শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দিনাজপুরে মিলল ‘প্রাণীখেকো’ উদ্ভিদ

যাযাদি ডেস্ক
  ২০ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
দিনাজপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে ‘সূযির্শশির’ উদ্ভিদ Ñযাযাদি

দিনাজপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসের উন্মুক্ত জমিতে ‘প্রাণীখেকো’ উদ্ভিদের সন্ধান পেয়েছে কলেজটির উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ। নিজ ক্যাম্পাসে এমন উদ্ভিদের সন্ধান পেয়ে আনন্দিত ও গবির্ত সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষাথীর্রা। শিক্ষাথীর্রা জানান, পাঠ্যপুস্তকে এমন উদ্ভিদ সম্পকের্ পড়লেও বাস্তবে এমন উদ্ভিদের সন্ধান পেয়ে হাতে-কলমে শেখার বিষয়ে আগ্রহী তারা।

গত ১৫ জানুয়ারি দিনাজপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসের উত্তরদিকে পরিত্যক্ত ভ‚মিতে এই উদ্ভিদগুলো শনাক্ত করেন সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন। তিনি জানান, “এক বীজপত্রী মাংসাশী উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক নাম উৎড়ংবৎধ জড়ঃঁহফরভড়ষরধ যাকে বাংলায় বলা হয় ‘সূযির্শশির’। উদ্ভিদটি পতঙ্গকে অথার্ৎ প্রাণীকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। মাংসাশী উদ্ভিদের মধ্যে এই প্রজাতি সবচেয়ে বড়। ৪-৫ সেন্টিমিটার ব্যাসবিশিষ্ট গোলাকার থ্যালাস সাদৃশ্য উদ্ভিদটির মধ্য থেকে একটি লাল বণের্র ২-৩ ইঞ্চি লম্বা পুষ্পমঞ্জুরি হয়। ১৫-২০টি তিন থেকে চার স্তরের পাতা সাদৃশ্য মাংসল দেহের চারদিকে পিন আকৃতির কঁাটা থাকে। মাংসল দেহের মধ্যভাগ অনেকটা চামচের মতো ঢালু এবং পাতাগুলোতে মিউসিলেজ সাবস্টেন্স নামক একপ্রকার এনজাইম (আঠা) নিঃসৃত হয়। সুগন্ধ আর উজ্জ্বলতায় আকৃষ্ট হয়ে পোকা বা পতঙ্গ উদ্ভিদটিতে পড়লে এনজাইমের আঠার মাঝে আটকে যায় এবং পতঙ্গ নড়াচড়া করলে মাংসল পাতার চারদিকে পিনগুলো বেঁকে পোকার শরীরে ফুঁড়ে গিয়ে পোকাকে ধরে ফেলে। এভাবেই এই উদ্ভিদটি পোকা বা পতঙ্গকে খেয়ে ফেলে।”

মাংসাশী বা পতঙ্গখেকো এই উদ্ভিদের ইংরেজি নাম ঝঁহফবংি. এটি ঈধৎুড়ঢ়যুষষধষবং বগর্ এবং উৎড়ংবৎধপবধব গোত্রের অন্তভুর্ক্ত। কলসপত্রী ও পাতাঝাঝি নামে আরও দুটি এর সদস্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন।

দিনাজপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের এমএসসি শেষ পবের্র ছাত্র মোসাদ্দেক হোসেন জানান, ‘২০১৬ সালে ঢাকার আগারগঁাওয়ে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে জীববিজ্ঞান গ্যালারিতে এই সূযির্শশির উদ্ভিটটি সম্পকের্ জানতে পারি। এটি শুধু দিনাজপুর ও রংপুর অঞ্চলেই জন্মায়। এরপর বিভিন্ন স্থানে এই উদ্ভিদটি খেঁাজার চেষ্টা করি। সবের্শষ গত ১৫ জানুয়ারি দিনাজপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকদের সহযোগিতায় নিজ কলেজ ক্যাম্পাসেই এই উদ্ভিদটির সন্ধান পাই।’

তিনি বলেন, ‘রূপকথার গল্পে মানুষখেকো গাছ বা প্রাণিখেকো উদ্ভিদের কথা শুনেছি। কিন্তু নিজ ক্যাম্পাসেই বাস্তবে একটি উদ্ভিদের পোকা খাওয়ার দৃশ্য দেখতে পাচ্ছি। উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষাথীর্ হিসেবে এটি নিয়ে কাজ করার এবং হাতে কলমে শিক্ষালাভের একটি বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হলো এই উদ্ভিদটি পেয়ে।’

একই কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের চতুথর্ বষের্র ছাত্রী হাফিজা ইসলাম হ্যাপী জানান, ‘আমরা খুবই গবির্ত যে আমাদের

ক্যাম্পাসে এ রকম একটি পতঙ্গখেকো উদ্ভিদ আমরা পেয়েছি। পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি নিজ ক্যাম্পাসেই পতঙ্গখেকো উদ্ভিদ নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়ে নিজেদের ধন্য মনে করছি।’

দিনাজপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বষের্র ছাত্র মো. ফিরোজ জানায়, ‘প্রাণিখেকো এই ধরনের বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে নিজেকে বেশ ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।’ সে জানায়, পুঁথিগত বিদ্যার পাশাপাশি হাতে-কলমে এই উদ্ভিদ নিয়ে শিক্ষাজর্ন করতে পারবে তারা। যা উদ্ভিদ ও প্রাণী বৈচিত্র নিয়ে শিক্ষালাভে সবার জন্য সহায়ক হবে।

পিএইচডি গবেষণায় নিয়োজিত দিনাজপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বাবুল হোসেন জানান, ‘মাংসাশী বা পতঙ্গখেকো এই উদ্ভিদটি সংরক্ষণের জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। এজন্য সরকার ও বিজ্ঞান সম্পকির্ত গবেষণা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসার আহŸান জানাই। এর আগে বাংলাদেশে এই উদ্ভিদের গবেষণা করা হয়নি। এটি রক্ষা করা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়েছে। কীভাবে কপি ও সংরক্ষণ করা যায় এটি ভাবা হচ্ছে এবং টিস্যু নিয়ে কাজ করা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই উদ্ভিদটি প্রোটিন হিসেবে পোকামাকড় খায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখন পযর্ন্ত বাংলাদেশের কোথাও এই উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<33007 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1