শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গণপরিবহণে যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ

কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
নতুনধারা
  ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

গণপরিবহনে দিনে দিনে বাড়ছে যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনা, বাড়ছে ধর্ষণ ও গণধর্ষণ। এর ফলে দেশের সচেতন মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, ২০১৯ সালে গণপরিবহণে ৫২ ঘটনায় ৫৯ নারী ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। দেশের সড়ক, রেল এবং নৌপথে এসব ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার মধ্যে ১৬টি ধর্ষণ, ১২টি গণধর্ষণ, ৯টি ধর্ষণের চেষ্টা, ১৫টি যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৪৪টি মামলা হয়েছে এবং ৯৩ জন গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া গণপরিবহণে যাতায়াতকালে নারীরা অসম্মানজনক আচরণেরও শিকার হচ্ছে। অবাক ব্যাপার শুধু পরিবহণ শ্রমিক, চালক, হেলপার নয় কখনো কখনো সহগামী পুরুষযাত্রী দ্বারাও এ ধরনের যৌন সহিংসতার শিকার হতে হয় নারীদের। প্রকৃতপক্ষে ঘটনার ভয়াবহতা অনেক বেশি। রক্ষণশীল সমাজ হিসেবে বাংলাদেশের নারীদের লোকলজ্জা, সামাজিক মর্যাদা, মামলা করে হয়রানি এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে অসংখ্য ঘটনা চাপা পড়ে যাচ্ছে। সোমবার বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

গণপরিবহণে নারী নির্যাতন বন্ধে গণপরিবহণে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা জরুরি। চালক, হেলপার ও সুপারভাইজরের আলাদা আলাদা নেইম পেস্নটসহ পোশাক বাধ্যতামূলক করতে হবে। চালক, হেলপার ও সুপারভাইজরের নিয়োগপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি নিয়ে ডাটাবেজ তৈরি করাসহ গাড়ির ভেতরে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের হটলাইন নম্বর, ফোন নম্বর ও গাড়ির নম্বর লাগানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে। পাশাপাশি গণপরিবহণের সংখ্যা বাড়ানো, বাস-মিনিবাসে নারীর জন্য সংরক্ষিত আসন দরজার পাশে রাখা এবং গণপরিবহণে যৌন সহিংসতার মামলা, গ্রেপ্তার ও বিচার দ্রম্নত শেষ করার উদ্যোগ নিতে হবে।

মনে রাখতে হবে সামাজিক অস্থিরতা ও বিচারহীনতার কারণেই যৌন সহিংসতা নির্যাতন ও হয়রানি বাড়ছে। অপরাধ করে নিষ্কৃতি পাওয়ার একটি সংস্কৃতি দেশে চালু রয়েছে। যদিও সরকার এ ব্যাপারে বেশ কঠোর। এর পাশাপাশি সামাজিক অবক্ষয়ও একটা কারণ। এর আগে ২০১৭ সালে গণপরিবহণে চাঞ্চল্যকর রূপা গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় দেশবাসী ফুঁসে উঠলে জনগণের তীব্র প্রতিবাদের কারণে স্বল্পতম সময়ে এ ঘটনার বিচার সম্পন্ন হয়। চার পরিবহণ শ্রমিককে ফাঁসি ও একজনকে সাত বছরের কারাদন্ড দেওয়া হলে তৎসময়ে এ ধরনের ঘটনা কিছুটা কমে আসে। তবে বর্তমানে নিপীড়নকারী, ধর্ষক, হত্যাকারীদের মামলা, গ্রেপ্তার ও বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় এ ধরনের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।

সমাজে নারীর অগ্রগতি হয়েছে এটা যেমন সত্য একইভাবে সত্য পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গির এখনো পরিবর্তন হয়নি। যার কারণে নারী ঘরে বাইরে নির্যাতিত হচ্ছে। সমাজ পরিবর্তন মানে সামাজিক কাঠামো ও সমাজের মানুষের কার্যাবলি ও আচরণের পরিবর্তন। তাদের মানসিকতার পরিবর্তন। বিশৃঙ্খল অপরাধপ্রবণ অবক্ষয়গ্রস্ত সমাজে বসবাস করে উন্নত রুচি ও সংস্কৃতির অধিকারী হওয়া যায় না। এমন সমাজে হত্যা সন্ত্রাস যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনা বন্ধ করা সহজ কাজ নয়।

আমরা চাই, পরিকল্পিত ও বিন্যস্ত সমাজ। নীতিবোধ ও চারিত্রিক মূল্যবোধ সমাজ গঠনের প্রধান শক্তি- যা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। কোনোভাবেই আমাদের সমাজ যেন আলোর দিকে অগ্রসর হতে পারছে না। কূপমন্ডূকতা যেমন আমাদের সমাজকে দিন দিন গ্রাস করছে, তেমনি নারীর ক্ষেত্রেও যেন সমাজ দিন দিন আরও নিষ্ঠুর হয়ে উঠছে। নিষ্ঠুরতার বলি হচ্ছে নারী। কোনোভাবেই তা রোধ করা যাচ্ছে না। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও নারীরা নির্যাতন হয়রানি ও ধর্ষণের শিকার হতে থাকবে- এটা যেখানে সমর্থনযোগ্য নয়। এ ব্যাপারে দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<90047 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1