প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে আরও দুজন শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে পাঁচজন আক্রান্ত হলেন। আগের আক্রান্ত দুজন সুস্থ বলে দাবি করা হয়েছে। নতুন শনাক্ত দুজনই ইউরোপ থেকে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। এদের একজন ইতালি থেকে, অন্যজন জার্মানি থেকে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) গতকালের তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় দেশের ৮ বিভাগে ২ হাজার ৩১৪ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৪ জন। আর আইসোলেশনে আছেন ১০ জন। বিশ্লেষকরা বলছেন এই মুহূর্তে করোনাভাইরাস প্রতিরোধই বড় চ্যালেঞ্জ। আর সার্বিক বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনায়, সরকার জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিলেও দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো বন্ধ না হওয়ায় অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। স্কুল-কলেজে উপস্থিতি কমে গেছে। এখনই সতর্ক না হলে করোনাভাইরাসে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিন ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় আরও দুজন আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি সরকার নিশ্চিত করল। এ নিয়ে দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৫ হলো। আইইডিসিআর জানিয়েছে, করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া প্রথম তিনজনের মধ্যে দুজন সুস্থ হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন ইতোমধ্যে বাড়ি ফিরে গেছেন। অন্যদিকে ভাইরাসের উদ্বেগের কারণে শনিবার ক্লাস বর্জন করেছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। ঢাবির অর্থনীতি ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থীরাও করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। সরকার এখনো কেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করছে না, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তবে দেশের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের অন-অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত, বিমানের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল এবং পণ্য আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে। গণমাধ্যমের তথ্যে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, সরকারের পক্ষ থেকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর ক্ষেত্রে কঠোরতা অবলম্বন এবং এ ব্যাপারে তদারকি জোরদার করা না হলে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বাড়তেই থাকবে, যা সমূহ ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দেবে।
আমরা জানি, ইতিমধ্যে ইউরোপের অন্যতম বড় অর্থনীতির দেশ ইতালি প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বিশ্ব থেকে। পুরো দেশই বলা চলে কোয়ারেন্টাইনে। ধীরে ধীরে একই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে অন্য দেশগুলোতেও। জানা গেছে, যথাযথ তদারকি না থাকায় বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে থাকা বরিশালের এক ব্যক্তি পালিয়েছেন। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের। ইতালি থেকে শনিবার আসা ১৪২ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। কেননা, এদের শরীরে করোনা সংক্রমণ পাওয়া যায়নি। বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে রাখা কতটুকু নিরাপদ সে বিষয়টিও স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের ভেবে দেখা যৌক্তিক বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। জানা গেছে, ইতালি থেকে রোববার সকালেও ১৫২ জন বাংলাদেশি ঢাকায় এসেছেন। এদের বিমানবন্দর থেকে সরাসরি আশকোনার হজ ক্যাম্পে নেওয়া হয়েছে।
গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, জনসমাগম এড়াতে এই মুহূর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ চাইছেন অভিভাবকরা। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি বদরুল আলম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের পক্ষে মত দিয়েছেন। যেহেতু প্রাথমিক ও এবতেদায়ি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৮-৩০ লাখ শিক্ষার্থী আছে। ফলে ঝুঁকি এড়াতে অন্তত দুই সপ্তাহ প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা উচিত বলে তিনি মনে করেন। ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশের পোশাক খাত অন্যতম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আর বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিরাই এ দেশে করোনা সংক্রমণের উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলছেন বলেও মনে করছেন অনেকে।
সর্বোপরি বলতে চাই, বিশ্ব পরিস্থিতির বাস্তবতা বিবেচনায় যে কোনো সিদ্ধান্তের জন্য আমাদের তৈরি থাকতে হবে। বলাই বাহুল্য, করোনাভাইরাসের প্রভাব হবে ভয়াবহ রকমের নেতিবাচক। বিভিন্নভাবে সেটিই আমাদের সামনে এসে হাজির হচ্ছে। কিন্তু এ থেকে উত্তরণের উপায়ও কারও জানা নেই। সুতরাং সতর্ক ও সচেতনতার মধ্য দিয়ে এ ভাইরাসের বিস্তার হ্রাসের অপেক্ষা করছেন বিশ্ববাসী। ফলে এই সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ভাইরাস প্রতিরোধে আমরা সক্ষম হবো এমনটিই প্রত্যাশা।