বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাপুর ইউনিয়নের সলিয়াবাকপুর গ্রামের হাওলাদার বাড়িতে একই রাতে তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার ভোরে ওই বাড়ির কুয়েত প্রবাসী হাফেজ আ. রবের বাসা থেকে তার বৃদ্ধা মা মরিয়ম বেগম (৭৫), স্বরূপকাঠি থেকে বেড়াতে আসা ভগ্নিপতি সাবেক শিক্ষক সফিকুল আলম (৬৫) ও বাড়ির পুকুর থেকে খালাতো ভাই ইউসুফের (২২) হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করা হয়।
জানা গেছে, হত্যার রাতে ওই ঘরে সলিয়াবাপুর গ্রামের মৃত নাজির আহম্মেদ হাওলাদারের স্ত্রী মরিয়ম বেগম, তার কুয়েত প্রবাসী ছেলে হাফেজ আ. রবের স্ত্রী মিশরাত জাহান মিশু, দুই নাতনি, ভায়রার ছেলে ইউসুফ হোসেন, অপর ছেলে হারুনের মেয়ে চাখার সরকারি ফজলুল হক কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রী আছিয়া আক্তার ও বেড়াতে আসা মেয়ে জামাতা সফিকুল আলম অবস্থান করছিলেন। তাদের মধ্যে তিনজনকে ভোরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তবে ঘরের সবদিকের দরজা-জানালা বন্ধ ছিল।
এ বিষয়ে প্রবাসীর স্ত্রী মিশু জানান, তার কক্ষের স্টিলের আলমিরার ড্রয়ার থেকে বেশ কিছু স্বর্ণালঙ্কার ও তিনটি মোবাইল সেট নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওই তিনটি মোবাইল সেটের মধ্যে একটি তার ও অপর দু'টি হত্যাকান্ডের শিকার হওয়া শাশুড়ি ও ননদ জামাতার। স্বর্নালঙ্কার ও মোবাইল সেট নিয়ে গিয়ে হত্যাকান্ডের বিষয়টি ডাকাতি প্রমাণের চেষ্টা করা হতে পারে।
কলেজছাত্রী অছিয়া আক্তার জানান, রাতে বিল্ডিংয়ের সব দরজা বন্ধ করে ঘুমানো হলেও ভোরে মূল দরজা ও ছাদের চিলে কোঠার দরজা খোলা পাওয়া যায়। তার এ বক্তব্য থেকে ধারণা করা হচ্ছে শুক্রবার গভীর রাতে দরজা খুলে দিয়ে ঘাতকদের ভেতরে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া হতে পারে।
এদিকে এ ঘটনায় সন্দেহজনভাবে ওই বিল্ডিংয়ের নির্মাণশ্রমিক ঝালকাঠির নলছিটির জাকির হোসেনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। অপর একটি সূত্র থেকে জানা গেছে হত্যার শিকার হওয়া ভ্যানচালক ইউসুবের প্রায় ১ সপ্তাহ আগে একটি মোবাইল সেট হারিয়ে যায়। রাজমিস্ত্রি জাকির জ্বিন হাজির করে চুরি হওয়া মোবাইলের সন্ধান দিতে পারে বলে সম্প্রতি ওই বাড়িতে ধ্যানে বসে। ওই ধ্যানে বসেই সে প্রবাসী রবের স্ত্রী মিশুকে বলে আপনাকে কেউ জাদুটোনা করেছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে ফিকির নিতে হবে তাতে ছয় হাজার টাকা খরচ হবে বলেও জানানো হয়। কিভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে জানতে চাইলে জাকির জানায়, রাতে ঘরের দরজা খোলা রাখতে হবে।
কলেজছাত্রী আছিয়া আরও জানায়, শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাতের খাবার (রুটি ও ডিম) খেয়ে একতলা বসত বাড়ির নিজ নিজ কক্ষে তারা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ফজরের আজানের শব্দ শুনে সে নামাজ পড়ার জন্য ঘুম থেকে জেগে উঠে তার পাশে ঘুমানো দাদি মরিয়ম বেগমকে দেখতে না পেয়ে খুঁজতে গিয়ে সামনের পূর্ব পাশের বেলকনিতে অচেতন অবস্থায় পরে থাকতে দেখে। এ সময় তার চিৎকার শুনে পাশের কক্ষে থাকা মরিয়ম বেগমের পুত্রবধূ মিশু আসেন, তারা দু'জন মিলে মরিয়ম বেগমের নিথর দেহ বেলকনি থেকে তার শয়নকক্ষের খাটের ওপর তোলেন। আছিয়া আক্তার আরও জানান, দাদির বিষয়টি ফুফা সফিকুল আলমকে জানাতে তার কক্ষে গেলে দেখতে পান তিনিও তার কক্ষে খাটের ওপর মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন। এরপর বাড়ির অন্যদের ডাকা হলে তারা খোঁজাখুঁজি করে বাড়ির পুকুর থেকে ইউসুফের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে।
খবর পেয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম, বরিশালের অতিরিক্ত ডিআইজি এহেসানউলস্নাহ্, বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বিপিপিএম (বার), পুলিশ সুপারের পদোন্নতি পাওয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আ. রকিব, বানারীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শিশির কুমার পাল ও ইন্সপেক্টর (তদন্ত) জাফর আহম্মেদ ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে বরিশাল থেকের্ যাব, পিবিআই ও সিআইডির কর্মকর্তারা গিয়ে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বিপিএম (বার) জানান, তিনটি লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তিনজনের মৃতদেহের নাক ও কান থেকে রক্তক্ষরণ হওয়ায় তাদের বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ কিংবা আঘাত করে হত্যা করা হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া মৃতু্য রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশসহর্ যাব, পিবিআই ও সিআইডি সম্মিলিতভাবে কাজ করছে।
বানারীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শিশির কুমার পাল জানান, এ ব্যাপারে থানায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি ও মৃতু্য রহস্য উদঘাটনে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহগুলো বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।