শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ক্রেতাশূন্য নিউমাকের্ট

লোভনীয় অফারেও ক্রেতা নেই মিরপুরের শপিং মলে

যাযাদি রিপোটর্
  ১৯ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০
ঈদুল আজহা উপলক্ষে বেচাকেনা নেই রাজধানীর মিরপুরের ফ্যাশন হাউসগুলোতে। ক্রেতা না থাকায় দোকানে পণ্য সাজিয়ে অপেক্ষা করছেন ব্যবসায়ীরা Ñযাযাদি

আর মাত্র তিনদিন পরেই মুসলমানদের অন্যতম ধমীর্য় উৎসব ঈদুল আজহা। অথচ এখনো রাজধানীর মিরপুরের ফ্যাশন হাউসে কেনাকাটা জমে ওঠেনি। শপিংমলের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে রাস্তার পাশে ফুটপাতের দোকানিরা বেচাকেনা নিয়ে বেশ হতাশ বলে জানিয়েছেন। তবে সারাদিন ক্রেতার আগমন কম হলেও সন্ধ্যার থেকে রাত পযর্ন্ত কিছুটা ভিড় হলেও শুধু শিশু ও নারীদের ড্রেস বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

শনিবার মিরপুরে বুটিক পল্লীসহ বিভিন্ন শপিং কমপ্লেক্সগুলো ঘুরে এমন চিত্র লক্ষ করা গেছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, ঈদ কালেকশনে দোকান সাজিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। এর ওপর দেয়া হচ্ছে ২০ থেকে ৮০ শতাংশ মূল্য ছাড়ের নানা লোভনীয় অফার। শিশু ও নারীদের ড্রেস কিছুটা হলেও ছেলেদের ড্রেস বিক্রি খুবই কম। মিরপুরে ঈদ মাকের্ট এখনো জমে ওঠেনি। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মূলত কোরবানি পশু কেনাকাটা

নিয়ে সকলে ব্যস্ত থাকায় ড্রেস কেনার প্রতি আগ্রহ কম। এছাড়া ব্র্যান্ডের দোকানগুলোর জেলা পযাের্য় শাখা থাকায় অনেকে বাড়ি গিয়ে নিজ জেলা থেকে কেনাকাটা করছেন। অনেকে আবার বিদেশ গিয়ে কেনাকাটা করছেন। ফলে এটাও ঈদ বাজার জমে না ওঠার অন্যতম কারণ।

জানা গেছে, ঈদের কেনাকাটা সারতে মিরপুরবাসী এখন আর দূরে যান না। কারণ নামকরা সব বুটিক হাউসের শাখা এখন মিরপুরে রয়েছে। বুটিক হাউসের পাশাপাশি মিরপুরে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি শপিং কমপ্লেক্স। আর তরুণ প্রজন্মের জন্য লাইফস্টাইল স্টোরের মধ্যে আছে আড়ং, আম্বার, এক্সটাসি, লা রিভ, টেক্সমাটর্ ও স্মাটেক্সের শোরুম।

বিক্রেতারা জানান, গত এক সপ্তাহ থেকে বিক্রি শুরু হলেও ঈদের বাজার জমেনি। তবে গরমে দিনে ক্রেতাদের সমাগম কম হলেও সন্ধ্যার পর থেকে কিছুটা ভিড় হচ্ছে। শিশু ও নারীদের ড্রেস বিক্রি হচ্ছে বেশি। সীমিত হারে বিক্রি হচ্ছে ছেলেদের পাঞ্জাবি। তবে কোনো দোকানে আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন দোকানিরা।

খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে, মিরপুরে প্রায় শতাধিক বুটিক হাউসে সকাল থেকে রাত পযর্ন্ত ক্রেতারা আসছেন। কেউ কেউ কাপড় দেখে চলে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ নিজেদের পছন্দমতো পোশাক ক্রয় করছেন। এছাড়া ফুটপাতে বসা অস্থায়ী দোকান থেকেও বাছাই করে কেনাকাটা সারছেন অনেকেই।

মিরপুরের বুটিকপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, অরিজিনাল ১০ নম্বর থেকে শুরু করে গোল চক্কর হয়ে মিরপুর ১ নম্বর পযর্ন্ত একশোর বেশি বুটিক ও ফ্যাশন হাউস নতুন পোশাকে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। দেশি পোশাকের জন্য ‘নায়রী’তে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। এখানে বøক, স্ক্রিন প্রিন্ট, অ্যামব্রয়ডারি কাজের শাড়ি ও সালোয়ার-কামিজ পাওয়া যাচ্ছে। আরও আছে পাঞ্জাবি ও কিডস আইটেম।

এছাড়া দেশি ফ্যাশন হাউসের মধ্যে মিরপুর-২ নম্বরে ‘কে-ক্রাফট’, ‘সারা’ ‘ভেরিয়েন্ট টাচর্’ ‘মি অ্যান্ড মম’ ‘আঙিনা’ ‘রিচ ম্যান’ ‘নবরূপা’ ‘বাংলার মেলা’ পালকি, কিংসুক প্রথমা, টি-২, নকশিসহ বেশ কিছু দোকানই ছিল ক্রেতাশূন্য। বিশেষ করে ক্রেতারা এসব জায়গায় শাড়ি, সুতির সালোয়ার-কামিজ, বেবি ড্রেস, পাঞ্জাবি ও ঘর সাজানোর সামগ্রী কিনছেন। ঈদ সামনে রেখে এসব দোকানে ১০ থেকে ৮০ শতাংশ পযর্ন্ত ছাড় দেয়া হচ্ছে।

রেডিয়েন্ট টাচর্ নামে একটি দোকানের বিক্রয় প্রতিনিধি মো. আনোয়ার বলেন, ‘এবার ঈদে দেশি-বিদেশি নতুন কালেকশন থাকলেও তেমন বিক্রি হচ্ছে না। বিকেলে কিছুটা বিক্রি হলেও গত কোরবানির ঈদের চাইতে বিক্রি কম। যারা কিনছেন তাদের অধিকাংশই সুতির ড্রেসের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন।’ ক্রেতাদের পছন্দে তারা সুতির নানা ধরনের ড্রেস কালেকশন করেছেন বলে তিনি জানান।

সনি সিনেমা হলের বিপরীতে রেড ক্রিসেন্ট সিটিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি ফ্যাশন হাউস। এর মধ্যে অন্যতম আড়ং। রুচিশীল ক্রেতাদের কাছে বরাবরই ঈদের কেনাকাটায় আড়ং পছন্দের শীষের্।

আড়ংয়ের কমীর্রা জানান, ঈদের পোশাক বিক্রি শুরু হয়েছে। পল্লবী থেকে আড়ংয়ে আসা ক্রেতা ইমন হাসান জানান, আগে আড়ংয়ের পোশাক কিনতে আসাদ গেটে যেতে হতো। এখন মিরপুরে হওয়ায় তারা এখানেই আসেন। তিনি বাচ্চাদের জন্য ড্রেস কিনতে এসেছেন।

তরুণ-তরুণীর কাছে ফ্যাশন হাউস ‘লা রিভ’-এর পোশাকও বেশ পছন্দের। পাশ্চাত্য ঘরানার পোশাক নিতে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষাথীের্দরকে লা রিভে ভিড় করতে দেখা গেছে।

তবে এবারের ঈদে দেশি পোশাকের চাইতে বিদেশি পোশাকের চাহিদা বেশি। তার মধ্যে ভারতীয়, পাকিস্তানি, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে রেডিমেট পোশাক কালেকশন করেছেন বিক্রেতারা। এছাড়া মিরপুরে বড় ব্র্যান্ডের দোকান চলে আসায় বুটিকের দোকানে বিক্রি কমে গেছে বলে অভিযোগ অধিকাংশ ছোট দোকানির।

ক্রেতাশূন্য নিউমাকের্ট

এছাড়া ক্রেতাশূন্যতায় অলস সময় পার করছেন ঢাকার নিউমাকেের্টর বিক্রেতারা। যে যৎসামান্য বিকিকিনি হচ্ছে, তাতে বিক্রেতারা এক প্রকার ঈদের বেচাকেনা হিসেবে ধরছেন না বললেই চলে।

শনিবার সকাল থেকে দুপুর অবধি ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য দিনের মতোই নিউমাকেের্ট ক্রেতাদের সমাগম ছিল কম। তবে যেসব ক্রেতা এসেছেন, তাদের অধিকাংশই অল্পকিছু হলেও কেনাকাটা করে ঘরে ফিরেছেন।

নিউমাকেের্টর ১ নম্বর গেট, ২ নম্বর গেট, চঁাদনী চক মাকের্ট এদিন অনেকটাই ফঁাকা ছিল। তবে দুপুরের দিকে সামান্য কিছু ভিড় লক্ষ করা গেছে ছেলেদের পাঞ্জাবি ও অন্যান্য পোশাকের দোকানগুলোতে। এছাড়া মেয়েদের সাজ-পোশাক আর প্রসাধনীর দোকানের বিক্রেতারা বসে বসে শুধু ক্রেতাই হেঁকেছেন।

এ প্রসঙ্গে নিউমাকেের্টর স্টার পাঞ্জাবির বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, রোজার ঈদের তুলনায় কোরবানির ঈদে এমনিতেই বেচাকেনা কম হয়। ক্রেতাদের যা কেনার, তারা তা রোজার ঈদেই কিনে নেন। তবে এবার কোরবানির ঈদে অন্যবারের তুলনায় বিক্রি একটু কম হয়।

একই মতামত অপার্ কসমেটিকসের সাদিয়া জাহান অপার্র। তিনি বলেন, বিশেষ দিনগুলোতে মেয়েদের প্রসাধনীর ব্যাপারটা থাকেই। তবে এবার সেটা কম। সাম্প্রতিক শিক্ষাথীের্দর আন্দোলন আর ঈদ উপলক্ষে অনেকেই আগেই গ্রামে ফিরে গেছেন। আর নিউমাকেের্টর প্রধান ক্রেতারা তো বলতে গেলে শিক্ষাথীর্রাই। তাই এবার ‘ঈদের বিক্রি’ নেই বললেই চলে।

কথা হয় পাঞ্জাবি ক্রেতা রাকিব হাসানের সঙ্গে। ঢাকা কলেজের এই শিক্ষাথীর্ বন্ধুদের সঙ্গে এসেছেন নিজের জন্য পাঞ্জাবি কিনতে। টিউশনির টাকা জমিয়ে নিজেরসহ কিনবেন বাবা আর ভাইয়ের জন্য। পছন্দ করে কিনলেনও গেরুয়া রঙের সুন্দর একটি পাঞ্জাবি।

কথা হলে রাকিব বলেন, গত ঈদে শপিংটা ভালো মতো করা হয়নি। আর নতুন পাঞ্জাবি পরে ঈদের নামাজ আদায় করে কোরবানি ঈদের মজাটাই অন্যরকম। নিজের জন্য কেনা হয়ে গেছে, এবার বাবার জন্য আর ছোট ভাইয়ের জন্য কিনব কিছু।

মাকের্ট ঘুরে দেখা গেছে, যারা শনিবার ঈদের আগে একটু কেনাকাটা করতে এসেছেন তাদের বেশির ভাগই শিক্ষাথীর্। তবে সাধারণ জনগণের ঈদ কেনাকাটায় নিউমাকেের্টর ঈদ বাজার কিছুটা হলেও জমবে বলেই এখনো আশা করছেন বিক্রেতারা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<8589 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1