শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
পরোক্ষ স্বাধীনতাবিরোধী কারা?

জামায়াত প্রশ্নে বিপাকে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য

বিএনপি বলছে, ‘পরোক্ষ’ স্বাধীনতাবিরোধী বলতে কী বোঝানো হচ্ছে, সেটা বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার ঘোষণায় স্পষ্ট করা হয়নি
যাযাদি রিপোটর্
  ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

নিবার্চন কমিশনে নিবন্ধন না থাকা জামায়াতে ইসলামী প্রশ্নে বিপাকে ‘বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া’। গত শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে যুক্তফ্রন্টের সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহŸায়ক ড. কামাল হোসেনের যৌথ ঘোষণার একটি অংশের কারণে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ কোথায় গিয়ে দঁাড়াবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়েছে।

যৌথ ঘোষণার ওই অংশ কেবল বিএনপিকে ঐক্য প্রক্রিয়ার বাইরে রাখার জন্য রাখা হয়েছে কি না, এমন সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিএনপির কয়েকজন নেতা। তা ছাড়া ‘পরোক্ষ’ স্বাধীনতাবিরোধী দল বা ব্যক্তি কী, তা নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন ওই নেতারা।

বি. চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনের ঘোষণায় এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিরা ছাড়া এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল, সামাজিক শক্তি ও নাগরিক সমাজ এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় আসতে পারবে।’ বিএনপি বলছে, ‘পরোক্ষ’ স্বাধীনতাবিরোধী বলতে কী বোঝানো হচ্ছে, সেটা ঘোষণায় স্পষ্ট করা হয়নি।

বিকল্পধারার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বি. চৌধুরীর ছেলে মাহী বি. চৌধুরী বলেছেন, প্রত্যক্ষ স্বাধীনতাবিরোধী দল কারা, সেটা স্পষ্ট। কিন্তু কোনো দল যদি স্বাধীনতাবিরোধী ব্যক্তিদের নিবার্চনে মনোনয়ন দেয়, সেই দলের সঙ্গেও ঐক্য হবে না। তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী ‘দল’ বা ‘ব্যক্তিদের’ পুরোপুরি বজর্ন করতে হবে।

বিএনপির দুজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, তাদের দলের মহাসচিবই বলেছেন, ছাড় দিয়ে হলেও জাতীয় ঐক্য গড়তে চান তারা। এজন্য ২০-দলীয় জোটকে আলাদা রেখে কেবল বিএনপি ঐক্য প্রক্রিয়ায় আসতে চেয়েছে। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি না থাকা সত্তে¡ও বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের সঙ্গে মিলে যুগপৎ কমর্সূচি পালনেরও পক্ষে ছিল বিএনপি। কিন্তু বি. চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনের ঘোষণার পর মনে হচ্ছে, ‘কেউ’ বা ‘কোনো জায়গা’ থেকে ঐক্য প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। ওই দুই নেতা বলেন, আজকালের মধ্যে দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। বি. চৌধুরী ও ড. কামালের সঙ্গে আলোচনা করে পরবতীর্ পদক্ষেপ নেয়া। তবে যা করা হবে, তা দ্রæতই করা হবে এবং বিএনপি বৃহত্তর ঐক্য গড়ার ব্যাপারে খুবই আশাবাদী।

অবশ্য বিএনপির এক নেতা বলেছেন, ঐক্য প্রক্রিয়ার ঘোষণায় এই অংশে বিএনপিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে কি না, তা বোঝার চেষ্টা করছেন।

গণফোরামের কাযর্করী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী ও নাগরিক ঐক্যের আহŸায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলছেন, তারা সুষ্ঠু নিবার্চন অনুষ্ঠানের জন্য পঁাচ দফা দাবি জানিয়েছেন। এই দাবিতে ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সমাবেশ করা হবে। তাদের কমর্সূচি হবে

শান্তিপূণর্ ও অহিংস। তারা বলেন, পাশাপাশি ঐক্যের উদ্দেশ্য তো রাজনীতিতে গুণগত পরিবতর্ন আনা। সবাই তো বলছে, স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে জোট নয়। এখানেও সেটিই বলা হয়েছে। যারা জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় আসতে চাইবে, তারা তা মেনে নিয়েই আসবে।

যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের নেতারা বলছেন, রাজনীতিতে কারা স্বাধীনতাবিরোধী দল বা ব্যক্তি, তা সবাই জানেন। বিএনপি তো স্বাধীনতাবিরোধী দল নয়। কেননা, দলটির জন্ম স্বাধীনতার অনেক পরে। এর প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন। ফলে, ঐক্য প্রক্রিয়ায় ঘোষণার বক্তব্য বিএনপিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই।

নিবার্চন কমিশনে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের পর রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেকেই মনে করছেন, এই দলের নেতারা বিএনপি থেকে প্রাথীর্ হবেন বা বিএনপির সঙ্গে দলটির আসন ভাগাভাগি হবে। কিন্তু তেমন সম্ভাবনা থাকলে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় বিএনপির থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

মাহী বি. চৌধুরী গত শনিবার রাতে এক বেসরকারি টেলিভিশনে বলেন, ঘোষণাপত্রে স্বাধীনতাবিরোধীদের ব্যাপারে এবং তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকাদের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে স্বাধীনতাবিরোধী দল ও ব্যক্তিরা এই জোটে বা ঐক্যে আসতে পারবেন না। একটি দল স্বাধীনতাবিরোধী নাও হতে পারে, কিন্তু তারা স্বাধীনতাবিরোধীদের মনোনয়ন দিচ্ছে, সেখানে দলটি ‘পরোক্ষ’ভাবে স্বাধীনতাবিরোধীদের পক্ষ নিচ্ছে, তারা ঐক্য প্রক্রিয়ায় থাকবে না। তিনি বলেন, বিএনপিতে থাকার সময় জামায়াতের সঙ্গে তাদের দলের জোট হয়েছিল। এর দায় তার ও তার বাবারও (বি. চৌধুরী) রয়েছে।

১৯৯৯ সালে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোট হয়। ওই সময় মাহী বি. চৌধুরী বিএনপিতেই ছিলেন। জোটবদ্ধ নিবার্চন করেই সে সময়, অথার্ৎ ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসে বিএনপি। আর তখন রাষ্ট্রপতি হন বি. চৌধুরী। ছেলে মাহী বাবার আসন থেকে সাংসদ নিবাির্চত হন। ২০০৪ সালে বি. চৌধুরীকে ‘অসম্মানজনক’ভাবে রাষ্ট্রপতির পদ ও ছেলে মাহীকে বিএনপি থেকে বিদায় নিতে হয়।

জানতে চাইলে মাহী বি. চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বলছি, বতর্মান নিবার্চন-প্রক্রিয়াটা ঠিক নেই। একাদশ সংসদ নিবার্চন যে অবস্থায় হবে, তাতে সুষ্ঠু নিবার্চন হওয়া সম্ভব না। এজন্য নিরপেক্ষ সরকার চাইছি, সংসদ ভেঙে দিতে বলছি, নিবার্চন কমিশন পুনগর্ঠন চাইছি, নিবার্চনে আগে-পরে ৪০ দিন বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েনের কথা বলছি। এগুলোর সঙ্গে যদি সবাই একমত হতে পারেন, তাহলে স্বাধীনতাবিরোধীদের বজর্ন করার ব্যাপারে একমত হওয়াতে তো কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়।’ তিনি আরও বলেন, কেবল নিবার্চনের জন্য দাবি নিয়ে রাজপথে থাকা ঐক্য প্রক্রিয়ায় একমাত্র লক্ষ্য নয়, তারা রাজনীতিতে গুণগত পরিবতের্নর কথা বলছে। ভবিষ্যৎ সরকার গঠন, দেশ পরিচালনা কীভাবে হবে, কোন বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে, সেটাও বলছে। তাদের ঘোষণার উদ্দেশ্য কেবল নিবার্চন হওয়া পযর্ন্ত নয়।

বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করার শুরুতেই বিকল্পধারা দলটির কাছে দেড় শ আসন চেয়ে বসে, যা ওই সময় জোট গঠনে বিএনপিকে পিছু হটতে বাধ্য করে। বিকল্পধারা ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে এই প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানান দলটির সভাপতি বি. চৌধুরী। জোট গঠন পিছিয়ে গেলেও সরকারের বাইরে থাকা দলগুলোকে নিয়ে একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়তে বিএনপির পক্ষে চেষ্টা চালিয়ে যান গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠান ডা. জাফরুল্লাহ।

জাফরুল্লাহ বলেন, যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের মধ্যে একটি ঐক্য হয়েছে। বিএনপিও চায় এদের সঙ্গে মিলে একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়তে। সে লক্ষ্যেই কাজ চলছে। জোট গঠন জটিল প্রক্রিয়া হলেও তিনি আশাবাদীÑ কিছু একটা হবে।

অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ বলেন, কয়েক দফার ভিত্তিতে তারা বৃহত্তর ঐক্য চান। তাদের নিজস্ব দাবিও রয়েছে। বিএনপি জোট গঠনের ব্যাপারে কাজ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের কোনো শতর্ নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<13100 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1