শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আমীর খসরুর হোটেল সারিনায় দুদকের হানা

যাযাদি রিপোটর্
  ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর মালিকানাধীন হোটেলে মঙ্গলবার হানা দিয়েছে দুনীির্ত দমন কমিশনের (দুদক) দল। দুদকের তলবকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে খসরুর রিট খারিজ হওয়ার পরদিনই এই অভিযান চলে। হোটেল থেকে অনুসন্ধান-সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয় বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে।

মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে দুদকের পরিচালক কাজী শফিকুল আলমের নেতৃত্বে একটি দল রাজধানীর বনানীতে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর হোটেল সারিনায় যায়। দুদক সূত্র জানিয়েছে, সেখান থেকে বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। দুদকের চাওয়া আরও কিছু তথ্যের বিষয়ে হোটেল কতৃর্পক্ষ সময় চাইলে তাদের সময় দেয়া হয়।

প্রসঙ্গত, জ্ঞাত-আয়বহিভ‚র্ত সম্পদ অজর্ন ও অথর্ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে দুই দফা তলব করা হলেও তিনি দুদকে হাজির হননি। উল্টো দুদকের তলবকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন।

গত রোববার ওই রিট সরাসরি খারিজ করে দেয় হাইকোটর্। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোটর্ বেঞ্চ ওই আদেশ দেন। পরে সোমবার চেম্বার বিচারপতি ইমান আলী হাইকোটের্র ওই রায় স্থগিত করেননি। এর ফলে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে দুদকে হাজির হতেই হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান।

৩ সেপ্টেম্বর আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে দুদকে হাজির হওয়ার নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোটের্ রিট দায়ের করা হয়। ৫ সেপ্টেম্বর আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে দুদকে হাজির

হওয়ার নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট কাযর্তালিকা থেকে বাদ দেয় হাইকোটের্র অপর একটি বেঞ্চ।

এ বছরের ১৬ আগস্ট অবৈধ লেনদেন, মুদ্রা পাচার, অবৈধ সম্পদ অজের্নর অভিযোগে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে তলব করে দুদক। এর পরিচালক কাজী শফিকুল আলম স্বাক্ষরিত এক নোটিশে ২৮ আগস্ট বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্যকে সেগুনবাগিচায় দুদক কাযার্লয়ে হাজির হতে বলা হয়। ওইদিন দুদকে হাজির না হয়ে সময়ের আবেদন করেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। পরে তাকে ১০ সেপ্টেম্বর দুদকে হাজির হতে চিঠি দেয়া হয়। উচ্চ আদালতে রিট মামলা বিচারাধীন থাকার কারণ দেখিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী হাজির না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে সময় চান। চিঠিতে উচ্চ আদালতে করা রিটের নিষ্পত্তি না হওয়া পযর্ন্ত কোনো ব্যবস্থা না নিতে অনুরোধ জানান তিনি।

দুদক সূত্র জানায়, গত ১৩ আগস্ট সুনিদির্ষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমাসের্র সাবেক সভাপতি ও বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকে হাজির হতে চিঠি দেয়া হয়।

১৬ আগস্ট দুদকের পরিচালক কাজী শফিকুল আলমের স্বাক্ষরিত ওই চিঠি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর চট্টগ্রামের মেহেদীবাগের বাসার ঠিকানায় পাঠানো হয়। ২৮ আগস্ট তার হাজির হওয়ার তারিখ ছিল।

চিঠিতে বলা হয়, বেনামে পঁাচ তারকা হোটেল ব্যবসা, ব্যাংকে কোটি কোটি টাকার অবৈধ লেনদেনসহ মানি লন্ডারিং করে বিভিন্ন দেশে অথর্ পাচারের অভিযোগ রয়েছে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া স্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্য, নিজ নামে শেয়ার কেনাসহ জ্ঞাত-আয়বহিভ‚র্ত সম্পদ অজের্নর অভিযোগও অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

পরে আমীর খসরুর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ১০ সেপ্টেম্বর হাজির হওয়ার সময় দেয়া হয়।

এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭(২) ধারায় এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয় চট্টগ্রামে। মামলার এজাহারে বলা হয়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিলেন। ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্রে নৈরাজ্য সৃষ্টির উদ্দেশে তিনি উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষাথীের্দর আন্দোলনের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়। এটি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বলে অভিযোগ ওঠে। সেই ক্লিপে কুমিল্লা থেকে নওমি নামের এক কমীর্র সঙ্গে একজনকে কথা বলতে শোনা যায়। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষাথীের্দর আন্দোলনের মধ্যে লোকজনকে নামানোর জন্য কথা বলতে শোনা যায় তাকে।

এর আগে চলতি বছরের এপ্রিলে বিএনপির শীষর্ আট নেতার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক। তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং, সন্দেহজনক ব্যাংক লেনদেনসহ অবৈধ সম্পদ অজের্নর অভিযোগ রয়েছে বলে দুদক বলেছে।

এপ্রিলে বিএনপির যেসব নেতার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে, তারা হলেন স্থায়ী কমিটির চার সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মিজার্ আব্বাস; দুই ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ও এম মোরশেদ খান; যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে ও দলের নিবার্হী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল। এ ছাড়া এম মোরশেদ খানের ছেলে খান ফয়সাল মোরশেদ খানের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান হচ্ছে।

দুদকের মামলায় সাজা পেয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ ছাড়া বিএনপির ২৫ জনের বেশি জ্যেষ্ঠ নেতার বিরুদ্ধেও দুদকের করা দুনীির্তর মামলা চলছে। দলটি দীঘির্দন ধরেই দুদকের সমালোচনায় মুখর। এর মধ্যে জ্যেষ্ঠ আরেক নেতার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামল দুদক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<13219 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1