শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এবার অ্যাপে ধান কিনবে সরকার

২০ নভেম্বর থেকে ধান, ১ ডিসেম্বর থেকে চাল সংগ্রহ কেজি ২৬ টাকায় ৬ লাখ টন আমন ধান কিনবে সরকার ৩৬ টাকা দরে সাড়ে তিন লাখ টন চাল কেনার সিদ্ধান্ত ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন, আবেদন শেষ ১৫ ডিসেম্বর
নতুনধারা
  ২১ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট

চলতি আমন মৌসুমে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনবে সরকার। আমনে 'কৃষকের অ্যাপ'-এর মাধ্যমে দেশের আট বিভাগের ১৬ উপজেলায় ধান সংগ্রহ করা হবে।

আমনে সফল হলে আগামী বোরোতে অ্যাপের মাধ্যমেই সারাদেশের কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা হবে, মিলারদের কাছ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে কেনা হবে চাল। এতে সরকারি ধান-চাল কেনায় অনিয়ম-দুর্নীতি অনেকটা কমে যাবে বলে জানিয়েছেন খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ডিজিটাল পদ্ধতিতে সরকারি গুদামে ধান সংগ্রহের জন্য 'কৃষকের অ্যাপ' তৈরি করা হয়েছে। মোবাইল ফোনে অ্যাপটি ডাউনলোড করে কৃষক খুব সহজেই জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও মোবাইল নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন।

ধানের নাম, জমির পরিমাণ, কী পরিমাণ ধান বিক্রি করতে চান- তা জানিয়ে ঘরে বসেই সরকারের কাছে ধান বিক্রির আবেদন করতে পারবেন কৃষক। এতে বারবার কৃষকের খাদ্য অফিসে যাওয়ার ঝামেলা নেই, অযথা হয়রানি নেই। নিবন্ধন, বিক্রয়ের আবেদন, বরাদ্দের আদেশ ও মূল্য পরিশোধের সনদ সম্পর্কিত তথ্য ঘরে বসেই এসএমএসের মাধ্যমে পাবেন কৃষক। বিক্রয়ের জন্য কোন তারিখে, কোন গুদামে যেতে হবে- সেটাও এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হবে। এতে সময়, খরচ ও হয়রানি কমবে বলে জানিয়েছেন খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা, আবেদনকারীর সংখ্যা ও ধানের পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। আবেদনকারী বেশি হলে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করা হবে।

গত ৩১ অক্টোবর খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে ছয় লাখ টন আমন ধান কিনবে সরকার। একই সঙ্গে ৩৬ টাকা দরে সাড়ে তিন লাখ টন চাল এবং ৩৫ টাকা কেজি দরে ৫০ হাজার টন আতপ চাল কেনা হবে।

২০ নভেম্বর থেকে ধান ও ১ ডিসেম্বর থেকে চাল সংগ্রহ শুরু হয়ে চলবে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত।

খাদ্য অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, আমনে 'কৃষকের অ্যাপ'-এর মাধ্যমে ধান বিক্রির জন্য আগামী ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন করতে পারবেন কৃষকরা। ধান বিক্রির আবেদনের শেষ তারিখ ১৫ ডিসেম্বর।

খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোসাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, 'আমরা চাচ্ছি কৃষক যেন তার ঘরে বসে ধান বিক্রির আবেদনটা করতে পারে। কৃষকের ঘরে তার আত্মীয়ের কাছেও যদি স্মার্টফোন না থাকে সেক্ষেত্রে যাতে বাজারে গিয়ে কিংবা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে গিয়ে সেটা করতে পারে, আমরা সেই ব্যবস্থা করছি। নিবন্ধন ও আবেদন এ অ্যাপের মাধ্যমেই করতে পারবে কৃষক।'

তিনি বলেন, 'সরকারের কাছে ধান বিক্রির আগে কৃষক অনেকের কাছে যেত, এখন তার কিছুই করতে হবে না। আবেদন করা কৃষকের মধ্যে লটারি হবে, লটারিতে তার নাম উঠলে সেটাও সে মেসেজের মাধ্যমে জেনে যাবে। কৃষককে শুধু গোডাউনে এসে ধান দিতে হবে। কোন গোডাউনে এবং কবে সে ধান দেবে- সে তথ্যও তার কাছে চলে যাবে মেসেজের মাধ্যমে।'

'কৃষককে তৃতীয় কোনো ব্যক্তির কাছে যেতে হবে না। সরকারের সঙ্গে সে সরাসরি লেনদেন করবে। কোনো অনিয়ম থাকবে না' বলেন নাজমানারা।

মহাপরিচালক আরও বলেন, 'কবে ধান দেবে, সেটা আগে জানার কারণে কৃষক ধান শুকিয়ে শর্তানুযায়ী প্রস্তুত রাখতে পারবে। তার টাকা ব্যাংকে চলে যাবে, সেখান থেকে সে তুলে নেবে।'

'আমরা আগামীতে চেষ্টা করব, টাকা যাতে কৃষককে মোবাইল ব্যাকিংয়ের মাধ্যমে দেয়া যায়। এক্ষেত্রে তাকে ব্যাংকেও যেতে হবে না, ঘরে বসেই টাকা পেয়ে যাবে। এ চিন্তাটা আমাদের মাথায় আছে।

'অ্যাপের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ টেকনিক্যালি আমনে যদি সফল হয়, তবে বোরোতে আমরা ব্যাপকভাবে এটা করতে চাই। সবকিছু ঠিক থাকলে বোরোতে আমরা সারাদেশে "কৃষকের অ্যাপ"-এর মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করব। এমনকি চালও আমরা অ্যাপের মাধ্যমে মিলারদের কাছ থেকে নিতে চাই। আগামী বোরোতে পরীক্ষামূলকভাবে চাল সংগ্রহ করা হবে।'

'ডিজিটাল খাদ্যশস্য সংগ্রহ ব্যবস্থাপনা ও কৃষকের অ্যাপ'-এর পাইলটিং কার্যক্রম আমন থেকে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। চলতি আমন মৌসুমে আট বিভাগের ১৬ উপজেলায় ডিজিটাল খাদ্যশস্য সংগ্রহ ব্যবস্থাপনা ও কৃষকের অ্যাপ-এর মাধ্যমে খাদ্যশস্য সংগ্রহ কার্যক্রম পাইলট আকারে বাস্তবায়নের জন্য মাঠপর্যায়ের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান আছে। এছাড়া মাঠপর্যায়ের প্রতিটি বস্নকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে বলে খাদ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান।

আমনে অ্যাপের মাধ্যমে সাভার, গাজীপুর সদর, ময়মনসিংহ সদর, জামালপুর সদর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, কুমিলস্না সদর দক্ষিণ, বরিশাল সদর, ভোলা সদর, নওগাঁ সদর, বগুড়া সদর, রংপুর সদর, দিনাজপুর সদর, ঝিনাইদহ সদর, যশোর সদর, হবিগঞ্জ সদর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হবে।

খাদ্য অধিদপ্তরের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ইউনিটের সিস্টেম এনালিস্ট মঞ্জুর আলম বলেন, 'বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল অ্যাপটি তৈরি করেছে। অ্যাপের মাধ্যমে কৃষকের রেজিস্ট্রেশন অ্যাপ্রম্নভড হলে সে ধান বিক্রির জন্য আবেদন করতে পারবে। আবেদন আমাদের ডেটাবেজে জমা হবে। পরে ইউএনওর নেতৃত্বে উপজেলা কমিটি আবেদনকারীদের মধ্যে লটারি করবে। জাস্ট একটা বাটনে ক্লিক করলেই এটা হয়ে যাবে। লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচিত হয়ে যাবে, তাদের অনলাইনেই বরাদ্দ দিয়ে দেয়া হবে। কৃষক এসব বিষয়ে এসএমএস পাবে।'

তিনি বলেন, 'এছাড়া একটা ওয়েটিং লিস্টও তৈরি করা হবে। নির্বাচিত কোনো কৃষক ধান না দিলে ওয়েটিং লিস্টে থাকা কৃষকের কাছ থেকে ধান নেয়া হবে।'

'অ্যাপটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, এটি সহজে যে কেউ পরিচালনা করতে পারবে' জানিয়ে মঞ্জুর আলম আরও বলেন, 'কৃষকের স্মার্টফোন না থাকলে তিনি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে গিয়েও সুবিধা নিতে পারবেন। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের আমরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। সেখানে গিয়ে সামান্য অর্থের বিনিময়ে কৃষক নিবন্ধন ও ধান বিক্রির জন্য আবেদন করতে পারবেন।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<76462 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1