শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আইয়ুব খানের ছাত্রসংগঠনের চেয়েও ছাত্রলীগ ভয়াবহ

ঢাবিতে শিক্ষকদের সংহতি সমাবেশে অভিমত
ঢাবি প্রতিনিধি
  ২০ জুলাই ২০১৮, ০০:০০
নিপীড়ন-হয়রানি বন্ধ, শিক্ষাথীের্দর মুক্তি, হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকরা বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাজেয় বাংলার সামনে সংহতি সমাবেশ করেন Ñযাযাদি

পাকিস্তান আমলে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের ছাত্রসংগঠন ছিল। সেই সংগঠনের নেতা-কমীর্রা যতটা না আক্রমণাত্মক ছিল, তার চেয়ে বেশি আক্রমণাত্মক এখনকার ছাত্রলীগ। তাদের হাতে কেবল শিক্ষাথীর্রাই লাঞ্ছিত হননি, শিক্ষকরাও লাঞ্ছিত হয়েছেন। ওই যুগের ছাত্রসংগঠনের চেয়েও বতর্মান যুগের ছাত্রলীগ ভয়াবহ।

বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাজেয় বাংলার সামনে শিক্ষক সংহতি সমাবেশে শিক্ষকরা এসব কথা বলেন। নিপীড়ন ও হয়রানি বন্ধ, শিক্ষাথীের্দর মুক্তি, হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ও শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকরা এ সমাবেশের আয়োজন করেন। সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ জন শিক্ষক অংশ নিয়ে সংহতি প্রকাশ করেন।

সমাবেশে বলা হয়, ২৩ জুলাই সোমবার দিনব্যাপী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের বটতলায় বেলা ১১টায় নিপীড়নবিরোধী সাংস্কৃতিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

সমাবেশে আন্তজাির্তক সম্পকর্ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আকমল হোসেন বলেন, আইয়ুব খানের আমলে ছাত্রদের ওপর নিযার্তন করা হতো। সে সময় আইয়ুব খানের ছাত্রসংগঠন এনএসএফ ছাত্রদের নিযার্তন করত, কিন্তু বতর্মান ছাত্রলীগের মতো পেটাত না। সেই এনএসএফ যুগের চেয়ে বতর্মান যুগ ভয়াবহ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অথর্নীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ছাত্ররা কেন কোটা সংস্কার আন্দোলন করছেন তা তিনি বুঝছেন না। তিনি যদি ছাত্র বা শিক্ষকদের এক ঘণ্টা সময় দিতেন, তাহলে তিনি এই যৌক্তিক আন্দোলনের কারণ বুঝতে পারতেন। তিনি বুঝতে পারতেন এই দাবি কতটা ভেতর থেকে এসেছে এবং কত দিনের ক্ষোভ থেকে এসেছে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ছাত্রলীগকে রক্ষা করছে। এটি মেনে নেওয়া যায় না। বতর্মান ছাত্রলীগের কমর্কাÐ আইয়ুব খানের ছাত্রসংগঠন এনএসএফের চেয়ে অনেক বেশি আক্রমণাত্মক উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর এর চেয়ে বড় আক্রমণ আর কী হতে পারে। ছাত্রলীগ যখন হামলা করে, পুলিশ তখন সেখান থেকে চলে যায়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি ছাত্রসংসদের নিবাির্চত প্রতিনিধি থাকত, তাহলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হতো না।

মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাসরিন ওয়াদুদ বলেন, ‘৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে। আমি ছাত্রলীগের কমীর্ হিসেবে তাতে অংশ নিয়েছি। ছাত্রলীগের তকমা গায়ে লাগিয়ে আমি গবির্ত হয়েছি। আর এখন ছাত্রলীগ একটা গালি।’ উপাচাযের্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আমাদের বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ও শিক্ষকের নামের ফলকের ওপর কালি দিয়েছে ছাত্রলীগ। এ বিষয়ে উপাচাযর্ ও প্রক্টরকে চিঠি দিয়েছি। এ বিষয়ে এখনো কোনো জবাব পাইনি। এই উপাচাযর্ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হওয়ার যোগ্য নয়। লজ্জা থাকলে কিছু করুক। এটাই আমার প্রতিবাদ।’

ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আহমেদ কামাল বলেন, ‘এখানে এসেছি বিবেকের তাড়নায়। স্বৈরাচার সরকারেও লজ্জা থাকে, এই সরকারের সেটিও নেই। আমরা নাগরিক নই, প্রজায় পরিণত হয়েছি। তা না হলে এত বড় বড় অন্যায়ের প্রতিবাদ করছি না কেন?’

ইতিহাস টেনে আহমেদ কামাল বলেন, কলা ভবনের সামনে একটি বটগাছ ছিল। এখান থেকে নানা প্রতিবাদ হতো বলে পাকিস্তান সরকার সেই গাছ কেটে ফেলেছিল। পরে ১৯৭২ সালে এডওয়াডর্ কেনেডি এখানে এই বটগাছ লাগান। এখন গণতন্ত্রের কেন্দ্রস্থল এই গাছ বড় হয়েছে কিন্তু গণতন্ত্র পোক্ত হচ্ছে না। হিটলার কমিউনিস্টদের বেকায়দায় ফেলতে নিজেই পালাের্মন্টে আগুন লাগিয়েছিল। এখানেও ভিসির বাসায় হামলায় সেটি করা হতে পারে। প্রশাসনকে বলব, শিক্ষাথীের্দর সঙ্গে কথা বলুন। প্রক্টরকে বলব, আপনি যে ছাত্রলীগের কমীর্ ছিলেন, সেটা ভুলে গিয়ে আপনার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করুন।

আন্তজাির্তক সম্পকর্ বিভাগের অধ্যাপক সি আর আবরার চৌধুরী বলেন, ‘কোটা আন্দোলন ন্যায়সংগত ও যৌক্তিক দাবি এটা প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। আমি রাজনীতি করি না। নিজের তাগিদ থেকে এসেছি। আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছি। আমরা সংখ্যায় কম হতে পারি কিন্তু আমাদের নৈতিক শক্তি অনেক। এই শিক্ষাথীের্দর সঙ্গে আমরা আছি।’

অথর্নীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ও শিক্ষকদের নিরাপত্তাহীনতার ঘটনা ঘটেছে, এটি দুঃখজনক। শিক্ষাথীের্দর ওপর হামলা শিক্ষকেরা রক্ষা করতে গেছেন, তারা লাঞ্ছিত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে ছায়া প্রশাসন দূর করার আহ্বান জানান তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু রাজনীতি ফিরিয়ে আনার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু রাজনীতি না পেলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বড় বড় নেতা পাব না।’ এ জন্য ডাকসুর নিবার্চন দেয়ার দাবি জানান তিনি।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও নিপীড়ন করা হচ্ছে। ছাত্রদের সমথর্ন দেয়ার কারণে শিক্ষকদের নানা অপবাদ দেয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে। তারা সুষ্ঠু পরিবেশে কাজ করতে পারছেন না। হুমকি-ধমকি দিয়ে তাদের বিরত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের বলা হচ্ছে, আমরা নাকি উসকানি দিচ্ছি- এটা অত্যন্ত মিথ্যা কথা। আমরা চাই শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসুক। আমরা সরে যাব না। যতক্ষণ সাধারণের ওপর নিপীড়ন চলবে, আমরা তাদের পাশে গিয়ে দঁাড়াব।’

সমাবেশ শেষ কমর্সূচি ঘোষণা করেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন। তিনি বলেন, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও শিক্ষাথীের্দর ওপর হামলাকারীদের বিচার করতে হবে, আক্রান্ত শিক্ষাথীের্দর মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তার শিক্ষাথীের্দর মুক্তি দিতে হবে, ভয় দেখানো ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে, আন্দোলনে অংশ নেয়া নারী শিক্ষাথীের্দর সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে, শিক্ষকদের সম্মানজনক শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে হবে, শিক্ষাঙ্গনে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদের কাযর্ক্রম চালু করতে হবে।

কমর্সূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, ২৩ জুলাই সোমবার দিনব্যাপী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের বটতলায় বেলা ১১টায় নিপীড়নবিরোধী সাংস্কৃতিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

সমাবেশে সঞ্চালনা করেন আন্তজাির্তক সম্পকর্ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান। সমাবেশের পাশাপাশি বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষাথীর্রা মানববন্ধনে অংশ নেন। মানববন্ধনের পর একটি মিছিল অপরাজেয় বাংলা থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে দিয়ে কলা ভবনে এসে শেষ হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<4324 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1