শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জ্যামিতিক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা

এডিশ মশার ঘনত্ব ঝুঁকির সহনীয় মাত্রা শতকরা ২০ শতাংশ হলেও রাজধানীতে মে মাসে ডেঙ্গু মশার ঘনত্বের ঝুঁকিমাত্রা ছিল ৩৩ শতাংশ। জুলাই মাসে এসে ঘনত্বের এই ঝুঁকিমাত্রা বেড়ে ৪০ শতাংশের কাছে পেঁৗছে।
জাহিদ হাসান
  ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

এ বছর ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ মোকাবেলায় সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভতির্ হচ্ছে এসব রোগী। ফলে এখন থেকেই ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা।

গত এক সপ্তাহ ধরে রাজধানীর একাধিক সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার কমর্কতাের্দর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তারা জানান, শুধু গত ১৩ সেপ্টম্বর একদিনে সরকারি হাসপাতালে ৫১ ও বেসরকারি হাসপাতালে ৩১ জন ডেঙ্গু রোগী ভতির্ হয়েছেন।

পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম কমর্কতার্রা জানান চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৩ সেপ্টম্বর পযর্ন্ত ঢাকার ১৩টি বড় হাসপাতাল, ৭টি বিভাগীয় হাসপাতাল ও রাজধানীর ৩৬টি বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৩ হাজার ৯৯৩ জন রোগী ভতির্ হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে সরকারিতে ৬ ও বেসরকারি হাসপাতালে ৫ সহ মোট ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, আক্রান্তদের মধ্যে গত জানুয়ারিতে ২৬ জন, ফেব্রæয়ারি ৭, মাচর্ ৫, এপ্রিল ১৪, মে ২৬৭, জুলাই ৮৮৭, আগস্ট ১ হাজার ৬৬৬ ও সেপ্টম্বরে ১ হাজার ৭৭ জন ভতির্ হয়েছে। আর চলতি মাসের ১৩ দিনে ভতির্ হয়েছে ৮৯৭ জন।

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের মধ্যে ১৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার পযর্ন্ত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে ভতির্ আছেন ৩৩ জন, মিটফোডর্ হাসপাতালে ৬৫, সোহরাওয়াদীের্ত ১৮, হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট হাসপাতালে ২০, বারডেম হাসপাতালে ১৭, বিজিবি হাসপাতাল (পিলখানা) ৬ জন। এছাড়া বেসরকারি বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজে ৫, ইবনে সিনা হাসপাতাল (ধানমন্ডি) ১৭, স্কয়ার হাসপাতালে ১২, ডেল্টা মেডিকেল কলেজে ১, সেন্ট্রাল হাসপাতালে ৫২, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল (কাকরাইল) ২৬, খিদমা হাসপাতালে (খিলগঁাও) ২, সালাউদ্দীন হাসপাতালে ১১, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ধানমন্ডি) ৮ জনসহ ঢাকার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ২৯৩ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বিষয়টি সম্পকের্ নাম না প্রকাশ কারার শতের্ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কমর্কতার্ জানান, কিছুদিন আগে অধিদপ্তর থেকে ডেঙ্গু প্রকোপের ওপর একটি জরিপ চালানো হয়। জরিপে দেখা যায়, এডিশ মশার ঘনত্ব ঝুঁকির সহনীয় মাত্রা শতকরা ২০ শতাংশ হলেও রাজধানীতে মে মাসে ডেঙ্গু মশার ঘনত্বের ঝুঁকিমাত্রা ছিল ৩৩ শতাংশ। জুলাই মাসে এসে ঘনত্বের এই ঝুঁকিমাত্রা বেড়ে ৪০ শতাংশের কাছে পেঁৗছে।

এছাড়া উত্তর সিটি করপোরেশনে এডিস মশার ঘনত্ব ঝুঁকি ছিল ২৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ ও দক্ষিণ সিটিতে ছিল ৩২ দশমিক ৮৪ শতাংশ। জুলাইতে সেটি ৪০ শতাংশে এসে দঁাড়ায়। এর মধ্যে উত্তর সিটির গুলশান-১ এ এডিশ মশার ঘনত্ব ঝুঁকিমাত্রা-৭০, মিরপুর-এগারোতে ৬০, মনিপুরিপাড়া, লালমাটিয়ায়, মোহাম্মদপুর, গাবতলী ও নিকেতন এলাকায় ৪০ শতাংশ।

চিকিৎসকরা বলছেন, চলতি বষার্ মৌসুম শেষ হতে এখনো দুই মাসের মতো সময় রয়েছে। আর মশা বৃদ্ধির এই অবস্থা চলতে থাকলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দঁাড়াবে তা সহজেই অনুমেয়। তাই এটি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে ব্যাপকহারে জনসচেতনতা তৈরি করা দরকার।

ডেঙ্গুজ্বরের কারণ ও লক্ষণ সম্পকের্ ঢাকা মেডিকেলের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মজিবুর রহমান বলেন, সাধারণত মে থেকে সেপ্টেম্বর পযর্ন্ত তুলনামূলকভাবে বেশ গরম পড়ে। এ সময় বষার্ শুরু হয়ে যত্রযত্র পানি জমে মশার উপদ্রব বাড়ে। ফলে ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপও বাড়ে। ডেঙ্গুর উৎপত্তি হয় মূলত ডেঙ্গু রোগের ভাইরাসবাহিত এডিশ ইজিপ্টাই নামক মশার কামড়ে। জীবাণুবাহী মশা কাউকে কামড়ানোর পর ৪ থেকে ৬ দিনের মধ্যে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

আক্রান্ত ব্যক্তি তীব্র জ্বরের সঙ্গে সারা শরীরে প্রচÐ ব্যথা অনুভব করে। জ্বরের এ মাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পযর্ন্ত হতে পারে। রোগীর হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি এবং মাংসপেশিতে অসহনীয় ব্যথা ছড়িয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে। মাথাব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা হতে পারে। অনেক সময় জ্বরের ৪ বা ৫ দিনের মধ্যে সারা শরীরে স্কিন র‌্যাশ, এলাজির্ বা লালচে দানা দেখা দিতে পারে। সঙ্গে বমি বমি ভাব, অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ হয়ে থাকে। এছাড়া এ জ্বরের কারণে রক্তের প্লাটিলেটের মাত্রা মারাত্মকভাবে কমে যেতে পারে। প্লাটিলেট কমে গেলে দাঁত, ত্বকের নিচ, নাক বিভিন্ন স্থানে রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা যায়যায়দিনকে বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ তুলনামূলকভাবে বেশি। ডেঙ্গু মশার ঘনত্ব বিবেচনায় সেপ্টেম্বর মাসব্যাপী এটির প্রকোপ থাকবে। পরিবেশগত কারণেই আগাম বষার্ ও আবহাওয়াগত পরিবতের্নর জন্য এডিশ মশার বংশ বিস্তারে অনুক‚ল পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘ডেঙ্গু মোকাবেলায় প্রতি বছরের মতো এবারও মাচর্-এপ্রিল থেকে শুরু করে অদ্যবধি কাজ চলছে। সাপোটির্ং জনবল ও ফান্ড রয়েছে। তাছাড়া মশা নিধনে মূল কাজ হলোÑ বষার্ শুরুর আগে, শুরু হলে এবং শেষে মশার ঘনত্ব নিণর্য় করা, যেটি চলমান আছে। কাজের প্রতিবেদন দুই সিটি করপোরেশন, হেলথ এডুকেশন ব্যুরো ও আইডিসিআরকে দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী তারাও প্রতিরোধমূলক কাযর্ক্রম হাতে নিয়েছে। এমনকি কাজের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে দুই সিটির ৯৩টি ওয়াডের্ ২০ থেকে ৪০টি বাড়িকে এলাকা নিধার্রণ করে প্রায় ২ হাজার বাড়িতে নিয়মিত সাভের্ হয়েছে। ডিসিসি ও সংশ্লিষ্টদের অবহিত করে কাযর্কর ব্যবস্থা গ্রহণের পরামশর্ দেয়া হয়েছে।

এর বাইরে ঢাকার সব হাসপাতালের পরিচালক ও সিভিয়ার ম্যালেরিয়া বিশেষজ্ঞ, নিবিড় পরিচযার্ কেন্দ্র (আইসিইউ) চিকিৎসকদের নিয়ে সভা করা হয়েছে। ঢামেকের মেডিসিন কনসালটেন্টদের নিয়েও বৈঠক করা হয়। এ মাসের ১৭ তারিখে সোহরাওয়াদীের্ত আরেকটি বৈঠক হবে। এ ছাড়া জনসচেতনতা তৈরিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে নিয়মিত বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<13421 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1