নিরাপত্তা নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনার মাঝে টি২০ সিরিজ খেলতে পাকিস্তানে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে ভালো করায় পাকিস্তানের বিপক্ষেও ভালো কিছুর আশায় ছিল টাইগাররা। কিন্তু এক ম্যাচ হাতে রেখেই তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজ জিতে নিয়েছে বাবর আজমের পাকিস্তান। তাইতো দারুণ ফুরফুরে মেজাজে আছে স্বাগতিকরা। অন্যদিকে বাংলাদেশের সামনে এখন হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর বড় এক চ্যালেঞ্জ। আজ শেষ টি২০তে হারলে বড় এক লজ্জায় ডুববে তামিম-মাহমুদউলস্নাহরা। যদিও সিরিজ জয়ের প্রত্যয় নিয়েই দেশ ছেড়েছিল টাইগাররা।
কিন্তু পাকিস্তানে গিয়ে সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র। প্রথম ম্যাচে কিছুটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে কোনো লড়াই করতে পারেনি সফরকারীরা। অসহায় আত্মসমর্পণ করায় খেলোয়াড়দের মনোবল তাই অনেকটা তলানিতে। তবে শেষ ম্যাচটায় অন্তত জয়ে রাঙাতে চায় টাইগাররা। শেষ ম্যাচে মাঠে নামার আগে এমনটাই জানিয়েছেন দলের অন্যতম সেরা পেসার শফিউল ইসলাম। তবে তৃতীয় টি২০তে সৌম্য সরকারের খেলা নিয়ে জেগেছে শঙ্কা। এমন সমীকরণকে সামনে রেখে আজ বিকাল ৩টায় লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে তৃতীয় টি২০তে পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
আজ পাকিস্তানের সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে মাঠে নামছে টাইগাররা। এই ম্যাচে হারলে হোয়াইটওয়াশ হয়েই দেশে ফিরতে হবে বাংলাদেশকে। তাতে টিকে থাকবে পাকিস্তানের শীর্ষস্থান। কারণ একটি ম্যাচে হারলেই পাকিস্তানকে ছেড়ে দিতে হবের্ যাংকিংয়ের প্রথম স্থান। অন্যদিকে জিতলেও টাইগারদের অবস্থান থাকছে আগের মতোই। তবের্ যাংকিংয়ে অবস্থা যাই হোক অন্তত হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। লাহোরে টি২০ সিরিজের শেষ ম্যাচে মাঠে নামার আগে তাই জয়ের প্রত্যয় ঝরে পড়েছে শফিউলের কণ্ঠে, 'আমরা যখনই একটি সিরিজ খেলতে আসি তখন সবাই তো জেতার জন্য আসে। আমরাও সেই লক্ষ্যেই এখানে এসেছি। যদিও আমাদের পক্ষে আসেনি। এখনো একটা ম্যাচ বাকি আছে। এই ম্যাচটা ভালো করে শেষ করতে চায় সবাই।'
পাকিস্তানের বিপক্ষে সফরের প্রথম ম্যাচে ৪ ওভার করে মাত্র ২৭ রান খরচ করেছিলেন শফিউল ইসলাম। মোট ১২টি ডটের পাশাপাশি দুটি উইকেট তুলে নিয়েছিলেন এই পেসার। শফিউলের বলেই আউট হতে হয় দলটির সবেচেয়ে সেরা ব্যাটসম্যান বাবর আজমকে। দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাগতিক ব্যাটসম্যাদের একটি উইকেট তুলতে সক্ষম হয় সফরকারী বোলরারা। টাইগারদের হয়ে একমাত্র উইকেটটি তুলেছেন শফিউলই। প্রথম দুই ম্যাচে পাকিস্তান কোনো জায়গায় ব্যবধান গড়তে সক্ষম হয়েছে সেগুলো তুলে ধরেন শফিউল, 'আসলে আমদেরও সামর্থ্য ছিল। ধরতে গেলে আমরাও তরুণ দল। রিয়াদ ভাই আর তামিম ভাই ছাড়া দলটা তরুণ। আমরা বিপিএল খেলে আসছি। আমাদেরও ভালো খেলা সম্ভব ছিল। প্রথম ম্যাচে ১০টা রান কম হয়েছে। দ্বিতীয় ম্যাচে মোহাম্মদ হাফিজ ও বাবর আজম ভালো খেলেছে। তারা ব্যবধানটা গড়ে দিয়েছে। আমাদের আরও ভালো করার সুযোগ ছিল।'
বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ খেলার আগে শেষ ১০ ম্যাচে মাত্র একটি জয় ছিল পাকিস্তানের। এমনকি ঘরের মাঠে শ্রীলংকার দ্বিতীয় সারির দলের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে তারা। সে তুলনায় শক্তিশালী দল নিয়েও হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এমন হারের ব্যাখ্যায় শফিউল বললেন,'কেন হচ্ছে না... সবাই তো ভালো খেলার চেষ্টা করছে, হয়তো ওদের দিন গেছে, আমরা কিছু ভুল করেছি। টি২০ খেলায় এই ছোট ভুলগুলো অনেক বড়, এই কারণে আমাদের পক্ষে ফলাফল আসেনি।'
পাকিস্তান সফরের প্রথম দুই ম্যাচে খুব বেশি সফল ছিলেন না সৌম্য। তবে দলের বর্তমান অবস্থায় তার ওপর ভরসা হারাননি নির্বাচকরা। কিন্তু আজ সোমবার তৃতীয় ম্যাচে সৌম্যের খেলার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ইনজুরিতে পড়েছেন এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার। সিরিজের প্রথম ম্যাচে ২.৩ ওভার বল করে ২২ রান দেন সৌম্য। ছিলেন উইকেটশূন্য। ব্যাট হাতে করেন সাত রান। শনিবারের দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাট হাতে পাঁচ রানে অপরাজিত থাকলেও বোলিংটা করেননি তিনি। দলের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু লাহোর থেকে সৌম্যের ইনজুরিতে আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন। তবে সৌম্য ঠিক কি ধরনের ইনজুরিতে পড়েছেন তা এখনো জানা যায়নি।
সম্প্রতি শেষ হওয়া বঙ্গবন্ধু বিপিএলে কুমিলস্না ওয়ারিয়র্সের হয়ে খারাপ করেননি সৌম্য। ব্যাট হাতে রানের পাশাপাশি বল হাতে প্রায় প্রতি ম্যাচেই দলকে এনে দিয়েছেন ব্রেক থ্রম্ন। সব জায়গায় টপ অর্ডারে ব্যাট করলেও পাকিস্তান সফরে বেশ নিচের দিকে ব্যাট করছেন তিনি। প্রথম ম্যাচে ছয় নম্বরে নামার পর দ্বিতীয় ম্যাচে নেমেছেন সাতে। দলে সৌম্যের ব্যাটিং অর্ডার এত নিচে থাকায় অনেক ভক্ত-সমর্থকই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে টাইগারদের হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো জানিয়েছেন, শেষদিকে হিট করার সক্ষমতা থাকায় তাকে নিচে খেলানো হয়েছে।
সমস্যা হলো ১৬ জনের দলে যদি ওপেনিংয়ে খেলার অভিজ্ঞতা ছয়জনের থাকে তাহলে সবাইকে তো আর এক ম্যাচে ওপেনার হিসেবে খেলানো যায় না! দলের ব্যাটিং অর্ডার প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বলছিলেন- 'আমরা এখানে ভিন্ন একটা কম্বিনেশন চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম সেই কম্বিনেশন কাজ করবে। সৌম্য দারুণ ব্যাটসম্যান। ব্যাটিংয়ের শেষের দিকে মাঠের বাইরে বল পাঠাতে পারে এমন একজন ব্যাটসম্যানের প্রয়োজন ছিল আমাদের। সেজন্যই সৌম্যকে দিয়ে সেই চেষ্টা করা হয়েছে।'
প্রথম ম্যাচে সৌম্য ছয় নম্বরে ব্যাট করে ৫ বলে ১ বাউন্ডারিতে ৭ রান করে আউট। দ্বিতীয় ম্যাচে সাত নম্বরে নেমে ৫ বল খেলে অপরাজিত ৫। দুই ম্যাচে তাকে নামতে হয়েছে ইনিংসের একেবারে শেষের দিকে, ১৮ নম্বর ওভারে। সৌম্যের পারফরম্যান্স জানাচ্ছে শেষের দিকে তার কাছ থেকে যে 'মাসলম্যান ব্যাটিংয়ের' প্রত্যাশা করেছিল দল- সেটা তিনি দিতে পারেননি।