শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডাকসু: ক্যাম্পাসে সহাবস্থান থাকার দাবি ঢাবি ভিসির

প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সমন্বয়ক সালমান সিদ্দিকী যায়যায়দিনকে বলেন, সহাবস্থান নয়, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং হলগুলোতে ভয়ভীতি ও দখলদারিত্বের পরিবেশ পুরো মাত্রায় বতর্মান
এস এম মামুন হোসেন
  ১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নিবার্চন আয়োজনের ঘোষণা দেয়ার পর ছাত্রলীগ ছাড়া প্রায় সব ছাত্র সংগঠনই আনুষ্ঠানিকভাবে ক্যাম্পাসে সহাবস্থান ও ভয়ভীতি মুক্ত পরিবেশ তৈরির দাবি জানালেও ছাত্রলীগের সঙ্গে সুর মিলিয়ে খোদ উপাচাযর্ও এ ইস্যুতে গুরুত্ব দিতে চাননি। তাদের ভাষ্য, ক্যাম্পাসে এমনিতেই শান্তিপূণর্ সহাবস্থান বিরাজ করছে। তাই এ বিষয়ে নতুন করে কোনো উদ্যোগ নেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তবে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন এবং উপাচাযের্র একই সুরে কথা বলার বিষয়কে সন্দেহের চোখে দেখছেন ছাত্রদল, বামপন্থি এবং অরাজনৈতিক ছাত্র প্রতিষ্ঠানগুলোর নেতারা।

ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির কাছে অধিকাংশ ছাত্র সংগঠন গত ১০ তারিখে যে সহাবস্থানের দাবি জানিয়েছে সে বিষয়ে কীভাবে অগ্রসর হওয়ার কথা ভাবছেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচাযর্ অধ্যাপক ড. আক্তারুজ্জামানের কাছে যায়যায়দিনের পক্ষ থেকে এ প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ‘ক্যাম্পাসে এ মুহ‚তের্ অত্যন্ত শান্তিপূণর্ সহাবস্থান বিরাজ করছে। হলগুলোর প্রাধ্যক্ষরা আমাকে জানিয়েছেন, হলে কোনো সমস্যা নেই। ফলে আমি মনে করি না আলাদা করে আর কোনো সহাবস্থানের প্রয়োজন আছে।’

ছাত্রলীগ ব্যতীত বাকি সবগুলো ছাত্র সংগঠন তাহলে সহাবস্থান বিষয়ে কী বোঝাতে চেয়েছেন? এ প্রশ্নে উপাচাযর্ আক্তারুজ্জামান প্রতিবেদকের কাছে আবারও একই বিষয় জানিয়ে বলেন, ‘এরই মধ্যে যেহেতু ক্যাম্পাসে শান্তিপূণর্ সহাবস্থান রয়েছে সেহেতু আর কোনো সহাবস্থানের প্রয়োজন নেই। তবে কোনো শিক্ষাথীর্ ব্যক্তিগতভাবে যদি সমস্যার সম্মুখীন হয় তবে আমি বলে দিয়েছি হল প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। তিনি ব্যবস্থা নেবেন।’

একই বিষয়ে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনিও যায়যায়দিনকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে অত্যন্ত শান্তিপূণর্ সহাবস্থান রয়েছে। এখানে আর কোনো সহাবস্থান প্রয়োজন নেই।’

তবে উপাচাযর্ এবং ছাত্রলীগের নেতার সহাবস্থান বিষয়ে বক্তব্যের সঙ্গে সম্পূণর্ দ্বিমত পোষণ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বামপন্থি সবগুলো ছাত্র সংগঠন এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর একক প্লাটফরম প্রগতিশীল বাম ছাত্র জোটের সমন্বয়ক সালমান সিদ্দিকী যায়যায়দিনকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং হলগুলোতে ভয়ভীতি ও দখলদারিত্বের পরিবেশ পুরো মাত্রায় বতর্মান। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন বাদে অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকমীর্রা হলে অবস্থান করতে পারছেন না। ক্যাম্পাসে আমরা যারা আছি তাদেরও সব সময় ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়। অন্যদের ক্যাম্পাসের ধারে কাছেও ঘেঁষতে দেয়া হয় না। এটাকে কোনোভাবেই শান্তিপূণর্ সহাবস্থান বলা যায় না। বতর্মান অবস্থা এমন যে, ন্যূনতম বিরোধিতার জায়গাটুকুও রাখা হয়নি। ভয়ে কেউ কথা বলতে পারে না। প্রথম বষের্র একজন শিক্ষাথীর্ না বুঝে যখন সরকারের বিরুদ্ধে যায় এমন পোস্টে একটি লাইক দেয়ার কারণে তাকে গভীর রাতে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে নিমর্ম প্রহর করা হয়, সেখানে সহাবস্থানের প্রশ্নটাই আসে কীভাবে?’

বামপন্থি এ ছাত্র নেতা আরও বলেন, ‘প্রশাসন এবং ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের একই রকম কথা বলার বিষয়টি মোটেও ইতিবাচক নয়। আমরা আশা করব প্রশাসন নিরপেক্ষ ভ‚মিকা পালন করবে।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনের জন্য গড়ে ওঠা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের একজন যুগ্ম-আহŸায়ক মো. নাজমুল হাসান সোহাগ যায়যায়দিনকে বলেন, ‘আমরা তো কোনো রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন নই। আমি নিজে কোটা সংস্কার আন্দোলনের আগে বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের পদধারী নেতা ছিলাম। আমাকেও কোটা সংস্কার আন্দোলন করায় হলে থাকতে দেয়া হয় না। কখন ধরে মারধর করে এই ভয়ে ক্যাম্পাসে যেতেও ভয় পাই। আমাদের বেশির ভাগেরই এখনো পড়াশোনা শেষ হয়নি। আমাদের অনেককে ক্লাস-পরীক্ষা দিতে আসতেও ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়। যেখানে অরাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের পক্ষে কোনো ন্যায্য দাবি জানালেই দফায় দফায় হামলা আর মিথ্যা মামলার মুখে পড়তে হয়, সেখানে সহাবস্থান আছে এমন কথা, তাও আবার খোদ ভিসি স্যারের মুখ থেকে শোনার পর আমাদের আর কোনো কিছুই বলার থাকে না।’

এদিকে ক্যাম্পাসে সহাবস্থান আছে বলে উপাচাযর্ এবং ছাত্রলীগ যে দাবি করেছে তাতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাসার সিদ্দিকী। তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, ‘কাদের সঙ্গে কার সহাবস্থান আছে? প্রশাসনের সঙ্গে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের? সেটা হয়তো থাকতে পারে। প্রশাসন এবং দল এখন একাকার হয়ে গেছে। এটা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়। সবর্ত্রই একই অবস্থা। কিন্তু কোনো ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের এখন সহাবস্থান আছে এটা বলাটা নিরেট মিথ্যা। আমাদের কথা বাদই দিলাম। তাদের মূল দলের সঙ্গে যেসব জোট শরিক আছে তাদের ছাত্র সংগঠকেও হলের মধ্যে কোনো ধরনের কাযর্ক্রম চালাতে দেয়া হয় এমনটাও আমার জানা নেই। বরং তাদেরও একাধিকবার মারধর করা হয়েছে এমন ভূরিভ‚রি তথ্য আছে।’

আবুল বাসার সিদ্দিকী আরো বলেন, ‘ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন এ ধরনের দাবি করেছে এটাতে আমরা অবাক হইনি। কিন্তু ভিসি স্যার যখন তাদের ভাষায় সুর মিলিয়ে কথা বলেন, তখন আমরা হতাশ হই। যিনি পুরো ক্যাম্পাসের সব ছাত্রের অভিভাবক তার কাছ থেকে আমরা অভিভাবক সুলভ বক্তব্যই প্রত্যাশা করি।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<32694 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1