শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্যোগ মোকাবিলায়ও বাংলাদেশ রোল মডেল : প্রধানমন্ত্রী

বিডি নিউজ
  ১৪ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবসের অনুষ্ঠান উদ্বোধন শেষে আয়োজিত প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন। পাশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান -পিবিএ

প্রাকৃতিক ও মানুষের সৃষ্টি-যেকোনো ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সবসময় প্রস্তুত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, 'আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরাও নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করবে সেটাই আমি আশা করি।'

রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, 'বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প ও অগ্নিনির্বাপণের মতো দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি যাতে হ্রাস পায় সে জন্য যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার ইতোমধ্যে তা নেওয়া হয়েছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।'

'এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। অনেকে আমাদের কাছ থেকে জানতে চায়।'

'বাংলাদেশে গেস্নাবাল অ্যাডাপটেশন অফিস স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে উলেস্নখ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'বিশ্বে এখন আমরা শুধু উন্নয়নের রোল মডেল না, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলাতে বিশ্বে বাংলাদেশ রোল মডেল, সে সম্মান পেয়েছি।'

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় নিজস্ব অর্থায়নে তহবিল গঠন করা এবং বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, 'প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ আমরা। আমাদের ভৌগোলিক অবস্থানটাই এরকম। আর দুর্যোগের সঙ্গেই আমাদের বসবাস করতে হবে।'

'কিন্তু সেই বসবাসের ক্ষেত্রে আমাদের জীবন-জীবিকা যেন চলতে পারে, মানুষ যেন না খেয়ে কষ্ট না পায়, মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।'

সেদিকে লক্ষ্য রেখেই বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদনে গবেষণা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

'আমরা গবেষণা শুরু করেছিলাম। যে গবেষণার মাধ্যমে লবণাক্ত, খরাসহিষ্ণু ধান উৎপাদন করেছি। জলমগ্নতা সহিষ্ণু ধান উদ্ভাবন করেছি এবং সেটাকে কিভাবে আরও সহিষ্ণু করা যায় সে বিষয়ে গবেষণা চলছে।'

শেখ হাসিনা জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘূর্ণিঝড় থেকে জনগণের জানমাল রক্ষায় ১৭২টি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করেন। স্থানীয় লোকজন এর নাম দিয়েছিলেন মুজিব কেলস্না।

'তারই আলোকে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। বর্তমানে প্রায় ৫৬ হাজার প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে আমাদের। তাছাড়া ৩২ হাজার নগর স্বেচ্ছাসেবক, ২৪ লাখ আনসার ভিডিপি, ১৭ লাখ স্কাউটস, ৪ লাখ বিএনসিসি, গার্লস গাইডের প্রায় ৪ লাখ সদস্য- তারাও এক্ষেত্রে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। যেকোনো দুর্যোগের সময় তারা সকলে সেখানে উপস্থিত হয় এবং কাজ করে।' ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি এবং তখনকার সরকারের উদাসীনতার কথা উলেস্নখ করে সমালোচনাও করেন তিনি।

'একটা সরকার যদি সচেতন না থাকে, সজাগ না থাকে তাহলে কত বড় ক্ষতি হতে পারে সেটা একানব্বই সালের ঘূর্ণিঝড়ে আমরা দেখেছি।'

'আমাদের সরকার ইতোমধ্যে ৩৭৮টি মুজিব কেলস্না নির্মাণ করেছে। আর উপকূলে ৩৮৬৮টি বহুমুখী সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হয়েছে এবং আরও ১৬৫০টি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা সব সময় যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলে পূর্বাভাস দেওয়া, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সেই লোকগুলোকে সাইক্লোন শেল্টারে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করি। দুর্যোগকালীন করণীয় বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণ ও সচেতন করা হয়। এর ফলে এখন ঘূর্ণিঝড়ে মৃতের সংখ্যা একেবারে নাই।'

অনুষ্ঠানে নবনির্মিত ১০০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং ১১৬০৪টি দুর্যোগসহনীয় বাড়ি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান ও মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব শাহ কামাল অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতির জন্য সেরা ৮২ জন স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে তিনজনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন শেখ হাসিনা।

১৯৯৭ সালে দুর্যোগবিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলি প্রণয়ন এবং ২০১০ সালে তা হালনাগাদ করা, ২০১২ সালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন প্রণয়ন, ২০১৫ সালে ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার (এনইওসি) প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরেন তিনি।

এ ছাড়া দলের পক্ষ থেকেও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন ও দুর্যোগ মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন শেখ হাসিনা।

এ ছাড়া হেলিকপ্টারে করে পাহাড় ও দ্বীপ অঞ্চলে 'ব্যাপক হারে' বীজ ছড়িয়ে বনাঞ্চল সৃষ্টির কথাও উলেস্নখ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রাকৃতিক দুর্যোগে খাদ্য সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তুলে ধরেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, 'আপৎকালীন সময়ে গৃহস্থালিতে খাদ্য সংরক্ষণের জন্য হাউজহোল্ড সাইলো সরবরাহ করে যাচ্ছি। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত আমরা ৩ লাখ ২৮ হাজার পরিবারে সাইলো বিতরণ করেছি। মোট আমরা ৫ লাখ পরিবারকে এই সাইলো দেব।'

'এ ছাড়া বিভিন্ন জেলায় আমরা ৫ লাখ মেট্রিক টন ক্ষমতাসম্পন্ন ৮টি সাইলো কমপেস্নক্স নির্মাণ করছি। দুই বছর যাতে খাদ্য সংরক্ষণ করা যায় সে ধরনের খাদ্যগুদামও আমরা নির্মাণ করে যাচ্ছি।'

বাংলাদেশ নামের বদ্বীপকে টিকিয়ে রাখা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যাতে এটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ডেল্টা পস্ন্যান-২১০০ প্রণয়নের কথাও উলেস্নখ করেন তিনি।

'সদূরপ্রসারী, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছি। আগামী প্রজন্মের জীবন যেন সুন্দর হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের এ পরিকল্পনা।'

'নদীভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উলেস্নখ করে তিনি বলেন, দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোতে আমরা মানুষকে দুর্যোগসহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ করে দিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য আছে বাংলাদেশে একটা গৃহহারা মানুষও থাকবে না।'

বাংলাদেশ যে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে সেখান থেকেও দুর্যোগকালীন সময়ে সুবিধা নেওয়ার কথা বলেন শেখ হাসিনা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<71079 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1