থিক ক্ষতির আনুমানিক এই হিসাব তুলে ধরল সংস্থাটি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ক্ষতির পরিমাণ জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রায় ৫ শতাংশ। বায়ুদূষণজনিত রোগে শিশুর অকালমৃতু্যর একটি হিসাবও উলেস্নখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। প্রতিবেদন মতে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ৯৬ হাজার শিশুর অকালমৃতু্য হয়েছে। বায়ুদূষণজনিত সামগ্রিক এই ক্ষতি অত্যন্ত উদ্বেগের।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূষণের কারণে দিনে বিশ্বের মোট আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার। এতে বাংলাদেশে বছরে ক্ষতি ১ লাখ ১৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে বিশ্বে ৪০ লাখ শিশু তাদের পঞ্চম জন্মদিনের আগেই মারা গেছে। বছরে ৪০ লাখ মানুষ অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে আসছে চিকিৎসা নিতে। গ্রিন পিসের প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে যুক্ত ঢাকার স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মজুমদার গণমাধ্যমে বলেছেন, বায়ুদূষণের আর্থিক ক্ষতি বলতে চিকিৎসা খরচ, কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া, কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকার কারণে কোনো প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়ার মতো বিষয়গুলো আমলে নেওয়া হয়েছে। আর গ্রিন পিসের এই প্রতিবেদনে বিশ্বের বায়ুদূষণের প্রধান কারণ বা উৎস হিসেবে জীবাশ্ম জ্বালানিকে দায়ী করা হয়েছে। মূলত বিদু্যৎ ও অন্যান্য শক্তি উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে কয়লা ও তেল ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব জ্বালানি যানবাহন, শিল্পকারখানাসহ অন্যান্য কাজেও ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব জ্বালানি থেকে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সূক্ষ্ণ বস্তুকণা পিএম-২.৫ ও পিএম-১০ বের হচ্ছে। একই সঙ্গে ভারী বস্তুকণাও বাতাসে গিয়ে মিশছে।

উলেস্নখ করা যেতে পারে, ২০১৯ সালের শেষভাগের মতো ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থা ইপিএর প্রতিবেদনে বিশ্বের দূষিত বায়ুর দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গত একযুগে ৫৪ ধাপ নিচে নেমেছে, এমন উদ্বেগের তথ্যও তুলে ধরা হয়েছিল। আমরা দেখেছি, এরপর সরকারের পক্ষ থেকে বায়ুদূষণ রোধে নানান পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। বায়ুদূষণের উৎসগুলোও বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটা ঠিক যে, অনেক ইটভাটা বন্ধ করা হয়েছে। বায়ুদূষণের কারণগুলোর মধ্যে ইটভাটার পরই রয়েছে ধুলাবালি। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ভবন। কিন্তু এসব স্থাপনা তৈরির সময় মানা হচ্ছে না ইমারত নির্মাণবিধি। ভবন তৈরির সময় সেগুলো কোনো কিছু দিয়ে ঢেকে দেওয়া বা পানি ছিটিয়ে কাজ করার প্রবণতা একদম নেই। এসব তদারকের কার্যকর ব্যবস্থা বা নীতিমালার অভাবও লক্ষণীয়। ফলে ধুলো উড়ছে বাতাসে। দূষিত হচ্ছে বায়ু। এ ছাড়া ফুটপাতের উন্নয়ন, ইউলুপ ও উড়ালসেতু নির্মাণ, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার জন্য খোঁড়াখুঁড়ি তো চলছেই। আবার সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িগুলো ময়লা বহনের সময় অধিকাংশ সময় না ঢেকেই বহন করে, ফলে বায়ুদূষণ হয়।

বলাই বাহুল্য, বায়ুদূষণের পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। ফলে এই সমস্যা সমাধানে একটি সামগ্রিক চিন্তা ও পরিকল্পনা জরুরি। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও কর্তৃপক্ষ সমন্বিতভাবে কোনো উদ্যোগ নিতে না পারলে পরিস্থিতি সামনের দিনগুলোতে ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। দূষিত বায়ু জনস্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ধূলিকণা মানবদেহের ভেতরে ঢুকে ফুসফুসে গেঁথে থাকে এবং একনাগাড়ে এসব উপাদানের ভেতর দিয়ে চলাচল করলে হৃদ্‌রোগ, হাঁপানি ও ফুসফুসের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। আমরা মনে করি, বায়ুদূষণে আর্থিক ক্ষতিসহ সামগ্রিক বিষয়টি আমলে নিয়ে সরকারের কর্তব্য হওয়া দরকার যেসব সুনির্দিষ্ট কারণে বায়ুরদূষণ হচ্ছে, দূষণ রোধে সে সব দিকে মনোযোগ দেওয়া। বিশেষজ্ঞদের মতামত হলো, জনগণকে সম্পৃক্ত করে এ ব্যাপারে সুপারিশমালা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন শুরু করলে এ দেশের বায়ুদূষণমুক্ত হবে। এ জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি, গ্রিন পিসের প্রতিবেদনে আমলে নিয়ে সরকার বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর উদ্যোগ নিক এটাই প্রত্যাশা।

পানিতে ডুবে ভাইবোনের মৃতু্য

সচেতনতার বিকল্প নেই

একের পর এক পানিতে ডুবে মৃতু্যর ঘটনা ঘটেই চলছে। সঙ্গত কারণেই এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এমন ঘটনা ঘটতে থাকলে তা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে। সম্প্রতি জানা গেল, হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার চক রাজেন্দ্রপুর গ্রামে পুকুরের পানিতে ডুবে দুই ভাইবোনের মৃতু্য হয়েছে। হরযপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্র রাহাত মিয়া ও তার ৬ বছরের চাচাতো বোন তানিয়া আক্তারের মৃতু্যর ঘটনা ঘটেছে পানিতে ডুবে। প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য, নিহতদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, রাহাত ও তানিয়া প্রতিদিনের মতো বুধবার বিদ্যালয়ে যায়। স্কুল ছুটি হলে অন্য শিক্ষার্থীরা বাড়িতে পৌঁছলেও তারা বাড়ি ফেরেনি। পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে বাড়িতে আসার রাস্তার পাশে একটি পুকুরে তাদের লাশ ভাসতে দেখে।

আমরা মনে করি, এ ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক এবং বেদনার। একইসঙ্গে বলতে চাই, এর আগেও বিভিন্নভাবে শিশুদের পানিতে ডুবে মৃতু্যর ঘটনা ঘটেছে। সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া দরকার, এর আগে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে- নদীপ্রধান বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৩০টি শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এ হিসাবে প্রতি বছর পানিতে ডুবে মারা যায় ১২ হাজার শিশু। এ ছাড়া প্রতি বছর পানিতে ডুবে যারা মারা যায় তাদের ৪০ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের নিচে; যার মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের নিয়েই ঝুঁকিটা বেশি। আমরা মনে করি, পানিতে ডুবে শিশুমৃতু্য বিষয়ক সামিগ্রক চিত্র আমলে নিতে হবে এবং কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণও অপরিহার্য।

আমরা বলতে চাই, শিশুদের পানিতে ডুবে মৃতু্যর নানা কারণই বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় এসেছে। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। এবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জানা যাচ্ছে, বাড়িতে আসার রাস্তার পাশে একটি পুকুরে তাদের লাশ ভাসতে দেখে। অর্থাৎ স্কুল থেকে বাড়ির ফেরার পথে পুকুর ছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন ঘটনাতেই দেখা গেছে বাড়ির পাশের পুকুরে পড়ে শিশুর মৃতু্যর ঘটনা ঘটেছে। আমরা মনে করি, শিশুদের দিকে খেয়াল রাখতে সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি। এ ছাড়া সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ব্যাপক প্রচার প্রচারণাও আবশ্যক। শিশুর অন্যতম ঘাতক এই পানিতে ডুবে মৃতু্য রোধে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রথমেই এগিয়ে আসতে হবে পরিবারকে। শিশুরা জলাধারের কাছে যেন যেতে না পারে সেই খেয়াল রাখা এবং সতর্কতার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি।

আমরা বলতে চাই, এমন বিষয়ও এর আগে সামনে এসেছে যে, এক থেকে চার বছর বয়সি শিশুদের ৭৫ শতাংশ বাড়ির ২০ মিটারের মধ্যে পানিতে ডুবে মারা যায়। আর এর বড় কারণ হচ্ছে, পরিবারের অসচেতনতা। এ ছাড়া মৃতু্যর ঘটনাগুলো ঘটে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে। গ্রামীণ নারীরা এ সময় সাধারণত গৃহস্থালি নানা কাজে ব্যস্ত থাকে। তাদের শিশুরা এ সময়ের মধ্যেই চলে যায় বাড়ির পাশে পুকুর বা ডোবার ধারে। তখনই ঘটে দুর্ঘটনা। সংশ্লিষ্টদের এটাও মনে রাখতে হবে, সাঁতার না জানার কারণেও অনেক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এমনকি শুধু শিশুরাই নয়, প্রাপ্তবয়স্কদেরও পানিতে ডুবে মৃতু্যর ঘটনা ঘটেছে। সঙ্গত কারণেই সাঁতার শেখার বিষয়টিকেও প্রাধান্য দেওয়া জরুরি। এ কথা ভুলে যাওয়া যাবে না যে, আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করবে, তাদের হাত ধরেই এগিয়ে যাবে দেশ। ফলে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, শিশুর সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করার বিকল্প নেই। পানিতে ডুবে মৃতু্যর মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে অভিভাবক তথা সবারই দায়িত্ব আছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<88409 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1