শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
সোহরাওয়ার্দীতে মহাসমাবেশ

একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে এরশাদের শঙ্কা

এইচ এম এরশাদ বলেন, তিনি নতুন করে ১৮ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। তারা নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার চান। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা চান। নিরাপদ সড়ক চান
যাযাদি রিপোর্ট
  ২১ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০
শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশে বক্তৃতা করেন দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। পাশে দলের মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারসহ শীর্ষ নেতারা Ñযাযাদি
আগামী নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, ‘নিবাচন হবে কি হবে না আমরা জানি না। একটি দল ৭ দফা দিয়েছে (জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট)। সরকার তা মানতে রাজি নয়। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী মানা সম্ভব নয়। এই অবস্থায় আগামী দিনগুলো নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের শঙ্কা রয়েছে।’
শনিবার দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের মহাসমাবেশে এ সব কথা বলেন তিনি।
আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হলে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় আসবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশের প্রত্যেকটি নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা চাই। নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। বর্তমান সংসদে যারা আছে, সব দলের সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে হবে।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেয়ার ঘোষণা দিয়ে এরশাদন বলেন, ‘আজ এখান থেকেই আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু হলো। প্রতিটি আসন ধরে ধরে আপনারা প্রস্তুতির জন্য কাজ শুরু করুন। জাতীয় পার্টি সব সময়ই নির্বাচনমুখি দল। আমাদের ওপর অনেক ঝড় এসেছে। কিন্তু আমরা কখনো নির্বাচন বয়কট করিনি। রাজনীতিতে নির্বাচন বয়কট করলে তার জন্য মূল্য দিতে হয়। আমরা কখনো নির্বাচনের বাইরে ছিলাম না এখনো থাকবো না। তবে আমরা নির্বাচন সুষ্ঠু চাই। অবাধ ও সমান সুযোগেরও নিশ্চয়তা চাই। আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আর এ জন্যই সব আসন ধরে ধরে কাজ করতে হবে।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘যারা নির্বাচন করতে চাও তারা এগিয়ে আসো। এ মাসের মধ্যেই পার্লামেন্টারি বোর্ড গঠন করা হবে। তৃণমূলের সমর্থনে মনোনয়ন দেয়া হবে। মনোনয়ন পেতে চাইলে এলাকায় কাজ শুরু করো। জনবিচ্ছিন্নদের আমরা সমর্থন দেবো না। জোটের সবাইকে প্রার্থী তালিকা দিতে বলবো। তবে দলের চেয়ে প্রার্থীর যোগ্যতা বেশি হতে হবে।’
সাধারণ মানুষের উন্নয়নের জন্য যা যা করা লাগে আমাদের জাতীয় পার্টি তা করবে জানিয়ে এরশাদ বলেন, ‘শেষ কথা, নির্বাচনের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আমি নতুন করে ১৮ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। আমরা নির্বাচনের পদ্ধতি পরিবর্তন করতে চাই। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা চাই। শিক্ষা পদ্ধতির সংস্কার করতে চাই। স্বাস্থ্যসেবার সম্প্রসারণ চাই। নিরাপদ সড়ক চাই।’
দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে বক্তব্য শুরু করেন এরশাদ। ১২টা ২৫ মিনিটের মধ্যেই তার বক্তব্য শেষ হয়ে যায়। মাত্র ১৫ মিনিটের এই বক্তব্যের মধ্যে অন্তত তিনবার বক্তব্য থামিয়ে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিরক্ত হয়ে ‘এই, প্ল্যাকার্ড নামান’ বলে উঠেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।
বক্তব্যের শুরুর দিকেই এরশাদ বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে আমিই সব থেকে প্রবীণ। এটাই হয়তো আমাদের জীবনের শেষ নির্বাচন। আপনারা কি আমাকে আবার ক্ষমতায় দেখতে চান? এ সময় সমাবেশস্থলের সামনে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা প্ল্যাকার্ড উঁচিয়ে বলে উঠেÑ ‘হ্যাঁ’। নেতা-কর্মীদের প্ল্যাকার্ড উঁচিয়ে ধরা দেখে বিরক্তি প্রকাশ করে বক্তব্য থামিয়ে এরশাদ বলেন, ‘এই, প্ল্যাকার্ড নামান’।
এরপর আবার বক্তব্য শুরু করেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। বক্তব্য দিতে দিতে আবার নেতা-কর্মীদের বিরক্ত প্রকাশ করে জাপা চেয়ারম্যান বলে উঠেনÑ ‘এই, প্ল্যাকার্ড নামান, প্ল্যাকার্ড নামান। আপনারা আমার বক্তব্য শুনছেন বলে তো মনে হচ্ছে না।’
এরপর আবারও বক্তব্য দেয়া শুরু করেন তিনি।
সমাবেশে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ বলেন, ‘যেভাবেই হোক, জাতীয় পার্টিকে সংগঠিত করতে হবে। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যা যা করা দরকার, তা করতে হবে। আমাদের ক্ষমতায় যেতেই হবে। এবার ইনশাআল্লহ ক্ষমতায় যাবই যাব।’
দলের কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা সমাবেশে বক্তব্য দেন।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এরশাদের বক্তব্যের পর সমাবেশ শেষ হয়। এর আগে সকাল ১০টার আগে থেকেই বড় আকারের লাঙ্গল প্রতীক, এরশাদের প্রতিচ্ছবিসহ জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে মাঠ ভরে গিয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনের রাস্তা পর্যন্ত মানুষ ছড়িয়ে পড়ে। সমাবেশে বিভিন্ন এলাকার মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীরা মিছিলসহ যোগ দেন।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের শোডাউন
মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের এলাকায় শনিবার সকাল ৮টা থেকে ব্যাপক শোডাউন করেন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতার তাদের শক্তির জানান দিতে সমাবেশ ও এর আশপাশের এলাকায় খ- খ- মিছিল করেন। পার্টির চেয়াম্যান এরশাদ ও রওশন এরশাদের ছবি সংবলিত পোস্টার-ফেস্টুনের পাশাপাশি মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের ব্যানার-পোস্টারও ছিল চোখে পড়ার মতো।
সকাল নয়টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের টিএসসি সংলগ্ন এলাকা ও মৎস্য ভবন থেকে শাহাবাগ পর্যন্ত নেতাকর্মীরা খ- খ- মিছিল করছেন। এ সব মিছিলের কারণে সমাবেশ শুরুর অনেক আগেই মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগের সড়কটিতে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সাড়ে নয়টার দিকে পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে সড়কটি বন্ধ করে দেয়।
মিছিলে অংশ নেয়াদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি ছিল রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন থানা এবং রংপুরের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের নামে স্লোগানের পাশাপাশি মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের নামেও স্লোগান দেয়।
রংপুর থেকে আগত একজন কর্মী রুহান হাসান বলেন, ‘আমাদের প্রধান নেতা এরশাদ। তিনি যাকে মনোনয়ন দেবেন আমরা তার সঙ্গেই কাজ করবো। এর পরও আমরা যারা সম্ভাব্য মনোনয়ন পেতে পারে তাদের নামেও স্লোগান দিচ্ছি। কারণ তাদের এবার দলের সমর্থন পাওয়ার সম্ভবনা সবচেয়ে বেশি।’
হাতাহাতি এবং চেয়ার ছুড়াছুড়ি: সমাবেশ শুরুর পর আগত নেতাকর্মীদের মধ্যে কয়েক দফা চেয়ার ছুড়াছুড়ি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। প্রথম নেতাকর্মীদের মধ্যে বাকবিত-া এবং পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। যাতে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। মূলত মঞ্চের সামনে অবস্থান এবং বিভিন্ন এলাকার ও নেতার নামে স্লোগানকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় দেড় শতাধিক চেয়ারও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। কয়েক জনের মাথা ফেটে গেলে তাদের রিকশা ও সিএনজিতে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মাইকে সব নেতাকর্মীকে ব্যানার নামিয়ে ফেলতে নির্দেশ দেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘সব ব্যানার নামিয়ে ফেলতে হবে। সমাবেশের ভেতর কোনো ব্যানার ধরলে অন্যদের দেখতে সমস্যা হয়।’
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে