শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
আ'লীগের সহযোগী সংগঠন

কমিটিতে পদ পেতে তৎপর ব্যবসায়ী-ঠিকাদাররা

আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগে কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ শ্রমিক লীগ ও যুবলীগের সম্মেলন করতে তৎপরতা চালাচ্ছে দলটি
ফয়সাল খান
  ২০ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম চার সংগঠনের সম্মেলনকে ঘিরে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছেন ঠিকাদার ও ব্যবসায়ীরা। সম্মেলনকে ঘিরে ধানমন্ডিস্থ দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় ও গুলিস্তানে কেন্দ্রীয় কার্যালয়, নেতাদের বাসা-অফিসে তাদের আনাগোনা বেড়েছে। আসন্ন সম্মেলনে ত্যাগী নেতাকর্মীদের পাশ কাটিয়ে অর্থ বা লবিংয়ের মাধ্যমে জি কে শামীমের মতো সুবিধাবাদীরা দলে ভিড়লে আবারও ক্যাসিনোর মতো অপরাধ সম্রাজ্য তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করছেন নেতাকর্মীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগে সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন করতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে দলটি। স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব বাছাই করতে এরইমধ্যে অপকর্মে জড়িত নেতাদের ছেঁটে ফেলা হচ্ছে। বিশেষ করে জি কে শামীমের মতো সুবিধাবাদী ঠিকাদাররা যাতে সহযোগী সংগঠনের কোনো পদে না আসতে পারে সে ব্যাপারে দলীয় প্রধানের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। এ জন্য নেতৃত্ব বাছাইয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তবে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই বিভিন্ন ঠিকাদার ও ব্যবসায়ীরা নিজেদের অবস্থান জানান দিতে নানা কৌশল নিয়েছেন। তদবিরের পাশাপাশি অনুসারীদের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তৎপরতা চালাচ্ছেন তারা।

আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ের একটি সূত্র বলছে, সম্মেলন এলেই কিছু নেতা ও ব্যবসায়ী সক্রিয় হয়ে ওঠেন। এই শ্রেণি কখনোই দলের স্বার্থ দেখেন না। সারা বছর নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকেন। দলের দুর্দিনে তাদের কোনো খবর না থাকলেও সম্মেলনের আগ মুহূর্তে তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা বেড়ে যায়। যদিও বিগত সময়ে নিজেদের ব্যবসা আর টেন্ডারের বাইরে কোনো কাজে তাদের পাওয়া যায়নি।

তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, এবার কোনো মৌসুমি নেতাই সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্বে আসতে পারবে না। পরিচ্ছন্ন ক্লিন ইমেজ, দক্ষ সংগঠক, দলের জন্য নিবেদিত ও পরীক্ষিতদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেয়া হবে। ছাত্রলীগের ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকলে সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ পদে কাউকে বসানো হবে না বলে জানান তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতা যায়ায়দিনকে বলেন, অনেক নেতা আছেন যারা রাজনীতিতে সক্রিয় না অথচ বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। সারা বছর নিজস্ব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু কাউন্সিলকে ঘিরে তারা সক্রিয় হয়ে ওঠেছেন। এসব ব্যবসায়ী ও টাকাওয়ালাদের দাপটে দলের দুর্দিনের নেতাকর্মীরা ছিটকে পড়ছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়গুলো মনিটরিং করলে নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীরা বঞ্চিত হবেন না বলে মনে করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, মূল দল ও সহযোগী সংগঠনের তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত সংগঠনকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে। এর মধ্য দিয়ে দলের মধ্যে থেকে যারা অপকর্ম করেছে তাদের বের করে দেয়া হবে। বিতর্কিত কাউকেই দলের নেতৃত্বস্থানীয় কোনো পদে বসানো হবে না। ব্যবসায়ী-ঠিকাদারদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। ত্যাগী, দক্ষ ও ক্লিন ইমেজসম্পন্ন এবং ছাত্রলীগ করে আসা নেতাকর্মীদের মধ্য থেকেই শীর্ষ নেতৃত্ব বাছাই করা হবে। কোনো হাইব্রিড বা অনুপ্রবেশকারীর স্থান আওয়ামী লীগে হবে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোতাহার হোসেন মোলস্না যায়যায়দিনকে বলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নির্দেশনার আলোকে সম্মেলনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সম্মেলনের মাধ্যমে যাতে সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচন করা যায় সে লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। কৃষক লীগের মাধ্যমে যাতে কোনো সুবিধাবাদী দলে ঢুকতে না পারে, এ বিষয়ে সর্ব্বোচ সতর্ক থাকতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সব পর্যায়ের নেতাদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, যুবলীগ নিয়ে যে খারাপ বার্তা ছড়িয়েছে তা থেকে সংগঠনকে মুক্ত করাই আসন্ন কংগ্রেসের মূল চ্যালেঞ্জ। অতীত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সংগঠনকে নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে তদারকি করছেন। যাতে আগের মতো ভুল নেতৃত্ব যুবলীগে না আসতে পারে সেজন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আসন্ন দলের জাতীয় কাউন্সিলে পরিচ্ছন্ন ও ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিই দলে স্থান পাবেন। সহযোগী সংগঠনের ক্ষেত্রেও তাই হবে। কোনো বিতর্কিত, দুর্নীতিতে জড়িত, চাঁদাবাজদের স্থান দেয়া হবে না।

এরইমধ্যে মহিলা শ্রমিক লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগের সম্মেলনের সম্ভাব্য তারিখও ঘোষণা করা হয়েছে। তারিখ ঘোষণার পর থেকে নেতাকর্মীদের পদচারণায় ক্ষমতাসীন দলের কার্যালয়গুলো সরগরম হয়ে উঠেছে। ধানমন্ডিস্থ দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় ও গুলিস্তানের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দুপুরের পর থেকেই জড়ো হতে থাকেন নেতাকর্মীরা। তাদের পদচারণায় কার্যালয় ও নেতাদের অফিসগুলো প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত মুখরিত থাকে।

আগামী ২ নভেম্বর কৃষক লীগের, ৯ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগের, ১৬ নভেম্বর শ্রমিক লীগের এবং ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর-উত্তর ও দক্ষিণ সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ ও ১২ নভেম্বর। এরপর আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এসব সম্মেলনকে ঘিরে বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। পূর্ব প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তারা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি, গঠনতন্ত্র সংশোধন, পুস্তিকা প্রকাশনী, যাবতীয় কর্মকান্ডসহ দফায় দফায় মিটিং করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<71931 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1