শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রক্তের জন্য হাহাকার ডেঙ্গু আক্রান্তদের

এসএম মামুন হোসেন
  ২১ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় রক্তের সংস্থান করতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বজনরা। সমস্যা উত্তোরণে রোগী ও তাদের স্বজনদের একক প্রচেষ্টাতেই এগোতে হচ্ছে। সরকারি বা বেসরকারি পর্যায় থেকে রক্তের জোগান মেটাতে কোনো ধরনের সহায়তা না পেয়ে অনেক ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ রক্ত শরীরে দিয়ে জীবন বাঁচাতে বাধ্য হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। এ অবস্থায় ডেঙ্গু সারলেও দীর্ঘ মেয়াদে রক্ত সংক্রান্ত জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের শরীরে রক্তের অনুচক্রিকা (রক্তের সাদা অংশ, যা পস্নাটিলেট নামে বেশি পরিচিত) অস্বাভাবিকভাবে হ্রাস পায়। মানুষের শরীরে রক্তের স্বাভাবিক অনুচক্রিকার হার দেড় লাখ থেকে সাড়ে চার লাখের মধ্যে থাকার কথা থাকলেও ডেঙ্গু আক্রান্তদের শরীরে তা অস্বাভাবিকভাবে কমে ১০ হাজারেরও নিচে নেমে যাচ্ছে, যা রোগীদের মৃতু্যর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ অবস্থায় রোগী ও তাদের স্বজনরা রক্তের পস্নাটিলেটের প্রয়োজনে ছুটে বেড়ালেও সমস্যা ভিন্ন জায়গায়। একব্যাগ রক্ত দিয়ে এক ব্যাগ পস্নাটিলেট তৈরি হয় না। এ ক্ষেত্রে কম করে হলেও চার ব্যাগ রক্ত দিয়ে একব্যাগ পস্নাটিলেট তৈরি হয়। আবার পস্নাটিলেট রক্তের এমন এক উপাদান যা মূল রক্ত থেকে আলাদা করার পর আধা ঘণ্টার বেশি সময় ভালো থাকে না। ভালো রাখতে গেলেও ভিন্ন কোনো ডাক্তারি পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। যা যথাযথ প্রক্রিয়ায় করতে ব্যর্থ হওয়ায় অনেকেই এ রক্ত শরীরে প্রবেশ করিয়ে দীর্ঘ মেয়াদি শারীরিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন। রাজধানীর প্রায় প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে গেলেই এখন চোখে পড়বে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। কিন্তু এসব হাসপাতালের বেশিরভাগেরই রক্তের পস্নাটিলেট করার ব্যবস্থা নেই। ফলে বাধ্য হয়ে রোগীদের রক্তদাতা নিয়ে পাশের যেসব হাসপাতালে পস্নাটিলেট করার সরঞ্জাম আছে সেখানে যেতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বেসরকারি রক্তদাতাদের সংগঠন ও তাদের অফিসে যোগাযোগ করে পস্নাটিলেট করাতে হচ্ছে। কিন্তু সেখান থেকে যে হাসপাতালে রোগী ভর্তি সে পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই রাস্তায় দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে। ফলে রক্তের অনুচক্রিকা যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষিতও হচ্ছে না এবং ওই রক্ত শরীরে প্রবেশ করিয়ে দীর্ঘমেয়াদি বিপদে পড়ছেন রোগীরা। রাজধানীর কাঁঠালবাগান এলাকার পদ্মা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় হাসপাতালটিতে মোট চারজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী আছেন। এদের একজন আবদুল কাইয়ুমের বড় ভাই আবদুল হালিম এ প্রতিবেদককে বলেন, 'এখানে ভর্তির পর পরীক্ষার রিপোর্ট থেকে জানতে পারি আমার ভাইয়ের পস্নাটিলেট নেমে মাত্র ১২ হাজারে চলে এসেছে। চোখ, মুখ, মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়ছে। এক ব্যাগ রক্তে পস্নাটিলেট হয় না। চার ব্যাগ লাগবে। কিন্তু এ হাসপাতালে পস্নাটিলেট বের করা যায় না। ফলে ডোনারদের নিয়ে মগবাজারের কোয়ান্টাম অফিসে যেতে হয়। সেখান থেকে তিন ঘণ্টা পর পস্নাটিলেট বের করে আমাদের হাতে দেয়। কিন্তু রাস্তার জ্যামের কারণে এটুকু পথ আসতে আমার আধা ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যায়। জানি না পস্নাটিলেট সঠিক ছিল কি-না। ভাইয়ের জীবন বাঁচাতে দীর্ঘমেয়াদি কোনো ক্ষতির মুখে পড়ব কি-না তাও জানি না।' এ ভুক্তভোগী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, 'এ ভোগান্তির মাঝে কোনো ধরনের সরকারি সহায়তা পাইনি। সিটি করপোরেশনের হটলাইনে বারবার যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাইনি। অথচ সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব অবহেলার কারণে আজ আমাদের এ অবস্থা।' রাজধানীর গ্রিনরোড এলাকার কয়েক ডজন হাসপাতাল এবং ক্লিনিকের প্রতিটিতে গিয়ে ডেঙ্গু রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। এসব হাসপাতালেও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে রক্তের তীব্র হাহাকার দেখা গেছে। কিন্তু তাদেরও বেশিরভাগই জানিয়েছেন, তারা এতসব নিয়ম-কানুন বোঝেন না। আবার যারা বোঝেন তারাও কোনো ধরনের সরকারি-বেসরকারি সহায়তা না পেয়ে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে রক্ত দিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন। রক্ত যথাযথ প্রক্রিয়ায় দেয়া না হলে কোনো ধরনের সমস্যা হতে পারে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আসাদুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, 'রক্তের প্রতিটি প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ বাধ্যতামূলক। বিশেষ করে রক্তের পস্নাটিলেট মূল রক্ত থেকে আলাদা করার আধা ঘণ্টার মধ্যেই শরীরে প্রবেশ করাতে হবে। তা না হলে এটি ভিন্ন সমস্যার কারণ হবে। আধা ঘণ্টার বেশি সময় পার হলে এটি জমে যেতে পারে এবং নতুন ধরনের কার্যকারিতা শুরু হতে পারে। এছাড়া আধা ঘণ্টার বেশি সময় পর দিতে হলেও তা সুনির্দিষ্ট ডাক্তারি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দিতে হবে। অন্যথায় এটি ক্ষতির কারণ হবে।' রক্ত সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞ এ ডাক্তার আরও বলেন, 'ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর শরীরে প্রচুর রক্তের প্রয়োজন হয়। অনেক সময় আমরা ডেঙ্গু থেকে মুক্ত হতে কোনোমতে পস্নাটিলেট তৈরি করে তা শরীরে প্রবেশ করিয়ে দিই। কিন্তু একটি রক্ত একজন মানুষের শরীরে প্রবেশের আগে অনেক ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাধ্যতামূলক। যেনতেনভাবে রক্ত শরীরে প্রবেশ করালে দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি থেকেই যাবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে