শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা শিবিরে কার্যক্রম সীমিত, আতঙ্কে স্থানীয়রা

যাযাদি ডেস্ক
  ২৭ মার্চ ২০২০, ০০:০০

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গা শিবিরে বিদেশ ফেরত একটি পরিবারের চারজনসহ পাঁচজনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এছাড়াও বুধবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে এখানকার ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবিরে মানবিক সেবা কার্যক্রম সীমিত করার নির্দেশনা দিয়েছে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়।

করোনাভাইরাস নিয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ক্যাম্পে কার্যক্রম সীমিত করা হলেও রোহিঙ্গা শিবির নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা।

রোহিঙ্গা শিবিরে মানবিক সেবা কার্যক্রমে বিপুল সংখ্যক বিদেশির পাশাপাশি কাজ করছে প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশি। ক্যাম্পে কর্মরত দেশি-বিদেশি বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রতিদিন স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে যাচ্ছে, বাড়িঘরে আসছে। ফলে স্থানীয়দের করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ছেই।

এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত দেশি-বিদেশি সব সংস্থাকে শুধু খাদ্য, চিকিৎসা, আইনশৃঙ্খলাসহ অতি জরুরি কিছু কার্যক্রম ছাড়া বাকি সব কার্যক্রম সীমিত করার নির্দেশনা দিয়েছে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসনের কার্যালয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. শামসু দ্দৌজা নয়ন জানান অনেক আগেই মৌখিকভাবে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বুধবার সংস্থাগুলোকে লিখিতভাবে নির্দেশনা পাঠানো হবে।

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, খাদ্য, চিকিৎসা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ অতি জরুরি সেবা কার্যক্রম চালু থাকবে। বাকি সব কার্যক্রম সীমিত করা হয়েছে। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ক্যাম্পে যাবে না।

'অনেক আগেই শিবিরের অভ্যন্তরে থাকা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিশুবান্ধব কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিদেশি কোনো ভিজিটর এলেই আগের মতো রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। সে বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। অতি জরুরি প্রয়োজনে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন শেষে কোনো বিদেশি ক্যাম্পে যেতে পারবেন। করোনাভাইরাস সম্পর্কে রোহিঙ্গাদের সচেতন করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনাগুলো মিয়ানমারের এবং ইংরেজি ভাষায় প্রকাশ করে বিলি করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস যেহেতু ছোঁয়াচে রোগ এবং ক্যাম্প যেহতু ঘনবসতিপূর্ণ তাই রোহিঙ্গাদের জনসমাগম এড়াতে মসজিদের নামাজ ঘরে আদায় করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া ফেরত এক রোহিঙ্গা এবং ভারত থেকে আসা একপরিবারের চারজনকে কুতুপালং ইউএনএইচসিআর-এর ট্রানজিট ক্যাম্পে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এছাড়াও করোনায় ঝুঁকিপূর্ণ রোহিঙ্গাদের আলাদা করে রাখার জন্য ইতোমধ্যে ক্যাম্পের হাসপাতালগুলোতে ৪৭টি শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও ১৫০ শয্যা প্রস্তুত আছে, যা প্রয়োজনে ব্যবহার হবে।

রোহিঙ্গা শিবির নিয়ে আতঙ্কে স্থানীয়রা

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে ৩৪টি অস্থায়ী রোহিঙ্গা শিবিরে অনেকটা গাদাগাদি করে বসবাস করছে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা। ঘনবসতি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব, এবং বিদেশিদের আনাগোনার কারণে এসব ক্যাম্পে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। তাই এই ক্যাম্পগুলো নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা জেনেছি, সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে মানবিক সেবা দিতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করছে প্রায় এক হাজার ২০০ জন বিদেশি ও প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশি। বর্তমানে সেবা কার্যক্রম সীমিত করার ঘোষণা এলেও এতদিন পর্যন্ত এই বিপুল সংখ্যক মানুষ রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে সেবা দিয়েছে। পাশাপাশি তারা নিজেদের বাড়িঘর, বাসা থেকে আসা-যাওয়া করেছে। যেহেতু শিবিরগুলোতে তুলনামূলক করোনার ঝুঁকি বেশি, এমন পরিস্থিতিতে আমরা ভয়াবহ আতঙ্কের মধ্যে আছি।

উখিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, ছোট জায়গায় বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অবস্থান। এছাড়াও নানা কারণে আমরাও শিবিরকে খুব ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছি। আমরা যতটা সম্ভব চেষ্টা করছি পরিস্থিতি যথাযথভাবে মোকাবিলা করার।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. শামসু দ্দৌজা নয়ন বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে যেন স্থানীয়দের করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি না বাড়ে সেজন্যই ক্যাম্পগুলোতে কার্যক্রম সীমিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<94263 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1